সিদরাতুল মুনতাহা
ঝকঝকে নীল আকাশ, ফুলের পাপড়িতে দোল দিচ্ছে মৃদু বাতাস, চারদিকে কাশফুল আর কাশফুল, মাটিতে যেন মিশে গেছে তার গন্ধ, শুরু হয়েছে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের শিউলি ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথার প্রতিযোগিতা। এই তো- চারদিকে মুগ্ধতা ছড়িয়ে শরৎ এসে গেছে বাংলার প্রকৃতিতে।
বর্ষার অবসান ঘটেছে। ঋতু পরিক্রমায় স্নিগ্ধতা, কোমলতা নিয়ে আবির্ভাব হয়েছে ঋতুর রানী শরতের। এই ঋতুকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক। কেননা এর রয়েছে অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য। এ সময় সূর্যের ঝলমলে আলোয় ভরে যায় চারদিক, কাশফুলে ভরে যায় বাংলার প্রকৃতি, দূর্বা ঘাস ভিজে যায় হালকা শিশিরে, আকাশে শিমুল তুলোর মতো ভেসে চলে সাদা মেঘ, বিলের জলে নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে লাল ও সাদা শাপলা, আমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় ভোরের হিমেল হাওয়া।
কাশফুলের আধিপত্য ছাড়াও ছাতিম, শেফালি, শিউলি, মিনজিরি, বকফুল, কলিয়েন্ড্রা ইত্যাদি ফুল ফুটে প্রকৃতিকে দেয় অনিন্দ্য সৌন্দর্য। শরতে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু বলেছেন, ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।’ শরৎকে নববধূর সঙ্গে তুলনা করে কবি কালিদাস বলেছেন, ‘প্রিয়তম আমার, ওই চেয়ে দেখো, নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত।’
বর্ষা প্রকৃতিকে ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়ে যায়, কোথাও থাকে না ধূলো-ময়লা। শরতে প্রকৃতি হয়ে উঠে ঝকঝকে তকতকে। নদীমাতৃক এই দেশে নদীগুলোর দুই কূল ছাপিয়ে ফুটে থাকে কাশফুল, বাতাসে নদীর ঢেউয়ের মতো ঢেউ উঠে কাশবনে। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যে যেন জুড়িয়ে যায় দুচোখ। এছাড়া এই শরৎকালে পাকা তালের গন্ধে মৌ মৌ করে গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি, ঘরে ঘরে তৈরি হয় সুস্বাদু তালের পিঠা।
যদিও পূর্বে তালের পিঠার উৎসব খুব ধুমধাম করে পালন হতো বাংলার ঘরে ঘরে, এখন কালের পরিক্রমায় সেই সংস্কৃতি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। অন্যদিকে ইট-কাঠের রাজধানী শহর বড় বড় দালানে আকাশ ঢাকা, নেই তেমন শুভ্র কাশবন। নীল আকাশ জুড়ে মেঘের ভেসে বেড়ানো দৃশ্য খুব সহজেই চোখে পড়ে না। তবুও শরৎকে বরণ করে নিতে বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা হয় শরৎ উৎসব।
যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শরতের সেই রূপ-মাধুর্য আর আগের মতো নেই, তবুও আমরা যদি একটু যতœশীল হই তাহলে শরতের সৌন্দর্য আরও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারি। আমাদের এই ষড়ঋতুর দেশে প্রকৃতি ছয়টি ভিন্ন রূপে সাজে; যে রূপবৈচিত্র্য সবাই উপভোগ করে। শরতের রূপ-মাধুর্যে বার বার রঙিন হয়ে উঠুক এই বাংলার প্রকৃতি, শরতের নীলাকাশের সাদা মেঘের ভেলার মতো সবার জীবনে সুখ-শান্তি ভেসে আসুকÑএটাই প্রত্যাশা।
[লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]
বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩ ভাদ্র ১৪২৯ ১০ সফর ১৪৪৪
