শেখ হাসিনা-মোদি বৈঠক

অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ

পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি তারা দুই দেশের সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। ভারতের রাজধানী দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে গতকাল দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন দুই দেশের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। দুই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ‘জীবন্ত’ রেখে এই ধরনের শক্তিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা জরুরি, যারা দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাসকে আঘাত করতে চায়। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিসহ দুই দেশের অনিস্পন্ন বিভিন্ন সমস্যা শীঘ্রই সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

শীঘ্রই তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হবে, আশাবাদ প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

গত ৫০ বছরের গড়ে ওঠা শক্তিশালী অংশীদারিত্বের ওপর ভর করে বাংলাদেশ-ভারত পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল ভারতের রাজধানী দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই নেতা সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখা এবং দু’দেশ ও এ অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি ও প্রধানমন্ত্রী মোদি একমত হয়েছি।’

প্রতিবেশীদের মধ্যে কূটনীতির ক্ষেত্রে দু’দেশের সম্পর্ককে ‘রোল মডেল’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গতি সঞ্চার করার ক্ষেত্রে মোদিজির দূরদর্শী নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানাই। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে নিকটপ্রতিবেশী ভারত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ও আমি আরেক দফায় ফলপ্রসূ আলোচনা শেষ করেছি, যার ফল দু’দেশের জনগণের উপকার বয়ে আনবে। নিবিড় বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

তিস্তা চুক্তির আশাবাদ শেখ হাসিনার

দ্রুত সময়ের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অনেক অনিষ্পন্ন সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে করেছি। আমি আশা করি, তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তিসহ অন্য অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো শীঘ্রই সম্পন্ন করতে পারবো।’

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা কুশিয়ারা ইস্যু সমাধান করেছি এবং আমি আশাবাদী, মোট যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলো আমি জানি, যতক্ষণ পর্যন্ত মোদি আছেন, বাংলাদেশ-ভারত আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব।’

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হয়েছিল। কিন্তু মনমোহন সিংয়ের সফরে বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হয়নি। দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়।

পরবর্তীতে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার দেশটির ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আবারও আশাবাদী হয় বাংলাদেশ; কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত বদলায়নি। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে গত এক যুগে অধিকাংশ বৈঠকেই তিস্তার প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৫৪টি অভিন্ন নদী এবং চার হাজার কিলোমিটার সীমান্তবেষ্টিত বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশ তাদের জনগণের সম্মিলিত কল্যাণে বদ্ধপরিকর।’

ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী আয়োজিত ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’র সফল সমাপ্তির জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।

দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে আরেকটি ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ হিসেবে বর্ণনা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বৈঠকের ফল দুই দেশের জনগণকেই উপকৃত করবে।

রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার

চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই প্রধানমন্ত্রী করমর্দন করেন। পরে শেখ হাসিনাকে ‘গার্ড অব অনার’ লালগালিচা সম্মাননা দেয়া হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু। আমি যখনই ভারতে আসি, এটা আমার জন্য আনন্দের। বিশেষ করে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করি। আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, আমরা একে অন্যকে সহযোগিতা করছি।’

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক বিকাশ। আমাদের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা, যা আমরা করতে সক্ষম হবো। বন্ধুত্বের মাধ্যমে আপনি যেকোন সমস্যা সমাধান করতে পারেন। সুতরাং আমরা সর্বদা তা করি।’

দিনের অন্য কর্মসূচি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ভবনের আনুষ্ঠানিকতার পর শেখ হাসিনা রাজঘাট গান্ধী সমাধিস্থলে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় হায়দরাবাদ হাউজে।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় এবং পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। গত সোমবার চার দিনের সফরে দিল্লি যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় উন্নয়ন

সহযোগী : মোদিনিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশকে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী আখ্যায়িত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি দুই দেশের চলমান অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

গতকাল ভারতের রাজধানী দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারত-বাংলাদেশের দুই শীর্ষ নেতা সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

দুই দেশের সরকারপ্রধানই সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার বিষয়ে জোর দিয়েছেন উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘১৯৭১ সালের আদর্শকে জীবন্ত রেখে এই ধরনের শক্তিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা জরুরি, যারা আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাসকে আঘাত করতে চায়।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যে শক্তি আমাদের শত্রু, তাদের যেন আমরা একসঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।’

