খাগড়াছড়ির ৫ উপজেলায় ইউপিডিএফ’র সড়ক অবরোধ পালিত

খাগড়াছড়ি জেলার পাঁচ উপজেলা গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়িতে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুন(৫২) হত্যার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুুপের ডাকা আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালিত হয়েছে। গত রোববার গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। অবরোধ পালনকালে অপ্রীতিকর কোথাও কোন ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের সমর্থনে পিকেটাররা বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করে অবরোধ কর্মসূচি সফল করেন।

অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ির সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে সকাল থেকে অবরোধের সমর্থনে গুইমারার বাইল্যাছড়ি ও রামগড় সড়কে রাস্তায় পিকেটিং-এর চেষ্টা করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় পন্ড হয়ে যায়।

অবরোধ চলাকালে যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে পাঁচ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্খানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে। অবরোধের কারণে উক্ত ৫টি উপজেলায় দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকেও ঢাকা-চট্টগ্রাম-ফেনী গামী দূরপাল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। অবরোধ কর্মসূচি সফল করায় ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা সকল যানবাহন মালিক-চালক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান যে, শাসকগোষ্ঠির চক্রান্তের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ হচ্ছে না। পাহাড়িদের মধ্যেকার একটি প্রতিক্রিয়াশীল-সুবিধাবাদী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে সরকার তথা শাসকগোষ্ঠি এ সংঘাত জিইয়ে রাখতে মরিয়া অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গুইমারায় অংথোই মারমাকে হত্যার ঘটনাও তারই অংশ। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর একটি কায়েমী স্বার্থবাদী অংশ এই চক্রান্তে যুক্ত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি শাসকগোষ্ঠির এই হীন চক্রান্ত থেকে সজাগ থাকার ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

অংগ্য মারমা অবিলম্বে অংথোই মারমাকে হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করা এবং সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রীয় আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদান বন্ধ করার দাবি জানান। একই সাথে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন তুলে নিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় মাঠে দাড়াতে পারেনি তারা। তার জেরে ৪ঠা সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় গুইমারার বাইল্যাছড়ি স্কুল পাড়ায় মোটরসাইকেলকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে ২টি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে ইউপিডিএফ কর্মীরা। মোটর সাইকেলের ২টির মালিক মানিকছড়ি উপজেলার গচ্ছাবিল এলাকার আনোয়ার হোসেন ও গুইমারা উপজেলার বুদং পাড়ার আরিফুল ইসলাম বলে জানা গেছে।

জানা যায়, বিকেল ৫টায় বাইল্যাছড়ি স্কুল পাড়ায় ১৫/১৬জন দূর্বৃত্ত এসে ৫রাউন্ড গুলি করে এবং ২টি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয় দিয়ে সটকে পড়ে। খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ইউপিডিএফের সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুন প্রতিপক্ষের হামলায় হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ায় ক্ষুদ্ধ ইউপিডিএফের কর্মীরা একের পর এক বাঙালীদের গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ করছে ক্ষতিগ্রস্তরা।

গুইমারা থানার অফিসার্স ইনচার্জ(ওসি) মুহাম্মদ রশীদ জানান, নিহত অংথোই মারমা’র স্ত্রী অংক্রা মারমা মামলার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অবরোধের দিন তার এলাকার বিভিন্ন সড়কে ৭টি স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। স্থানীয় সেনাবাহিনীও মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশকে সহযোগিতা করে। ঘটনার দিন তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল নিশ্চিত করছেন। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান ও গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রশীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা হয়নি। অবরোধ দিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। ঘটনার পর দিন থেকে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল অব্যাহত রেখেছে।

বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩ ভাদ্র ১৪২৯ ১০ সফর ১৪৪৪

খাগড়াছড়ির ৫ উপজেলায় ইউপিডিএফ’র সড়ক অবরোধ পালিত

প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি জেলার পাঁচ উপজেলা গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়িতে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুন(৫২) হত্যার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুুপের ডাকা আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালিত হয়েছে। গত রোববার গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। অবরোধ পালনকালে অপ্রীতিকর কোথাও কোন ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের সমর্থনে পিকেটাররা বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করে অবরোধ কর্মসূচি সফল করেন।

অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ির সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে সকাল থেকে অবরোধের সমর্থনে গুইমারার বাইল্যাছড়ি ও রামগড় সড়কে রাস্তায় পিকেটিং-এর চেষ্টা করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় পন্ড হয়ে যায়।

অবরোধ চলাকালে যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে পাঁচ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্খানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে। অবরোধের কারণে উক্ত ৫টি উপজেলায় দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকেও ঢাকা-চট্টগ্রাম-ফেনী গামী দূরপাল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। অবরোধ কর্মসূচি সফল করায় ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা সকল যানবাহন মালিক-চালক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান যে, শাসকগোষ্ঠির চক্রান্তের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ হচ্ছে না। পাহাড়িদের মধ্যেকার একটি প্রতিক্রিয়াশীল-সুবিধাবাদী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে সরকার তথা শাসকগোষ্ঠি এ সংঘাত জিইয়ে রাখতে মরিয়া অপচেষ্টা চালাচ্ছে। গুইমারায় অংথোই মারমাকে হত্যার ঘটনাও তারই অংশ। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর একটি কায়েমী স্বার্থবাদী অংশ এই চক্রান্তে যুক্ত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি শাসকগোষ্ঠির এই হীন চক্রান্ত থেকে সজাগ থাকার ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

অংগ্য মারমা অবিলম্বে অংথোই মারমাকে হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করা এবং সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রীয় আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদান বন্ধ করার দাবি জানান। একই সাথে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন তুলে নিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় মাঠে দাড়াতে পারেনি তারা। তার জেরে ৪ঠা সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় গুইমারার বাইল্যাছড়ি স্কুল পাড়ায় মোটরসাইকেলকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে ২টি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে ইউপিডিএফ কর্মীরা। মোটর সাইকেলের ২টির মালিক মানিকছড়ি উপজেলার গচ্ছাবিল এলাকার আনোয়ার হোসেন ও গুইমারা উপজেলার বুদং পাড়ার আরিফুল ইসলাম বলে জানা গেছে।

জানা যায়, বিকেল ৫টায় বাইল্যাছড়ি স্কুল পাড়ায় ১৫/১৬জন দূর্বৃত্ত এসে ৫রাউন্ড গুলি করে এবং ২টি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয় দিয়ে সটকে পড়ে। খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ইউপিডিএফের সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুন প্রতিপক্ষের হামলায় হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ায় ক্ষুদ্ধ ইউপিডিএফের কর্মীরা একের পর এক বাঙালীদের গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ করছে ক্ষতিগ্রস্তরা।

গুইমারা থানার অফিসার্স ইনচার্জ(ওসি) মুহাম্মদ রশীদ জানান, নিহত অংথোই মারমা’র স্ত্রী অংক্রা মারমা মামলার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অবরোধের দিন তার এলাকার বিভিন্ন সড়কে ৭টি স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। স্থানীয় সেনাবাহিনীও মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশকে সহযোগিতা করে। ঘটনার দিন তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল নিশ্চিত করছেন। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান ও গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রশীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা হয়নি। অবরোধ দিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। ঘটনার পর দিন থেকে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল অব্যাহত রেখেছে।