মহাসড়কে প্রতি বছর শত কোটি টাকার গার্মেন্ট পণ্য চুরি করতো যে চক্র

চোরাই পণ্যসহ গ্রেপ্তার ৪

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা এলাকা থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের রপ্তানিযোগ্য চোরাই গার্মেন্ট পণ্য উদ্ধারসহ আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় বিপুল পরিমাণ কিডস পোশাক সামগ্রী ও একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়। র‌্যাব জানান, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্ট পণ্য চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত চালকদের যোগসাজশে কয়েক বছর ধরে গার্মেন্ট পণ্য কাভার্ডভ্যান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় চুরি করে স্থানীয় মার্কেটে কম দামে বিক্রি করে আসছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতি বছর শত কোটি টাকার বেশি পোশাক এসব চক্রের মাধ্যমে চুরি হচ্ছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা।

গতকাল দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, গত ১৪ আগস্ট ঢাকা জেলার আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের নেয়ার পথে কয়েকটি কাভার্ডভ্যান থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দামি গার্মেন্ট মালামাল উধাও হয়ে যায়। এ ঘটনার ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে ফ্যাক্টরি থেকে মালামাল নেয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার একটি পরিত্যক্ত রি-রোলিং মিলসে কাভার্ডভ্যান থামিয়ে পণ্য চুরির সময় র‌্যাব আন্তঃজেলা চোর চক্রের মূল হোতা মো. সিরাজুলসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় ৬ কোটি টাকা মূল্যের চোরাই ৪১ বস্তা ও ৫০৬ কার্টন গার্মেন্ট পণ্য উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে সিরাজুল জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজ শুরু করেছেন বলে তথ্য পায় র‌্যাব-৪।

গত বুধবার রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার বেলতলী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আনুমানিক ৪ কোটি টাকার চোরাই ৪৫৭ কার্টন গার্মেন্ট সামগ্রী, একটি কাভার্ড ভ্যানসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তবে ঘটনাস্থল থেকে চালকসহ ৩-৪ জন আসামি পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলো ভোলার বাসিন্দা মহাসড়কে প্রতি বছর শত

মো. হিমেল ওরফে দুলাল (৩৮) ও আবুল কালাম (৪০), কুমিল্লার মো. মহসিন আলী ওরফে বাবু (৩১) ও বগুড়ার মো. আলামিন (৩০)।

চক্রের চুরির কৌশল

চক্রটি সাধারণত কাভার্ডভ্যানের চালকের সঙ্গে প্রথমে সখ্য তৈরি করে। এরপর বিভিন্ন লোভ দেখানোর পাশাপাশি চুরি করা পণ্য বিক্রির টাকার অংশ দেয়ার কথা বলে রাজি করায়। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিকটবর্তী নির্জন এলাকায় কাভার্ডভ্যান পার্কিং করা হতো। পরবর্তীতে মূল হোতা মো. সিরাজুলের নির্দেশে গ্রেপ্তার হিমেল, আবুল কালাম, মহসিন ও আলামিন এবং পলাতক সহযোগী নুর জামানসহ তাদের সহযোগীরা মিলে বিশেষ কৌশলে কাভার্ডভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ডভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলে প্রত্যেক কার্টনের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মালামাল সরিয়ে আগের মতো প্যাকিং করে রেখে দিত। এতে ফ্যাক্টরি মালিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষ কারো সন্দেহ হতো না। চক্রটি কার্টনের মালামালের ওয়েট ঠিক রাখার জন্য যে পরিমাণের মালামাল চুরি করত, সেই পরিমাণ ঝুট কার্টনের ভেতরে রেখে প্যাকিং করত। ফলে বন্দরে স্ক্যানিং কিংবা ওয়েট মেশিনে কোন ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হতো না। চোর চক্র তিন প্রক্রিয়ায় চোরাইকৃত গার্মেন্ট পণ্য ডিসপোজাল করত। প্রথমত, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে মালামাল কাভার্ডভ্যানে সিলগালা অবস্থায় সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে না নিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে সুবিধাজনক সময়ে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা বা নিকটবর্তী নির্জন এলাকা বা পরিত্যক্ত ভবনের ভেতর কাভার্ডভ্যান পার্কিং করে। দ্বিতীয়ত, চক্রের নাটবল্টু খোলায় পারদর্শী সদস্য বিশেষ কৌশলে কাভার্ডভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে সরাসরি কাভার্ডভ্যানের সাইডের ওয়ালের নাটল্টু খুলে ফেলত এবং তার অন্য সহযোগীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিটি কার্টনে সমপরিমাণ ঝুট রেখে আবার প্যাকেট করত। তৃতীয়ত, স্থানীয় বাজারে বাংলাদেশি গার্মেন্ট মালামালের চাহিদা ব্যাপক থাকায় এবং মালামালের গুণগত মান উন্নত হওয়ায় আসামি সিরাজুল ও তার সহযোগী নুর জামান এবং গ্রেপ্তার হিমেল দ্রুত সময়ে তা বিক্রি করে অর্থ প্রত্যেকের কাছে ভাগাভাগি করে নিত।