নরেন্দ্র মোদি এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার উল্লেখ করে বলেন, তারা এই অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে দ্বিপক্ষীয় সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) করার আলোচনা দ্রত সময়ের মধ্যে শুরু করতে চান।

মানুষে মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে দুই দেশের সর্ম্পকের অব্যাহত উন্নতি হচ্ছে মন্তব্য করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় ?উন্নয়ন সহযোগী এবং এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। গত কয়েক বছরে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি বহু দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি।’

কোভিড মহামারী ও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে দুই দেশের শিক্ষা নেয়া এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা দরকার বলে মনে করনে নরেন্দ্র মোদি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা মোকাবিলায় আমরা সহযোগিতা বিস্তৃত করেছি। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে বন্যার তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময় করছি।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমরা তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ ও পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বিস্তৃত করার আলোচনা করেছি। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন করার বিষয়েও আলোচনা চলমান রয়েছে।’

গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং প্রথমবারের মতো মৈত্রী দিবস উদ্্যাপনের কথা স্মরণ করেন নরেন্দ্র মোদি। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদি আগামী দিনগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ আনেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে তিনি কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আজকে আমরা কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এটা ভারতের দক্ষিণ আসাম ও বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলকে উপকৃত করবে।’

এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়েছে ৫৪টি নদী এবং এগুলো শত শত বছর ধরে দু’দেশের মানুষের জীবিকার সঙ্গে সংযুক্ত থেকেছে। এসব নদী, এগুলোকে জড়িয়ে থাকা লোকগাথা ও লোক সংগীত আমাদের একীভূত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে।’

ঢাকা-নয়াদিল্লি ৭টি সমঝোতা স্মারক সইবাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়।

এগুলো হলো- অভিন্ন সীমান্ত নদী কুশিয়ারা থেকে ভারত ও বাংলাদেশের পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের জল শক্তি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, ভারতে বাংলাদেশের রেলওয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ভারতের রেল মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য এফওআইএস ও অন্য আইটি এপ্লিকেশনের মতো আইটি সিস্টেমে সহযোগিতার জন্য ভারতের রেল মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।

অন্য সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছেÑ ভারতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচির বিষয়ে ভারতের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতার বিষয়ে ভারতের কাউন্সিল ফর সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ও বাংলাদেশের কাউন্সিল অব সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) মধ্যে সমঝোতা স্মারক, মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মধ্যে সম্প্রচার সহযোগিতা সংক্রান্ত স্মারক।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে হায়দরাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় তাদের মধ্যকার আলোচনায় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন, রোহিঙ্গা, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক ও মানবপাচার মোকাবিলার মতো পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো প্রাধান্য পায়।

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং কোভিড-১৯ মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার নিকটতম প্রতিবেশী দেশ দুটি এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা করেছে।

এ উপলক্ষে ভিডিও ক্লিপে মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপসা সেতু, সড়ক নির্মাণ যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি সরবরাহ, খুলনা-দর্শনা রেলওয়ে লাইন এবং পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেলওয়ে লাইন প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর একটি বই নরেদ্র মোদির কাছে হস্তান্তর করেন। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন বইটি প্রকাশ করেছে।

শেখ হাসিনা তার সম্মানে হায়দরাবাদ হাউজে নরেন্দ্র মোদি আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজনেও অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার মাধ্যমে ভারতে তার চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন শুরু করেন। এ সময় নরেন্দ্র মোদি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানান।

রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শেখ হাসিনা রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে যান। সেখানে তিনি এই মহান ভারতীয় নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে আজ বিকেলে শেখ হাসিনা পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারত সফরের প্রথম দিনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শংকর আইটিসি মৌর্য্য হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর স্যুইটের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

এরপর তিনি নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারত করেন এবং নফল নামাজ আদায়, ফাতিহা পাঠ ও মুনাজাত করেন।

বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩ ভাদ্র ১৪২৯ ১০ সফর ১৪৪৪

শেখ হাসিনা-মোদি বৈঠক

অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ

image

নয়াদিল্লি : গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হায়দরাবাদ হাউজে এসে পৌঁছালে নরেন্দ্র মোদি স্বাগত জানান -সংবাদ

পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি তারা দুই দেশের সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। ভারতের রাজধানী দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে গতকাল দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন দুই দেশের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। দুই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ‘জীবন্ত’ রেখে এই ধরনের শক্তিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা জরুরি, যারা দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাসকে আঘাত করতে চায়। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিসহ দুই দেশের অনিস্পন্ন বিভিন্ন সমস্যা শীঘ্রই সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

শীঘ্রই তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হবে, আশাবাদ প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

গত ৫০ বছরের গড়ে ওঠা শক্তিশালী অংশীদারিত্বের ওপর ভর করে বাংলাদেশ-ভারত পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল ভারতের রাজধানী দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই নেতা সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখা এবং দু’দেশ ও এ অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি ও প্রধানমন্ত্রী মোদি একমত হয়েছি।’

প্রতিবেশীদের মধ্যে কূটনীতির ক্ষেত্রে দু’দেশের সম্পর্ককে ‘রোল মডেল’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গতি সঞ্চার করার ক্ষেত্রে মোদিজির দূরদর্শী নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানাই। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে নিকটপ্রতিবেশী ভারত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ও আমি আরেক দফায় ফলপ্রসূ আলোচনা শেষ করেছি, যার ফল দু’দেশের জনগণের উপকার বয়ে আনবে। নিবিড় বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

তিস্তা চুক্তির আশাবাদ শেখ হাসিনার

দ্রুত সময়ের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অনেক অনিষ্পন্ন সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে করেছি। আমি আশা করি, তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তিসহ অন্য অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো শীঘ্রই সম্পন্ন করতে পারবো।’

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা কুশিয়ারা ইস্যু সমাধান করেছি এবং আমি আশাবাদী, মোট যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলো আমি জানি, যতক্ষণ পর্যন্ত মোদি আছেন, বাংলাদেশ-ভারত আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব।’

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হয়েছিল। কিন্তু মনমোহন সিংয়ের সফরে বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হয়নি। দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়।

পরবর্তীতে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার দেশটির ক্ষমতায় আসার পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে আবারও আশাবাদী হয় বাংলাদেশ; কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত বদলায়নি। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে গত এক যুগে অধিকাংশ বৈঠকেই তিস্তার প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৫৪টি অভিন্ন নদী এবং চার হাজার কিলোমিটার সীমান্তবেষ্টিত বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশ তাদের জনগণের সম্মিলিত কল্যাণে বদ্ধপরিকর।’

ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী আয়োজিত ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’র সফল সমাপ্তির জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।

দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে আরেকটি ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ হিসেবে বর্ণনা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বৈঠকের ফল দুই দেশের জনগণকেই উপকৃত করবে।

রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার

চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই প্রধানমন্ত্রী করমর্দন করেন। পরে শেখ হাসিনাকে ‘গার্ড অব অনার’ লালগালিচা সম্মাননা দেয়া হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধু। আমি যখনই ভারতে আসি, এটা আমার জন্য আনন্দের। বিশেষ করে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করি। আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, আমরা একে অন্যকে সহযোগিতা করছি।’

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক বিকাশ। আমাদের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা, যা আমরা করতে সক্ষম হবো। বন্ধুত্বের মাধ্যমে আপনি যেকোন সমস্যা সমাধান করতে পারেন। সুতরাং আমরা সর্বদা তা করি।’

দিনের অন্য কর্মসূচি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ভবনের আনুষ্ঠানিকতার পর শেখ হাসিনা রাজঘাট গান্ধী সমাধিস্থলে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় হায়দরাবাদ হাউজে।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় এবং পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। গত সোমবার চার দিনের সফরে দিল্লি যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় উন্নয়ন

সহযোগী : মোদিনিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশকে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী আখ্যায়িত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি দুই দেশের চলমান অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

গতকাল ভারতের রাজধানী দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারত-বাংলাদেশের দুই শীর্ষ নেতা সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

