পার্সেল পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা, ৫ বিদেশিসহ গ্রেপ্তার ১১

বিদেশ থেকে পার্সেল পাঠানোর কথা বলে বিভিন্ন কায়দায় অর্থ হাতিয়ে নেয়া চক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদের মধ্যে ৫ জন বিদেশি নাগরিক এবং ৬ জন বাংলাদেশি। এই বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিকরা মিলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলোÑ বাংলাদেশি মূল হোতা বিপ্লব লস্কর ও তার সহযোগী সুমন হোসেন ওরফে ইমরান, মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন, ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল, নাজমুল হক রনি, মোসা. নুসরাত জাহান। ৫ বিদেশি নাগরিক হলোÑ নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি, ইমানুয়েল, জন, অ্যাঙ্গোলিয়ান নাগরিকÑ উইলসন ডে কনসিকাউ, ক্যামেরুনেরÑ নাগরিক গুলগ্নি পাপিনি। গত সোমবার রাতে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, ২৮টি মোবাইল, একটি কম্পিউটার, ৪৯১টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বই, তিনটি ওয়ারলেস পকেট রাউটার, একটি প্রাইভেটকার, সাড়ে ৩ লাখ জাল টাকা, নগদ ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ২৬৩টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়।

ডিবি বলছে, চক্রের মূল হোতা বাংলাদেশি বিল্পব লস্কর। গ্রেপ্তার এড়াতে গাড়িতে ও তার সঙ্গে সবসময় নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করত সে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। ডিবি এমনটি বললেও তার কাছ থেকে জ্যামার উদ্ধারের কথা জায়াননি। বিল্পব এভাবে টাকা কামিয়ে কুলি থেকে কোটিপতি হয়েছে। রাজধানীতে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট। বিদেশিদের প্রতারণার শতাধিক ঘটনার সঙ্গে বিপ্লবের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে ডিবি।

গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, পার্সেল প্রতারক কখনো বাংলাদেশে বসে আবার কখনো দেশের বাইরে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে পার্সেলে ডলার অথবা মূল্যবান উপহার পাঠানোর ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফেইসবুক বন্ধুর নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে ভুয়া পার্সেলের ছবি পাঠাতো। প্রতারিত ব্যক্তিরা সরল বিশ্বাসে পার্সেল গ্রহণের অপেক্ষায় থাকেন। প্রতারক চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি প্রতারকরা বিভিন্ন অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করে নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে জানায়, কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস থেকে একটি পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি ছাড়াতে কাস্টমস হাউজ ফি বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

পার্সেল পাওয়ার আশায় কাস্টমস কর্মকর্তার দাবি করা টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আবারও ফোন করে জানান, বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ডলার রয়েছে। যা ছাড়াতে আরও বেশি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানিলন্ডারিং আইনসহ অন্য আইনে মামলা হবে। এভাবে মিথ্যা ভয়ভীতি দেখান। প্রতারিত ব্যক্তিরা মামলার ভয়ে প্রতারকদের দেয়া বিভিন্ন ব্যাংক আ্যকাউন্টে দাবিকৃত টাকা পাঠালে আবারও ফোন করে পুলিশ এবং সাংবাদিক জেনে যাওয়ায় তাদের ম্যানেজের কথা বলে আরও বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। প্রতারকরা তাদের দাবি করা টাকা তাদের সরবরাহকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিকে সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্লক করে দিত।

তিনি জানান, বিদেশি প্রতারক চক্রটি গ্রেপ্তার নুসরাতের মতো বহু বাংলাদেশির সহায়তায় এভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল। প্রতারণায় ব্যবহৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট জাল করে বিভিন্ন ব্যাংকে শত শত অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড নিয়েছে। এসব ব্যাংকের চেক ও এটিএম কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা তুলে নিত। আর এই টাকা তোলা ও ভাগাভাগির কাজটি করতেন বিপ্লব। তার বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি তদারকি করত। খিলক্ষেত ও কাফরুল থানায় মানিলন্ডারিংয়ের মামলা রয়েছে বিপ্লবের বিরুদ্ধে। এছাড়া বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় শতাধিক মামলা রয়েছে। সে এর আগে একাধিকবার গ্রেপ্তারও হয়েছে।

বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩ ভাদ্র ১৪২৯ ১০ সফর ১৪৪৪

পার্সেল পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা, ৫ বিদেশিসহ গ্রেপ্তার ১১

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিদেশ থেকে পার্সেল পাঠানোর কথা বলে বিভিন্ন কায়দায় অর্থ হাতিয়ে নেয়া চক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদের মধ্যে ৫ জন বিদেশি নাগরিক এবং ৬ জন বাংলাদেশি। এই বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিকরা মিলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলোÑ বাংলাদেশি মূল হোতা বিপ্লব লস্কর ও তার সহযোগী সুমন হোসেন ওরফে ইমরান, মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন, ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল, নাজমুল হক রনি, মোসা. নুসরাত জাহান। ৫ বিদেশি নাগরিক হলোÑ নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি, ইমানুয়েল, জন, অ্যাঙ্গোলিয়ান নাগরিকÑ উইলসন ডে কনসিকাউ, ক্যামেরুনেরÑ নাগরিক গুলগ্নি পাপিনি। গত সোমবার রাতে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, ২৮টি মোবাইল, একটি কম্পিউটার, ৪৯১টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বই, তিনটি ওয়ারলেস পকেট রাউটার, একটি প্রাইভেটকার, সাড়ে ৩ লাখ জাল টাকা, নগদ ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ২৬৩টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়।

ডিবি বলছে, চক্রের মূল হোতা বাংলাদেশি বিল্পব লস্কর। গ্রেপ্তার এড়াতে গাড়িতে ও তার সঙ্গে সবসময় নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করত সে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। ডিবি এমনটি বললেও তার কাছ থেকে জ্যামার উদ্ধারের কথা জায়াননি। বিল্পব এভাবে টাকা কামিয়ে কুলি থেকে কোটিপতি হয়েছে। রাজধানীতে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট। বিদেশিদের প্রতারণার শতাধিক ঘটনার সঙ্গে বিপ্লবের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে ডিবি।

গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, পার্সেল প্রতারক কখনো বাংলাদেশে বসে আবার কখনো দেশের বাইরে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে পার্সেলে ডলার অথবা মূল্যবান উপহার পাঠানোর ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফেইসবুক বন্ধুর নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে ভুয়া পার্সেলের ছবি পাঠাতো। প্রতারিত ব্যক্তিরা সরল বিশ্বাসে পার্সেল গ্রহণের অপেক্ষায় থাকেন। প্রতারক চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি প্রতারকরা বিভিন্ন অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করে নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে জানায়, কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস থেকে একটি পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি ছাড়াতে কাস্টমস হাউজ ফি বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

পার্সেল পাওয়ার আশায় কাস্টমস কর্মকর্তার দাবি করা টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আবারও ফোন করে জানান, বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ডলার রয়েছে। যা ছাড়াতে আরও বেশি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানিলন্ডারিং আইনসহ অন্য আইনে মামলা হবে। এভাবে মিথ্যা ভয়ভীতি দেখান। প্রতারিত ব্যক্তিরা মামলার ভয়ে প্রতারকদের দেয়া বিভিন্ন ব্যাংক আ্যকাউন্টে দাবিকৃত টাকা পাঠালে আবারও ফোন করে পুলিশ এবং সাংবাদিক জেনে যাওয়ায় তাদের ম্যানেজের কথা বলে আরও বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। প্রতারকরা তাদের দাবি করা টাকা তাদের সরবরাহকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিকে সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্লক করে দিত।

তিনি জানান, বিদেশি প্রতারক চক্রটি গ্রেপ্তার নুসরাতের মতো বহু বাংলাদেশির সহায়তায় এভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল। প্রতারণায় ব্যবহৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট জাল করে বিভিন্ন ব্যাংকে শত শত অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড নিয়েছে। এসব ব্যাংকের চেক ও এটিএম কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা তুলে নিত। আর এই টাকা তোলা ও ভাগাভাগির কাজটি করতেন বিপ্লব। তার বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি তদারকি করত। খিলক্ষেত ও কাফরুল থানায় মানিলন্ডারিংয়ের মামলা রয়েছে বিপ্লবের বিরুদ্ধে। এছাড়া বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় শতাধিক মামলা রয়েছে। সে এর আগে একাধিকবার গ্রেপ্তারও হয়েছে।