দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে সক্ষমতার ৭৫ শতাংশের বেশি গ্যাস উত্তোলন করতে পারছে না রাষ্ট্রীয় গ্যাস উত্তোলন কোম্পানিগুলো। কিন্তু বিদেশি কোম্পানি শেভরন বিবিয়ানা থেকে শতভাগ বা তার বেশি গ্যাস উত্তোলন করে চলেছে। প্রায় ১১ বছর আগে আন্তর্জাতিক এক কোম্পানি সমীক্ষা পরিচালনা করে বলেছিল ‘বিদ্যমান গ্যাস ফিল্ডগুলোর সংস্কার করে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে’। কিন্তু এত বছর পেরিয়ে গেলেও সেই রিপোর্ট ‘অন্ধকারেই রয়ে গেছে’ বলে জানিয়েছেন এক বিশেষজ্ঞ। আর দীর্ঘদিন অনুসন্ধানে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় গ্যাস উৎপাদন চাহিদার তুলানায় বাড়েনি। তাই আমাদানিনির্ভরতা বেড়েছে।
দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা কমবেশি চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ)। দেশি-বিদেশি কোম্পানি মিলে উৎপাদন করছে ২ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ এমএমসিএফ। গড়ে দৈনিক ৭০০ এমএমসিএফ আমদানিকৃত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এরপরও দৈনিক এক হাজার ২০০ এমএমসিএফ গ্যাসের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কমে গেছে সার উৎপাদন। তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
পেট্রোবাংলার অধীনে রাষ্ট্রীয় ৩টি কোম্পানি- বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড, সিলেট গ্যাস ফিল্ড ও বাপেক্সের আওতায় মোট ১৮টি গ্যাসক্ষেত্র আছে।
৭০টি কূপের মাধ্যমে এসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক মোট এক হাজার ১৪৫ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উত্তোলন বা উৎপাদন হওয়ার কথা। গড়ে দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে ৮৫০ এমএমসিএফ। গড়ে দৈনিক ২৯৫ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন কম হচ্ছে।
বিদেশি তেল কোম্পানি শেভরন বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের ২৬টি কূপ দিয়ে প্রতিদিনই সক্ষমতার শতভাগ বা তারও বেশি গ্যাস উৎপাদন করছে। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের মোট উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২০০ এমএমসিএফ। ২৭ জুলাই এই আইওসি (বিদেশি তেল কোম্পানি) বিবিয়ানা থেকে এক হাজার ২১৫ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন করেছে।
২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার তথ্যে দেখা যায়, ওইদিন শেভরন বিবিয়ানা থেকে এক হাজার ৩০১ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন করেছিল। সেদিন দেশে কর্মরত দুই আইওসি-শেভরন ও তাল্লো তাদের আওতায় থাকা ৪টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে এক হাজার ৬৫৬ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন করে। চারটি গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৬১৫ এমএমসিএফ। ওই সময় আইওসি দুটি প্রতিদিনই সক্ষমতার চেয়ে বেশি গ্যাস উৎপাদন করত। সম্প্রতি জালালবাদ, মৌলভীবাজার ও বাঙ্গুরা ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন কিছুটা কমলেও বিবিয়ানা থেকে সক্ষমতার বেশি গ্যাস উৎপাদন অব্যাহত আছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান গতকাল বিকেলে সংবাদকে বলেন, ‘প্রযুক্তিগতভাবেই দেশীয় কোম্পানির কূপগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা অনেক কম (দৈনিক ১০-২০ এমএমসিএফ)। শেভরনের কূপগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ এমএমসিএফ পর্যন্ত। প্রযুক্তিগতভাবেই তারা এগিয়ে রয়েছে।’ নাজমুল আহসানের মতে, প্রমাণিত মজুদের হিসাবে দৈনিক কম উৎপাদন হওয়া কূপগুলো অনেকদিন ধরে চলবে। আর বেশি করে উৎপাদন করা হলে তা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে শেভরনের এক কর্মকর্তার দাবি, তাদের কোম্পানি সক্ষমতার চেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলন করছে না। ওই কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা দৈনিক এক হাজার ২০০ এমএমসিএফ দেখানো আছে।’ এই তথ্য ভুল দাবি করে তিনি বলেন, ‘আসলে বিবিয়ানার উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৩০০ এমএমসিএফের বেশি। আমরা পেট্রোবাংলাকে বিষয়টি সংশোধন করতে চিঠি দিয়েছি। তবে এখনও তথ্য সংশোধন করা হয়নি।’
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সংবাদকে বলেন, ‘বিষয়টি দেখতে হবে। তারা পরবর্তিতে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে কি না, বিষয়টা নিশ্চিত হয়ে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।’
জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, দীর্ঘদিন অনুসন্ধানে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় গ্যাস উৎপাদন চাহিদার তুলানায় বাড়েনি। ফলে আমাদানিনির্ভরতা বাড়ছে। তাদের মতে, জনবহুল বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে চাইলে প্রাথমিক জ্বালানির জোগান নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির ওপর নির্ভর করলে অর্থনীতির ওপর চাপ পড়বে। তাই দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া অতি জরুরি।
একাধিক বিশেষজ্ঞের মতে, অনেক আগেই দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং অনুসন্ধানে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা রয়েছে বলে মনে করেন তারা। সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানেও সরকার যথযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন একজন বিশেষজ্ঞ।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম জানান, দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক কোম্পানি স্লামবার্জে। ২০১১ সালে তাদের দাখিলকৃত রিপোর্টে বলা হয়- ‘বিদ্যমান গ্যাস ফিল্ডগুলোর সংস্কার করে দৈনিক ৪০০ থেকে ৮০০ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে’। এতে খরচ হতে পারে সর্বোচ্চ ১২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। তিনি বলেন, ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই রিপোর্ট অন্ধকারেই রয়ে গেছে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এত আগের বিষয়। সে সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন, হয়ত এর বাণিজ্যিক উপযোগিতা খুঁজে পাননি। তাই এটা নিয়ে আর কাজ হয়নি।’
সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামে অস্থিরতার প্রভাব বাংলাদেশেও এসে পড়েছে। উচ্চমূল্যের ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন আপাতত বন্ধ রেখেছে সরকার। শতভাগ বিদ্যুতায়নের পর ফিরে এসেছে লোডশেডিং।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন গ্যাসের যে পরিমাণ ‘প্রমাণিত’ মজুদ আছে, তা ২০৩১ সালে ফুরিয়ে যাবে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়রম্যান নাজমুল আহসান জানান, দ্রুত নতুন কিছু কূপ খনন এবং কিছু কূপ সংস্কারের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামী এক থেকে চার বছরের মধ্যে দৈনিক প্রায় ৫০০ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অনুসন্ধানের মাধ্যমে আগামীতে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২ , ২১ শ্রাবণ ১৪২৯ ৬ মহররম ১৪৪৪
ফয়েজ আহমেদ তুষার
দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে সক্ষমতার ৭৫ শতাংশের বেশি গ্যাস উত্তোলন করতে পারছে না রাষ্ট্রীয় গ্যাস উত্তোলন কোম্পানিগুলো। কিন্তু বিদেশি কোম্পানি শেভরন বিবিয়ানা থেকে শতভাগ বা তার বেশি গ্যাস উত্তোলন করে চলেছে। প্রায় ১১ বছর আগে আন্তর্জাতিক এক কোম্পানি সমীক্ষা পরিচালনা করে বলেছিল ‘বিদ্যমান গ্যাস ফিল্ডগুলোর সংস্কার করে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে’। কিন্তু এত বছর পেরিয়ে গেলেও সেই রিপোর্ট ‘অন্ধকারেই রয়ে গেছে’ বলে জানিয়েছেন এক বিশেষজ্ঞ। আর দীর্ঘদিন অনুসন্ধানে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় গ্যাস উৎপাদন চাহিদার তুলানায় বাড়েনি। তাই আমাদানিনির্ভরতা বেড়েছে।
দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা কমবেশি চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ)। দেশি-বিদেশি কোম্পানি মিলে উৎপাদন করছে ২ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ এমএমসিএফ। গড়ে দৈনিক ৭০০ এমএমসিএফ আমদানিকৃত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। এরপরও দৈনিক এক হাজার ২০০ এমএমসিএফ গ্যাসের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কমে গেছে সার উৎপাদন। তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
পেট্রোবাংলার অধীনে রাষ্ট্রীয় ৩টি কোম্পানি- বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড, সিলেট গ্যাস ফিল্ড ও বাপেক্সের আওতায় মোট ১৮টি গ্যাসক্ষেত্র আছে।
৭০টি কূপের মাধ্যমে এসব গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক মোট এক হাজার ১৪৫ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উত্তোলন বা উৎপাদন হওয়ার কথা। গড়ে দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে ৮৫০ এমএমসিএফ। গড়ে দৈনিক ২৯৫ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন কম হচ্ছে।
বিদেশি তেল কোম্পানি শেভরন বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের ২৬টি কূপ দিয়ে প্রতিদিনই সক্ষমতার শতভাগ বা তারও বেশি গ্যাস উৎপাদন করছে। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের মোট উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২০০ এমএমসিএফ। ২৭ জুলাই এই আইওসি (বিদেশি তেল কোম্পানি) বিবিয়ানা থেকে এক হাজার ২১৫ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন করেছে।