সিদরাতুল মুনতাহা
ঝকঝকে নীল আকাশ, ফুলের পাপড়িতে দোল দিচ্ছে মৃদু বাতাস, চারদিকে কাশফুল আর কাশফুল, মাটিতে যেন মিশে গেছে তার গন্ধ, শুরু হয়েছে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের শিউলি ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথার প্রতিযোগিতা। এই তো- চারদিকে মুগ্ধতা ছড়িয়ে শরৎ এসে গেছে বাংলার প্রকৃতিতে।
বর্ষার অবসান ঘটেছে। ঋতু পরিক্রমায় স্নিগ্ধতা, কোমলতা নিয়ে আবির্ভাব হয়েছে ঋতুর রানী শরতের। এই ঋতুকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক। কেননা এর রয়েছে অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য। এ সময় সূর্যের ঝলমলে আলোয় ভরে যায় চারদিক, কাশফুলে ভরে যায় বাংলার প্রকৃতি, দূর্বা ঘাস ভিজে যায় হালকা শিশিরে, আকাশে শিমুল তুলোর মতো ভেসে চলে সাদা মেঘ, বিলের জলে নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে লাল ও সাদা শাপলা, আমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় ভোরের হিমেল হাওয়া।
কাশফুলের আধিপত্য ছাড়াও ছাতিম, শেফালি, শিউলি, মিনজিরি, বকফুল, কলিয়েন্ড্রা ইত্যাদি ফুল ফুটে প্রকৃতিকে দেয় অনিন্দ্য সৌন্দর্য। শরতে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবিগুরু বলেছেন, ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।’ শরৎকে নববধূর সঙ্গে তুলনা করে কবি কালিদাস বলেছেন, ‘প্রিয়তম আমার, ওই চেয়ে দেখো, নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত।’
বর্ষা প্রকৃতিকে ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়ে যায়, কোথাও থাকে না ধূলো-ময়লা। শরতে প্রকৃতি হয়ে উঠে ঝকঝকে তকতকে। নদীমাতৃক এই দেশে নদীগুলোর দুই কূল ছাপিয়ে ফুটে থাকে কাশফুল, বাতাসে নদীর ঢেউয়ের মতো ঢেউ উঠে কাশবনে। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যে যেন জুড়িয়ে যায় দুচোখ। এছাড়া এই শরৎকালে পাকা তালের গন্ধে মৌ মৌ করে গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি, ঘরে ঘরে তৈরি হয় সুস্বাদু তালের পিঠা।
যদিও পূর্বে তালের পিঠার উৎসব খুব ধুমধাম করে পালন হতো বাংলার ঘরে ঘরে, এখন কালের পরিক্রমায় সেই সংস্কৃতি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। অন্যদিকে ইট-কাঠের রাজধানী শহর বড় বড় দালানে আকাশ ঢাকা, নেই তেমন শুভ্র কাশবন। নীল আকাশ জুড়ে মেঘের ভেসে বেড়ানো দৃশ্য খুব সহজেই চোখে পড়ে না। তবুও শরৎকে বরণ করে নিতে বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা হয় শরৎ উৎসব।
যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শরতের সেই রূপ-মাধুর্য আর আগের মতো নেই, তবুও আমরা যদি একটু যতœশীল হই তাহলে শরতের সৌন্দর্য আরও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারি। আমাদের এই ষড়ঋতুর দেশে প্রকৃতি ছয়টি ভিন্ন রূপে সাজে; যে রূপবৈচিত্র্য সবাই উপভোগ করে। শরতের রূপ-মাধুর্যে বার বার রঙিন হয়ে উঠুক এই বাংলার প্রকৃতি, শরতের নীলাকাশের সাদা মেঘের ভেলার মতো সবার জীবনে সুখ-শান্তি ভেসে আসুকÑএটাই প্রত্যাশা।
[লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]