দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ৯

যাত্রীদের অভিযোগ, চালক-হেলপার গাঁজাসেবন করে বাস চালাচ্ছিল, তদন্ত কমিটি গঠন, আহত ৩৫

গত রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে তারাগঞ্জের সলেয়াশাহ ব্রিজের কাছে যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। আহত ৩৫ জন। এদের মধ্যে ২০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৫ জন যার মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে রংপুর থেকে সৈয়দপুরের উদ্দেশে যাত্রাবাহী জোয়ানা বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে বাসের মধ্যেই গাঁজাসেবন করতে দেখেছে যাত্রীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলেও তারা কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ করেছে যাত্রীরা। গত রোববার রাত সাড়ে ১২টায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়াকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন বলে সংবাদকে জানিয়েছেন। কমিটি ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। গাঁজাসেবন করে গাড়ি চালানোর অভিযোগ তিনি পেয়েছেন জানিয়ে দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। এছাড়া নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নিহত ৯ জনের মধ্যে ঘটনাস্থলেই ৫ জন নিহত হয়েছে। আর ৪ জন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেনÑ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও কামার পাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উলিউর রহমান জুয়েল; ধনঞ্জয় চন্দ্র, পিতা বিনোদচন্দ্র, বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ি গ্রাম, সাদেক আলী; পিতা ফিরোজ মিয়া, বাড়ি গাইবান্ধা জেলার উত্তর কিতাবী গ্রাম, মোহসীন আলী সাগর; পিতা মকবুল হোসেন, বাড়ি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কোন্দলপাড়া গ্রাম, আনিসুর রহমান; পিতা কছিম উদ্দিন, বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার কাজিপাড়া গ্রাম, আনোয়ার হোসেন; পিতা মজিবর রহমান, বাড়ি একই উপজেলার হাড়িয়ালকুঠি ঝাকুয়া পাড়া গ্রাম ও শহিদুল ইসলাম খোকন; পিতা সাদেক আলী। বাকি ২ জনের নাম-ঠিকানা জানতে পারেনি পুলিশ। এদিকে নিহতদের স্বজনদের আর্তনাদে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। অনেকে স্বজনদের খোঁজে হাসপাতালে ভিড় করছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাত থেকেই আহতদের প্রয়োজনীয় রক্ত ও ওষুধ সরবরাহের ব্যাবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা শাফিউজ জামান।

জোয়ানা পরিবহনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া আমজাদ হোসেন জানান রংপুর মেডিকেল মোড়েই যাত্রী নিতে নিতেই রাত সাড়ে এগারটা বাজিয়েছে বাসের হেলপার-সুপার ভাইজার ও ড্রাইভার। তারা বাসের ভেতরে সিট বাদেও অনেক যাত্রী নিয়েছে, বাসের উপরেও যাত্রী নিয়ে বাস ছেড়েছে। বাসের ড্রাইভার ও হেলপার গাঁজাসেবন করে গাঁজার তৈরি সিগারেট টানতে টানতে গাড়ি চালাচ্ছিল এ সময় গাড়ির ভেতর দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। তিনিসহ কয়েকজন যাত্রী প্রতিবাদ করলেও তারা শোনেনি। এরপর দ্রুত বেগে গাড়ি চালিয়ে সৈয়পুরের দিকে যাওয়ার পথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। ড্রাইভার এত দ্রুত বেগে গাড়ি চালাচ্ছিল যে বারবার নিষেধ করার পরেও শুনছিল না। এরপর একটা বিকট শব্দ হলো, আমি আর কিছুই বলতে পারবো না। পরে আমাকে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি বলেন গাড়ির ড্রাইভার আর হেলপার গাঁজাসেবন করে গাড়ি না চালালে দুর্ঘটনা ঘটতো না। একই কথা জানালেন ওই গাড়ির আহত যাত্রী সৈয়দপুরের সালাম। তিনি বলেন, আমি গাড়িতে উঠেই দেখি গাঁজার দুর্গন্ধ। যেহেতু ওটাই সৈয়দপুর যাওয়ার শেষ বাস ছিল সে কারণে বাধ্য হয়ে উঠতে হয়েছে। অল্পের জন্য অক্ষত অবস্থায় রক্ষা পেয়েছে। তার সঙ্গে সৈয়দপুরের উদ্দেশে যাওয়া বন্ধু আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, গাঁজাসেবন করে গাড়ি না চালালে আর বেপরোয়া গাড়ি না চালালে দুর্ঘটনা ঘটতো না।

