যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ

নানা চড়াই উতড়াই পেরিয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছেছেন লিজ ট্রাস। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে তৃতীয় নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন তিনি। কনজারভেটিভ পার্টির এমপি হিসেবে রাজনীতির মহাসড়কে পা রাখা লিজ ট্রাস আজ রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ মুকুটটিও ছিনিয়ে নিলেন।

তাৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের আধুনিকীকরণের উদ্যোগ এবং কনজারভেটিক পার্টির ভাবমূর্তি পুনর্র্নিমাণে ক্ষেত্রে তার আকাঙ্ক্ষা স্থানীয় কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে ওঠে। তখন থেকেই লিজ ট্রাস নিজেদের রাজনৈতিক অঙ্গনে লড়াই করে টিকে থাকার একজন সৈনিক হিসেবে নিজের ভামমূর্তি গড়ে তুলেছেন।

জ্বালানির মূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি: ট্রাস কীভাবে জ্বালানির মূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি সামাল দেবেন, সেটাই ঠিক করে দেবে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্ব এবং আসছে বছরগুলোয় যুক্তরাজ্যের ভাগ্যে কী আছে। জনগণ এর জবাব খুব দ্রুতই চায়।

টরিদের নেতৃত্বের লড়াইয়ে ট্রাস তাঁর প্রচারণায় অব্যাহতভাবে কর কমানোর বিষয়ে জোর দিয়েছেন। তবে সরাসরি অর্থসহায়তার সুফল নিয়ে তিনি সন্দিহান। দেশটিতে জ্বালানির মূল্য এত দ্রুত বাড়ছে যে লাখো পরিবার তা শোধ করতে পারবে না।

সংকটের মাত্রা বিবেচনায় সমালোচকেরা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে এবং নৈতিকভাবে এটা সমর্থনযোগ্য নয়। আরও সহায়তার বিষয়টি নাকচ না করার বিষয়ে ট্রাস সতর্ক ছিলেন।

জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সেবা: দারিদ্র্য ও স্বাস্থ্য নিয়ে যাঁরা কাজ করে আসছেন, তাঁরা যুক্তি দিতে পারেন জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সেবার বিষয়টিও। জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি সংকটের অনেক কারণের একটি। বিপুলসংখ্যক মানুষের শীতে জমে যাওয়া বাড়িতে বসবাস এবং খাবার কমাতে বাধ্য হওয়ার মতো সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁরা এমনটা ধারণা করছেন। এতে ইতিমধ্যে ধুঁকতে থাকা স্বাস্থ্য পরিষেবায় চাপ আরও বাড়বে।

যুক্তরাজ্যে সেপ্টেম্বরের শুরুতে দায়িত্ব নেওয়া অধিকাংশ প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হয়। ট্রাস ইতিমধ্যে একটির সামনে পড়েছেন। হাসপাতালে শয্যাস্বল্পতার মধ্যেই নিয়মিতভাবে দেরিতে সাড়া দিচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স। পুরো প্রক্রিয়া ও কার্যক্রমে রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। অবশ্য এসবের অনেক কিছুই হয়েছে করোনা মহামারির প্রভাবে।

কনজারভেটিভ পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করা: ট্রাসের আগের তিন টরি নেতাই তাঁদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন কিংবা সরে যেতে বাধ্য হন। এটা চলমান একটি সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এটা এমন একটি সমস্যা, যা অন্য নেতাদের চেয়ে ট্রাসকে আরও কঠিনভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

টরি সদস্যদের কাছে ট্রাসের আদর্শিক পরিচয়টা হলো তিনি নিজস্ব স্টাইলে যুক্তরাজ্যের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের উত্তরসূরি, ব্রেক্সিট ইস্যুতে অনমনীয় এবং সাংস্কৃতিক যুদ্ধে বিভক্তির লাইনে হাঁটতে আগ্রহী। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় এটা ভালো কাজে দিয়েছে। সদস্যদের চেয়ে অনেক কনজারভেটিভ এমপি তুলনামূলক কম ডানপন্থী। এমনকি অধিকতর উদারপন্থার কিছু বিষয় অনুসরণ করেন। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার প্রথম পর্যায়ে এক-তৃতীয়াংশেরও কম সহকর্মী এমপির সমর্থন পেয়েছিলেন ট্রাস। অনেকেই তাঁর মতাদর্শ ও সক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভা গঠনই হবে তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

