শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২, ২১ শ্রাবণ ১৪২৯ ৬ মহররম ১৪৪৪

জ্বালানি সনদ চুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী : ক্যাব

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে জ্বালানি সনদ চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের স্বার্থে পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ সুরক্ষায় তৈরি এ সনদে স্বাক্ষর না করার আহ্বান জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ভোক্তা অধিকার সংগঠনটি বলছে, বিদেশি বিনিয়োগের কাছে রাষ্ট্রের সমর্পণ দলিল হচ্ছে জ্বালানি সনদ চুক্তি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘জ্বালানি সনদ চুক্তিটির আইনি কাঠামো একপেশে ও ভারসাম্যহীন। এটি ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতি বাস্তবায়নকে অসম্ভব করে তুলতে পারে। শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায় এই আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোটি একপেশেভাবে কার্যকর হয়েছে। তাই জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় জ্বালানি সনদ চুক্তির বিরোধিতা করাটাই মূল কাজ।’

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতি বাস্তবায়নে জ্বালানি সনদ চুক্তির ভূমিকা শীর্ষক এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপে ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, পাকিস্তান আমলের ২২ পরিবারের মতো বর্তমানেও সরকারকে ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী সুবিধা নিচ্ছে। এ ধরনের জ্বালানি সনদ চুক্তি করলে পুনরায় তাদের সুযোগ করে দেয়া হবে। আমরা জ্বালানি সেক্টর চালানোর সক্ষমতা হারিয়েছি। আমরা একটি পাওয়ার প্লান্ট চালাতে পারি না, বিদেশ থেকে প্রশিক্ষিত কর্মী আনতে হয়। আমাদের সক্ষমতা শুধু দেশের জ্বালানি খাতের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া। তিনি বলেন, যে টাকা গ্যাস উৎপাদন ও উত্তোলনে খরচ করার কথা সেটি ব্যবহার করা হয়েছে আমদানিতে। জনগণের টাকা এভাবে খরচ করা লুণ্ঠনের মতো। সমুদ্রের গ্যাস উত্তোলন করতে না পারলে স্থলের গ্যাস উত্তোলন করা যায় বাপেক্সকে দিয়ে। কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না। করা হচ্ছে শুধু আমদানি যার ফলে মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ক্ষতিকর ফলের শিকার হচ্ছে জনগণ। ভোক্তার অধিকার রক্ষায় কিছুই করা হচ্ছে না যার ফলাফল মানুষ সক্ষমতা হারাচ্ছে। আর দেশে বিদ্যুৎ জ্বালানির সংকট।

জ্বালানি রূপান্তর নীতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. এম শামসুল আালম বলেন, গ্যস খাতে ২৫ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, বিদ্যুৎ খাতে ১১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি ও তেল (তরল) জ্বলানি খাতে ৪ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য করণীয় হলো- সরকার জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তর করতে পারবে না। সরকার খাদ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে নীতি ব্যবহার করে তেমনি গ্যাস বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও একই নীতি গ্রহণ করতে হবে। জ্বালানি প্রতিষ্ঠানে আমলাদের সরিয়ে দিয়ে দক্ষ প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। পরে মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা বলেন, জ্বালানি সনদে যেখানে বিনীয়োগকারীদের স্বার্থ দেখা হয় সেখানে দেশের স্বার্থ উপেক্ষিত হবেই। সনদটি ভয়াবহ। রাষ্ট্র কিভাবে এমন একটা সনদ করে যা আমাদের পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। রাষ্ট্রের চেয়ে বিনিয়োগকারীরা বড় হয়ে গেলে এমনটি হয়। তাই এই নীতির সঙ্গে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে, তরুণদের কাছে তুলে ধরতে হবে। জ্বালানি নীতি বাস্তবায়নের জন্য জ্বালানি সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলোতে জনমত গড়ে তুলতে হবে।

সংলাপে অংশগ্রহণ করেন প্রকৌশলী শুভ কিবরিয়া, অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মনজুর ই-খোদাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এনজিও সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