২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার তথ্যে দেখা যায়, ওইদিন শেভরন বিবিয়ানা থেকে এক হাজার ৩০১ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন করেছিল। সেদিন দেশে কর্মরত দুই আইওসি-শেভরন ও তাল্লো তাদের আওতায় থাকা ৪টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে এক হাজার ৬৫৬ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন করে। চারটি গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৬১৫ এমএমসিএফ। ওই সময় আইওসি দুটি প্রতিদিনই সক্ষমতার চেয়ে বেশি গ্যাস উৎপাদন করত। সম্প্রতি জালালবাদ, মৌলভীবাজার ও বাঙ্গুরা ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন কিছুটা কমলেও বিবিয়ানা থেকে সক্ষমতার বেশি গ্যাস উৎপাদন অব্যাহত আছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান গতকাল বিকেলে সংবাদকে বলেন, ‘প্রযুক্তিগতভাবেই দেশীয় কোম্পানির কূপগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা অনেক কম (দৈনিক ১০-২০ এমএমসিএফ)। শেভরনের কূপগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ এমএমসিএফ পর্যন্ত। প্রযুক্তিগতভাবেই তারা এগিয়ে রয়েছে।’ নাজমুল আহসানের মতে, প্রমাণিত মজুদের হিসাবে দৈনিক কম উৎপাদন হওয়া কূপগুলো অনেকদিন ধরে চলবে। আর বেশি করে উৎপাদন করা হলে তা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে শেভরনের এক কর্মকর্তার দাবি, তাদের কোম্পানি সক্ষমতার চেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলন করছে না। ওই কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘পেট্রোবাংলার ওয়েবসাইটে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা দৈনিক এক হাজার ২০০ এমএমসিএফ দেখানো আছে।’ এই তথ্য ভুল দাবি করে তিনি বলেন, ‘আসলে বিবিয়ানার উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৩০০ এমএমসিএফের বেশি। আমরা পেট্রোবাংলাকে বিষয়টি সংশোধন করতে চিঠি দিয়েছি। তবে এখনও তথ্য সংশোধন করা হয়নি।’
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সংবাদকে বলেন, ‘বিষয়টি দেখতে হবে। তারা পরবর্তিতে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে কি না, বিষয়টা নিশ্চিত হয়ে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।’
জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, দীর্ঘদিন অনুসন্ধানে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় গ্যাস উৎপাদন চাহিদার তুলানায় বাড়েনি। ফলে আমাদানিনির্ভরতা বাড়ছে। তাদের মতে, জনবহুল বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে চাইলে প্রাথমিক জ্বালানির জোগান নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির ওপর নির্ভর করলে অর্থনীতির ওপর চাপ পড়বে। তাই দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া অতি জরুরি।
একাধিক বিশেষজ্ঞের মতে, অনেক আগেই দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং অনুসন্ধানে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা রয়েছে বলে মনে করেন তারা। সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানেও সরকার যথযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন একজন বিশেষজ্ঞ।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম জানান, দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক কোম্পানি স্লামবার্জে। ২০১১ সালে তাদের দাখিলকৃত রিপোর্টে বলা হয়- ‘বিদ্যমান গ্যাস ফিল্ডগুলোর সংস্কার করে দৈনিক ৪০০ থেকে ৮০০ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে’। এতে খরচ হতে পারে সর্বোচ্চ ১২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। তিনি বলেন, ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই রিপোর্ট অন্ধকারেই রয়ে গেছে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এত আগের বিষয়। সে সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন, হয়ত এর বাণিজ্যিক উপযোগিতা খুঁজে পাননি। তাই এটা নিয়ে আর কাজ হয়নি।’
সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামে অস্থিরতার প্রভাব বাংলাদেশেও এসে পড়েছে। উচ্চমূল্যের ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন আপাতত বন্ধ রেখেছে সরকার। শতভাগ বিদ্যুতায়নের পর ফিরে এসেছে লোডশেডিং।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন গ্যাসের যে পরিমাণ ‘প্রমাণিত’ মজুদ আছে, তা ২০৩১ সালে ফুরিয়ে যাবে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়রম্যান নাজমুল আহসান জানান, দ্রুত নতুন কিছু কূপ খনন এবং কিছু কূপ সংস্কারের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামী এক থেকে চার বছরের মধ্যে দৈনিক প্রায় ৫০০ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অনুসন্ধানের মাধ্যমে আগামীতে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।