পশ্চিমারা ব্যর্থ হয়েছে, বিশ্বের ভবিষ্যৎ এশিয়ায় : পুতিন

‘নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার নিরর্থক ও আগ্রাসী প্রচেষ্টা বিশ্ব অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। আর এটি করতে গিয়ে পশ্চিমারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বের ভবিষ্যৎ এখন এশিয়ায়।’ রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় শহর ভ্লাদিভোস্টকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের এক সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন।

পুতিন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা। পুতিন বলেছেন, তাদের এসব নিষেধাজ্ঞা অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণার মতো।

তিনি বলেছেন, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান হুমকি কোভিড-১৯ মহামারীর জায়গা দখল করেছিল। রুশ এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার জ্বরের কথা বলছি। যারা অন্য দেশের ওপর নিজেদের মডেল চাপিয়ে দেয়ার, তাদের সার্বভৌমত্ব থেকে বঞ্চিত করার ও তাদের ইচ্ছার বশবর্তী করার মতো নির্লজ্জ এবং আক্রমণাত্মক প্রচেষ্টা চালায়।’

তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের গতিপথকে প্রতিহত করার প্রয়াসে পশ্চিমা দেশগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গড়ে ওঠা বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল স্তম্ভগুলো ধ্বংস করছে।’ ডলার, ইউরো এবং স্টারলিংয়ের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন পুতিন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেনে হাজার হাজার রুশ সৈন্য মোতায়েনের নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ইউক্রেনের বিপজ্জনক জাতীয়তাবাদীদের নির্মূল ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের আকাক্সক্ষা প্রতিহত করতে রাশিয়া বিশেষ অভিযান চালাতে সৈন্য মোতায়েন করেছে বলে দাবি মস্কোর।

ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে ইউক্রেন বিধ্বস্ত হলেও কিছু কিছু অঞ্চলে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। যদিও দীর্ঘ এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কত সৈন্য নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে দুই দেশের পক্ষ থেকে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

তবে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার একাধিক প্রচেষ্টা জারি রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব। যদিও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক সম্পদের ভা-ারখ্যাত রাশিয়ার অর্থনীতি যুদ্ধের এই সময়ে আরও ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। এমনকি দেশটির বিরুদ্ধে পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির গতিকে অজানা পথে নিয়ে গেছে।

চলমান এই সংকটে রাশিয়াও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুতিন বলেছেন, পশ্চিমারা তাদের যা ইচ্ছা তাই করার মনোভাব বিশ্বের ওপর আরোপের চেষ্টা করছে।

কিন্তু তাদের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, কারণ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির আধার এখন এশিয়ায়। তিনি বলেন, এমনকি সর্বত্র অপরিবর্তনীয় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এখন টেকটোনিক পরিবর্তন ঘটেছে। বিশ্বের গতিশীল, প্রতিশ্রুতিশীল দেশ এবং অঞ্চলগুলোর ভূমিকা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূমিকা ব্যাপক বেড়েছে।

ভ্লাদিভোস্টকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অতিথিদের মধ্যে আছেন চীনের শীর্ষ আইনপ্রণেতা ও দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ তিন নেতার অন্যতম লি ঝানশু। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রমের কাছ থেকে কেনা গ্যাসের মূল্য চীন এখন রাশিয়ান রুবল এবং চীনা ইউয়ানের মাধ্যমে ৫০-৫০ ভিত্তিতে পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছেন পুতিন।

তিনি বলেছেন, রাশিয়ার অর্থনীতি পশ্চিমের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত আগ্রাসন মোকাবিলা করছে। তবে কিছু শিল্প ও অঞ্চলে সামান্য সংকট তৈরি হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন রুশ এই প্রেসিডেন্ট।

বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৪ ভাদ্র ১৪২৯ ১১ সফর ১৪৪৪

পশ্চিমারা ব্যর্থ হয়েছে, বিশ্বের ভবিষ্যৎ এশিয়ায় : পুতিন

image

‘নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার নিরর্থক ও আগ্রাসী প্রচেষ্টা বিশ্ব অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। আর এটি করতে গিয়ে পশ্চিমারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বের ভবিষ্যৎ এখন এশিয়ায়।’ রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় শহর ভ্লাদিভোস্টকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের এক সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন।

পুতিন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা। পুতিন বলেছেন, তাদের এসব নিষেধাজ্ঞা অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণার মতো।

তিনি বলেছেন, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান হুমকি কোভিড-১৯ মহামারীর জায়গা দখল করেছিল। রুশ এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার জ্বরের কথা বলছি। যারা অন্য দেশের ওপর নিজেদের মডেল চাপিয়ে দেয়ার, তাদের সার্বভৌমত্ব থেকে বঞ্চিত করার ও তাদের ইচ্ছার বশবর্তী করার মতো নির্লজ্জ এবং আক্রমণাত্মক প্রচেষ্টা চালায়।’

তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের গতিপথকে প্রতিহত করার প্রয়াসে পশ্চিমা দেশগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গড়ে ওঠা বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল স্তম্ভগুলো ধ্বংস করছে।’ ডলার, ইউরো এবং স্টারলিংয়ের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন পুতিন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেনে হাজার হাজার রুশ সৈন্য মোতায়েনের নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ইউক্রেনের বিপজ্জনক জাতীয়তাবাদীদের নির্মূল ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের আকাক্সক্ষা প্রতিহত করতে রাশিয়া বিশেষ অভিযান চালাতে সৈন্য মোতায়েন করেছে বলে দাবি মস্কোর।

ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে ইউক্রেন বিধ্বস্ত হলেও কিছু কিছু অঞ্চলে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। যদিও দীর্ঘ এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কত সৈন্য নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে দুই দেশের পক্ষ থেকে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

তবে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার একাধিক প্রচেষ্টা জারি রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব। যদিও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক সম্পদের ভা-ারখ্যাত রাশিয়ার অর্থনীতি যুদ্ধের এই সময়ে আরও ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। এমনকি দেশটির বিরুদ্ধে পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির গতিকে অজানা পথে নিয়ে গেছে।

চলমান এই সংকটে রাশিয়াও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুতিন বলেছেন, পশ্চিমারা তাদের যা ইচ্ছা তাই করার মনোভাব বিশ্বের ওপর আরোপের চেষ্টা করছে।

কিন্তু তাদের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, কারণ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির আধার এখন এশিয়ায়। তিনি বলেন, এমনকি সর্বত্র অপরিবর্তনীয় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এখন টেকটোনিক পরিবর্তন ঘটেছে। বিশ্বের গতিশীল, প্রতিশ্রুতিশীল দেশ এবং অঞ্চলগুলোর ভূমিকা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূমিকা ব্যাপক বেড়েছে।

ভ্লাদিভোস্টকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অতিথিদের মধ্যে আছেন চীনের শীর্ষ আইনপ্রণেতা ও দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ তিন নেতার অন্যতম লি ঝানশু। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রমের কাছ থেকে কেনা গ্যাসের মূল্য চীন এখন রাশিয়ান রুবল এবং চীনা ইউয়ানের মাধ্যমে ৫০-৫০ ভিত্তিতে পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছেন পুতিন।

তিনি বলেছেন, রাশিয়ার অর্থনীতি পশ্চিমের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত আগ্রাসন মোকাবিলা করছে। তবে কিছু শিল্প ও অঞ্চলে সামান্য সংকট তৈরি হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন রুশ এই প্রেসিডেন্ট।