শুক্রবার, ০৫ আগস্ট ২০২২ , ২১ শ্রাবণ ১৪২৯ ৬ মহররম ১৪৪৪

জ্বালানি সনদ চুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী : ক্যাব

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে জ্বালানি সনদ চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের স্বার্থে পশ্চিমা বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ সুরক্ষায় তৈরি এ সনদে স্বাক্ষর না করার আহ্বান জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ভোক্তা অধিকার সংগঠনটি বলছে, বিদেশি বিনিয়োগের কাছে রাষ্ট্রের সমর্পণ দলিল হচ্ছে জ্বালানি সনদ চুক্তি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘জ্বালানি সনদ চুক্তিটির আইনি কাঠামো একপেশে ও ভারসাম্যহীন। এটি ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতি বাস্তবায়নকে অসম্ভব করে তুলতে পারে। শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায় এই আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোটি একপেশেভাবে কার্যকর হয়েছে। তাই জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় জ্বালানি সনদ চুক্তির বিরোধিতা করাটাই মূল কাজ।’

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতি বাস্তবায়নে জ্বালানি সনদ চুক্তির ভূমিকা শীর্ষক এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপে ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, পাকিস্তান আমলের ২২ পরিবারের মতো বর্তমানেও সরকারকে ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী সুবিধা নিচ্ছে। এ ধরনের জ্বালানি সনদ চুক্তি করলে পুনরায় তাদের সুযোগ করে দেয়া হবে। আমরা জ্বালানি সেক্টর চালানোর সক্ষমতা হারিয়েছি। আমরা একটি পাওয়ার প্লান্ট চালাতে পারি না, বিদেশ থেকে প্রশিক্ষিত কর্মী আনতে হয়। আমাদের সক্ষমতা শুধু দেশের জ্বালানি খাতের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া। তিনি বলেন, যে টাকা গ্যাস উৎপাদন ও উত্তোলনে খরচ করার কথা সেটি ব্যবহার করা হয়েছে আমদানিতে। জনগণের টাকা এভাবে খরচ করা লুণ্ঠনের মতো। সমুদ্রের গ্যাস উত্তোলন করতে না পারলে স্থলের গ্যাস উত্তোলন করা যায় বাপেক্সকে দিয়ে। কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না। করা হচ্ছে শুধু আমদানি যার ফলে মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ক্ষতিকর ফলের শিকার হচ্ছে জনগণ। ভোক্তার অধিকার রক্ষায় কিছুই করা হচ্ছে না যার ফলাফল মানুষ সক্ষমতা হারাচ্ছে। আর দেশে বিদ্যুৎ জ্বালানির সংকট।

জ্বালানি রূপান্তর নীতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. এম শামসুল আালম বলেন, গ্যস খাতে ২৫ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, বিদ্যুৎ খাতে ১১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি ও তেল (তরল) জ্বলানি খাতে ৪ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য করণীয় হলো- সরকার জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তর করতে পারবে না। সরকার খাদ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে নীতি ব্যবহার করে তেমনি গ্যাস বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও একই নীতি গ্রহণ করতে হবে। জ্বালানি প্রতিষ্ঠানে আমলাদের সরিয়ে দিয়ে দক্ষ প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। পরে মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা বলেন, জ্বালানি সনদে যেখানে বিনীয়োগকারীদের স্বার্থ দেখা হয় সেখানে দেশের স্বার্থ উপেক্ষিত হবেই। সনদটি ভয়াবহ। রাষ্ট্র কিভাবে এমন একটা সনদ করে যা আমাদের পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। রাষ্ট্রের চেয়ে বিনিয়োগকারীরা বড় হয়ে গেলে এমনটি হয়। তাই এই নীতির সঙ্গে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে, তরুণদের কাছে তুলে ধরতে হবে। জ্বালানি নীতি বাস্তবায়নের জন্য জ্বালানি সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলোতে জনমত গড়ে তুলতে হবে।

সংলাপে অংশগ্রহণ করেন প্রকৌশলী শুভ কিবরিয়া, অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মনজুর ই-খোদাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এনজিও সংগঠনের প্রতিনিধিরা।