ফার্নেস তেলভিত্তিক

রেন্টাল ৪ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ফের বাড়লো

২০১২ সালে চালু, একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি

ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ২ বছর করে বাড়িয়েছে সরকার। ফার্নেস তেলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট।

চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই ২০১২ সালে উৎপাদনে আসে। চুক্তি (মেয়াদ) শেষ হওয়ার পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় এসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়।

গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আবার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকায় কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত পাওয়ার প্যাক লিমিটেড ও চট্টগ্রামের জুলডায় অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেসের উৎপাদন ক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট করে। রাজশাহীর কাটাখালীতে নর্দার্ন পাওয়ার সলিউশন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরায় অবস্থিত সিনহা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট করে।

এরমধ্যে সিনহা পাওয়ারের ‘আমনুরা ৫০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হয় ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি। ওই বছর ২৬ মার্চ একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিস লিমিটেডের ‘জুলডা ১০০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র, ২৭ মার্চ পাওয়ার প্যাকের ‘কেরানীগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হয়। একই বছর ২২ মে চালু হয় নর্দার্ন পাওয়ারের ‘কাটাখালী ৫০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র। জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০১০ সালে ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর বিশেষ আইন পাস করে। এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়াতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন আইন করা হয়।

সম্প্রতি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ বা ‘বিদ্যুৎ না কিনলে অর্থ পরিশোধ নয়’ ভিত্তিতে চারটি কেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সুপারিশ করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকলেও অবকাঠামো, সংরক্ষণ ও পরিচালন ব্যয় বাবদ নির্ধারিত পরিমাণে ক্যাপাসিটি চার্জ পান কেন্দ্র মালিকরা। ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ গত ১২ বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার কথা থাকলেও গতকাল তা করা হয়নি। ব্রিফ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল বারিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নির্দেশিত হইনি।’

বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে আবদুল বারিক বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, বিদ্যুৎ না দিলে টাকা পাবেন না (নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট), এ ভিত্তিতে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।’

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর নতুন প্রস্তাবে ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিল করা হলেও মেরামত ও পরিচালন ব্যয় (ফিক্সড ও ভ্যারিয়েবল) বাবদ খরচ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

ডিজেলের চেয়ে ফার্নেস তেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অপেক্ষাকৃত কম, এমন যুক্তিতে এই কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আবার বাড়ানো হলো। অথচ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফার্নেস তেলের চেয়ে খরচ কম। বড় কয়লা বিদ্যুতের মধ্যে পায়রা উৎপাদনে এসেছে। উদ্বোধন হয়েছে রামপাল, যা অক্টোবরে উৎপাদনে আসবে। এছাড়া ডিসেম্বরে ভারতের ঝাড়খ- থেকে আদানির বিদ্যুৎ আসবে।

বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৪ ভাদ্র ১৪২৯ ১১ সফর ১৪৪৪

ফার্নেস তেলভিত্তিক

রেন্টাল ৪ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ফের বাড়লো

২০১২ সালে চালু, একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ২ বছর করে বাড়িয়েছে সরকার। ফার্নেস তেলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াট।

চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রই ২০১২ সালে উৎপাদনে আসে। চুক্তি (মেয়াদ) শেষ হওয়ার পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় এসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়।

গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আবার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকায় কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত পাওয়ার প্যাক লিমিটেড ও চট্টগ্রামের জুলডায় অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেসের উৎপাদন ক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট করে। রাজশাহীর কাটাখালীতে নর্দার্ন পাওয়ার সলিউশন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরায় অবস্থিত সিনহা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট করে।

এরমধ্যে সিনহা পাওয়ারের ‘আমনুরা ৫০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হয় ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি। ওই বছর ২৬ মার্চ একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিস লিমিটেডের ‘জুলডা ১০০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র, ২৭ মার্চ পাওয়ার প্যাকের ‘কেরানীগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হয়। একই বছর ২২ মে চালু হয় নর্দার্ন পাওয়ারের ‘কাটাখালী ৫০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল’ বিদ্যুৎকেন্দ্র। জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০১০ সালে ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর বিশেষ আইন পাস করে। এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়াতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন আইন করা হয়।

সম্প্রতি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ বা ‘বিদ্যুৎ না কিনলে অর্থ পরিশোধ নয়’ ভিত্তিতে চারটি কেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সুপারিশ করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকলেও অবকাঠামো, সংরক্ষণ ও পরিচালন ব্যয় বাবদ নির্ধারিত পরিমাণে ক্যাপাসিটি চার্জ পান কেন্দ্র মালিকরা। ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ গত ১২ বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার কথা থাকলেও গতকাল তা করা হয়নি। ব্রিফ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল বারিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নির্দেশিত হইনি।’

বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে আবদুল বারিক বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, বিদ্যুৎ না দিলে টাকা পাবেন না (নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট), এ ভিত্তিতে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।’

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর নতুন প্রস্তাবে ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিল করা হলেও মেরামত ও পরিচালন ব্যয় (ফিক্সড ও ভ্যারিয়েবল) বাবদ খরচ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

ডিজেলের চেয়ে ফার্নেস তেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অপেক্ষাকৃত কম, এমন যুক্তিতে এই কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আবার বাড়ানো হলো। অথচ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফার্নেস তেলের চেয়ে খরচ কম। বড় কয়লা বিদ্যুতের মধ্যে পায়রা উৎপাদনে এসেছে। উদ্বোধন হয়েছে রামপাল, যা অক্টোবরে উৎপাদনে আসবে। এছাড়া ডিসেম্বরে ভারতের ঝাড়খ- থেকে আদানির বিদ্যুৎ আসবে।