ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে প্রখর রোদ। মাঝে মধ্যে দু-এক পশলা বৃষ্টিতে কিছুক্ষণের জন্য স্বস্তি মিললেও তার স্থায়িত্ব বেশি সময়ের জন্য নয়। বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে তাপমাত্রা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। এ সবই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। আর প্রকৃতির এমন খামখেয়ালি আবহাওয়ায় সারাদেশের মতো ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বাড়িতে বাড়িতে কিছুদিন ধরে জ্বর, সর্দির রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এরই মধ্যে প্রকোপ বেড়েছে ডায়রিয়ার। এমন চিত্র শহরের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। কোন পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে পর্যায়ক্রমে ওই পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশি অসুস্থরা হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। তবে তাদের অনেকের মধ্যে করোনা উপসর্র্গ দেখা দিলেও নমুনা পরীক্ষায় তেমন একটা আগ্রহ নেই। চিকিৎসকরা বলছেন এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি সাধারণত ভাইরাল ফিভার। ঠিকমতো ব্যবস্থাপত্র ও বিশ্রাম নিলেই তারাতাড়ি সুস্থ হওয়া সম্ভব।
গত বুধবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিন দেখা যায়, অন্যান্য সময়ের তুলনায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি। শয্যা সংকটের কারণে হাসপাতালের মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে অনেকের, সেখান থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রোগব্যাধি বেড়েছে। এর মধ্যে জ্বর-সর্দির রোগীই বেশি। হাসপাতালটির পরিসংখ্যান অফিস বলছে, চলতি মাসের ৮ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৩৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬২ জন ভর্তি হয়েছেন জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে। সঙ্গে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৯ জন। এর পরের এক সপ্তাহ বাদ দিয়ে গত ২১ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ১০৮ জন জ্বরের রোগী এসেছে। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন। আর ডায়রিয়া আক্রান্ত ৫২ জন রোগীর মধ্যে ভর্তি হয়েছে ৪৩ জন। অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২ মাস ধরে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অন্য সময়ের তুলনায় বেড়েছে। তাদের মধ্যে জ্বর সর্দি কাশি ও ডায়রিয়ার রোগীই বেশি। তাছাড়া অনেকের মধ্যে করোনার উপসর্গ থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তাদের কোন আগ্রহ নেই। তারা সাধারণ জ্বর-সর্দি ভেবে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
হাসপাতালে ভর্তি উপজেলার ফরাসপুর গ্রামের আশাদুল ইসলাম ও তত্বিপুর গ্রামের মতিয়ার রহমান জানান, তারা জ্বর ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গত ৪ দিন ধরে হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রথমে ঘন ঘন বমি ও পাতলা পায়খানা হচ্ছে পরে প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হচ্ছেন।
উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের ছবিরন নেছা জানান, গত ৩ দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। জ্বর এখন কিছুটা কম হলেও দুর্বলতা কাটছে না। তিনি বলেন, তার গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতে এখন জ্বর, সর্দি, কাশির রোগী রয়েছে।
জ্বরে আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি ২ মাস বয়সী শিশু তাসকিনের মা সাদিয়া খাতুন জানান, তাসকিন গত সপ্তাহ খানেক আগে থেকে জ্বরে আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন দেয়ার পর এখন একটু ভালো।
মাত্র ৯ মাসের শিশু খালিদ হাসানের মা নরেন্দ্রপুর গ্রামের রোজিনা খাতুন জানান, খালিদ গত ৬ দিন ধরে জ্বর ঠাণ্ডায় আক্রান্ত। গতকাল বিকেলে তাকে ভর্তি করেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কোন কোন সময়ে কিছু রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সম্প্রতি জ্বর সর্দি কাশির রোগী হাসপাতালে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়ার রোগীও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত জ্বর-ঠাণ্ডা-কাশি নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবনের পর সুস্থ হয়ে যায়। তবে করোনার জ্বর দীর্ঘ সময় ও তীব্র হলে নমুনা পরীক্ষার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তবে ডায়রিয়া সাধারণত আবহাওয়াজনিত বলে তারা মনে করছেন। রোগীরা কয়েকদিনে স্বাভাবিক হচ্ছেন। ফলে ভয়ের কিছু নেই।
সোমবার, ০৮ আগস্ট ২০২২ , ২৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ৯ মহররম ১৪৪৪
সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে প্রখর রোদ। মাঝে মধ্যে দু-এক পশলা বৃষ্টিতে কিছুক্ষণের জন্য স্বস্তি মিললেও তার স্থায়িত্ব বেশি সময়ের জন্য নয়। বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে তাপমাত্রা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। এ সবই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। আর প্রকৃতির এমন খামখেয়ালি আবহাওয়ায় সারাদেশের মতো ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বাড়িতে বাড়িতে কিছুদিন ধরে জ্বর, সর্দির রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এরই মধ্যে প্রকোপ বেড়েছে ডায়রিয়ার। এমন চিত্র শহরের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। কোন পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে পর্যায়ক্রমে ওই পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশি অসুস্থরা হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। তবে তাদের অনেকের মধ্যে করোনা উপসর্র্গ দেখা দিলেও নমুনা পরীক্ষায় তেমন একটা আগ্রহ নেই। চিকিৎসকরা বলছেন এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি সাধারণত ভাইরাল ফিভার। ঠিকমতো ব্যবস্থাপত্র ও বিশ্রাম নিলেই তারাতাড়ি সুস্থ হওয়া সম্ভব।
গত বুধবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিন দেখা যায়, অন্যান্য সময়ের তুলনায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি। শয্যা সংকটের কারণে হাসপাতালের মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে অনেকের, সেখান থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রোগব্যাধি বেড়েছে। এর মধ্যে জ্বর-সর্দির রোগীই বেশি। হাসপাতালটির পরিসংখ্যান অফিস বলছে, চলতি মাসের ৮ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৩৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬২ জন ভর্তি হয়েছেন জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে। সঙ্গে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৯ জন। এর পরের এক সপ্তাহ বাদ দিয়ে গত ২১ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ১০৮ জন জ্বরের রোগী এসেছে। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন। আর ডায়রিয়া আক্রান্ত ৫২ জন রোগীর মধ্যে ভর্তি হয়েছে ৪৩ জন। অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২ মাস ধরে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অন্য সময়ের তুলনায় বেড়েছে। তাদের মধ্যে জ্বর সর্দি কাশি ও ডায়রিয়ার রোগীই বেশি। তাছাড়া অনেকের মধ্যে করোনার উপসর্গ থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তাদের কোন আগ্রহ নেই। তারা সাধারণ জ্বর-সর্দি ভেবে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
হাসপাতালে ভর্তি উপজেলার ফরাসপুর গ্রামের আশাদুল ইসলাম ও তত্বিপুর গ্রামের মতিয়ার রহমান জানান, তারা জ্বর ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গত ৪ দিন ধরে হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রথমে ঘন ঘন বমি ও পাতলা পায়খানা হচ্ছে পরে প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হচ্ছেন।
উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের ছবিরন নেছা জানান, গত ৩ দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। জ্বর এখন কিছুটা কম হলেও দুর্বলতা কাটছে না। তিনি বলেন, তার গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতে এখন জ্বর, সর্দি, কাশির রোগী রয়েছে।
জ্বরে আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি ২ মাস বয়সী শিশু তাসকিনের মা সাদিয়া খাতুন জানান, তাসকিন গত সপ্তাহ খানেক আগে থেকে জ্বরে আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি করে অক্সিজেন দেয়ার পর এখন একটু ভালো।
মাত্র ৯ মাসের শিশু খালিদ হাসানের মা নরেন্দ্রপুর গ্রামের রোজিনা খাতুন জানান, খালিদ গত ৬ দিন ধরে জ্বর ঠাণ্ডায় আক্রান্ত। গতকাল বিকেলে তাকে ভর্তি করেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কোন কোন সময়ে কিছু রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সম্প্রতি জ্বর সর্দি কাশির রোগী হাসপাতালে বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়ার রোগীও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত জ্বর-ঠাণ্ডা-কাশি নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবনের পর সুস্থ হয়ে যায়। তবে করোনার জ্বর দীর্ঘ সময় ও তীব্র হলে নমুনা পরীক্ষার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তবে ডায়রিয়া সাধারণত আবহাওয়াজনিত বলে তারা মনে করছেন। রোগীরা কয়েকদিনে স্বাভাবিক হচ্ছেন। ফলে ভয়ের কিছু নেই।