এদিকে দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা অলিউর রহমান জুয়েলের চাচি ফাতেমা বেগম জানান তার ভাতিজা আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে শুনে হাসাপাতাল ছুটে আসেন। আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই সে মারা যায়। এ সময় তার বুক ফাটা আর্তনাদে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় নিহত ছাত্রলীগ নেতার সহকর্মীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান গত রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সলেয়াশাহ ব্রিজের কাছে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে যাত্রীবাহী দুটি বাস রংপুর থেকে জোয়ানা পরিবহন সৈয়দপুর যাচ্ছিল অন্যদিকে ইসলাম পরিবহন বাসটি সৈয়দপুর থেকে রংপুরের দিকে আসছিল। সলেয়াশাহ নামক স্থানে পৌঁছালে দুই বাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ৫ জন নিহত হয়। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪০ জন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে। প্রচ- বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হলেও নিহত ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহত ৩৫ জনকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও তারাগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৪ জন মারা যায়। এদিকে তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মাহবুব মোরশেদ জানান জোয়ানা পরিবহনের ড্রাইভার ও হেলপার গাঁজাসেবন করে গাড়ি চালাচ্ছিল বলে যাত্রীদের যাত্রীদের কাছে শুনেছেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ঘটনায় তারাগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান হাইওয়ে পুলিশের এই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

হবিগঞ্জে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত-২

হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরিতলা নামক স্থানে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক রুবেল হোসেন (৩০) ও তার সহকারী আহাদ আলী (২৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হরিতলা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে মাধবপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মনতোষ মল্লিক একদল কর্মীসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ট্রাকের ভেতর থেকে দেড় ঘণ্টা পর নিহত চালক ও তার সহযোগীর লাশ ও অন্য একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্বার করে।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে সিলেট থেকে ঢাকাগামী একটি বালুবাহী ট্রাক ও ঢাকা থেকে সিলেটগামী মোরগের খাবারবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ট্রাক দুটি ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে বালুবাহী ট্রাকের চালক যশোর জেলার শার্শার উপজেলার আবুল কাশেমের ছেলে রুবেল মিয়া ও তার সহকারী যশোর জেলার ঝিগরগাছা উপজেলার সাবর আলীর ছেলে আহাদ আলী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সিলেটের গোয়াইনঘাটের জালালউদ্দিন গুরুতর আহত হন। হতাহতরা দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ট্রাকে আটকা পড়েন। শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মঙ্গলবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২২ ভাদ্র ১৪২৯ ৯ সফর ১৪৪৪

দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ৯

যাত্রীদের অভিযোগ, চালক-হেলপার গাঁজাসেবন করে বাস চালাচ্ছিল, তদন্ত কমিটি গঠন, আহত ৩৫

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

image

রংপুর : হাসপাতালের বারান্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনের আহাজারি -সংবাদ

গত রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে তারাগঞ্জের সলেয়াশাহ ব্রিজের কাছে যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। আহত ৩৫ জন। এদের মধ্যে ২০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৫ জন যার মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে রংপুর থেকে সৈয়দপুরের উদ্দেশে যাত্রাবাহী জোয়ানা বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে বাসের মধ্যেই গাঁজাসেবন করতে দেখেছে যাত্রীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলেও তারা কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ করেছে যাত্রীরা। গত রোববার রাত সাড়ে ১২টায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।

রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়াকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন বলে সংবাদকে জানিয়েছেন। কমিটি ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। গাঁজাসেবন করে গাড়ি চালানোর অভিযোগ তিনি পেয়েছেন জানিয়ে দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। এছাড়া নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নিহত ৯ জনের মধ্যে ঘটনাস্থলেই ৫ জন নিহত হয়েছে। আর ৪ জন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেনÑ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও কামার পাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উলিউর রহমান জুয়েল; ধনঞ্জয় চন্দ্র, পিতা বিনোদচন্দ্র, বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ি গ্রাম, সাদেক আলী; পিতা ফিরোজ মিয়া, বাড়ি গাইবান্ধা জেলার উত্তর কিতাবী গ্রাম, মোহসীন আলী সাগর; পিতা মকবুল হোসেন, বাড়ি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কোন্দলপাড়া গ্রাম, আনিসুর রহমান; পিতা কছিম উদ্দিন, বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার কাজিপাড়া গ্রাম, আনোয়ার হোসেন; পিতা মজিবর রহমান, বাড়ি একই উপজেলার হাড়িয়ালকুঠি ঝাকুয়া পাড়া গ্রাম ও শহিদুল ইসলাম খোকন; পিতা সাদেক আলী। বাকি ২ জনের নাম-ঠিকানা জানতে পারেনি পুলিশ। এদিকে নিহতদের স্বজনদের আর্তনাদে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। অনেকে স্বজনদের খোঁজে হাসপাতালে ভিড় করছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাত থেকেই আহতদের প্রয়োজনীয় রক্ত ও ওষুধ সরবরাহের ব্যাবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা শাফিউজ জামান।