গার্মেন্ট মালামাল চুরি যাওয়ায় দেশের ক্ষতি

মালামাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া ফ্যাক্টরি মালিকের দায়িত্ব, তাই মালামাল চুরি যাওয়ার কারণে ফ্যাক্টরি মালিকদের পুনরায় মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে প্রেরণ করায় সময় ও অর্থের প্রচুর ক্ষতি হয়। বিদেশি ক্রেতা সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে মালামাল ডেলিভারি না পাওয়ার কারণে মূল্য পরিশোধ করত না এবং পরবর্তীতে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিত না। ফলে দিন দিন দেশের গার্মেন্ট সেক্টর প্রচুর লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছিল। গ্রেপ্তার হিমেল ভোলা জেলার সদর থানার পূর্ব ইলিশা গ্রাম থেকে ২০১০ সালে ঢাকায় আসেন। শুরুতে তিনি কনস্ট্রাকশন কাজের রড মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে পেশা পরিবর্তন করে কিছুদিন লেগুনার হেলপার এবং ড্রাইভিং শিখে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেন। পরে ড্রাইভার হিসেবে বাস ও প্রাইভেটকার চালানো শুরু করেন। ২০২০ সালের শুরুতে এই চোরচক্রের মূল হোতা সিরাজুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে আসামি দুলাল সিরাজুলের প্রাইভেটকারের চালক হিসেবে কাজ করে। একপর্যায়ে আসামি হিমেল পলাতক সিরাজুলের সঙ্গে মিলে চোর চক্রের অন্যতম সদস্য হয়ে কাজ করে আসছিল।

গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়, এ কাজের মাধ্যমে হিমেল অল্প দিনে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যান। এ অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি একটি কাভার্ড ভ্যান কিনেছেন। এছাড়া ঢাকা ও ভোলায় তার একাধিক বাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। পলাতক আসামি সিরাজের ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে। গ্রেপ্তার আবু কালাম পেশায় দক্ষ মিস্ত্রি। তিনি মূলত কাভার্ডভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ডভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলতে পারদর্শী। তিনি প্রতি চুরিতে লক্ষাধিক টাকা পেতেন। গ্রেপ্তার মহসীন আলী ওরফে বাবু (৩১) কুমিল্লায় গোডাউনের মালিক। যেখানে চোরাইকৃত মালামাল লোড-আনলোড করে রাখা হতো। মূলত তার ছত্রছায়ায় কুমিল্লায় কাভার্ডভ্যান লোড-আনলোড এবং চোরাইকৃত মালামাল রাখা হতো। অপর আসামি আলামিন (৩০) একজন গার্মেন্ট পণ্য লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক।

শুক্রবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৫ ভাদ্র ১৪২৯ ১২ সফর ১৪৪৪

