হুন্ডির কারণে এক বছরে ৭৮০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স গায়েব

হুন্ডির কারণে বাংলাদেশ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি হুন্ডি চক্রের ৩টি গ্রুপকে গ্রেপ্তারের পর জানতে পেরেছে গত এক বছরে বাংলাদেশ কমপক্ষে ৭. ৮ বিলিয়ন (৭৮০ কোটি ডলার) রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। সিআইডির তদন্তে এসেছে, মোবাইল ব্যাংকি বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, ইউক্যাশসহ বিভিন্ন মাধ্যমের ৫ হাজার এজেন্ট এ হুন্ডির সঙ্গে জড়িত। গতকাল সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অভিযান চালিয়ে ৩টি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট গ্রুপের ১৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর দাবি করেছে অবৈধ চ্যানেলে বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ আসায় শুধু গত চার মাসে ২৫ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। হিসাব অনুযায়ী এক বছরে রেমিট্যান্স বঞ্চিতের পরিমাণ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। গতকাল অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিআইডি। এতে উপস্থিত থেকে অভিযানের বিষয়ে জানান সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ও সাইবার পুলিশ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে অভিযানটি পরিচালিত হয়। এ ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কোতয়ালি থানায় একটি মামলায় ২৩ জন নামীয় আসামির মধ্যে ১১ জন গ্রেপ্তার। ওই মামলায় আরও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় এজাহারনামীয় ১০ আসামির মধ্যে দু’জন গ্রেপ্তার করা হয়। এতে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর খিলগাঁও মডেল থানায় ১২ নামীয় আসামির মধ্যে তিনজন গ্রেপ্তার হয়। আর অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো হুন্ডি এজেন্ট আকার হোসেন, দিদারুল আলম সুমন, খোরশেদ আলম ইমন, রুমন কান্তি দাস জয়, বিকাশ এজেন্ট রাশেদ মঞ্জুর ফিরোজ, মো. হুসাইনুল কবির, নবীন উল্লাহ, মো. জুনাইদুল হক, আবিদুর রহমান, আসিফ নেওয়াজ, ফরাহাদ হোসাইন, আবদুল বাছির, মাহাবুবুর রহমান সেলিম, আবদুল আউয়াল সোহাগ, ফজলে রাব্বি ও শামীমা রহমান।

সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়সহ বিভিন্ন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) অন্তত পাঁচ হাজার এজেন্ট হুন্ডি চক্রে জড়িত। আর এদের কারণে বছরে আনুমানিক ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হয়। দেশে ডলারের দামে অস্থিরতা শুরুর পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে সিআইডি। এর অংশ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিন দফা যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গত ৪ মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা তাদের মাধ্যমে পাচার হওয়ার তথ্য পেয়েছেন তারা। আর সাইবার ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে সিআইডি ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে, যারা এমএফসের মাধ্যমে হুন্ডির কারবারে জড়িত।

মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সংঘবদ্ধ এই চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধমে বিদেশে অর্থপাচার করছে। আবার বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজঅর্নাদের কষ্টার্জিত অর্থ বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করছে।’

সিআইডি প্রধান বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের বহু এজেন্ট এই অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।’ এই পাঁচ হাজার এমএফএস এজেন্টের মাধ্যমে চার মাসে হুন্ডি হয়েছে আনুমানিক ২৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে না আসায় ওই পরিমাণ রেমিট্যান্স থেকে বাংলাদেশ সরকার বঞ্চিত হয়েছে।

চার মাসের ওই তথ্য ধরে হিসাব করে সিআইডি বলছে, এসব এমএফএস এজেন্টের মাধ্যমে বছরে হুন্ডি হয়ে দেশে আসছে আনুমানিক পঁচাত্তর হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, সরকার প্রায় ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন, যা দেশের মোট জিডিপির ৭ শতাংশের মতো। চক্রটি কীভাবে কার্যক্রম চালায় তারও একটি ধারণা দিয়ে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী বলেন, হুন্ডি চক্রের সদস্যরা প্রবাসে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করেন দেশে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। কিন্তু তারা বিদেশি মুদ্রা না পাঠিয়ে সমমূল্যের বাংলাদেশি টাকা দেশে পরিবারকে বুঝিয়ে দেন। তাতে দেশ বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা থেকে বঞ্চিত থাকে।