জোয়ানা পরিবহনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া আমজাদ হোসেন জানান রংপুর মেডিকেল মোড়েই যাত্রী নিতে নিতেই রাত সাড়ে এগারটা বাজিয়েছে বাসের হেলপার-সুপার ভাইজার ও ড্রাইভার। তারা বাসের ভেতরে সিট বাদেও অনেক যাত্রী নিয়েছে, বাসের উপরেও যাত্রী নিয়ে বাস ছেড়েছে। বাসের ড্রাইভার ও হেলপার গাঁজাসেবন করে গাঁজার তৈরি সিগারেট টানতে টানতে গাড়ি চালাচ্ছিল এ সময় গাড়ির ভেতর দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। তিনিসহ কয়েকজন যাত্রী প্রতিবাদ করলেও তারা শোনেনি। এরপর দ্রুত বেগে গাড়ি চালিয়ে সৈয়পুরের দিকে যাওয়ার পথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। ড্রাইভার এত দ্রুত বেগে গাড়ি চালাচ্ছিল যে বারবার নিষেধ করার পরেও শুনছিল না। এরপর একটা বিকট শব্দ হলো, আমি আর কিছুই বলতে পারবো না। পরে আমাকে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি বলেন গাড়ির ড্রাইভার আর হেলপার গাঁজাসেবন করে গাড়ি না চালালে দুর্ঘটনা ঘটতো না। একই কথা জানালেন ওই গাড়ির আহত যাত্রী সৈয়দপুরের সালাম। তিনি বলেন, আমি গাড়িতে উঠেই দেখি গাঁজার দুর্গন্ধ। যেহেতু ওটাই সৈয়দপুর যাওয়ার শেষ বাস ছিল সে কারণে বাধ্য হয়ে উঠতে হয়েছে। অল্পের জন্য অক্ষত অবস্থায় রক্ষা পেয়েছে। তার সঙ্গে সৈয়দপুরের উদ্দেশে যাওয়া বন্ধু আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, গাঁজাসেবন করে গাড়ি না চালালে আর বেপরোয়া গাড়ি না চালালে দুর্ঘটনা ঘটতো না।

এদিকে দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা অলিউর রহমান জুয়েলের চাচি ফাতেমা বেগম জানান তার ভাতিজা আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে শুনে হাসাপাতাল ছুটে আসেন। আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই সে মারা যায়। এ সময় তার বুক ফাটা আর্তনাদে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় নিহত ছাত্রলীগ নেতার সহকর্মীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান গত রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সলেয়াশাহ ব্রিজের কাছে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে যাত্রীবাহী দুটি বাস রংপুর থেকে জোয়ানা পরিবহন সৈয়দপুর যাচ্ছিল অন্যদিকে ইসলাম পরিবহন বাসটি সৈয়দপুর থেকে রংপুরের দিকে আসছিল। সলেয়াশাহ নামক স্থানে পৌঁছালে দুই বাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ৫ জন নিহত হয়। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪০ জন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে। প্রচ- বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হলেও নিহত ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহত ৩৫ জনকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও তারাগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৪ জন মারা যায়। এদিকে তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মাহবুব মোরশেদ জানান জোয়ানা পরিবহনের ড্রাইভার ও হেলপার গাঁজাসেবন করে গাড়ি চালাচ্ছিল বলে যাত্রীদের যাত্রীদের কাছে শুনেছেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ঘটনায় তারাগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান হাইওয়ে পুলিশের এই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

হবিগঞ্জে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত-২

হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরিতলা নামক স্থানে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক রুবেল হোসেন (৩০) ও তার সহকারী আহাদ আলী (২৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হরিতলা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে মাধবপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মনতোষ মল্লিক একদল কর্মীসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ট্রাকের ভেতর থেকে দেড় ঘণ্টা পর নিহত চালক ও তার সহযোগীর লাশ ও অন্য একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্বার করে।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে সিলেট থেকে ঢাকাগামী একটি বালুবাহী ট্রাক ও ঢাকা থেকে সিলেটগামী মোরগের খাবারবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ট্রাক দুটি ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে বালুবাহী ট্রাকের চালক যশোর জেলার শার্শার উপজেলার আবুল কাশেমের ছেলে রুবেল মিয়া ও তার সহকারী যশোর জেলার ঝিগরগাছা উপজেলার সাবর আলীর ছেলে আহাদ আলী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সিলেটের গোয়াইনঘাটের জালালউদ্দিন গুরুতর আহত হন। হতাহতরা দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ট্রাকে আটকা পড়েন। শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।