বাংলাদেশ ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাস করে

ডিডিআইতে যুক্ত হতে চীনের প্রস্তাব

বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য চীনের সহযোগিতা চেয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলছেন, চীন এ ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। আর চীন তাদের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) যুক্ত হতে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে চীনকে কিছু জানায়নি। চীন তাইওয়ান ইস্যুতে ঢাকার কাছে কী প্রত্যাশা করে তা জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাস করে বলে চীনকে জানিয়েছে।

ঢাকায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর শেষে গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এসব তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে সকালে সোনারগাঁও হোটেলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন ড. মোমেন। বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ৪টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। পরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সকাল পৌন ১১টায় ওয়াং ই ঢাকা ছেড়ে যান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে দারিদ্র্য দূর করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দারিদ্র্য দূর করতে চীনের সহায়তা চেয়েছি। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তারাও লড়াই করছেন। আমরা একযোগে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাজ করবো।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিজ দেশকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। আর এই বিচ্ছিন্নতায় কোন কোন পক্ষ উসকে দিচ্ছে। তবে আমরা বলেছি, আমরা সব সময় এক চীন নীতিতে বিশ্বাসী।

ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের কাছে আমরা সহায়তা চেয়েছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মায়ানমারকে অত্যন্ত ‘ডিফিকল্ট স্টেট’ বলে উল্লেখ করে তাদের প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় দুই দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে আসেন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ঢাকায় পৌঁছেই বিকেলে তিনি ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করেন। গতকাল সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

৪ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর : দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। গতকাল সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র বৈঠকের পর এই স্মারক সই হয়। সমঝোতা স্মারকগুলো হলোÑ পিরোজপুরে অষ্টম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেতুর হস্তান্তর সনদ, দুর্যোগ মোকাবিলা সহায়তার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারকের নবায়ন, ২০২২-২৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকের নবায়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির মধ্যে মেরিন সায়েন্স নিয়ে সমঝোতা স্মারক।

সকালে বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে আলোচনায় উঠলে ওয়াং ই শীঘ্রই আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চীনের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন। এজন্য দ্রুতই ভিসা ইস্যু শুরু হবে বলে আশ্বাস দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। করোনা মহামারীতে চীন থেকে দেশে এসে অন্তত পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী বাংলাদেশে আটকা পড়েছিলেন। শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই, চীনে যাত্রা বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী দেশে অপেক্ষায় ছিলেন। আমরা তাদের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগের মধ্যে ছিলাম। দু-একদিনের মধ্যে চীনে ফেরত যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া শুরু হবে।’

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান। এতদিন চীনের বাজারে প্রবেশে বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছে। এখন থেকে এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশের আরও এক শতাংশ পণ্য। ফলে এখন থেকে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ পণ্য চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। এর মধ্যে পোশাক শিল্পসহ অন্য পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।

বৈঠকের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের উত্তেজনা ও তাইওয়ান ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি যে তাইওয়ান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি মানার বিষয়টিতে তারা জোর দেয়। তারা আমাদের কাছে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। ‘এক চীন’ নীতি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের জন্য তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমরা আমাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছি বলে তিনি (ওয়াং ই) কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

সোমবার, ০৮ আগস্ট ২০২২ , ২৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ৯ মহররম ১৪৪৪

বাংলাদেশ ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাস করে

ডিডিআইতে যুক্ত হতে চীনের প্রস্তাব

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য চীনের সহযোগিতা চেয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলছেন, চীন এ ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। আর চীন তাদের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) যুক্ত হতে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে চীনকে কিছু জানায়নি। চীন তাইওয়ান ইস্যুতে ঢাকার কাছে কী প্রত্যাশা করে তা জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাস করে বলে চীনকে জানিয়েছে।

ঢাকায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর শেষে গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এসব তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে সকালে সোনারগাঁও হোটেলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন ড. মোমেন। বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ৪টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। পরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সকাল পৌন ১১টায় ওয়াং ই ঢাকা ছেড়ে যান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে দারিদ্র্য দূর করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দারিদ্র্য দূর করতে চীনের সহায়তা চেয়েছি। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তারাও লড়াই করছেন। আমরা একযোগে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাজ করবো।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিজ দেশকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। আর এই বিচ্ছিন্নতায় কোন কোন পক্ষ উসকে দিচ্ছে। তবে আমরা বলেছি, আমরা সব সময় এক চীন নীতিতে বিশ্বাসী।

ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের কাছে আমরা সহায়তা চেয়েছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মায়ানমারকে অত্যন্ত ‘ডিফিকল্ট স্টেট’ বলে উল্লেখ করে তাদের প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় দুই দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে আসেন। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ঢাকায় পৌঁছেই বিকেলে তিনি ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করেন। গতকাল সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

৪ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর : দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিষয়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। গতকাল সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র বৈঠকের পর এই স্মারক সই হয়। সমঝোতা স্মারকগুলো হলোÑ পিরোজপুরে অষ্টম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেতুর হস্তান্তর সনদ, দুর্যোগ মোকাবিলা সহায়তার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারকের নবায়ন, ২০২২-২৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকের নবায়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির মধ্যে মেরিন সায়েন্স নিয়ে সমঝোতা স্মারক।

সকালে বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে আলোচনায় উঠলে ওয়াং ই শীঘ্রই আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চীনের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন। এজন্য দ্রুতই ভিসা ইস্যু শুরু হবে বলে আশ্বাস দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। করোনা মহামারীতে চীন থেকে দেশে এসে অন্তত পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী বাংলাদেশে আটকা পড়েছিলেন। শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই, চীনে যাত্রা বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী দেশে অপেক্ষায় ছিলেন। আমরা তাদের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগের মধ্যে ছিলাম। দু-একদিনের মধ্যে চীনে ফেরত যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া শুরু হবে।’

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান। এতদিন চীনের বাজারে প্রবেশে বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছে। এখন থেকে এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশের আরও এক শতাংশ পণ্য। ফলে এখন থেকে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ পণ্য চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। এর মধ্যে পোশাক শিল্পসহ অন্য পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।

বৈঠকের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের উত্তেজনা ও তাইওয়ান ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি যে তাইওয়ান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি মানার বিষয়টিতে তারা জোর দেয়। তারা আমাদের কাছে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। ‘এক চীন’ নীতি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের জন্য তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমরা আমাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছি বলে তিনি (ওয়াং ই) কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।