সাক্ষরতার প্রকৃত তথ্য জানা নেই গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ। দেশের প্রকৃত সাক্ষরতার হার জানা নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। গত দুই বছরের এ সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য নেই মন্ত্রণালয়ের কাছে। কর্মকর্তারা পুরোনো তথ্য-উপাত্ত নিয়েই কাজ করছেন। সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুরোনো তথ্যই তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালের তথ্য ভিত্তিতে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, দেশে বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অথচ গত ২৭ জুলাই প্রকাশিত বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে মোট সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ২০২২ সালের সাক্ষরতার প্রতিবেদন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিসিএস সম্প্রতি সাক্ষরতার যে তথ্য (৭৪.৬৬) দিয়েছে সেটি চূড়ান্ত নয়, প্রাথমিক তথ্য। শীঘ্রই প্রতিবেদন চূড়ান্ত হবে বলে সচিব জানেিয়ছেন।

গত ২৭ জুলাই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বিবিএস প্রথম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশে বর্তমান মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের নারী-পুরুষ মিলে মোট সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর মধ্যে অঞ্চলভেদে গ্রামাঞ্চলে ৭১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৮১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

অন্যদিকে নারী-পুরুষ লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গের সাক্ষরতার হার ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের নানামুখী কর্মসূচির কারণে আগের তুলনায় সাক্ষরতার হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনও প্রায় ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। এসব নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করতে না পারলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়।’

প্রতিমন্ত্রীই ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এ হিসাবে দুই বছরে সাক্ষরতার হার শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।

গতকাল গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬৪ জেলায় নির্বাচিত ২৪৮টি উপজেলার ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৪ লাখ ৬০ হাজার নিরক্ষরকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বুরে‌্যার মাধ্যমে ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)’ স্বাক্ষর করা হয়েছে। গত ৩০ জুন শেষ হওয়া এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১৩৪টি উপজেলায় ৩৯ হাজার ৩১১টি শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৬০ হাজার জন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬০টি জেলার ১১৪টি উপজেলারয় ৩৫ হাজার শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে মুজিববর্ষে ২১ লাখ নিরক্ষর নারী-পুরুষকে সাক্ষরতা প্রদান করা হয়েছে।

তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কীভাবে এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে কর্মকর্তারা এর যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করা অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী সংবাদকে বলেছেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনাটা আমলানির্ভর। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন, গবেষণা করেন এমন লোকবল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে নেই। এ কারণে সাক্ষরতার প্রকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই করতে তাদের খুব একটা আগ্রহও নেই।’

দেশে প্রকৃত সাক্ষরতার হার কমেছে জানিয়ে এই শিক্ষা গবেষক বলেন, ‘করোনা মহামারীতে গ্রামাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ বিষয়ে সত্যিকারের সার্ভে হওয়া উচিত। এসব তথ্য লুকানোর কিছু নেই।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ১৯৯৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় আনা হয়েছে।

গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাক্ষরতা অর্জনের মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, মানুষ সচেতন হয়, স্বনির্ভর হয়, জন্মহার এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পায়, স্বাস্থ্য সূচকের উন্নয়ন ঘটে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। সর্বোপরি পরিবার, একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে সাক্ষরতার কোন বিকল্প নেই।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেস্কো) উদ্যোগে ১৯৯১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হয়। তবে বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো এ দিবস উদ্যাপন করেন। এর ধারাবাহিকতায় সরকার প্রতি বছর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করে আসছে।

এবার সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ঞৎধহংভড়ৎসরহম খরঃবৎধপু খবধৎহরহম ঝঢ়ধপবং’. (সাক্ষরতা শিখন ক্ষেত্রের প্রসার) প্রতিবারের মতো এবারও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হচ্ছে।

সাক্ষরতা বলতে ‘পড়া ও লেখার ক্ষমতা’কে বুঝানো হয়। ঔপনিবেশিক যুগ ১৯০১ সালে ব্রিটিশ ভারতে সাক্ষরতার হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ৪০ বছর পর ১৯৪১ সালে তা বেড়ে হয় ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৯৪১ সালে অবিভক্ত বাংলায় সাক্ষরতার হার ছিল ১৬ দশমিক এক শতাংশ।

পাকিস্তান আমল ১৯৪৭-১৯৭১ সালে পাকিস্তানে দুটি আদমশুমারি করা হয়; একটি ১৯৫১ সালে, অন্যটি ১৯৬১ সালে। যেকোন ভাষার সুস্পষ্ট ছাপা অক্ষর পাঠে সক্ষম জনগণই প্রথম আদমশুমারিতে ‘সাক্ষরতা’ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত হয়। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) পাঁচ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী লোকসংখ্যার ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মোট লোকসংখ্যার ২১ দশমিক এক শতাংশ সাক্ষর ছিল।

যেকোন ভাষায় প্রাত্যহিক জীবনের একটি ক্ষুদ্র বর্ণনা বুঝে পড়তে সক্ষম ব্যক্তি ১৯৬১ সালের আদমশুমারিতে সাক্ষর হিসেবে বিবেচিত হয়। এই আদমশুমারি অনুযায়ী, পাঁচ ও তদূর্ধ্ব বয়সের লোকসংখ্যার ২১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মোট জনসংখ্যার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সাক্ষর ছিল।

বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৪ ভাদ্র ১৪২৯ ১১ সফর ১৪৪৪

আজ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস

সাক্ষরতার প্রকৃত তথ্য জানা নেই গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ। দেশের প্রকৃত সাক্ষরতার হার জানা নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। গত দুই বছরের এ সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য নেই মন্ত্রণালয়ের কাছে। কর্মকর্তারা পুরোনো তথ্য-উপাত্ত নিয়েই কাজ করছেন। সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুরোনো তথ্যই তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০ সালের তথ্য ভিত্তিতে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, দেশে বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অথচ গত ২৭ জুলাই প্রকাশিত বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে মোট সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ২০২২ সালের সাক্ষরতার প্রতিবেদন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিসিএস সম্প্রতি সাক্ষরতার যে তথ্য (৭৪.৬৬) দিয়েছে সেটি চূড়ান্ত নয়, প্রাথমিক তথ্য। শীঘ্রই প্রতিবেদন চূড়ান্ত হবে বলে সচিব জানেিয়ছেন।

গত ২৭ জুলাই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বিবিএস প্রথম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশে বর্তমান মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের নারী-পুরুষ মিলে মোট সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর মধ্যে অঞ্চলভেদে গ্রামাঞ্চলে ৭১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৮১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

অন্যদিকে নারী-পুরুষ লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গের সাক্ষরতার হার ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের নানামুখী কর্মসূচির কারণে আগের তুলনায় সাক্ষরতার হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনও প্রায় ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। এসব নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করতে না পারলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়।’

প্রতিমন্ত্রীই ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, দেশে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এ হিসাবে দুই বছরে সাক্ষরতার হার শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।

গতকাল গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬৪ জেলায় নির্বাচিত ২৪৮টি উপজেলার ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৪ লাখ ৬০ হাজার নিরক্ষরকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বুরে‌্যার মাধ্যমে ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)’ স্বাক্ষর করা হয়েছে। গত ৩০ জুন শেষ হওয়া এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১৩৪টি উপজেলায় ৩৯ হাজার ৩১১টি শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৬০ হাজার জন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬০টি জেলার ১১৪টি উপজেলারয় ৩৫ হাজার শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে মুজিববর্ষে ২১ লাখ নিরক্ষর নারী-পুরুষকে সাক্ষরতা প্রদান করা হয়েছে।

তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কীভাবে এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে কর্মকর্তারা এর যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করা অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী সংবাদকে বলেছেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনাটা আমলানির্ভর। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন, গবেষণা করেন এমন লোকবল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে নেই। এ কারণে সাক্ষরতার প্রকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই করতে তাদের খুব একটা আগ্রহও নেই।’

দেশে প্রকৃত সাক্ষরতার হার কমেছে জানিয়ে এই শিক্ষা গবেষক বলেন, ‘করোনা মহামারীতে গ্রামাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ বিষয়ে সত্যিকারের সার্ভে হওয়া উচিত। এসব তথ্য লুকানোর কিছু নেই।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ১৯৯৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় আনা হয়েছে।

গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাক্ষরতা অর্জনের মাধ্যমে মানুষের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, মানুষ সচেতন হয়, স্বনির্ভর হয়, জন্মহার এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পায়, স্বাস্থ্য সূচকের উন্নয়ন ঘটে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে। সর্বোপরি পরিবার, একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে সাক্ষরতার কোন বিকল্প নেই।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেস্কো) উদ্যোগে ১৯৯১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হয়। তবে বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো এ দিবস উদ্যাপন করেন। এর ধারাবাহিকতায় সরকার প্রতি বছর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করে আসছে।

এবার সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ঞৎধহংভড়ৎসরহম খরঃবৎধপু খবধৎহরহম ঝঢ়ধপবং’. (সাক্ষরতা শিখন ক্ষেত্রের প্রসার) প্রতিবারের মতো এবারও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হচ্ছে।

সাক্ষরতা বলতে ‘পড়া ও লেখার ক্ষমতা’কে বুঝানো হয়। ঔপনিবেশিক যুগ ১৯০১ সালে ব্রিটিশ ভারতে সাক্ষরতার হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ৪০ বছর পর ১৯৪১ সালে তা বেড়ে হয় ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৯৪১ সালে অবিভক্ত বাংলায় সাক্ষরতার হার ছিল ১৬ দশমিক এক শতাংশ।

পাকিস্তান আমল ১৯৪৭-১৯৭১ সালে পাকিস্তানে দুটি আদমশুমারি করা হয়; একটি ১৯৫১ সালে, অন্যটি ১৯৬১ সালে। যেকোন ভাষার সুস্পষ্ট ছাপা অক্ষর পাঠে সক্ষম জনগণই প্রথম আদমশুমারিতে ‘সাক্ষরতা’ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত হয়। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) পাঁচ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী লোকসংখ্যার ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মোট লোকসংখ্যার ২১ দশমিক এক শতাংশ সাক্ষর ছিল।

যেকোন ভাষায় প্রাত্যহিক জীবনের একটি ক্ষুদ্র বর্ণনা বুঝে পড়তে সক্ষম ব্যক্তি ১৯৬১ সালের আদমশুমারিতে সাক্ষর হিসেবে বিবেচিত হয়। এই আদমশুমারি অনুযায়ী, পাঁচ ও তদূর্ধ্ব বয়সের লোকসংখ্যার ২১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মোট জনসংখ্যার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সাক্ষর ছিল।