প্রতারকদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ

গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও ভুয়া এনজিও

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি ভুয়া এনজিও প্রতারণা করে প্রায় তিন শতাধিক গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা এনজিওর নামে প্রতারকদের শাস্তি ও তাদের গচ্ছিত টাকা উদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ওই এনজিওর অফিসে তালা ঝুলিয়ে প্রতারকরা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিরীহ গ্রাহকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় কয়েকজন গ্রাহক বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানগর এলাকায় অবস্থিত রুপালী ফাউন্ডেশন নামের ভুয়া এনজিও’র প্রতারকরা পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রাহকরা বন্ধ থাকা অফিসের সামনেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ।

গ্রাহকরা অভিযোগ করে জানান, ৩ বছর পুর্বে গঙ্গানগর এলাকার ফিরোজ মিয়ার বাড়িতে রুপালী ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও অফিস ভাড়া নেয়া হয়। ওই এনজিওতে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শাহিদ নামের এক প্রতারক ও হিসাবের দায়িত্বে ছিলেন কবির শেখ নামের আরো একজন প্রতারক। এনজিওর নামে প্রতারকরা গঙ্গানগর, গর্ন্ধবপুর, দড়িকান্দিসহ আশপাশের এলাকায় গিয়ে সহজসরল নিরীহ লোকজনকে কিস্তিতে ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে ঋণ দেয়া হবে বলে প্রলোভন দেখায়। বাড়ির মালিক ফিরোজ মিয়াও গ্রাহকদের টাকা দিতে উৎসাহিত করেন। এরপর সদস্য করে গ্রাহকদের কাছ থেকে কিস্তির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন শুরু করে প্রতারকরা। এমন করে খোরশেদা বেগমের ৬০ হাজার, আমিয়া বেগমের ২৫ হাজার, ফরিদার ৫ হাজার, লিপি আক্তারের ২০ হাজার, শুভ মাঝির দেড় লাখ, হুমায়ুনের ৬৫ হাজার, আয়েশার ২০ হাজার, রিপন মিয়ার ৮ হাজার, ইকবালের ৯ হাজার, মুরাদের ৩২ হাজার, শাকিলের ৪ হাজার, নাছি আক্তারের ৯ হাজার, রাজিব মিয়ার ৩০ হাজার, হাবিবুরের ৩০ হাজার, আমজাত দেওয়ানের ৩০ হাজার, মাসুম মিয়ার ৩০ হাজার, রাসেলের ২০ হাজার, হাম্মত হোসেনের ১৫ হাজার, মফিজুলের ১২ হাজার, রাবুজার ১০ হাজারসহ অন্তত ৩ শতাধীক গ্রাহকের টাকা আত্বসাত করে এনজিওটির প্রতারকরা। বেশ কয়েক দিন ধরেই এনজিওতে জমানো টাকা ফেরতের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন গ্রাহকরা। ওই প্রতারকরাও দেই দিচ্ছি করে ঘুরাতে থাকেন। এক পর্যায়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে তালা দিয়ে অফিস কক্ষ বন্ধ করে প্রতারণা করে প্রতারকরা পালিয়ে গেছে। এ ঘটনার পর থেকে পালিয়ে রয়েছেন বাড়ির মালিকও। কোন উপায় না পেয়ে প্রতারণার শিকার ১৮ জন গ্রাহক বাদী হয়ে বাড়ির মালিক ফিরোজ মিয়াসহ প্রতারকদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগী গ্রাহক আয়েশা আক্তারসহ আরো কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, আমরা অত্যন্ত গরীব মানুষ। দিনমজুরের কাজ করে কোন রকম সংসার চালিয়ে যে টাকাটা আয় হতো তা এনজিওতে জমা রেখেছি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত টাকা প্রতারকদের হাতে পড়েছে। টাকা না পেলে আমাদের কষ্টের শেষ নেই।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রিয়াজ উদ্দিন বলেন, রুপালি ফাউন্ডেশন নামের কোন এনজিও আছে বলে আমার জানা নেই। এছাড়া কেউ লিখিত অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে আমাদের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, প্রতারণার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। প্রতারকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৪ ভাদ্র ১৪২৯ ১১ সফর ১৪৪৪

প্রতারকদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ

গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও ভুয়া এনজিও

প্রতিনিধি, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

image

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : এনজিওর প্রতারণার ফাঁদে আমানত হারিয়ে অফিসের সামনে বিক্ষোভ করছেন গ্রাহকরা -সংবাদ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি ভুয়া এনজিও প্রতারণা করে প্রায় তিন শতাধিক গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা এনজিওর নামে প্রতারকদের শাস্তি ও তাদের গচ্ছিত টাকা উদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ওই এনজিওর অফিসে তালা ঝুলিয়ে প্রতারকরা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিরীহ গ্রাহকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় কয়েকজন গ্রাহক বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানগর এলাকায় অবস্থিত রুপালী ফাউন্ডেশন নামের ভুয়া এনজিও’র প্রতারকরা পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রাহকরা বন্ধ থাকা অফিসের সামনেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ।

গ্রাহকরা অভিযোগ করে জানান, ৩ বছর পুর্বে গঙ্গানগর এলাকার ফিরোজ মিয়ার বাড়িতে রুপালী ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও অফিস ভাড়া নেয়া হয়। ওই এনজিওতে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শাহিদ নামের এক প্রতারক ও হিসাবের দায়িত্বে ছিলেন কবির শেখ নামের আরো একজন প্রতারক। এনজিওর নামে প্রতারকরা গঙ্গানগর, গর্ন্ধবপুর, দড়িকান্দিসহ আশপাশের এলাকায় গিয়ে সহজসরল নিরীহ লোকজনকে কিস্তিতে ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে ঋণ দেয়া হবে বলে প্রলোভন দেখায়। বাড়ির মালিক ফিরোজ মিয়াও গ্রাহকদের টাকা দিতে উৎসাহিত করেন। এরপর সদস্য করে গ্রাহকদের কাছ থেকে কিস্তির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন শুরু করে প্রতারকরা। এমন করে খোরশেদা বেগমের ৬০ হাজার, আমিয়া বেগমের ২৫ হাজার, ফরিদার ৫ হাজার, লিপি আক্তারের ২০ হাজার, শুভ মাঝির দেড় লাখ, হুমায়ুনের ৬৫ হাজার, আয়েশার ২০ হাজার, রিপন মিয়ার ৮ হাজার, ইকবালের ৯ হাজার, মুরাদের ৩২ হাজার, শাকিলের ৪ হাজার, নাছি আক্তারের ৯ হাজার, রাজিব মিয়ার ৩০ হাজার, হাবিবুরের ৩০ হাজার, আমজাত দেওয়ানের ৩০ হাজার, মাসুম মিয়ার ৩০ হাজার, রাসেলের ২০ হাজার, হাম্মত হোসেনের ১৫ হাজার, মফিজুলের ১২ হাজার, রাবুজার ১০ হাজারসহ অন্তত ৩ শতাধীক গ্রাহকের টাকা আত্বসাত করে এনজিওটির প্রতারকরা। বেশ কয়েক দিন ধরেই এনজিওতে জমানো টাকা ফেরতের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন গ্রাহকরা। ওই প্রতারকরাও দেই দিচ্ছি করে ঘুরাতে থাকেন। এক পর্যায়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে তালা দিয়ে অফিস কক্ষ বন্ধ করে প্রতারণা করে প্রতারকরা পালিয়ে গেছে। এ ঘটনার পর থেকে পালিয়ে রয়েছেন বাড়ির মালিকও। কোন উপায় না পেয়ে প্রতারণার শিকার ১৮ জন গ্রাহক বাদী হয়ে বাড়ির মালিক ফিরোজ মিয়াসহ প্রতারকদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগী গ্রাহক আয়েশা আক্তারসহ আরো কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, আমরা অত্যন্ত গরীব মানুষ। দিনমজুরের কাজ করে কোন রকম সংসার চালিয়ে যে টাকাটা আয় হতো তা এনজিওতে জমা রেখেছি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত টাকা প্রতারকদের হাতে পড়েছে। টাকা না পেলে আমাদের কষ্টের শেষ নেই।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রিয়াজ উদ্দিন বলেন, রুপালি ফাউন্ডেশন নামের কোন এনজিও আছে বলে আমার জানা নেই। এছাড়া কেউ লিখিত অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে আমাদের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, প্রতারণার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। প্রতারকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।