রংপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা সদরে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জে ৫ পুলিশ, ৪ সাংবাদিকসহ অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৪ বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে গুম-খুন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের পুরাতন সোনালী ব্যাংক মোড় হয়ে বাজার অতিক্রম করে টাকোয়া মসজিদের সামনে সড়কে সমাবেশ করে। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ সমাবেশে বাধা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ সময় পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এরপর বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, সংঘর্ষ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ পিছু হটে থানায় চলে আসে। এরপর রংপুর থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে বেপরোয়া লাঠিচার্জ আর গুলিবর্ষণ শুর করে বলে বিএনপি উপজেলা সভাপতি মাবু অভিযোগ করেন। সংঘর্ষে পুলিশের এসআই সালামসহ ৫ পুলিশ, স্থানীয় সাংবাদিক দৈনিক সংবাদ প্রতিনিধি সুজন আহাম্মেদ, মানবজমিন প্রতিনিধি আবদুল বারী স্বপনসহ ৪ সাংবাদিক ও অর্ধ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবু, সাধারণ সম্পাদক আখিরুজ্জামান শিরন, ছাত্রদল রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক শরীফ নেওয়াজ জোহা, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন লিজু গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জিরো পয়েন্টের কাছে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা বিএনপির ধংসাত্মক রাজনীতির সমালোচনা করে বলেন, তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে শান্তিপূর্ণ এলাকা বলে পরিচিত গঙ্গাচড়াকে রণক্ষেত্র বানিয়েছে। এরপর তাদের যেকোন কর্মকান্ড প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাবুর অভিযোগ, বুধবার থানার ওসির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করব কিন্তু সমাবেশ চলাকালে পুলিশ অতর্কিতভাবে হামলা করে আমাদের শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে বলে দাবি করেন তিনি। এ ছাড়াও যুবদল নেতা রাশেদকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া থানার ওসি দুলাল জানান, বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করার নামে পুলিশের উপরে হামলা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ৫ পুলিশকে আহত করেছে। তারা দফায় দফায় পুলিশের উপর চড়াও হয়েছে।

এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪ বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকে আটক করেছে এরা হলেন- বিএনপি নেতা মাহবুব আসিফ, ছাত্রদল নেতা সিন্দিদ, অয়ন ও নয়ন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান মিলন জানান পুলিশ ৪ বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। তবে এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া থানার ওসি দুলাল জানান কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বললেও তাদের নাম বলতে রাজি হননি।

শুক্রবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৫ ভাদ্র ১৪২৯ ১২ সফর ১৪৪৪

রংপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর ও প্রতিনিধি গঙ্গাচড়া

image

রংপুর : বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ -সংবাদ

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা সদরে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জে ৫ পুলিশ, ৪ সাংবাদিকসহ অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৪ বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে গুম-খুন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের পুরাতন সোনালী ব্যাংক মোড় হয়ে বাজার অতিক্রম করে টাকোয়া মসজিদের সামনে সড়কে সমাবেশ করে। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ সমাবেশে বাধা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ সময় পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এরপর বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, সংঘর্ষ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ পিছু হটে থানায় চলে আসে। এরপর রংপুর থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে বেপরোয়া লাঠিচার্জ আর গুলিবর্ষণ শুর করে বলে বিএনপি উপজেলা সভাপতি মাবু অভিযোগ করেন। সংঘর্ষে পুলিশের এসআই সালামসহ ৫ পুলিশ, স্থানীয় সাংবাদিক দৈনিক সংবাদ প্রতিনিধি সুজন আহাম্মেদ, মানবজমিন প্রতিনিধি আবদুল বারী স্বপনসহ ৪ সাংবাদিক ও অর্ধ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবু, সাধারণ সম্পাদক আখিরুজ্জামান শিরন, ছাত্রদল রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক শরীফ নেওয়াজ জোহা, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন লিজু গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জিরো পয়েন্টের কাছে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা বিএনপির ধংসাত্মক রাজনীতির সমালোচনা করে বলেন, তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে শান্তিপূর্ণ এলাকা বলে পরিচিত গঙ্গাচড়াকে রণক্ষেত্র বানিয়েছে। এরপর তাদের যেকোন কর্মকান্ড প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাবুর অভিযোগ, বুধবার থানার ওসির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করব কিন্তু সমাবেশ চলাকালে পুলিশ অতর্কিতভাবে হামলা করে আমাদের শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে বলে দাবি করেন তিনি। এ ছাড়াও যুবদল নেতা রাশেদকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া থানার ওসি দুলাল জানান, বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করার নামে পুলিশের উপরে হামলা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ৫ পুলিশকে আহত করেছে। তারা দফায় দফায় পুলিশের উপর চড়াও হয়েছে।

এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪ বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকে আটক করেছে এরা হলেন- বিএনপি নেতা মাহবুব আসিফ, ছাত্রদল নেতা সিন্দিদ, অয়ন ও নয়ন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান মিলন জানান পুলিশ ৪ বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। তবে এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া থানার ওসি দুলাল জানান কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বললেও তাদের নাম বলতে রাজি হননি।