শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২, ২১ শ্রাবণ ১৪২৯ ৬ মহররম ১৪৪৪

ইউরিয়ার মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত বুধবার সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট এবং সাম্যবাদী আন্দোলন গাইবান্ধা জেলা শাখার উদ্যোগে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে শহরের ১নং ট্রাফিক মোড়ে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ স¤পাদক মনজুর আলম মিঠু, সাম্যবাদী আন্দোলন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়ক বীরেন চন্দ্র শীল, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের জেলা সংগঠক পারুল বেগম, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের জেলা আহবায়ক শামিম আরা মিনা প্রমুখ। বক্তারা ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, দেশে সারের চাহিদা পূরণে তিন বছর ধরে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। প্রতিবছর গড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার সার আনতে হয়। অথচ এর অর্ধেক টাকা খরচ করে ওই পরিমাণ সারাদেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। এমনকি দেশে যে ৮টি কারখানা রয়েছে সেগুলো আধুনিকীকরণ করা হলে সারা বছরই উৎপাদন সম্ভব হতো। দুই দশক আগেও স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশ থেকে সার রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু সার কারখানাগুলো দীর্ঘদিনের হওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটিও বাড়তে থাকে। যান্ত্রিক ত্রুটি এবং গ্যাস স্বল্পতার কারণে বেশিরভাগ সার কারখানা বছরে চার থেকে সাত মাস বন্ধ থাকে। সে কারণে দেশের সার কারখানাগুলোতে সার উৎপাদন কমছে। তাই সারের চাহিদা পূরণে আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হয়।

বক্তারা আরও বলেন, সার কারখানাগুলোর অর্ধেক যান্ত্রপাতিও যদি আধুনিকীকরণ করা হয় তবে আমদানির অর্ধেক ব্যয় হবে উৎপাদনে। যমুনা ফার্টিলাইজার ক¤পানি লিমিটেডের কারখানা একদিন বন্ধ থাকলে ১৭০০ টন সার উৎপাদন কম হয়। এই পরিমাণ সার উৎপাদনে জ্বালানি ও কাঁচামালের খরচ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ সব ধরনের খরচ মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট ব্যয় হয় দুই কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে ১৭০০ টন সার আমদানিতে উৎপাদনের খরচের চেয়ে দ্বিগুণ ব্যয় হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এএফসিসিএল) এক দিন বন্ধ থাকলে ১৬০০ টন সার কম উৎপাদন হয়, যা আমদানিতে ব্যয় হয় ৫ কোটি টাকা। এই পরিমাণ সারদেশে উৎপাদনে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়। উৎপাদনের পরিবর্তে আমদানিতে প্রতিবছর সরকারের নিট লোকসান প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। আবার সার কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় কর্পোরেশন হয়েও বিসিআইসি ক্রমাগত লোকসানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সার কারখানাগুলোতে দীর্ঘদিন যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু মেরামত ও আধুনিকায়ন না হওয়ায় উৎপাদন খরচ ও ব্যয় বেড়ে যায়। পরিবেশ দূষণ হয়। উৎপাদনও কমতে থাকে। যন্ত্রপাতি মেরামত ও নতুন সংযোজনের পর ৮টি সার কারখানা সারা বছর সচল থাকলে বর্তমানে ৪০ লাখ টনের বেশি সার উৎপাদন সম্ভব অথচ এবছর দেশে সারের চাহিদা ২৬ লক্ষ টন। এর জন্যেই সরকারকর ১৬ লক্ষ টন সার আমদানি করতে জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, যে ভূর্তকির সিংহভাগ আমদানিকারক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের পকেটে যাচ্ছে। এখন আবার কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে খাদ্য উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে যার ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের কৃষক এবং দেশের সাধরণ খেটে খাওয়া মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়বে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে সরকারের আমদানি নির্ভর লুটপাট নীতি থেকে সরে এসে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সার উৎপাদন বৃদ্ধি এবং তা স্বল্পমূল্যে কৃষকদের মাঝে সরবরাহের দাবি জানান। এছাড়া ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং বন্ধ করে কৃষিতে সেচকাজ সচল রাখতে নির্বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহেরও দাবি জানান।

শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২ , ২১ শ্রাবণ ১৪২৯ ৬ মহররম ১৪৪৪

ইউরিয়ার মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত বুধবার সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট এবং সাম্যবাদী আন্দোলন গাইবান্ধা জেলা শাখার উদ্যোগে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে শহরের ১নং ট্রাফিক মোড়ে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ স¤পাদক মনজুর আলম মিঠু, সাম্যবাদী আন্দোলন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়ক বীরেন চন্দ্র শীল, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের জেলা সংগঠক পারুল বেগম, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের জেলা আহবায়ক শামিম আরা মিনা প্রমুখ। বক্তারা ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, দেশে সারের চাহিদা পূরণে তিন বছর ধরে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। প্রতিবছর গড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার সার আনতে হয়। অথচ এর অর্ধেক টাকা খরচ করে ওই পরিমাণ সারাদেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। এমনকি দেশে যে ৮টি কারখানা রয়েছে সেগুলো আধুনিকীকরণ করা হলে সারা বছরই উৎপাদন সম্ভব হতো। দুই দশক আগেও স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশ থেকে সার রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু সার কারখানাগুলো দীর্ঘদিনের হওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটিও বাড়তে থাকে। যান্ত্রিক ত্রুটি এবং গ্যাস স্বল্পতার কারণে বেশিরভাগ সার কারখানা বছরে চার থেকে সাত মাস বন্ধ থাকে। সে কারণে দেশের সার কারখানাগুলোতে সার উৎপাদন কমছে। তাই সারের চাহিদা পূরণে আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হয়।

বক্তারা আরও বলেন, সার কারখানাগুলোর অর্ধেক যান্ত্রপাতিও যদি আধুনিকীকরণ করা হয় তবে আমদানির অর্ধেক ব্যয় হবে উৎপাদনে। যমুনা ফার্টিলাইজার ক¤পানি লিমিটেডের কারখানা একদিন বন্ধ থাকলে ১৭০০ টন সার উৎপাদন কম হয়। এই পরিমাণ সার উৎপাদনে জ্বালানি ও কাঁচামালের খরচ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ সব ধরনের খরচ মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট ব্যয় হয় দুই কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অন্যদিকে ১৭০০ টন সার আমদানিতে উৎপাদনের খরচের চেয়ে দ্বিগুণ ব্যয় হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এএফসিসিএল) এক দিন বন্ধ থাকলে ১৬০০ টন সার কম উৎপাদন হয়, যা আমদানিতে ব্যয় হয় ৫ কোটি টাকা। এই পরিমাণ সারদেশে উৎপাদনে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়। উৎপাদনের পরিবর্তে আমদানিতে প্রতিবছর সরকারের নিট লোকসান প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। আবার সার কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় কর্পোরেশন হয়েও বিসিআইসি ক্রমাগত লোকসানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সার কারখানাগুলোতে দীর্ঘদিন যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু মেরামত ও আধুনিকায়ন না হওয়ায় উৎপাদন খরচ ও ব্যয় বেড়ে যায়। পরিবেশ দূষণ হয়। উৎপাদনও কমতে থাকে। যন্ত্রপাতি মেরামত ও নতুন সংযোজনের পর ৮টি সার কারখানা সারা বছর সচল থাকলে বর্তমানে ৪০ লাখ টনের বেশি সার উৎপাদন সম্ভব অথচ এবছর দেশে সারের চাহিদা ২৬ লক্ষ টন। এর জন্যেই সরকারকর ১৬ লক্ষ টন সার আমদানি করতে জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, যে ভূর্তকির সিংহভাগ আমদানিকারক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের পকেটে যাচ্ছে। এখন আবার কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে খাদ্য উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে যার ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের কৃষক এবং দেশের সাধরণ খেটে খাওয়া মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়বে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে সরকারের আমদানি নির্ভর লুটপাট নীতি থেকে সরে এসে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সার উৎপাদন বৃদ্ধি এবং তা স্বল্পমূল্যে কৃষকদের মাঝে সরবরাহের দাবি জানান। এছাড়া ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং বন্ধ করে কৃষিতে সেচকাজ সচল রাখতে নির্বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহেরও দাবি জানান।