সরকারি কল্যাণ বোর্ডে অনুদান প্রাপ্তদের তথ্য প্রতারকদের কাছে

বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড অধিদপ্তরে চিকিৎসার জন্য অনুদানের টাকা পাওয়ার আবেদন করেছিলেন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিসিৎসক। আবেদনের পর তিনি ৪০ হাজার টাকা অনুদানও পেয়েছিলেন। প্রায় দেড় বছর আগের ওই আবেদনের তথ্য জানিয়ে সম্প্রতি অধিদপ্তরের পরিচালক পরিচয় দিয়ে ফোন আসে ওই চিকিৎসকের কাছে। বলা হয়, আপনি সাধারণ চিকিৎসার জন্য আবেদন করে টাকা পেলেও আরও ২২ হাজার টাকা অনুদান আপনার জন্য নতুনভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে, টাকাটা পাঠাতে আপনার ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দিতে হবে।

ওই চিকিৎসক ফোনকারীকে ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দিয়ে দেখতে পান, তার একাউন্ট থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। শুধু চিকিৎসকই নয়, সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তরের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এভাবে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডে অভিযোগ করেছেন। সরকারি কল্যাণ বোর্ডের অভিযোগের পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের অনেকেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

গতকাল বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ৫ জনকে। যারা মূলত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অনুদানের টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টার্গেট কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে ডেভিট এবং ভিসা কার্ডের নম্বর নিয়ে ওটিপি পাঠাতো। পরে ওই ওটিপি নম্বর দিয়ে টার্গেট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাংক হিসাব থেকে কার্ড টু বিক্যাশ পেমেন্ট সিস্টেমে সব টাকা হাতিয়ে নিতো।

প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় ৩১ হাজার টাকা খোয়ানো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাসরিন সুলতানা গত ৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আদাবর থানায় করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) উল্লেখ করে বলেন, ১ জুলাই সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের অ্যাকাউন্ট অফিসার পরিচয়ে এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে বলেন, ২০২০ সালে সাধারণ চিকিৎসা অনুদানের জন্য যে পরিমাণ খরচের হিসাব তিনি দিয়েছিলেন তার বিপরীতে ৪০ হাজার টাকা কল্যাণ বোর্ড থেকে অনুদান দেয়া হয়েছে। তাকে আরও ২২ হাজার টাকা দেবে। কিন্তু তার ব্যাংক হিসাবের সমস্যার কারণে দিতে পারছে না। এজন্য ডা. নাসরিনের যেকোন একটি কার্ডের নম্বর প্রয়োজন। ডা. নাসরিন সরল বিশ্বাসে তার একটি ভিসা কার্ডের নম্বর দিলে কার্ডের পেছনের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ জানতে চান ওই ব্যক্তি। সেটি দেয়ার পর একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) নম্বর যায় ডা. নাসরিনের মুঠোফোনে। ডা. নাসরিনের কাছে নম্বরটি জানতে চান ফোনের অন্যপ্রান্তে থাকা ওই ব্যক্তি। নম্বর বলার সঙ্গে সঙ্গে ৩০ হাজার ৮৮৮ টাকা পার্সেচ (ক্রয় বাবাদ বিল পরিশোধ) হওয়ার মেসেজ আসে ডা. নাসরিন সুলতানার ফোনে। এরপর আরও একটি ওটিপি পাঠিয়ে সেটিও জানতে চান ওই ব্যক্তি। এরই মধ্যে ডা. নাসরিন সুলতানা বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এজন্য ওটিপি নম্বরটি আর বলেননি। পরে কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের অ্যাকাউন্ট অফিসার পরিচয় দেয়া ব্যক্তি ডা. নাসরিন সুলতানার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ফোন কেটে দেন। একই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়ে বস্ত্র অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লাকী আক্তার ২৫ হাজার টাকা খোয়ান। এছাড়া গত ১৩ এপ্রিল খিলগাঁও থানায় জিডি করেন মারজিয়া আক্তার নামের আরেক ভুক্তভোগী। জিডিতে উল্লেখ করেন, কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের উপপরিচালক পরিচয়ে ফোন করে প্রতারণার মাধ্যমে তার ইসলামী ব্যাংকের হিসাব থেকে ২৫ হাজার টাকা সরিয়ে নিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে গত ৫ বছরে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী এভাবে প্রতারিত হয়েছেন একটি চক্রের খপ্পড়ে পড়ে। চক্রটি সরকারি কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক, সহকারী পরিচালক পরিচয় দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। মূলত চক্রটির টার্গেটে ছিল কল্যাণ বোর্ড থেকে চিকিৎসা, শিক্ষাবৃত্তি, যৌথ বীমার টাকা পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রতিনিয়ত এ চক্র এভাবে অর্থ হাতিয়ে নিলেও তারা ছিল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে সম্প্রতি প্রতারিত হওয়া কয়েকজনের অভিযোগের প্ররিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ সম্প্রতি এমন অভিযোগ পেয়ে মাঠে নামলে বেরিয়ে আসে নেটওয়ার্ক। অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম সরকারের তত্ত্বাবধায়নে এডিসি মহিদুল ইসলাম অভিযানে নেমে চক্রের সদস্য তাফসীর চৌধুরী, রেজাউল করিম চৌধুরী, রিপন চৌধুরী, শরিফুল শিকদার এবং আসসান মাতুব্বর নামে ৫ জনকে আটক করে। আটককৃতদের দেয়া তথ্যে সাইবার টিমের কর্মকর্তারা তাজ্জব বনে যান। এ ঘটনায় প্রতারিত হওয়া এক ব্যক্তি গত ৪ সেপ্টেম্বর আদাবর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় আটককৃতদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃত তাফসীরের বয়স ১৬ বছর এবং সে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। রেজাউল করিমের বয়স ৩৬ সে এসএসসি পাস করেছে। অন্যদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সী আহসানের লেড়াপড়া ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত এবং শরিফুলের পড়াশোনা ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত। তবে ৪৩ বছর বয়সী রিপনের পড়াশোনা জানা যায়নি। এরা প্রত্যেকেই বিকাশ প্রতারক হিসেবে কাজ করে। গত ৬ থেকে ৭ মাসেই চক্রটি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেবিট কার্ড হ্যাক করে ২৫ লাখ টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে।

সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রদেয় সাধারণ চিকিৎসা, জটিল রোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসা, শিক্ষাবৃত্তি যৌথ বীমার টাকা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে প্রদান করা হয়। এছাড়া কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেলে তার দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুদান দেয়া হয়েছে। এসব অনুদানের অর্থ দেয়ার বিষয়টি বিজ্ঞপ্তি আকারে দেয়া থাকে কর্মকারী কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইটে।

চক্রটি মূলত অনুদানপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টার্গেট করে ফোন দেয়। এ সময় তারা অনুদানপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য তাদের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর জানিয়ে বলে অমুক তারিখে আপনি অমুক বিষয়ে এত টাকা অনুদান পেয়েছেন। কর্মকারী কল্যাণ বোর্ড থেকে আপনার জন্য আরও এত টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তবে ওই টাকা পেতে হলে আপনাকে আপনার ডেবিট বা ভিসা কার্ডের নম্বর দিতে হবে। সরল বিশ্বাসে অনেকেই ভিসা বা ডেবিট কার্ডের নম্বর দেয়। তখন চক্রটি ওই কার্ড হ্যাক করে টার্গেটকৃত ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব থেকে কার্ড থেকে বা বিকাশ পেমেন্ট সিস্টেমে টাকা হাতিয়ে নেয়। গত ৫ বছর ধরে তারা বহু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কি পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সেই হিসাব পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার হওয়া তাফসীর চৌধুরীর বয়স ১৬ হলেও সে অনলাইনে ব্যাপক দক্ষ। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে কর্মচারীদের অনুদান প্রদানের বিজ্ঞপ্তিগুলো ডাউনলোড করেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে কোন কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কী বিষয়ে অনুদান দেয়া হয়েছে সেসব তথ্য চক্রের আরেক সদস্য রিপন চৌধুরীর কাছে দেয়। রিপন চৌধুরীর কাজ হলো তথ্যগুলো রেজাউল করিম চৌধুরী এবং শরিফুলের কাছে পৌঁছে দেয়া। মূল কাজটি মূলত রেজাউল করিম চৌধুরী ও শরিফুল সিকদারই করে থাকে। তারা দু’জন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফোন দেন।

তারকদের কাছে

মঙ্গলবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২২ ভাদ্র ১৪২৯ ৯ সফর ১৪৪৪