মহাসড়কে প্রতি বছর শত কোটি টাকার গার্মেন্ট পণ্য চুরি করতো যে চক্র

চোরাই পণ্যসহ গ্রেপ্তার ৪

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা এলাকা থেকে প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের রপ্তানিযোগ্য চোরাই গার্মেন্ট পণ্য উদ্ধারসহ আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় বিপুল পরিমাণ কিডস পোশাক সামগ্রী ও একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়। র‌্যাব জানান, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানিযোগ্য গার্মেন্ট পণ্য চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত চালকদের যোগসাজশে কয়েক বছর ধরে গার্মেন্ট পণ্য কাভার্ডভ্যান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় চুরি করে স্থানীয় মার্কেটে কম দামে বিক্রি করে আসছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতি বছর শত কোটি টাকার বেশি পোশাক এসব চক্রের মাধ্যমে চুরি হচ্ছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা।

গতকাল দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, গত ১৪ আগস্ট ঢাকা জেলার আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের নেয়ার পথে কয়েকটি কাভার্ডভ্যান থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দামি গার্মেন্ট মালামাল উধাও হয়ে যায়। এ ঘটনার ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে ফ্যাক্টরি থেকে মালামাল নেয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার একটি পরিত্যক্ত রি-রোলিং মিলসে কাভার্ডভ্যান থামিয়ে পণ্য চুরির সময় র‌্যাব আন্তঃজেলা চোর চক্রের মূল হোতা মো. সিরাজুলসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় ৬ কোটি টাকা মূল্যের চোরাই ৪১ বস্তা ও ৫০৬ কার্টন গার্মেন্ট পণ্য উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে সিরাজুল জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজ শুরু করেছেন বলে তথ্য পায় র‌্যাব-৪।

গত বুধবার রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার বেলতলী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আনুমানিক ৪ কোটি টাকার চোরাই ৪৫৭ কার্টন গার্মেন্ট সামগ্রী, একটি কাভার্ড ভ্যানসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা চোর চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তবে ঘটনাস্থল থেকে চালকসহ ৩-৪ জন আসামি পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলো ভোলার বাসিন্দা মহাসড়কে প্রতি বছর শত

মো. হিমেল ওরফে দুলাল (৩৮) ও আবুল কালাম (৪০), কুমিল্লার মো. মহসিন আলী ওরফে বাবু (৩১) ও বগুড়ার মো. আলামিন (৩০)।

চক্রের চুরির কৌশল

চক্রটি সাধারণত কাভার্ডভ্যানের চালকের সঙ্গে প্রথমে সখ্য তৈরি করে। এরপর বিভিন্ন লোভ দেখানোর পাশাপাশি চুরি করা পণ্য বিক্রির টাকার অংশ দেয়ার কথা বলে রাজি করায়। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিকটবর্তী নির্জন এলাকায় কাভার্ডভ্যান পার্কিং করা হতো। পরবর্তীতে মূল হোতা মো. সিরাজুলের নির্দেশে গ্রেপ্তার হিমেল, আবুল কালাম, মহসিন ও আলামিন এবং পলাতক সহযোগী নুর জামানসহ তাদের সহযোগীরা মিলে বিশেষ কৌশলে কাভার্ডভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ডভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলে প্রত্যেক কার্টনের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মালামাল সরিয়ে আগের মতো প্যাকিং করে রেখে দিত। এতে ফ্যাক্টরি মালিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষ কারো সন্দেহ হতো না। চক্রটি কার্টনের মালামালের ওয়েট ঠিক রাখার জন্য যে পরিমাণের মালামাল চুরি করত, সেই পরিমাণ ঝুট কার্টনের ভেতরে রেখে প্যাকিং করত। ফলে বন্দরে স্ক্যানিং কিংবা ওয়েট মেশিনে কোন ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হতো না। চোর চক্র তিন প্রক্রিয়ায় চোরাইকৃত গার্মেন্ট পণ্য ডিসপোজাল করত। প্রথমত, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে মালামাল কাভার্ডভ্যানে সিলগালা অবস্থায় সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে না নিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে সুবিধাজনক সময়ে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা বা নিকটবর্তী নির্জন এলাকা বা পরিত্যক্ত ভবনের ভেতর কাভার্ডভ্যান পার্কিং করে। দ্বিতীয়ত, চক্রের নাটবল্টু খোলায় পারদর্শী সদস্য বিশেষ কৌশলে কাভার্ডভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে সরাসরি কাভার্ডভ্যানের সাইডের ওয়ালের নাটল্টু খুলে ফেলত এবং তার অন্য সহযোগীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিটি কার্টনে সমপরিমাণ ঝুট রেখে আবার প্যাকেট করত। তৃতীয়ত, স্থানীয় বাজারে বাংলাদেশি গার্মেন্ট মালামালের চাহিদা ব্যাপক থাকায় এবং মালামালের গুণগত মান উন্নত হওয়ায় আসামি সিরাজুল ও তার সহযোগী নুর জামান এবং গ্রেপ্তার হিমেল দ্রুত সময়ে তা বিক্রি করে অর্থ প্রত্যেকের কাছে ভাগাভাগি করে নিত।

