‘রেকি করে দেশের বড় বড় শহরে স্বর্ণের দোকানে চুরি-ডাকাতি করে তারা’

খিলক্ষেতের স্বর্ণের দোকানে চুরির ঘটনায় দু’জন গ্রেপ্তার

স্বর্ণের দোকানে চুরি করার জন্য কয়েকদিন ধরে রেকি করা হয়। এরপর সময় ও সুযোগ বুঝে সার্টারের তালা কেটে নিয়ে যাওয়া হয় দোকানের স্বর্ণলঙ্কার। চুরি করা স্বর্ণলঙ্কার নিজেদের কাছে রেখে সেগুলো আস্তে আস্তে মার্কেটে বিক্রি করে যে টাকা আসে সেই টাকা ভাগাভাগি করে নেয় দলের সদস্যরা। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে স্বর্ণের দোকান টার্গেট করে চুরি ডাকাতি করতো চক্রটি। দলের প্রধান আলাউদ্দিন একাধিকবার জেলে গেলেও জামিনে বের হয়ে এসে ফের জড়িয়েছে চুরি ডাকাতিতে।

রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকা থেকে ৪০ ভরি স্বর্ণলঙ্কার চুরির ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চক্রের মূল হোতা আলাউদ্দিনসহ দুইজনকে গ্রেপ্তারে এমন তথ্য পেয়েছে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের পুলিশ। পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. শাহ কামালের নেতৃত্বে এ অভিখানে চুরি করা স্বর্ণালঙ্কারের ১৬ ভরি উদ্ধার করা হয়েছে। আলাউদ্দিনের সঙ্গে তার সহযোগী মো. শাহজালালকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৯ জুলাই কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা মার্কেটে স্বর্ণের দোকানে দূর্ধর্ষ চুরির ঘটনাটি ঘটে। জুম্মার নামাজের সময় সংঘবদ্ধ দল দোকনের তালা কেটে চুরি করে ৪০ ভরি স্বর্ণ ও ৫০ ভরি রুপনার গহনা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দোকানের মালিক রুপনগর থানায় একটি মামলা করে। মামলার সূত্র ধরে এ অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. শাহ কামাল সংবাদকে জানান, গত ২৯ জুলাই রজনীগন্ধা মার্কেটের নিউ বিসমিল্লাহ্ জুয়েলার্সের মালিক দুপুরে পার্শ্ববর্তী রূপনগর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে তিনি রাস্তায় পেয়ারা কেনার সময় জানতে পারেন তার দোকানের সাটার খোলা। তিনি দ্রুত দোকানে এসে দেখেন স্বর্ণের বিভিন্ন ধরনের ৪০ ভরি ও রূপার ৫০ ভরি গহনা চুরি হয়ে গেছে। এ ঘটনার পরদিন তার অভিযোগের ভিত্তিতে রূপনগর থানায় একটি মামলা রুজু হয়।

‘দিন দুপুরে স্বর্ণের দোকানে এমন চুরির পরপরই ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে কাজ শুরু করে পুলিশ। এক পর্যায়ে সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ চক্রের একজনের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট রাত সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রাামের কর্ণফুলি থানার স্বর্ণারটেক গ্রাম থেকে মো. আলাউদ্দিন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় কুমিল্লার সদর দক্ষিণ এলাকা থেকে মো. শাহজালাল নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর তার হেফাজত থেকে বাদীর শনাক্তমতে উদ্ধার করা হয় ১৬ ভরি ৪ আনা স্বর্ণলংকার। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার ও চুরি যাওয়া বাকি স্বর্ণলংকার উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা। পুলিশ জানিয়েছে, চক্রের দলনেতা আলাদ্দিনের নামে একাধিক চুরি ডাকাতির মামলা রয়েছে। সে কয়েকবার জেলেও গিয়েছে। কিন্তু জামিনে বের হয়ে এসে আবার একই কাজ করে। রুপনগরের বিসমিল্লাহ স্বর্ণের দোকানে চুরির আগে চক্রের সদস্যরা দোকানটিকে রেকি করে। দোকান মালিক কখন দোকান খোলেন, কখন বন্ধ করেন সবকিছু আগেই রেকি করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন দুজন দোকানে যান শুক্রবার নামাজের আগে। দোকান মালিক নামাজের জন্য দোকান বন্ধ করলে তার সঙ্গে নামাজের কথা বলে দলের এক সদস্য বের হয়ে যায়। মূলত ওই সদস্য দোকান মালিককে পাহাড়ায় রাখার জন্যই গিয়েছিল। অন্যরা লুঙ্গি পড়ে আশেপাশে অবস্থান নেয়। দুজন গিয়ে দোকানের তালা কেটে ফেলে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দোকানের তালা এমনভাবে কেটে ফেলে যাতে আশেপাশের লোকজনের নজরে না পড়ে তারা। এরপর তারা স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কার নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

এডিসি শাহ কামাল জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে এ চক্রের দলনেতা আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরগুলো তারা এভাবে চুরি, ডাকাতি করে। তাদের টার্গেট কেবল স্বর্ণের দোকানেই চুরি বা ডাকাতি। চুরি বা ডাকাতি করা মালামাল তারা কিছুদিন নিজেদের কাছে রাখে। পরে সেগুলো বিভিন্ন স্বর্ণকারের কাছে বিক্রি করে দেয়। কখনো স্বর্ণলঙ্কার অথবা বিক্রির টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। চক্রের ৭ থেকে ৮ জন সদস্য রয়েছে। দলনেতা আলাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রত্যেকের নাম পরিচয় বিস্তারিত পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সোমবার, ০৮ আগস্ট ২০২২ , ২৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ৯ মহররম ১৪৪৪

