চলন্ত বাস থেকে স্বামীকে ফেলে দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ, ৫ আসামির স্বীকারোক্তি

গাজীপুরের শ্রীপুরে তাকওয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী চলন্ত বাস থেকে স্বামীকে মারধর করে ফেলে দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তারা এই জবানবন্দি দেন। এছাড়া ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এতে ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

গতকাল বিকেলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ তার কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনই গতকাল বিকেলে গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের মধ্যে সজীব ও শাহীন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইখলাস উদ্দিনের কাছে, রাকিব মোল্লাহ ও সুমন হাসান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইসরাত জেনিফার জেরিনের কাছে এবং সুমন খান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জুবাইদা নাসরিন বর্নার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আর ভিকটিম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোসা. আরিফা বেগমের আদালতে (২২ ধারায়) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে বিচারকের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন জানান, নওগাঁয় আত্মীয়র বাড়ি বেড়ানো শেষে ওই নারী স্বামীর সঙ্গে বাসে করে এসে শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস মোড়ে গিয়ে নামেন। পরে তিনি মাওনা যাওয়ার উদ্দেশে স্বামীকে নিয়ে তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসটি গাজীপুর মহানগরী অতিক্রম করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে শ্রীপুরের মাওনা ফ্লাইওয়ে পৌঁছার আগে বাসের চালক ও হেলপার এবং অন্যরা মিলে ওই নারীর স্বামীকে মারধর করে জোর করে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেন। পরে বাসটি মাওনা হয়ে রাজেন্দ্রপুর এলাকার দিকে রওনা হয়। পথে ওই নারীকে তারা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে এবং তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ এবং নগদ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। ধর্ষণের পর নারীকে মাওনা থেকে গাজীপুরের দিকে যাওয়ার পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাজেন্দ্রপুরের কাছে নির্জন স্থানে ১০০ টাকা দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে বাসটি নিয়ে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়।

পরে ওই নারী হোতাপাড়া এলাকায় অবস্থিত জয়দেবপুর থানায় গিয়ে ঘটনা পুলিশকে জানায়। জয়দেবপুর থানা পুলিশ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও শ্রীপুর থানা পুলিশকে অবহিত করে। এ দম্পতি ময়মনসিংহের ভালুকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনার আট ঘণ্টার মধ্যে জেলা পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে এবং লুণ্ঠিত সব মালামাল ও তাকওয়া বাসটি জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার মালামালের মধ্যে রয়েছে একটি বাটন মোবাইল, ভেনিটি ব্যাগ, ১০ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রাভেল ব্যাগ ২টি, চাল ২ কেজি, ১/২ কেজি ভুট্টা, ২৫০ গ্রাম পোলার চাল, এটিএম কার্ড ১টি, এক বয়াম আমের আচার।

গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনকে গতকাল দুপুরে গাজীপুরের তিনটি ভিন্ন আদালতে তোলা হয়। পরে তারা সেখানে বিচারকদের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

এদিকে শনিবার রাতে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ওই নারীকে ভর্তি করা হয়। পরে গতকাল দুপুরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয় বলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. এএনএম আল মামুন জানিয়েছেন।

সোমবার, ০৮ আগস্ট ২০২২ , ২৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ৯ মহররম ১৪৪৪

চলন্ত বাস থেকে স্বামীকে ফেলে দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ, ৫ আসামির স্বীকারোক্তি

প্রতিনিধি, গাজীপুর

গাজীপুরের শ্রীপুরে তাকওয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী চলন্ত বাস থেকে স্বামীকে মারধর করে ফেলে দিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তারা এই জবানবন্দি দেন। এছাড়া ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এতে ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

গতকাল বিকেলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ তার কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনই গতকাল বিকেলে গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের মধ্যে সজীব ও শাহীন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইখলাস উদ্দিনের কাছে, রাকিব মোল্লাহ ও সুমন হাসান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইসরাত জেনিফার জেরিনের কাছে এবং সুমন খান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জুবাইদা নাসরিন বর্নার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আর ভিকটিম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোসা. আরিফা বেগমের আদালতে (২২ ধারায়) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে বিচারকের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন জানান, নওগাঁয় আত্মীয়র বাড়ি বেড়ানো শেষে ওই নারী স্বামীর সঙ্গে বাসে করে এসে শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস মোড়ে গিয়ে নামেন। পরে তিনি মাওনা যাওয়ার উদ্দেশে স্বামীকে নিয়ে তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসটি গাজীপুর মহানগরী অতিক্রম করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে শ্রীপুরের মাওনা ফ্লাইওয়ে পৌঁছার আগে বাসের চালক ও হেলপার এবং অন্যরা মিলে ওই নারীর স্বামীকে মারধর করে জোর করে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেন। পরে বাসটি মাওনা হয়ে রাজেন্দ্রপুর এলাকার দিকে রওনা হয়। পথে ওই নারীকে তারা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে এবং তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ এবং নগদ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। ধর্ষণের পর নারীকে মাওনা থেকে গাজীপুরের দিকে যাওয়ার পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাজেন্দ্রপুরের কাছে নির্জন স্থানে ১০০ টাকা দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে বাসটি নিয়ে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়।

পরে ওই নারী হোতাপাড়া এলাকায় অবস্থিত জয়দেবপুর থানায় গিয়ে ঘটনা পুলিশকে জানায়। জয়দেবপুর থানা পুলিশ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও শ্রীপুর থানা পুলিশকে অবহিত করে। এ দম্পতি ময়মনসিংহের ভালুকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনার আট ঘণ্টার মধ্যে জেলা পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে এবং লুণ্ঠিত সব মালামাল ও তাকওয়া বাসটি জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার মালামালের মধ্যে রয়েছে একটি বাটন মোবাইল, ভেনিটি ব্যাগ, ১০ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রাভেল ব্যাগ ২টি, চাল ২ কেজি, ১/২ কেজি ভুট্টা, ২৫০ গ্রাম পোলার চাল, এটিএম কার্ড ১টি, এক বয়াম আমের আচার।

গ্রেপ্তারকৃত ৫ জনকে গতকাল দুপুরে গাজীপুরের তিনটি ভিন্ন আদালতে তোলা হয়। পরে তারা সেখানে বিচারকদের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

এদিকে শনিবার রাতে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ওই নারীকে ভর্তি করা হয়। পরে গতকাল দুপুরে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষ হয় বলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. এএনএম আল মামুন জানিয়েছেন।