গার্মেন্ট মালামাল চুরি যাওয়ায় দেশের ক্ষতি

মালামাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে বন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া ফ্যাক্টরি মালিকের দায়িত্ব, তাই মালামাল চুরি যাওয়ার কারণে ফ্যাক্টরি মালিকদের পুনরায় মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে প্রেরণ করায় সময় ও অর্থের প্রচুর ক্ষতি হয়। বিদেশি ক্রেতা সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে মালামাল ডেলিভারি না পাওয়ার কারণে মূল্য পরিশোধ করত না এবং পরবর্তীতে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিত না। ফলে দিন দিন দেশের গার্মেন্ট সেক্টর প্রচুর লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছিল। গ্রেপ্তার হিমেল ভোলা জেলার সদর থানার পূর্ব ইলিশা গ্রাম থেকে ২০১০ সালে ঢাকায় আসেন। শুরুতে তিনি কনস্ট্রাকশন কাজের রড মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে পেশা পরিবর্তন করে কিছুদিন লেগুনার হেলপার এবং ড্রাইভিং শিখে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করেন। পরে ড্রাইভার হিসেবে বাস ও প্রাইভেটকার চালানো শুরু করেন। ২০২০ সালের শুরুতে এই চোরচক্রের মূল হোতা সিরাজুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে আসামি দুলাল সিরাজুলের প্রাইভেটকারের চালক হিসেবে কাজ করে। একপর্যায়ে আসামি হিমেল পলাতক সিরাজুলের সঙ্গে মিলে চোর চক্রের অন্যতম সদস্য হয়ে কাজ করে আসছিল।

গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়, এ কাজের মাধ্যমে হিমেল অল্প দিনে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যান। এ অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি একটি কাভার্ড ভ্যান কিনেছেন। এছাড়া ঢাকা ও ভোলায় তার একাধিক বাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। পলাতক আসামি সিরাজের ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে। গ্রেপ্তার আবু কালাম পেশায় দক্ষ মিস্ত্রি। তিনি মূলত কাভার্ডভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ডভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলতে পারদর্শী। তিনি প্রতি চুরিতে লক্ষাধিক টাকা পেতেন। গ্রেপ্তার মহসীন আলী ওরফে বাবু (৩১) কুমিল্লায় গোডাউনের মালিক। যেখানে চোরাইকৃত মালামাল লোড-আনলোড করে রাখা হতো। মূলত তার ছত্রছায়ায় কুমিল্লায় কাভার্ডভ্যান লোড-আনলোড এবং চোরাইকৃত মালামাল রাখা হতো। অপর আসামি আলামিন (৩০) একজন গার্মেন্ট পণ্য লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক।