রিকশাচালক মোহাম্মদ আলীর গ্রামের বাড়ি রংপুরে। ঢাকায় আছেন প্রায় এক যুগ। একাই থাকেন তিনি। বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। আলী বলেন, ‘এখন যা কামাই তা আর পোষায় না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, রুমের সিটভাড়া বাড়ছে। এহন আর চলতে ফিরতে পারি না। দেশে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়, তাদের খরচ দিতে হয়। হগল কিছুর দাম বাড়ছে এখন জীবন আর চলে না।’
মোহাম্মদ আলীর মতো আরও অনেক রিকশাচালকের জীবনচিত্র এমনই। দু’মুঠো ভাতের সন্ধানে তারা রাজধানীতে এসেছেন। অনেক গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান রেখে একই থাকছেন এই শহরে। নিজের চলার পর যেটুকু বেঁচে যায় তা-ই পাঠান পরিবারের জন্য। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় তাদের উপার্জনেও টান পড়েছে। তাই গ্রামে স্বজনের জন্য আগের মতো টাকা পাঠাতে পারছেন না। আবার যারা সংসার নিয়ে আছেন, তারাও পড়েছেন বিপদে। বাসা ভাড়াসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তাদের জীবন যেন আর চলে না।
গত ১০ বছর ধরে রাজধানীতে রিকশা চালাচ্ছেন জুয়েল। এটাই তার আয়ের একমাত্র উপায়। এখন বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার কারণে আগের মতো তার সংসার চলে না। বলেন, ‘যেমন কামাই তেমন খাওন, গরিবের সব জিনিসের দাম বাড়াইছে। সারাদিন পরিশ্রম করি দু’মুঠো ভাতের জন্য।’ প্রতিদিনের তুলনায় শুক্রবার বাজারে দরদাম বেশি বলে জানান জুয়েল।
তিনি বলেন, ‘বড়লোকের আর গরিবের বাজার এক নয়, গরিবরা বুঝেশুনে বাজার করে। আর শুক্রবারে বাজারে যেন বড়লোকের জন্য, যাওয়াই যায় না। দোকানদার যে দাম বলে সে দামে কিনে ফেলে। আমরা আর দরদাম করে কিনতে পারি না। আমাগো কথা লিখে লাভ নাই, কেউ আমাগ জিগায় না।’
জুয়েলের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া ভেড়ামারা সদরে। ১০ বছর আগে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন। এ পর্যন্ত কোন সঞ্চয় বা বিকল্প আয় নেই। জুয়েল আরও বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারি না। পরিবারের দুঃখ দূর করার জন্য এ বয়সে এসে কত পরিশ্রম করি। এখন বয়স হয়েছে আর শক্তিতে কুলাতে পারি না।’
রিকশাচালক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের জীবনের কোন উন্নতি নাই, শহরে অটোরিকশা বেশি, কারণ অটোচালকের কারণে আমরা ভাড়া পাই না। আমরা পায়ে প্যাডেল গায়ের জোর দিয়ে রিকশা চালাই। দাম বাড়ার কারণে ভালো খাবার খাইতে পারি না। আর গায়ে জোর না পাইলে রিকশা চালামু কেমনে। জিনিসপত্রের দাম কমলে আমরা ভালো খাওন খেতে পারি, না কমলে তো খাওন জোটে না।
রিকশাচালক ছাত্তার বলেন, ‘আগে যে মোটা চাল ৩০ টাকা দিয়ে কিনতাম এখন সে চাল ৭০ টাকা দিয়ে কিনি। বাসের ভাড়া বাড়াইছে বাড়িতে কোন আত্মীয় মরলেও বাইত যাইত পারি না।’
বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৪ ভাদ্র ১৪২৯ ১১ সফর ১৪৪৪
ওসমান গণি
রিকশাচালক মোহাম্মদ আলীর গ্রামের বাড়ি রংপুরে। ঢাকায় আছেন প্রায় এক যুগ। একাই থাকেন তিনি। বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। আলী বলেন, ‘এখন যা কামাই তা আর পোষায় না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, রুমের সিটভাড়া বাড়ছে। এহন আর চলতে ফিরতে পারি না। দেশে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়, তাদের খরচ দিতে হয়। হগল কিছুর দাম বাড়ছে এখন জীবন আর চলে না।’
মোহাম্মদ আলীর মতো আরও অনেক রিকশাচালকের জীবনচিত্র এমনই। দু’মুঠো ভাতের সন্ধানে তারা রাজধানীতে এসেছেন। অনেক গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান রেখে একই থাকছেন এই শহরে। নিজের চলার পর যেটুকু বেঁচে যায় তা-ই পাঠান পরিবারের জন্য। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় তাদের উপার্জনেও টান পড়েছে। তাই গ্রামে স্বজনের জন্য আগের মতো টাকা পাঠাতে পারছেন না। আবার যারা সংসার নিয়ে আছেন, তারাও পড়েছেন বিপদে। বাসা ভাড়াসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তাদের জীবন যেন আর চলে না।
গত ১০ বছর ধরে রাজধানীতে রিকশা চালাচ্ছেন জুয়েল। এটাই তার আয়ের একমাত্র উপায়। এখন বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার কারণে আগের মতো তার সংসার চলে না। বলেন, ‘যেমন কামাই তেমন খাওন, গরিবের সব জিনিসের দাম বাড়াইছে। সারাদিন পরিশ্রম করি দু’মুঠো ভাতের জন্য।’ প্রতিদিনের তুলনায় শুক্রবার বাজারে দরদাম বেশি বলে জানান জুয়েল।
তিনি বলেন, ‘বড়লোকের আর গরিবের বাজার এক নয়, গরিবরা বুঝেশুনে বাজার করে। আর শুক্রবারে বাজারে যেন বড়লোকের জন্য, যাওয়াই যায় না। দোকানদার যে দাম বলে সে দামে কিনে ফেলে। আমরা আর দরদাম করে কিনতে পারি না। আমাগো কথা লিখে লাভ নাই, কেউ আমাগ জিগায় না।’
জুয়েলের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া ভেড়ামারা সদরে। ১০ বছর আগে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন। এ পর্যন্ত কোন সঞ্চয় বা বিকল্প আয় নেই। জুয়েল আরও বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারি না। পরিবারের দুঃখ দূর করার জন্য এ বয়সে এসে কত পরিশ্রম করি। এখন বয়স হয়েছে আর শক্তিতে কুলাতে পারি না।’
রিকশাচালক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের জীবনের কোন উন্নতি নাই, শহরে অটোরিকশা বেশি, কারণ অটোচালকের কারণে আমরা ভাড়া পাই না। আমরা পায়ে প্যাডেল গায়ের জোর দিয়ে রিকশা চালাই। দাম বাড়ার কারণে ভালো খাবার খাইতে পারি না। আর গায়ে জোর না পাইলে রিকশা চালামু কেমনে। জিনিসপত্রের দাম কমলে আমরা ভালো খাওন খেতে পারি, না কমলে তো খাওন জোটে না।
রিকশাচালক ছাত্তার বলেন, ‘আগে যে মোটা চাল ৩০ টাকা দিয়ে কিনতাম এখন সে চাল ৭০ টাকা দিয়ে কিনি। বাসের ভাড়া বাড়াইছে বাড়িতে কোন আত্মীয় মরলেও বাইত যাইত পারি না।’