সিআইডি বলছে, হুন্ডিচক্র তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এ কাজ করে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় গ্রুপের কাজ হলো দেশে। অর্থাৎ প্রথম গ্রুপের হয়ে দেশে থাকা দ্বিতীয় গ্রুপটি হুন্ডির সমপরিমাণ অর্থ তারা বাংলাদেশি টাকায় নির্দিষ্ট মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্টদের দেয়। ওই এমএফএস এজেন্টরা হলো তৃতীয় গ্রুপ। হুন্ডি হয়ে তাদের হাতে আসা টাকা তারা দেশে নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে পরিশোধ করে। আবার দেশ থেকে যখন টাকা পাচার হয়, এর ঠিক উল্টো প্রক্রিয়া চলে। এসব চক্র অবৈধভাবে এমএফএসের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে।’ এই অবৈধ লেনদেনে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কোম্পানিগুলো কতটা দায়ী- এমন প্রশ্নে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘এটা দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা এজেন্ট। তাই কোম্পানিরগুলোর এজেন্ট নিয়োগে এবং মনিটরিংয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। সিআইডি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবে।’

ডলারের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কেন অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা গেল না। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ার কারণে ধরা যায়নি। সিআইডির গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা তথ্যের মিল পাওয়ার ভিত্তিতে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বাংলাদেশ সরকার বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে এরপরও বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা না পাঠিয়ে অবৈধভাবে কেন বাংলাদেশিরা টাকা পাঠাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমাদের একটি মিটিং হয়েছে। আমার বিশ্বাস এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হবে।

সিআইডি ৫ হাজার মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্টকে শনাক্ত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্ট অবৈধ কার্যক্রম করছে। আমরা টার্গেট করে তিনটি গ্রুপকে ধরেছি। ইতোমধ্যে যারা অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল সিআইডির তৎপরতায় সেখান থেকে তারা সড়ে আসতে শুরু করেছে। আমরা ইন্টেলিজেন্স বেইজ অপারেশন পরিচালনা করি। সিআইডি ৫ হাজার মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্টদের নজরদারির মধ্যে রেখেছে। দু’একদিনের মধ্যে অবৈধভাবে লেনদের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে যাবে।

শুক্রবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৫ ভাদ্র ১৪২৯ ১২ সফর ১৪৪৪

হুন্ডির কারণে এক বছরে ৭৮০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স গায়েব

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

হুন্ডির কারণে বাংলাদেশ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি হুন্ডি চক্রের ৩টি গ্রুপকে গ্রেপ্তারের পর জানতে পেরেছে গত এক বছরে বাংলাদেশ কমপক্ষে ৭. ৮ বিলিয়ন (৭৮০ কোটি ডলার) রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। সিআইডির তদন্তে এসেছে, মোবাইল ব্যাংকি বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, ইউক্যাশসহ বিভিন্ন মাধ্যমের ৫ হাজার এজেন্ট এ হুন্ডির সঙ্গে জড়িত। গতকাল সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে আসে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অভিযান চালিয়ে ৩টি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট গ্রুপের ১৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর দাবি করেছে অবৈধ চ্যানেলে বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ আসায় শুধু গত চার মাসে ২৫ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। হিসাব অনুযায়ী এক বছরে রেমিট্যান্স বঞ্চিতের পরিমাণ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। গতকাল অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিআইডি। এতে উপস্থিত থেকে অভিযানের বিষয়ে জানান সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ও সাইবার পুলিশ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে অভিযানটি পরিচালিত হয়। এ ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কোতয়ালি থানায় একটি মামলায় ২৩ জন নামীয় আসামির মধ্যে ১১ জন গ্রেপ্তার। ওই মামলায় আরও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় এজাহারনামীয় ১০ আসামির মধ্যে দু’জন গ্রেপ্তার করা হয়। এতে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর খিলগাঁও মডেল থানায় ১২ নামীয় আসামির মধ্যে তিনজন গ্রেপ্তার হয়। আর অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো হুন্ডি এজেন্ট আকার হোসেন, দিদারুল আলম সুমন, খোরশেদ আলম ইমন, রুমন কান্তি দাস জয়, বিকাশ এজেন্ট রাশেদ মঞ্জুর ফিরোজ, মো. হুসাইনুল কবির, নবীন উল্লাহ, মো. জুনাইদুল হক, আবিদুর রহমান, আসিফ নেওয়াজ, ফরাহাদ হোসাইন, আবদুল বাছির, মাহাবুবুর রহমান সেলিম, আবদুল আউয়াল সোহাগ, ফজলে রাব্বি ও শামীমা রহমান।

সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়সহ বিভিন্ন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) অন্তত পাঁচ হাজার এজেন্ট হুন্ডি চক্রে জড়িত। আর এদের কারণে বছরে আনুমানিক ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হয়। দেশে ডলারের দামে অস্থিরতা শুরুর পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে সিআইডি। এর অংশ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিন দফা যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গত ৪ মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা তাদের মাধ্যমে পাচার হওয়ার তথ্য পেয়েছেন তারা। আর সাইবার ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে সিআইডি ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে, যারা এমএফসের মাধ্যমে হুন্ডির কারবারে জড়িত।

মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সংঘবদ্ধ এই চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধমে বিদেশে অর্থপাচার করছে। আবার বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজঅর্নাদের কষ্টার্জিত অর্থ বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করছে।’

সিআইডি প্রধান বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের বহু এজেন্ট এই অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।’ এই পাঁচ হাজার এমএফএস এজেন্টের মাধ্যমে চার মাসে হুন্ডি হয়েছে আনুমানিক ২৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে না আসায় ওই পরিমাণ রেমিট্যান্স থেকে বাংলাদেশ সরকার বঞ্চিত হয়েছে।

চার মাসের ওই তথ্য ধরে হিসাব করে সিআইডি বলছে, এসব এমএফএস এজেন্টের মাধ্যমে বছরে হুন্ডি হয়ে দেশে আসছে আনুমানিক পঁচাত্তর হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, সরকার প্রায় ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন, যা দেশের মোট জিডিপির ৭ শতাংশের মতো। চক্রটি কীভাবে কার্যক্রম চালায় তারও একটি ধারণা দিয়ে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী বলেন, হুন্ডি চক্রের সদস্যরা প্রবাসে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করেন দেশে তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। কিন্তু তারা বিদেশি মুদ্রা না পাঠিয়ে সমমূল্যের বাংলাদেশি টাকা দেশে পরিবারকে বুঝিয়ে দেন। তাতে দেশ বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা থেকে বঞ্চিত থাকে।

সিআইডি বলছে, হুন্ডিচক্র তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এ কাজ করে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় গ্রুপের কাজ হলো দেশে। অর্থাৎ প্রথম গ্রুপের হয়ে দেশে থাকা দ্বিতীয় গ্রুপটি হুন্ডির সমপরিমাণ অর্থ তারা বাংলাদেশি টাকায় নির্দিষ্ট মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্টদের দেয়। ওই এমএফএস এজেন্টরা হলো তৃতীয় গ্রুপ। হুন্ডি হয়ে তাদের হাতে আসা টাকা তারা দেশে নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে পরিশোধ করে। আবার দেশ থেকে যখন টাকা পাচার হয়, এর ঠিক উল্টো প্রক্রিয়া চলে। এসব চক্র অবৈধভাবে এমএফএসের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে।’ এই অবৈধ লেনদেনে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কোম্পানিগুলো কতটা দায়ী- এমন প্রশ্নে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘এটা দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা এজেন্ট। তাই কোম্পানিরগুলোর এজেন্ট নিয়োগে এবং মনিটরিংয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। সিআইডি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবে।’

ডলারের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কেন অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা গেল না। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ার কারণে ধরা যায়নি। সিআইডির গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা তথ্যের মিল পাওয়ার ভিত্তিতে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বাংলাদেশ সরকার বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে এরপরও বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা না পাঠিয়ে অবৈধভাবে কেন বাংলাদেশিরা টাকা পাঠাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমাদের একটি মিটিং হয়েছে। আমার বিশ্বাস এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হবে।

সিআইডি ৫ হাজার মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্টকে শনাক্ত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্ট অবৈধ কার্যক্রম করছে। আমরা টার্গেট করে তিনটি গ্রুপকে ধরেছি। ইতোমধ্যে যারা অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল সিআইডির তৎপরতায় সেখান থেকে তারা সড়ে আসতে শুরু করেছে। আমরা ইন্টেলিজেন্স বেইজ অপারেশন পরিচালনা করি। সিআইডি ৫ হাজার মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্টদের নজরদারির মধ্যে রেখেছে। দু’একদিনের মধ্যে অবৈধভাবে লেনদের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে যাবে।