বিশ্ববাজারে কমছে, দেশে বাড়লো

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে রান্নায় ব্যবহৃত বেসরকারি খাতের এলপি গ্যাস ও যানবাহনের জ্বালানি অটোগ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সেপ্টেম্বরে বহুল ব্যবহৃত ১২ কেজি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম মূসকসহ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৩৫ টাকা। যা আগস্টে ছিল ১২১৯ টাকা। অর্থাৎ ১২ কেজিতে বেড়েছে ১৬ টাকা।

সেপ্টেম্বরে মূসকসহ প্রতি লিটার অটোগ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ টাকা ৫৫ পয়সা। যা গত মাসে ছিল ৫৬ টাকা ৮৫ পয়সা। প্রতি লিটারে বেড়েছে ৭০ পয়সা।

গতকাল ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাম ঘোষণা করেন বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু ফারুক। এ সময় বিইআরসির সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও মো. কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এ দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এ সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

সেপ্টেম্বরের জন্য সৌদি আরামকোর কনট্রাক্ট প্রাইসের (সিপি) ভিত্তিতে প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণের প্রতি টনের গড় মূল্য ধরা হয়েছে ৬৩৭ মার্কিন ডলার, আগস্ট মাসে এই দাম ৬৬৩ দশমিক ৫০ ডলার ছিল।

কমিশন বলছে, আমদানি করা এই জ্বালানির ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত ৯৫ টাকা ধরে হিসাব করা হলে দেশে এলপিজির দাম কমত। তবে ব্যবসায়ীদের কাগজপত্রে ডলারের বিনিময় হার বেশি পাওয়া গেছে। যা গড় করে প্রতি মার্কিন ডলার ১০৪ টাকা ০২ পয়সা ধরে হিসাব করায় এলপিজির (এলপি গ্যাস) দাম বেড়ে গেছে।

গতকাল দুপুর ১টা থেকে নতুন দর কার্যকর করা হয়, যা পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে বিইআরসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সেপ্টেম্বর মাসে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে মূসকসহ ১০২ টাকা ৮৮ পয়সা, যা গত (আগস্ট) মাসে ছিল ১০১ টাকা ৬২ পয়সা। সে হিসাবে প্রতি কেজিতে মূসকসহ বেড়েছে এক টাকা ২৬ পয়সা।

নতুন মূল্যহার অনুযায়ী, সাড়ে ৫ কেজি ওজনের এক সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ৫৬৬ টাকা, ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম ১২৩৫ টাকা, সাড়ে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম ১২৮৬ টাকা, ১৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৫৪৪ টাকা, ১৬ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১৬৪৬ টাকা হবে। এছাড়া ১৮ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৮৫২ টাকা, ২০ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২০৫৮ টাকা, ২২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২২৬৪ টাকা, ২৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ২৫৭১ টাকা, ৩০ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৩০৮৬ টাকা, ৩৩ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৩৩৯৬ টাকা, ৩৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৩৬০০ টাকা এবং ৪৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৪৬৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেপ্টেম্বর মাসের জন্য বহুতল ভবনে রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে (কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত) তরল অবস্থায় সরবরাহকৃত এলপিজির দাম মূসকসহ প্রতি কেজি ৯৯ টাকা ৬৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগস্টে ছিল ৯৮ টাকা ৩৮ পয়সা। প্রতি কেজিতে বেড়েছে এক টাকা ২৭ পয়সা।

তবে সরকারি এলপিজির দাম অপরিবর্তিত থাকবে বলে কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

গত বছরের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে এ সংস্থা। এরপর থেকে প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে এলপিজির দাম বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু ফারুক বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমার পরও দেশে কমানো যায়নি, ডলারের বিনিময় হারের কারণে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত বিনিময় হার ৯৫ টাকা ধরে হিসাব করা হলে দেশে দাম কমত। ১৬টি কোম্পানির ইনভয়েস ও ঋণপত্রের কাগজে বিভিন্ন রকম বিনিময় হার পাওয়া গেছে। সবকটির গড় করে প্রতি মার্কিন ডলার ১০৪ টাকা ০২ পয়সা ধরে এ মাসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কমিশন নির্ধারিত দামে বাজারে এলপিজি না পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আবু ফারুক বলেন, ‘কমিশনের মনিটরিংয়ের যে ব্যবস্থা আছে, বা যে প্রক্রিয়া, আমরা সেই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে মনিটরিং করে যাচ্ছি। আমরা সরকার ও সরকারের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মনিটর করে থাকি। যদিও এটা কতটুকু ইফেক্টিভ হয়, সেটা আমি এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। কারণ বিভিন্ন ধরনের মতভেদ এখানে আছে।

তবে একটা কথা বলতে পারি যে, কমিশনের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির ফলে এই সেক্টরে একটা ডিসিপ্লিন এসেছে এবং ভোক্তারা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে এটা পাচ্ছে। যদিও এই পুরো প্রক্রিয়া অর্গানাইজড ওয়েতে আসতে আরও কিছুটা সময় নিতে পারে।’

জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে এলপিজির দাম কমেছিল বিইআরসি। সেপ্টেম্বরে আবার বাড়ানো হলো।

বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৪ ভাদ্র ১৪২৯ ১১ সফর ১৪৪৪

এলপি গ্যাসের দাম

বিশ্ববাজারে কমছে, দেশে বাড়লো

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে রান্নায় ব্যবহৃত বেসরকারি খাতের এলপি গ্যাস ও যানবাহনের জ্বালানি অটোগ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সেপ্টেম্বরে বহুল ব্যবহৃত ১২ কেজি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম মূসকসহ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৩৫ টাকা। যা আগস্টে ছিল ১২১৯ টাকা। অর্থাৎ ১২ কেজিতে বেড়েছে ১৬ টাকা।

সেপ্টেম্বরে মূসকসহ প্রতি লিটার অটোগ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ টাকা ৫৫ পয়সা। যা গত মাসে ছিল ৫৬ টাকা ৮৫ পয়সা। প্রতি লিটারে বেড়েছে ৭০ পয়সা।

গতকাল ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাম ঘোষণা করেন বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু ফারুক। এ সময় বিইআরসির সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও মো. কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এ দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এ সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

সেপ্টেম্বরের জন্য সৌদি আরামকোর কনট্রাক্ট প্রাইসের (সিপি) ভিত্তিতে প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণের প্রতি টনের গড় মূল্য ধরা হয়েছে ৬৩৭ মার্কিন ডলার, আগস্ট মাসে এই দাম ৬৬৩ দশমিক ৫০ ডলার ছিল।

কমিশন বলছে, আমদানি করা এই জ্বালানির ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত ৯৫ টাকা ধরে হিসাব করা হলে দেশে এলপিজির দাম কমত। তবে ব্যবসায়ীদের কাগজপত্রে ডলারের বিনিময় হার বেশি পাওয়া গেছে। যা গড় করে প্রতি মার্কিন ডলার ১০৪ টাকা ০২ পয়সা ধরে হিসাব করায় এলপিজির (এলপি গ্যাস) দাম বেড়ে গেছে।

গতকাল দুপুর ১টা থেকে নতুন দর কার্যকর করা হয়, যা পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে বিইআরসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সেপ্টেম্বর মাসে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে মূসকসহ ১০২ টাকা ৮৮ পয়সা, যা গত (আগস্ট) মাসে ছিল ১০১ টাকা ৬২ পয়সা। সে হিসাবে প্রতি কেজিতে মূসকসহ বেড়েছে এক টাকা ২৬ পয়সা।

নতুন মূল্যহার অনুযায়ী, সাড়ে ৫ কেজি ওজনের এক সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ৫৬৬ টাকা, ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম ১২৩৫ টাকা, সাড়ে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম ১২৮৬ টাকা, ১৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৫৪৪ টাকা, ১৬ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১৬৪৬ টাকা হবে। এছাড়া ১৮ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১৮৫২ টাকা, ২০ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২০৫৮ টাকা, ২২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২২৬৪ টাকা, ২৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ২৫৭১ টাকা, ৩০ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৩০৮৬ টাকা, ৩৩ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৩৩৯৬ টাকা, ৩৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৩৬০০ টাকা এবং ৪৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৪৬৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সেপ্টেম্বর মাসের জন্য বহুতল ভবনে রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে (কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত) তরল অবস্থায় সরবরাহকৃত এলপিজির দাম মূসকসহ প্রতি কেজি ৯৯ টাকা ৬৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগস্টে ছিল ৯৮ টাকা ৩৮ পয়সা। প্রতি কেজিতে বেড়েছে এক টাকা ২৭ পয়সা।

তবে সরকারি এলপিজির দাম অপরিবর্তিত থাকবে বলে কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

গত বছরের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে এ সংস্থা। এরপর থেকে প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে এলপিজির দাম বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু ফারুক বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমার পরও দেশে কমানো যায়নি, ডলারের বিনিময় হারের কারণে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত বিনিময় হার ৯৫ টাকা ধরে হিসাব করা হলে দেশে দাম কমত। ১৬টি কোম্পানির ইনভয়েস ও ঋণপত্রের কাগজে বিভিন্ন রকম বিনিময় হার পাওয়া গেছে। সবকটির গড় করে প্রতি মার্কিন ডলার ১০৪ টাকা ০২ পয়সা ধরে এ মাসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কমিশন নির্ধারিত দামে বাজারে এলপিজি না পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আবু ফারুক বলেন, ‘কমিশনের মনিটরিংয়ের যে ব্যবস্থা আছে, বা যে প্রক্রিয়া, আমরা সেই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে মনিটরিং করে যাচ্ছি। আমরা সরকার ও সরকারের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মনিটর করে থাকি। যদিও এটা কতটুকু ইফেক্টিভ হয়, সেটা আমি এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। কারণ বিভিন্ন ধরনের মতভেদ এখানে আছে।

তবে একটা কথা বলতে পারি যে, কমিশনের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির ফলে এই সেক্টরে একটা ডিসিপ্লিন এসেছে এবং ভোক্তারা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে এটা পাচ্ছে। যদিও এই পুরো প্রক্রিয়া অর্গানাইজড ওয়েতে আসতে আরও কিছুটা সময় নিতে পারে।’

জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে এলপিজির দাম কমেছিল বিইআরসি। সেপ্টেম্বরে আবার বাড়ানো হলো।