বিএডিসির গুদাম সংকট

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আমদানি করা প্রায় ২০ হাজার টন নন-ইউরিয়া সার খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে চাতালের মাঠে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই স্তূপাকারে রাখা হয়েছে এসব সার। এগুলো দেশের ১৫ জেলায় সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে গত শনিবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খোলা আকাশের নিচে অরক্ষিত অবস্থায় সার রাখায় রোদে শুকিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ও গলে জমাট বেঁধে সার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সার জমাট বেঁধে গেলে এর গুণগত মানও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অবশ্য যে প্রক্রিয়ায় সার রাখা হয়েছে তাতে ক্ষতি বা গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন কর্তাব্যক্তিরা। তবে দীর্ঘদিন এভাবে সার রাখলে বা সারের ভেতর বৃষ্টির পানি ঢুকলে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারাও।

বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ৫-৭ বছর ধরে সরকার বিদেশ থেকে বার্ষিক চাহিদার অতিরিক্ত নন-ইউরিয়া সার আমদানি করে আসছিল। ফলে বিএডিসির গুদামগুলোতে এমনিতেই ধারণক্ষমতার ২-৩ গুণ বেশি সার রাখা হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নির্ধারিত সময়ে নন-ইউরিয়া সার আমদানি ব্যাহত হতে পারে। এতে কৃষি উৎপাদনে পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। তাই সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলতি বছরে প্রায় ২০ লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানি করা হয়েছে। যা বিএডিসির গুদামের ধারণক্ষমতার প্রায় ১০ গুণ বেশি। সারা দেশে বিএডিসির সব গুদামের ধারণক্ষমতা রয়েছে সর্বোচ্চ ২ লাখ ১০ হাজার টন।

সংকটকালে কৃষি উৎপাদনের নেতিবাচক প্রভাব কাটাতে অতিরিক্ত সার আমদানি করা হয়েছেÑএটা ভালো কথা। কৃষক এবং কৃষি উৎপাদন নিয়ে সরকারের আগাম চিন্তা রয়েছে। অনেক নেতিবাচক খবরের মধ্যে এটি একটি ইতিবাচক খবর বলেই আমরা মনে করি। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা এজন্য সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বোরো চাষের মৌসুম শুরু হতে এখনও দুই মাস বাকি। বর্ষা মৌসুম চলছে। এ সময়ের মধ্যে স্তূপাকারে রাখা সার যে নষ্ট হবে না-তার কী নিশ্চয়তা আছে। বিগত সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এভাবে সার নষ্ট হওয়ার নজির রয়েছে।

সংকট কাটাতে আমদানি করা হলেও এত সার যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হবে। তাই সাময়িক সময়ের জন্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গুদাম ভাড়া নেয়া যায় কিনাÑসেটা ভেবে দেখতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এমন সংকট তৈরি না হয় সেজন্য গুদামের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। এজন্য বিএডিসির নতুন গুদাম নির্মাণ করতে হবে। তবে তা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, নির্মাণ করতে কয়েক বছর লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।

নির্মাণ শিল্পে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ এখন সহজ হয়েছে। চাইলেই দ্রুততম সময়ে যে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা সম্ভব এবং খুব বেশি ব্যয়বহুলও নয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা বা পরিকল্পনা থাকলেই তা করা যায়।

সোমবার, ০৮ আগস্ট ২০২২ , ২৪ শ্রাবণ ১৪২৯ ৯ মহররম ১৪৪৪

বিএডিসির গুদাম সংকট

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আমদানি করা প্রায় ২০ হাজার টন নন-ইউরিয়া সার খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে চাতালের মাঠে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই স্তূপাকারে রাখা হয়েছে এসব সার। এগুলো দেশের ১৫ জেলায় সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে গত শনিবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খোলা আকাশের নিচে অরক্ষিত অবস্থায় সার রাখায় রোদে শুকিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ও গলে জমাট বেঁধে সার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সার জমাট বেঁধে গেলে এর গুণগত মানও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অবশ্য যে প্রক্রিয়ায় সার রাখা হয়েছে তাতে ক্ষতি বা গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন কর্তাব্যক্তিরা। তবে দীর্ঘদিন এভাবে সার রাখলে বা সারের ভেতর বৃষ্টির পানি ঢুকলে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারাও।

বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ৫-৭ বছর ধরে সরকার বিদেশ থেকে বার্ষিক চাহিদার অতিরিক্ত নন-ইউরিয়া সার আমদানি করে আসছিল। ফলে বিএডিসির গুদামগুলোতে এমনিতেই ধারণক্ষমতার ২-৩ গুণ বেশি সার রাখা হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নির্ধারিত সময়ে নন-ইউরিয়া সার আমদানি ব্যাহত হতে পারে। এতে কৃষি উৎপাদনে পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। তাই সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলতি বছরে প্রায় ২০ লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানি করা হয়েছে। যা বিএডিসির গুদামের ধারণক্ষমতার প্রায় ১০ গুণ বেশি। সারা দেশে বিএডিসির সব গুদামের ধারণক্ষমতা রয়েছে সর্বোচ্চ ২ লাখ ১০ হাজার টন।

সংকটকালে কৃষি উৎপাদনের নেতিবাচক প্রভাব কাটাতে অতিরিক্ত সার আমদানি করা হয়েছেÑএটা ভালো কথা। কৃষক এবং কৃষি উৎপাদন নিয়ে সরকারের আগাম চিন্তা রয়েছে। অনেক নেতিবাচক খবরের মধ্যে এটি একটি ইতিবাচক খবর বলেই আমরা মনে করি। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা এজন্য সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু বোরো চাষের মৌসুম শুরু হতে এখনও দুই মাস বাকি। বর্ষা মৌসুম চলছে। এ সময়ের মধ্যে স্তূপাকারে রাখা সার যে নষ্ট হবে না-তার কী নিশ্চয়তা আছে। বিগত সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এভাবে সার নষ্ট হওয়ার নজির রয়েছে।

সংকট কাটাতে আমদানি করা হলেও এত সার যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হবে। তাই সাময়িক সময়ের জন্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গুদাম ভাড়া নেয়া যায় কিনাÑসেটা ভেবে দেখতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এমন সংকট তৈরি না হয় সেজন্য গুদামের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। এজন্য বিএডিসির নতুন গুদাম নির্মাণ করতে হবে। তবে তা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, নির্মাণ করতে কয়েক বছর লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।

নির্মাণ শিল্পে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ এখন সহজ হয়েছে। চাইলেই দ্রুততম সময়ে যে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা সম্ভব এবং খুব বেশি ব্যয়বহুলও নয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা বা পরিকল্পনা থাকলেই তা করা যায়।