তিন বছর যাবত শিকলবন্দী অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি ওমর ফারুক (৫০)। বাড়ির পাশে জরাজীর্ণ ও নোংরা পরিবেশে একটি টিনের খোলা ছাপড়ার নিচে শিকল বন্দী হয়ে জীবন কাটাচ্ছে সে। সারাদিন-রাত শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে রাখা হয়। যাতে সে কোথাও চলে যেতে না পারে। ঘটনাটি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের সদরবেড়া গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, সদরবেড়া গ্রামের মৃত শেখ আমিন উদ্দিনের ছেলে ওমর ফারুক। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। অভাবের সংসারে বাবার সাথে হাল ধরতে গিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন নেমে পড়েন কাজে। ফলে আর পড়ালেখা হয়নি ওমর ফারুকের। বাবার সাথে শ্রমিকের কাজ করেই জীবন যাপন করতেন ওমর। কাজকর্ম করে মোটামুটি সুখেই চলে যাচ্ছিল ওমর ফারুকের দিনকাল। কিন্তু হঠাৎ করেই তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
ওমর ফারুকের মা ফুলি বেগম জানান, প্রায় ২৩ বছর আগে একদিন গভীর রাতে বাড়ির পাশের ফসলি মাঠে যায় ধান ক্ষেতের খড় কুড়িয়ে আনতে। খড় কুড়িয়ে বাড়িতে আসার পরই শুরু হয় ওমর ফারুকের পাগলামি। পরনের কাপড় ছিড়ে ফেলেন, ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করেন।
এভাবেই হঠাৎ করে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে একেবারেই পাগল বনে যায়। সেই সময় অনেক ফকির-কবিরাজ দেখিয়ে তাবিজ-কবজ দেবার পরও কোন কাজ হয়নি। কয়েক বছর এভাবে চলার পর বিভিন্ন স্থানে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পর কিছুটা সুস্থ হয় ওমর। পরে নগরকান্দার রামনগর ইউনিয়নের কুঞ্জনগর গ্রামে বিয়েও করেন। সুখের সংসারে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় এই দম্পত্তির। গত ৩ বছর আগে ওমর ফারুক ফের পাগলামি শুরু করে। চিকিৎসার জন্য ২-৩ বার তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা দিলেও সে আর ভালো হয়নি। তারপর থেকে বাধ্য হয়েই তাকে শিকল বন্ধী করে রাখা হয়েছে। কোন সময়ই তাকে শিকল ছাড়া রাখা যায় না। ওমরের চাচাতো ভাই ফজলুল হক জানান, তার ভাই বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পাগল হয়ে যায়। যখন পাগল হয় তখন সে হাতের কাছে যা পেতো সবই ভাংচুর করতো। বিভিন্ন স্থানে নিয়ে চিকিৎসা দিয়েও কোন রাভ হয়নি। সে যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্যই তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।
ওমর ফারুকের মা ফুলি বেগম জানান, সংসারের হাল ধরার মতো তেমন কেউ নেই। মানুষের কাছ তেকে চেয়ে চিন্তে যা পাই তা দিয়েই কোন রকমে সংসার চলে। ওমরের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ করেছি। কোন লাভ হয়নি। ওর চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। এখন একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছি। ওর বউকে কাজের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। যাতে সংসারটা কোন রকমে চলে যায়। তিনি বলেন, আমার ছেলেটাকে চিকিৎসা করাতে পারলে ও ভাল হয়ে যেতে।
তালমা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, ওমর ফারুকের বিষয়টা আমরা জানতে পেরে তার জন্য কি করা যায় তা ভেবে দেখা হচ্ছে। আশা করছি তার চিকিৎসার জন্য কিছু একটা করতে পারব।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, ওমর ফারুকের বিষয়টি জানার পর তার বাড়িতে আমরা গিয়েছি। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যা করা দরকার সবই আমরা করত পারব। এছাড়া তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
ফরিদপুর : তিন বছর শিকলবন্দী অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন ওমর ফারুক -সংবাদ
আরও খবরবুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩ ভাদ্র ১৪২৯ ১০ সফর ১৪৪৪