‘রেকি করে দেশের বড় বড় শহরে স্বর্ণের দোকানে চুরি-ডাকাতি করে তারা’

খিলক্ষেতের স্বর্ণের দোকানে চুরির ঘটনায় দু’জন গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

স্বর্ণের দোকানে চুরি করার জন্য কয়েকদিন ধরে রেকি করা হয়। এরপর সময় ও সুযোগ বুঝে সার্টারের তালা কেটে নিয়ে যাওয়া হয় দোকানের স্বর্ণলঙ্কার। চুরি করা স্বর্ণলঙ্কার নিজেদের কাছে রেখে সেগুলো আস্তে আস্তে মার্কেটে বিক্রি করে যে টাকা আসে সেই টাকা ভাগাভাগি করে নেয় দলের সদস্যরা। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে স্বর্ণের দোকান টার্গেট করে চুরি ডাকাতি করতো চক্রটি। দলের প্রধান আলাউদ্দিন একাধিকবার জেলে গেলেও জামিনে বের হয়ে এসে ফের জড়িয়েছে চুরি ডাকাতিতে।

রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকা থেকে ৪০ ভরি স্বর্ণলঙ্কার চুরির ঘটনায় করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চক্রের মূল হোতা আলাউদ্দিনসহ দুইজনকে গ্রেপ্তারে এমন তথ্য পেয়েছে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের পুলিশ। পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. শাহ কামালের নেতৃত্বে এ অভিখানে চুরি করা স্বর্ণালঙ্কারের ১৬ ভরি উদ্ধার করা হয়েছে। আলাউদ্দিনের সঙ্গে তার সহযোগী মো. শাহজালালকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৯ জুলাই কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা মার্কেটে স্বর্ণের দোকানে দূর্ধর্ষ চুরির ঘটনাটি ঘটে। জুম্মার নামাজের সময় সংঘবদ্ধ দল দোকনের তালা কেটে চুরি করে ৪০ ভরি স্বর্ণ ও ৫০ ভরি রুপনার গহনা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দোকানের মালিক রুপনগর থানায় একটি মামলা করে। মামলার সূত্র ধরে এ অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. শাহ কামাল সংবাদকে জানান, গত ২৯ জুলাই রজনীগন্ধা মার্কেটের নিউ বিসমিল্লাহ্ জুয়েলার্সের মালিক দুপুরে পার্শ্ববর্তী রূপনগর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে তিনি রাস্তায় পেয়ারা কেনার সময় জানতে পারেন তার দোকানের সাটার খোলা। তিনি দ্রুত দোকানে এসে দেখেন স্বর্ণের বিভিন্ন ধরনের ৪০ ভরি ও রূপার ৫০ ভরি গহনা চুরি হয়ে গেছে। এ ঘটনার পরদিন তার অভিযোগের ভিত্তিতে রূপনগর থানায় একটি মামলা রুজু হয়।

‘দিন দুপুরে স্বর্ণের দোকানে এমন চুরির পরপরই ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে কাজ শুরু করে পুলিশ। এক পর্যায়ে সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ চক্রের একজনের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট রাত সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রাামের কর্ণফুলি থানার স্বর্ণারটেক গ্রাম থেকে মো. আলাউদ্দিন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় কুমিল্লার সদর দক্ষিণ এলাকা থেকে মো. শাহজালাল নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর তার হেফাজত থেকে বাদীর শনাক্তমতে উদ্ধার করা হয় ১৬ ভরি ৪ আনা স্বর্ণলংকার। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার ও চুরি যাওয়া বাকি স্বর্ণলংকার উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা। পুলিশ জানিয়েছে, চক্রের দলনেতা আলাদ্দিনের নামে একাধিক চুরি ডাকাতির মামলা রয়েছে। সে কয়েকবার জেলেও গিয়েছে। কিন্তু জামিনে বের হয়ে এসে আবার একই কাজ করে। রুপনগরের বিসমিল্লাহ স্বর্ণের দোকানে চুরির আগে চক্রের সদস্যরা দোকানটিকে রেকি করে। দোকান মালিক কখন দোকান খোলেন, কখন বন্ধ করেন সবকিছু আগেই রেকি করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন দুজন দোকানে যান শুক্রবার নামাজের আগে। দোকান মালিক নামাজের জন্য দোকান বন্ধ করলে তার সঙ্গে নামাজের কথা বলে দলের এক সদস্য বের হয়ে যায়। মূলত ওই সদস্য দোকান মালিককে পাহাড়ায় রাখার জন্যই গিয়েছিল। অন্যরা লুঙ্গি পড়ে আশেপাশে অবস্থান নেয়। দুজন গিয়ে দোকানের তালা কেটে ফেলে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দোকানের তালা এমনভাবে কেটে ফেলে যাতে আশেপাশের লোকজনের নজরে না পড়ে তারা। এরপর তারা স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কার নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

এডিসি শাহ কামাল জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে এ চক্রের দলনেতা আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরগুলো তারা এভাবে চুরি, ডাকাতি করে। তাদের টার্গেট কেবল স্বর্ণের দোকানেই চুরি বা ডাকাতি। চুরি বা ডাকাতি করা মালামাল তারা কিছুদিন নিজেদের কাছে রাখে। পরে সেগুলো বিভিন্ন স্বর্ণকারের কাছে বিক্রি করে দেয়। কখনো স্বর্ণলঙ্কার অথবা বিক্রির টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। চক্রের ৭ থেকে ৮ জন সদস্য রয়েছে। দলনেতা আলাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রত্যেকের নাম পরিচয় বিস্তারিত পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।