ইউক্রেন ইস্যু: জ্বালানি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো নীতিগত দুটি বিষয়ের মতো ইউক্রেন ইস্যুতে নিজের বিকল্পগুলো নিয়ে ট্রাসকে অনেক বেশি সময় চিন্তাভাবনা করতে হবে না। বরিস জনসনের সময় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখবেন ট্রাস। নিজের দায়িত্ব পালনের শুরুর দিকের সপ্তাহগুলোতে কিয়েভে ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর ছবি দেখা যেতে পারে। তবে অন্যান্য বিশ্বনেতার মতো যুদ্ধ যত সামনে গড়াবে, ট্রাসও জটিলতার মুখোমুখি হবেন। কারণ, এই সংঘাত সমাধানের কোনো ইঙ্গিত মিলছে না। বিশেষ করে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরিণতির প্রভাব পড়তে শুরু করবে। বিষয়টি অনেকাংশেই যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

নির্বাচন হবে কি না : নীতিগত দিক থেকে যে পরিমাণ কর্মযজ্ঞ ট্রাসকে মোকাবিলা করতে হবে, তা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। কিন্তু তৃতীয় অন্তর্র্বতী টরি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ট্রাস যদি আরও বেশি কিছু হতে চান, তাহলে এটা বিবেচনায় আনা গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রাসের টিমের দাপ্তরিক যে অবস্থান, সেটা হলো বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনো নির্বাচন নয়। সে ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে। তবে জনসনের ২০১৯ সালের ম্যান্ডেটের ওপর ভিত্তি করে ট্রাস আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে জটিলতার মধ্যে পড়তে পারেন।

বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩ ভাদ্র ১৪২৯ ১০ সফর ১৪৪৪

যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ

নানা চড়াই উতড়াই পেরিয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছেছেন লিজ ট্রাস। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে তৃতীয় নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন তিনি। কনজারভেটিভ পার্টির এমপি হিসেবে রাজনীতির মহাসড়কে পা রাখা লিজ ট্রাস আজ রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ মুকুটটিও ছিনিয়ে নিলেন।

তাৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের আধুনিকীকরণের উদ্যোগ এবং কনজারভেটিক পার্টির ভাবমূর্তি পুনর্র্নিমাণে ক্ষেত্রে তার আকাঙ্ক্ষা স্থানীয় কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে ওঠে। তখন থেকেই লিজ ট্রাস নিজেদের রাজনৈতিক অঙ্গনে লড়াই করে টিকে থাকার একজন সৈনিক হিসেবে নিজের ভামমূর্তি গড়ে তুলেছেন।

জ্বালানির মূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি: ট্রাস কীভাবে জ্বালানির মূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি সামাল দেবেন, সেটাই ঠিক করে দেবে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্ব এবং আসছে বছরগুলোয় যুক্তরাজ্যের ভাগ্যে কী আছে। জনগণ এর জবাব খুব দ্রুতই চায়।

টরিদের নেতৃত্বের লড়াইয়ে ট্রাস তাঁর প্রচারণায় অব্যাহতভাবে কর কমানোর বিষয়ে জোর দিয়েছেন। তবে সরাসরি অর্থসহায়তার সুফল নিয়ে তিনি সন্দিহান। দেশটিতে জ্বালানির মূল্য এত দ্রুত বাড়ছে যে লাখো পরিবার তা শোধ করতে পারবে না।

সংকটের মাত্রা বিবেচনায় সমালোচকেরা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে এবং নৈতিকভাবে এটা সমর্থনযোগ্য নয়। আরও সহায়তার বিষয়টি নাকচ না করার বিষয়ে ট্রাস সতর্ক ছিলেন।

জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সেবা: দারিদ্র্য ও স্বাস্থ্য নিয়ে যাঁরা কাজ করে আসছেন, তাঁরা যুক্তি দিতে পারেন জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সেবার বিষয়টিও। জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি সংকটের অনেক কারণের একটি। বিপুলসংখ্যক মানুষের শীতে জমে যাওয়া বাড়িতে বসবাস এবং খাবার কমাতে বাধ্য হওয়ার মতো সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁরা এমনটা ধারণা করছেন। এতে ইতিমধ্যে ধুঁকতে থাকা স্বাস্থ্য পরিষেবায় চাপ আরও বাড়বে।

যুক্তরাজ্যে সেপ্টেম্বরের শুরুতে দায়িত্ব নেওয়া অধিকাংশ প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হয়। ট্রাস ইতিমধ্যে একটির সামনে পড়েছেন। হাসপাতালে শয্যাস্বল্পতার মধ্যেই নিয়মিতভাবে দেরিতে সাড়া দিচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স। পুরো প্রক্রিয়া ও কার্যক্রমে রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। অবশ্য এসবের অনেক কিছুই হয়েছে করোনা মহামারির প্রভাবে।

কনজারভেটিভ পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করা: ট্রাসের আগের তিন টরি নেতাই তাঁদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন কিংবা সরে যেতে বাধ্য হন। এটা চলমান একটি সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এটা এমন একটি সমস্যা, যা অন্য নেতাদের চেয়ে ট্রাসকে আরও কঠিনভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

টরি সদস্যদের কাছে ট্রাসের আদর্শিক পরিচয়টা হলো তিনি নিজস্ব স্টাইলে যুক্তরাজ্যের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের উত্তরসূরি, ব্রেক্সিট ইস্যুতে অনমনীয় এবং সাংস্কৃতিক যুদ্ধে বিভক্তির লাইনে হাঁটতে আগ্রহী। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় এটা ভালো কাজে দিয়েছে। সদস্যদের চেয়ে অনেক কনজারভেটিভ এমপি তুলনামূলক কম ডানপন্থী। এমনকি অধিকতর উদারপন্থার কিছু বিষয় অনুসরণ করেন। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার প্রথম পর্যায়ে এক-তৃতীয়াংশেরও কম সহকর্মী এমপির সমর্থন পেয়েছিলেন ট্রাস। অনেকেই তাঁর মতাদর্শ ও সক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভা গঠনই হবে তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

ইউক্রেন ইস্যু: জ্বালানি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো নীতিগত দুটি বিষয়ের মতো ইউক্রেন ইস্যুতে নিজের বিকল্পগুলো নিয়ে ট্রাসকে অনেক বেশি সময় চিন্তাভাবনা করতে হবে না। বরিস জনসনের সময় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখবেন ট্রাস। নিজের দায়িত্ব পালনের শুরুর দিকের সপ্তাহগুলোতে কিয়েভে ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর ছবি দেখা যেতে পারে। তবে অন্যান্য বিশ্বনেতার মতো যুদ্ধ যত সামনে গড়াবে, ট্রাসও জটিলতার মুখোমুখি হবেন। কারণ, এই সংঘাত সমাধানের কোনো ইঙ্গিত মিলছে না। বিশেষ করে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরিণতির প্রভাব পড়তে শুরু করবে। বিষয়টি অনেকাংশেই যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

নির্বাচন হবে কি না : নীতিগত দিক থেকে যে পরিমাণ কর্মযজ্ঞ ট্রাসকে মোকাবিলা করতে হবে, তা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। কিন্তু তৃতীয় অন্তর্র্বতী টরি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ট্রাস যদি আরও বেশি কিছু হতে চান, তাহলে এটা বিবেচনায় আনা গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রাসের টিমের দাপ্তরিক যে অবস্থান, সেটা হলো বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনো নির্বাচন নয়। সে ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে। তবে জনসনের ২০১৯ সালের ম্যান্ডেটের ওপর ভিত্তি করে ট্রাস আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে জটিলতার মধ্যে পড়তে পারেন।