সংবাদাদাতা, ফরিদপুর
ফরিদপুর : তিন বছর শিকলবন্দী অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন ওমর ফারুক -সংবাদ
তিন বছর যাবত শিকলবন্দী অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি ওমর ফারুক (৫০)। বাড়ির পাশে জরাজীর্ণ ও নোংরা পরিবেশে একটি টিনের খোলা ছাপড়ার নিচে শিকল বন্দী হয়ে জীবন কাটাচ্ছে সে। সারাদিন-রাত শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে রাখা হয়। যাতে সে কোথাও চলে যেতে না পারে। ঘটনাটি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের সদরবেড়া গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, সদরবেড়া গ্রামের মৃত শেখ আমিন উদ্দিনের ছেলে ওমর ফারুক। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। অভাবের সংসারে বাবার সাথে হাল ধরতে গিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন নেমে পড়েন কাজে। ফলে আর পড়ালেখা হয়নি ওমর ফারুকের। বাবার সাথে শ্রমিকের কাজ করেই জীবন যাপন করতেন ওমর। কাজকর্ম করে মোটামুটি সুখেই চলে যাচ্ছিল ওমর ফারুকের দিনকাল। কিন্তু হঠাৎ করেই তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
ওমর ফারুকের মা ফুলি বেগম জানান, প্রায় ২৩ বছর আগে একদিন গভীর রাতে বাড়ির পাশের ফসলি মাঠে যায় ধান ক্ষেতের খড় কুড়িয়ে আনতে। খড় কুড়িয়ে বাড়িতে আসার পরই শুরু হয় ওমর ফারুকের পাগলামি। পরনের কাপড় ছিড়ে ফেলেন, ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করেন।
এভাবেই হঠাৎ করে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে একেবারেই পাগল বনে যায়। সেই সময় অনেক ফকির-কবিরাজ দেখিয়ে তাবিজ-কবজ দেবার পরও কোন কাজ হয়নি। কয়েক বছর এভাবে চলার পর বিভিন্ন স্থানে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পর কিছুটা সুস্থ হয় ওমর। পরে নগরকান্দার রামনগর ইউনিয়নের কুঞ্জনগর গ্রামে বিয়েও করেন। সুখের সংসারে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় এই দম্পত্তির। গত ৩ বছর আগে ওমর ফারুক ফের পাগলামি শুরু করে। চিকিৎসার জন্য ২-৩ বার তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা দিলেও সে আর ভালো হয়নি। তারপর থেকে বাধ্য হয়েই তাকে শিকল বন্ধী করে রাখা হয়েছে। কোন সময়ই তাকে শিকল ছাড়া রাখা যায় না। ওমরের চাচাতো ভাই ফজলুল হক জানান, তার ভাই বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পাগল হয়ে যায়। যখন পাগল হয় তখন সে হাতের কাছে যা পেতো সবই ভাংচুর করতো। বিভিন্ন স্থানে নিয়ে চিকিৎসা দিয়েও কোন রাভ হয়নি। সে যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্যই তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।
ওমর ফারুকের মা ফুলি বেগম জানান, সংসারের হাল ধরার মতো তেমন কেউ নেই। মানুষের কাছ তেকে চেয়ে চিন্তে যা পাই তা দিয়েই কোন রকমে সংসার চলে। ওমরের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ করেছি। কোন লাভ হয়নি। ওর চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। এখন একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছি। ওর বউকে কাজের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। যাতে সংসারটা কোন রকমে চলে যায়। তিনি বলেন, আমার ছেলেটাকে চিকিৎসা করাতে পারলে ও ভাল হয়ে যেতে।
তালমা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, ওমর ফারুকের বিষয়টা আমরা জানতে পেরে তার জন্য কি করা যায় তা ভেবে দেখা হচ্ছে। আশা করছি তার চিকিৎসার জন্য কিছু একটা করতে পারব।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম ইমাম রাজী টুলু বলেন, ওমর ফারুকের বিষয়টি জানার পর তার বাড়িতে আমরা গিয়েছি। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যা করা দরকার সবই আমরা করত পারব। এছাড়া তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।