শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২, ২১ শ্রাবণ ১৪২৯ ৬ মহররম ১৪৪৪

পথিকদের জন্য এখনও অপেক্ষা করে শতবর্ষী মুসাফিরখানা

দেড়শত বছর পূর্বের কথা। উঁচু-নিচু বরেন্দ্র ভুমি। বন-জঙ্গলে ঘেরা। যখন হেঁটে চলত পথিক মেঠোপথে। চলতে চলতে দুপুর হয়, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। পথে যখন বাঘ-বিচ্ছুর ভয়, চোর-ডাকাতের উপদ্রব। মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে লোকালয় খোঁজে।

কারও ভাগ্যে নিরাপদ আশ্রয় মেলে, আবার কারও ভাগ্যে মেলে ভোগান্তি। মানুষের এমন ভোগান্তি আর কষ্টের কথা চিন্তা করে এখন থেকে ১১৪ বছর পূর্বে তৎকালীন এখানকার জমিদার খাদেম মোহাম্মদ শাহ তৈরি করেছিলেন একটি মাটির ঘর। তিনি ঘরের নাম দিয়েছিলেন মুসাফিরখানা। যেন বাইরের মানুষ বিপদে আপদে এই ঘরে এসে আশ্রয় পান। পথিকের রাত বা দিনে আশ্রয় এবং বিশ্রামের জন্যই এটি নির্মাণ করেছিলেন তিনি।

পথিকদের রাত এবং দিনে থাকার পাশাপাশি খাবারেরও ব্যবস্থা করেছিলেন জমিদার খাদেম মোহাম্মদ শাহ। থাকা এবং খাওয়া সবগুলোই একেবারেই বিনামূল্যে। পরিচালনা এবং সকল ধরনের খরচ চালানোর জন্য তিনি মুসাফিরখানায় দান করে দিয়েছিলেন ৮০ বিঘা জমি। দানকৃত ওই ৮০ বিঘা জমির আয় ও ৮টি ঘরের ভাড়ার টাকা দিয়ে মুসাফিরখানার সকল খরচ বহন করা হচ্ছে।

উন্নত রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ এবং দ্রুতগামী যানবাহনের এ যুগেও টিকে রয়েছে নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার পোরশা সদরের মুসাফিরখানাটি। দূর-দূরান্তের পথিকদের আগের মতোই স্বাগত জানায় এ মুসাফিরখানাটি।

জেলা শহর নওগাঁ থেকে ৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে ১শ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কোনে পোরশা উপজেলা। পোরশা উপজেলা পরিষদের সকল দপ্তর পোরশা সদর থেকে ৫কিলোমিটার পশ্চিমে নিতপুর নামক স্থানে। আর মুসাফিরখানাটি পোরশার সদরের মিনা বাজারে অবস্থিত। বয়জৈষ্ঠ ব্যক্তিদের নিকট থেকে জানা যায়, প্রায় ১৫০০ সালের পরে কোন এক সময়ে তৎকালীন বাদশা আলমঙ্গীরের আমলে ইরান থেকে হিজরত করতে বাংলাদেশের বরিশালে আসেন কয়েকজন শাহ বংশের মুরব্বী। এদের মধ্যে ফাজেল শাহ, দ্বীন মোহাম্মদ শাহ, ভাদু শাহ, মুহিদ শাহ, জন মোহাম্মদ শাহ, খান মোহাম্মদ শাহ অন্যতম। পরবর্তীতে বরিশাল থেকে তারা আসেন বর্তমান পোরশা সদরে। যদিও তখন এখানে কোন বসতবাড়ি ছিল না। ছিল শুধু বন-জঙ্গল।

এলাকাটি ভাল লাগায় তারা এখানে ঘর বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করতে শুরু করেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানও ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের সন্তানের তাদের পরিবারের ছেলে মেয়েদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে বংশ বিস্তার করান।

শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২ , ২১ শ্রাবণ ১৪২৯ ৬ মহররম ১৪৪৪

পথিকদের জন্য এখনও অপেক্ষা করে শতবর্ষী মুসাফিরখানা

প্রতিনিধি, পোরশা (নওগাঁ)

image

দেড়শত বছর পূর্বের কথা। উঁচু-নিচু বরেন্দ্র ভুমি। বন-জঙ্গলে ঘেরা। যখন হেঁটে চলত পথিক মেঠোপথে। চলতে চলতে দুপুর হয়, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। পথে যখন বাঘ-বিচ্ছুর ভয়, চোর-ডাকাতের উপদ্রব। মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে লোকালয় খোঁজে।

কারও ভাগ্যে নিরাপদ আশ্রয় মেলে, আবার কারও ভাগ্যে মেলে ভোগান্তি। মানুষের এমন ভোগান্তি আর কষ্টের কথা চিন্তা করে এখন থেকে ১১৪ বছর পূর্বে তৎকালীন এখানকার জমিদার খাদেম মোহাম্মদ শাহ তৈরি করেছিলেন একটি মাটির ঘর। তিনি ঘরের নাম দিয়েছিলেন মুসাফিরখানা। যেন বাইরের মানুষ বিপদে আপদে এই ঘরে এসে আশ্রয় পান। পথিকের রাত বা দিনে আশ্রয় এবং বিশ্রামের জন্যই এটি নির্মাণ করেছিলেন তিনি।

পথিকদের রাত এবং দিনে থাকার পাশাপাশি খাবারেরও ব্যবস্থা করেছিলেন জমিদার খাদেম মোহাম্মদ শাহ। থাকা এবং খাওয়া সবগুলোই একেবারেই বিনামূল্যে। পরিচালনা এবং সকল ধরনের খরচ চালানোর জন্য তিনি মুসাফিরখানায় দান করে দিয়েছিলেন ৮০ বিঘা জমি। দানকৃত ওই ৮০ বিঘা জমির আয় ও ৮টি ঘরের ভাড়ার টাকা দিয়ে মুসাফিরখানার সকল খরচ বহন করা হচ্ছে।

উন্নত রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ এবং দ্রুতগামী যানবাহনের এ যুগেও টিকে রয়েছে নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার পোরশা সদরের মুসাফিরখানাটি। দূর-দূরান্তের পথিকদের আগের মতোই স্বাগত জানায় এ মুসাফিরখানাটি।

জেলা শহর নওগাঁ থেকে ৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে ১শ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কোনে পোরশা উপজেলা। পোরশা উপজেলা পরিষদের সকল দপ্তর পোরশা সদর থেকে ৫কিলোমিটার পশ্চিমে নিতপুর নামক স্থানে। আর মুসাফিরখানাটি পোরশার সদরের মিনা বাজারে অবস্থিত। বয়জৈষ্ঠ ব্যক্তিদের নিকট থেকে জানা যায়, প্রায় ১৫০০ সালের পরে কোন এক সময়ে তৎকালীন বাদশা আলমঙ্গীরের আমলে ইরান থেকে হিজরত করতে বাংলাদেশের বরিশালে আসেন কয়েকজন শাহ বংশের মুরব্বী। এদের মধ্যে ফাজেল শাহ, দ্বীন মোহাম্মদ শাহ, ভাদু শাহ, মুহিদ শাহ, জন মোহাম্মদ শাহ, খান মোহাম্মদ শাহ অন্যতম। পরবর্তীতে বরিশাল থেকে তারা আসেন বর্তমান পোরশা সদরে। যদিও তখন এখানে কোন বসতবাড়ি ছিল না। ছিল শুধু বন-জঙ্গল।

এলাকাটি ভাল লাগায় তারা এখানে ঘর বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করতে শুরু করেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানও ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের সন্তানের তাদের পরিবারের ছেলে মেয়েদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে বংশ বিস্তার করান।