আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস

কায়ছার আলী

আজ ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। ১৯৬৫ সালের ইরানের তেহরানে ইউনেস্কোর উদ্যোগে ৮৯টি দেশের শিক্ষাবিদ, শিক্ষামন্ত্রী ও পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে বিশ্বের সাক্ষরতা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবস্থা, শিক্ষা, শিক্ষাজীবন, জীবিকা ও বয়স্ক নিরক্ষরদের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। শিক্ষা ও জীবিকা পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত বলে উল্লেখ করে নিরক্ষরতাকে উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করে তা দূরীকরণে জোর প্রয়াস নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

সাক্ষরতা হলো সব ধরনের সফলতার মূলনীতি। ২০২২ সালের আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘পরিবর্তনশীল গতিপথ রূপান্তরিত শিক্ষা’ সাক্ষরতার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের জন্য ইউনেস্কো প্রাণপণে চেষ্টা করলেও, এরপরেও বিশ্বের মোট অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা নিরক্ষর (নারীদের মধ্যে বেশি)। এশিয়া ও আফ্রিকায় রয়েছে আটটি দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশও একটি।

পৃথিবীর অনেক পিছিয়ে থাকা দেশ অভিযান আকারে সাক্ষরতা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, নিকারাগুয়া, লাওস ও ভিয়েতনামে ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে আমাদের দেশেও পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

১৯৭১ সালে এদেশে শিক্ষার হার ছিল ১৬.৮%, বর্তমানে ২০২২ সালে ৭৫.৬০%। এই হার আরো বাড়াতে হবে। নিরক্ষরতা একটি জটিল ও ভয়াবহ সমস্যা। কোন জাতীর উন্নতির জন্য প্রথম এবং প্রধান উপকরন হচ্ছে শিক্ষা বা অক্ষর জ্ঞান। নিরক্ষর লোকেরা ভালোমন্দ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তাই দেশের উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। তারা ব্যক্তি জীবন ও জাতীয় জীবনেও অভিশপ্ত। এ অভিশাপ থেকে তাদের মুক্ত করতে না পারলে জাতীয় অগ্রগতি কিছুতেই সম্ভব নয়। নিরক্ষর লোকদের অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন করে তোলার জন্য আমাদের তাই বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।

সরকার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে অ-নানুষ্ঠানিক এবং উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা চালু করেছে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সারাদেশের মানুষকে আলোকিত করা। স্কুল ও কলেজের বাইরে পাহাড়ী এলাকা, দূরবর্তী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাওর, বাওর, চর, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলাকা, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, পথশিশু, অতি বঞ্চিত শিশু, শ্রমিক, ঝরে পড়া, পিতৃ পরিচয়হীন সন্তান, হরিজন বা নিচু বর্ণের শিশু এদের শিক্ষার জন্য ওয়ার্ড, এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প বা হোস্টেল নির্মাণ করে শিক্ষার দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।

যারা বয়স্ক ও বিধবা ভাতা গ্রহণ করছেন তাদেরকেও নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে স্বাক্ষর জ্ঞানের জন্য ছাত্র, শিক্ষক, সমাজকর্মী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে জোটবদ্ধ কমিটি গঠন করে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের মানুষকে শিক্ষার উপকারিতা বোঝাতে হবে। সমাজের যে কোন অংশের নাগরিকদের বাইরে রেখে দেশের উন্নয়ন হয় না।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের আওতায় দেশের ২৫০টি উপজেলায় ১৫-৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লক্ষ নিরক্ষরকে স্বাক্ষর জ্ঞান দেয়া হচ্ছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আরো ২১ লাখ নিরক্ষরকে স্বাক্ষরতা প্রদান করার কার্যক্রম চলমান আছে।

অক্ষর বা বর্ণমালার মাধ্যমে অর্জিত হয় শিক্ষা, শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব, বিপ্লব ঘটায় মুক্তি। অর্থাৎ শিক্ষাই শক্তি।

[লেখক : শিক্ষক]

বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৪ ভাদ্র ১৪২৯ ১১ সফর ১৪৪৪

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস

কায়ছার আলী

আজ ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। ১৯৬৫ সালের ইরানের তেহরানে ইউনেস্কোর উদ্যোগে ৮৯টি দেশের শিক্ষাবিদ, শিক্ষামন্ত্রী ও পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে বিশ্বের সাক্ষরতা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবস্থা, শিক্ষা, শিক্ষাজীবন, জীবিকা ও বয়স্ক নিরক্ষরদের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। শিক্ষা ও জীবিকা পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত বলে উল্লেখ করে নিরক্ষরতাকে উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করে তা দূরীকরণে জোর প্রয়াস নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

সাক্ষরতা হলো সব ধরনের সফলতার মূলনীতি। ২০২২ সালের আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘পরিবর্তনশীল গতিপথ রূপান্তরিত শিক্ষা’ সাক্ষরতার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের জন্য ইউনেস্কো প্রাণপণে চেষ্টা করলেও, এরপরেও বিশ্বের মোট অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা নিরক্ষর (নারীদের মধ্যে বেশি)। এশিয়া ও আফ্রিকায় রয়েছে আটটি দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশও একটি।

পৃথিবীর অনেক পিছিয়ে থাকা দেশ অভিযান আকারে সাক্ষরতা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, নিকারাগুয়া, লাওস ও ভিয়েতনামে ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে আমাদের দেশেও পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

১৯৭১ সালে এদেশে শিক্ষার হার ছিল ১৬.৮%, বর্তমানে ২০২২ সালে ৭৫.৬০%। এই হার আরো বাড়াতে হবে। নিরক্ষরতা একটি জটিল ও ভয়াবহ সমস্যা। কোন জাতীর উন্নতির জন্য প্রথম এবং প্রধান উপকরন হচ্ছে শিক্ষা বা অক্ষর জ্ঞান। নিরক্ষর লোকেরা ভালোমন্দ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তাই দেশের উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। তারা ব্যক্তি জীবন ও জাতীয় জীবনেও অভিশপ্ত। এ অভিশাপ থেকে তাদের মুক্ত করতে না পারলে জাতীয় অগ্রগতি কিছুতেই সম্ভব নয়। নিরক্ষর লোকদের অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন করে তোলার জন্য আমাদের তাই বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।

সরকার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে অ-নানুষ্ঠানিক এবং উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা চালু করেছে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সারাদেশের মানুষকে আলোকিত করা। স্কুল ও কলেজের বাইরে পাহাড়ী এলাকা, দূরবর্তী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাওর, বাওর, চর, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলাকা, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, পথশিশু, অতি বঞ্চিত শিশু, শ্রমিক, ঝরে পড়া, পিতৃ পরিচয়হীন সন্তান, হরিজন বা নিচু বর্ণের শিশু এদের শিক্ষার জন্য ওয়ার্ড, এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প বা হোস্টেল নির্মাণ করে শিক্ষার দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।

যারা বয়স্ক ও বিধবা ভাতা গ্রহণ করছেন তাদেরকেও নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে স্বাক্ষর জ্ঞানের জন্য ছাত্র, শিক্ষক, সমাজকর্মী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে জোটবদ্ধ কমিটি গঠন করে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের মানুষকে শিক্ষার উপকারিতা বোঝাতে হবে। সমাজের যে কোন অংশের নাগরিকদের বাইরে রেখে দেশের উন্নয়ন হয় না।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের আওতায় দেশের ২৫০টি উপজেলায় ১৫-৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লক্ষ নিরক্ষরকে স্বাক্ষর জ্ঞান দেয়া হচ্ছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আরো ২১ লাখ নিরক্ষরকে স্বাক্ষরতা প্রদান করার কার্যক্রম চলমান আছে।

অক্ষর বা বর্ণমালার মাধ্যমে অর্জিত হয় শিক্ষা, শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব, বিপ্লব ঘটায় মুক্তি। অর্থাৎ শিক্ষাই শক্তি।

[লেখক : শিক্ষক]