দুই দেশের সরকারপ্রধানই সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতার বিষয়ে জোর দিয়েছেন উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘১৯৭১ সালের আদর্শকে জীবন্ত রেখে এই ধরনের শক্তিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা জরুরি, যারা আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাসকে আঘাত করতে চায়।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যে শক্তি আমাদের শত্রু, তাদের যেন আমরা একসঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।’

নরেন্দ্র মোদি এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার উল্লেখ করে বলেন, তারা এই অগ্রগতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে দ্বিপক্ষীয় সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) করার আলোচনা দ্রত সময়ের মধ্যে শুরু করতে চান।

মানুষে মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে দুই দেশের সর্ম্পকের অব্যাহত উন্নতি হচ্ছে মন্তব্য করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় ?উন্নয়ন সহযোগী এবং এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। গত কয়েক বছরে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি বহু দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি।’

কোভিড মহামারী ও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে দুই দেশের শিক্ষা নেয়া এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা দরকার বলে মনে করনে নরেন্দ্র মোদি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা মোকাবিলায় আমরা সহযোগিতা বিস্তৃত করেছি। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে বন্যার তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময় করছি।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমরা তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ ও পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বিস্তৃত করার আলোচনা করেছি। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন করার বিষয়েও আলোচনা চলমান রয়েছে।’

গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং প্রথমবারের মতো মৈত্রী দিবস উদ্্যাপনের কথা স্মরণ করেন নরেন্দ্র মোদি। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদি আগামী দিনগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ আনেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে তিনি কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আজকে আমরা কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এটা ভারতের দক্ষিণ আসাম ও বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলকে উপকৃত করবে।’

এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়েছে ৫৪টি নদী এবং এগুলো শত শত বছর ধরে দু’দেশের মানুষের জীবিকার সঙ্গে সংযুক্ত থেকেছে। এসব নদী, এগুলোকে জড়িয়ে থাকা লোকগাথা ও লোক সংগীত আমাদের একীভূত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে।’

ঢাকা-নয়াদিল্লি ৭টি সমঝোতা স্মারক সইবাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়।

এগুলো হলো- অভিন্ন সীমান্ত নদী কুশিয়ারা থেকে ভারত ও বাংলাদেশের পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের জল শক্তি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, ভারতে বাংলাদেশের রেলওয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ভারতের রেল মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য এফওআইএস ও অন্য আইটি এপ্লিকেশনের মতো আইটি সিস্টেমে সহযোগিতার জন্য ভারতের রেল মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশের রেলওয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।

অন্য সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছেÑ ভারতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচির বিষয়ে ভারতের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতার বিষয়ে ভারতের কাউন্সিল ফর সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ও বাংলাদেশের কাউন্সিল অব সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) মধ্যে সমঝোতা স্মারক, মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এবং প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মধ্যে সম্প্রচার সহযোগিতা সংক্রান্ত স্মারক।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে হায়দরাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় তাদের মধ্যকার আলোচনায় নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন, রোহিঙ্গা, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক ও মানবপাচার মোকাবিলার মতো পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো প্রাধান্য পায়।

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং কোভিড-১৯ মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার নিকটতম প্রতিবেশী দেশ দুটি এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা করেছে।

এ উপলক্ষে ভিডিও ক্লিপে মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপসা সেতু, সড়ক নির্মাণ যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি সরবরাহ, খুলনা-দর্শনা রেলওয়ে লাইন এবং পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেলওয়ে লাইন প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর একটি বই নরেদ্র মোদির কাছে হস্তান্তর করেন। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন বইটি প্রকাশ করেছে।

শেখ হাসিনা তার সম্মানে হায়দরাবাদ হাউজে নরেন্দ্র মোদি আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজনেও অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার মাধ্যমে ভারতে তার চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন শুরু করেন। এ সময় নরেন্দ্র মোদি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানান।

রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শেখ হাসিনা রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে যান। সেখানে তিনি এই মহান ভারতীয় নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে আজ বিকেলে শেখ হাসিনা পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারত সফরের প্রথম দিনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শংকর আইটিসি মৌর্য্য হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর স্যুইটের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

এরপর তিনি নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারত করেন এবং নফল নামাজ আদায়, ফাতিহা পাঠ ও মুনাজাত করেন।