আরও ২৮৪ জন হাসপাতালে, একদিনে মৃত্যু ৫

মোট আক্রান্ত ৭ হাজার ছাড়িয়েছে

থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিশ মশার উপদ্রব হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ মশার কামড়ে অনেকেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে ২৮৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ভর্তিকৃতদের মধ্যে ২২৪ জন ঢাকায় ও ৬০ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে আরও ৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মোট ৩১ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ২৮৪ জন নতুন ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালে এখন ভর্তি আছে ৮৫০ জন। তার মধ্যে ঢাকায় ৭১১ জন ও অন্য বিভাগে ১৩৯ জন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল ৬ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি হয়েছে ৭ হাজার ৩৯৭ জন এর মধ্যে শুধু ঢাকায় মোট ভর্তি ৬ হাজার ৪৮ জন। ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৩৪৯ জন।

চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে মোট ৬ হাজার ৫১৬ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবন ও বাসাবাড়ির ভেতরে এবং বাড়ির আঙ্গিনায় জমে থাকা পানিতে এডিশ মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তার ঘটে। পূর্ণাঙ্গ এডিশ মশা নতুন করে কাউকে কামড় দিলে সে আবার আক্রান্ত হয়। এভাবে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অনেকেই বহির্বিভাগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের হিসাব নেই। আবার কেউ প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে পাড়া-মহল্লার ওষুধের দোকান থেকে জ্বরের ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরের রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে ডেঙ্গু হেমোরোজিক ও ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোম রোগী নেই।

হাসপাতালের তথ্য মতে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১০ জন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২২ জন, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ১১ জন, ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৯ জন, কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ১১ জন, আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন, ডা. এ.আর খান শিশু হাসপাতালে ৬ জন ভর্তি আছে। এভাবে ভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ঢাকার বাইরের প্রাপ্ত তথ্য মতে, চট্টগ্রামে ৪ জন, কক্সবাজারে ২২ জন, মাদারীপুরে একজন, ময়মনসিংহে একজন ভর্তি হয়েছে। আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন চিকিৎসাধীন আছেন। তাছাড়া বাগেরহাট, যশোর, ভোলা, বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছে।

গত আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫২১ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মারা গেছেন ১১ জন। চলতি মাসের গত ৬ দিনে ১২১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে মারা গেছে ১০ জন। এভাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

করোনাভাইরাস আতঙ্ক কাটতে না কাটতে এবার ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কার করোনাভাইরাস, কার ডেঙ্গুজ্বর নিশ্চিত করতে অনেকেই পরীক্ষার জন্য ছুটছেন হাসপাতালে। সেখানে নানাভাবে ভোগান্তির কারণে আক্রান্তরা প্রাইভেট হাসপাতালে বেশি যাচ্ছেন।

বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩ ভাদ্র ১৪২৯ ১০ সফর ১৪৪৪

বৃষ্টিতে বাড়ছে এডিশ মশার উপদ্রব

আরও ২৮৪ জন হাসপাতালে, একদিনে মৃত্যু ৫

মোট আক্রান্ত ৭ হাজার ছাড়িয়েছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিশ মশার উপদ্রব হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ মশার কামড়ে অনেকেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে ২৮৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ভর্তিকৃতদের মধ্যে ২২৪ জন ঢাকায় ও ৬০ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে আরও ৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মোট ৩১ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ২৮৪ জন নতুন ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালে এখন ভর্তি আছে ৮৫০ জন। তার মধ্যে ঢাকায় ৭১১ জন ও অন্য বিভাগে ১৩৯ জন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল ৬ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি হয়েছে ৭ হাজার ৩৯৭ জন এর মধ্যে শুধু ঢাকায় মোট ভর্তি ৬ হাজার ৪৮ জন। ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৩৪৯ জন।

চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে মোট ৬ হাজার ৫১৬ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবন ও বাসাবাড়ির ভেতরে এবং বাড়ির আঙ্গিনায় জমে থাকা পানিতে এডিশ মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তার ঘটে। পূর্ণাঙ্গ এডিশ মশা নতুন করে কাউকে কামড় দিলে সে আবার আক্রান্ত হয়। এভাবে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অনেকেই বহির্বিভাগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের হিসাব নেই। আবার কেউ প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকে পাড়া-মহল্লার ওষুধের দোকান থেকে জ্বরের ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরের রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে ডেঙ্গু হেমোরোজিক ও ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোম রোগী নেই।

হাসপাতালের তথ্য মতে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১০ জন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২২ জন, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ১১ জন, ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৯ জন, কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ১১ জন, আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন, ডা. এ.আর খান শিশু হাসপাতালে ৬ জন ভর্তি আছে। এভাবে ভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ঢাকার বাইরের প্রাপ্ত তথ্য মতে, চট্টগ্রামে ৪ জন, কক্সবাজারে ২২ জন, মাদারীপুরে একজন, ময়মনসিংহে একজন ভর্তি হয়েছে। আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন চিকিৎসাধীন আছেন। তাছাড়া বাগেরহাট, যশোর, ভোলা, বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছে।

গত আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫২১ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মারা গেছেন ১১ জন। চলতি মাসের গত ৬ দিনে ১২১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে মারা গেছে ১০ জন। এভাবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

করোনাভাইরাস আতঙ্ক কাটতে না কাটতে এবার ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কার করোনাভাইরাস, কার ডেঙ্গুজ্বর নিশ্চিত করতে অনেকেই পরীক্ষার জন্য ছুটছেন হাসপাতালে। সেখানে নানাভাবে ভোগান্তির কারণে আক্রান্তরা প্রাইভেট হাসপাতালে বেশি যাচ্ছেন।