সরকারি কল্যাণ বোর্ডে অনুদান প্রাপ্তদের তথ্য প্রতারকদের কাছে

সাইফ বাবলু

বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড অধিদপ্তরে চিকিৎসার জন্য অনুদানের টাকা পাওয়ার আবেদন করেছিলেন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিসিৎসক। আবেদনের পর তিনি ৪০ হাজার টাকা অনুদানও পেয়েছিলেন। প্রায় দেড় বছর আগের ওই আবেদনের তথ্য জানিয়ে সম্প্রতি অধিদপ্তরের পরিচালক পরিচয় দিয়ে ফোন আসে ওই চিকিৎসকের কাছে। বলা হয়, আপনি সাধারণ চিকিৎসার জন্য আবেদন করে টাকা পেলেও আরও ২২ হাজার টাকা অনুদান আপনার জন্য নতুনভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে, টাকাটা পাঠাতে আপনার ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দিতে হবে।

ওই চিকিৎসক ফোনকারীকে ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দিয়ে দেখতে পান, তার একাউন্ট থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। শুধু চিকিৎসকই নয়, সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তরের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এভাবে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডে অভিযোগ করেছেন। সরকারি কল্যাণ বোর্ডের অভিযোগের পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের অনেকেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

গতকাল বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ৫ জনকে। যারা মূলত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অনুদানের টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টার্গেট কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে ডেভিট এবং ভিসা কার্ডের নম্বর নিয়ে ওটিপি পাঠাতো। পরে ওই ওটিপি নম্বর দিয়ে টার্গেট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাংক হিসাব থেকে কার্ড টু বিক্যাশ পেমেন্ট সিস্টেমে সব টাকা হাতিয়ে নিতো।

প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় ৩১ হাজার টাকা খোয়ানো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাসরিন সুলতানা গত ৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আদাবর থানায় করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) উল্লেখ করে বলেন, ১ জুলাই সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের অ্যাকাউন্ট অফিসার পরিচয়ে এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে বলেন, ২০২০ সালে সাধারণ চিকিৎসা অনুদানের জন্য যে পরিমাণ খরচের হিসাব তিনি দিয়েছিলেন তার বিপরীতে ৪০ হাজার টাকা কল্যাণ বোর্ড থেকে অনুদান দেয়া হয়েছে। তাকে আরও ২২ হাজার টাকা দেবে। কিন্তু তার ব্যাংক হিসাবের সমস্যার কারণে দিতে পারছে না। এজন্য ডা. নাসরিনের যেকোন একটি কার্ডের নম্বর প্রয়োজন। ডা. নাসরিন সরল বিশ্বাসে তার একটি ভিসা কার্ডের নম্বর দিলে কার্ডের পেছনের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ জানতে চান ওই ব্যক্তি। সেটি দেয়ার পর একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) নম্বর যায় ডা. নাসরিনের মুঠোফোনে। ডা. নাসরিনের কাছে নম্বরটি জানতে চান ফোনের অন্যপ্রান্তে থাকা ওই ব্যক্তি। নম্বর বলার সঙ্গে সঙ্গে ৩০ হাজার ৮৮৮ টাকা পার্সেচ (ক্রয় বাবাদ বিল পরিশোধ) হওয়ার মেসেজ আসে ডা. নাসরিন সুলতানার ফোনে। এরপর আরও একটি ওটিপি পাঠিয়ে সেটিও জানতে চান ওই ব্যক্তি। এরই মধ্যে ডা. নাসরিন সুলতানা বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এজন্য ওটিপি নম্বরটি আর বলেননি। পরে কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের অ্যাকাউন্ট অফিসার পরিচয় দেয়া ব্যক্তি ডা. নাসরিন সুলতানার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ফোন কেটে দেন। একই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়ে বস্ত্র অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লাকী আক্তার ২৫ হাজার টাকা খোয়ান। এছাড়া গত ১৩ এপ্রিল খিলগাঁও থানায় জিডি করেন মারজিয়া আক্তার নামের আরেক ভুক্তভোগী। জিডিতে উল্লেখ করেন, কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের উপপরিচালক পরিচয়ে ফোন করে প্রতারণার মাধ্যমে তার ইসলামী ব্যাংকের হিসাব থেকে ২৫ হাজার টাকা সরিয়ে নিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে গত ৫ বছরে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী এভাবে প্রতারিত হয়েছেন একটি চক্রের খপ্পড়ে পড়ে। চক্রটি সরকারি কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক, সহকারী পরিচালক পরিচয় দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। মূলত চক্রটির টার্গেটে ছিল কল্যাণ বোর্ড থেকে চিকিৎসা, শিক্ষাবৃত্তি, যৌথ বীমার টাকা পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রতিনিয়ত এ চক্র এভাবে অর্থ হাতিয়ে নিলেও তারা ছিল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে সম্প্রতি প্রতারিত হওয়া কয়েকজনের অভিযোগের প্ররিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ সম্প্রতি এমন অভিযোগ পেয়ে মাঠে নামলে বেরিয়ে আসে নেটওয়ার্ক। অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম সরকারের তত্ত্বাবধায়নে এডিসি মহিদুল ইসলাম অভিযানে নেমে চক্রের সদস্য তাফসীর চৌধুরী, রেজাউল করিম চৌধুরী, রিপন চৌধুরী, শরিফুল শিকদার এবং আসসান মাতুব্বর নামে ৫ জনকে আটক করে। আটককৃতদের দেয়া তথ্যে সাইবার টিমের কর্মকর্তারা তাজ্জব বনে যান। এ ঘটনায় প্রতারিত হওয়া এক ব্যক্তি গত ৪ সেপ্টেম্বর আদাবর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় আটককৃতদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃত তাফসীরের বয়স ১৬ বছর এবং সে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। রেজাউল করিমের বয়স ৩৬ সে এসএসসি পাস করেছে। অন্যদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সী আহসানের লেড়াপড়া ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত এবং শরিফুলের পড়াশোনা ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত। তবে ৪৩ বছর বয়সী রিপনের পড়াশোনা জানা যায়নি। এরা প্রত্যেকেই বিকাশ প্রতারক হিসেবে কাজ করে। গত ৬ থেকে ৭ মাসেই চক্রটি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেবিট কার্ড হ্যাক করে ২৫ লাখ টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে।

সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রদেয় সাধারণ চিকিৎসা, জটিল রোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসা, শিক্ষাবৃত্তি যৌথ বীমার টাকা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে প্রদান করা হয়। এছাড়া কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেলে তার দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুদান দেয়া হয়েছে। এসব অনুদানের অর্থ দেয়ার বিষয়টি বিজ্ঞপ্তি আকারে দেয়া থাকে কর্মকারী কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইটে।

চক্রটি মূলত অনুদানপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টার্গেট করে ফোন দেয়। এ সময় তারা অনুদানপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য তাদের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর জানিয়ে বলে অমুক তারিখে আপনি অমুক বিষয়ে এত টাকা অনুদান পেয়েছেন। কর্মকারী কল্যাণ বোর্ড থেকে আপনার জন্য আরও এত টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তবে ওই টাকা পেতে হলে আপনাকে আপনার ডেবিট বা ভিসা কার্ডের নম্বর দিতে হবে। সরল বিশ্বাসে অনেকেই ভিসা বা ডেবিট কার্ডের নম্বর দেয়। তখন চক্রটি ওই কার্ড হ্যাক করে টার্গেটকৃত ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব থেকে কার্ড থেকে বা বিকাশ পেমেন্ট সিস্টেমে টাকা হাতিয়ে নেয়। গত ৫ বছর ধরে তারা বহু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কি পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সেই হিসাব পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার হওয়া তাফসীর চৌধুরীর বয়স ১৬ হলেও সে অনলাইনে ব্যাপক দক্ষ। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড থেকে কর্মচারীদের অনুদান প্রদানের বিজ্ঞপ্তিগুলো ডাউনলোড করেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে কোন কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কী বিষয়ে অনুদান দেয়া হয়েছে সেসব তথ্য চক্রের আরেক সদস্য রিপন চৌধুরীর কাছে দেয়। রিপন চৌধুরীর কাজ হলো তথ্যগুলো রেজাউল করিম চৌধুরী এবং শরিফুলের কাছে পৌঁছে দেয়া। মূল কাজটি মূলত রেজাউল করিম চৌধুরী ও শরিফুল সিকদারই করে থাকে। তারা দু’জন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফোন দেন।

তারকদের কাছে