প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা

মতিউর রহমান

কোনো মানুষ একা থাকতে পারে না। তাই মানুষ সমাজ গঠন করে। সেই কারণে সমাজের প্রতি মানুষের নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সমাজে প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে। প্রতিবন্ধীরাও সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। সুতরাং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করা প্রতিটি মানুষের সামাজিক কর্তব্য।

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেউ একাকী স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারে না। সমাজের নিয়ম অনুযায়ী আদর্শ জীবনযাপনের প্রাথমিক শর্ত হলো সহযোগিতা এবং সহাবস্থান। সহযোগিতা এবং সহাবস্থানের এই নীতির ওপর ভিত্তি করে, সমাজের মানুষের মধ্যে সামাজিক বন্ধন গড়ে ওঠে।

তাছাড়া এই পৃথিবীতে কোনো মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। মানুষের প্রয়োজনে সমাজের কারো ওপর নির্ভর করতেই হয়। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যকে সাহায্য করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সমাজ থেকে সাহায্য নেওয়ার এই পারস্পরিক আদান-প্রদানের মধ্য দিয়েই সমাজ সচল থাকে। সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যকে সাহায্য করার এই তত্ত্বের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে সামাজিক কর্তব্যের ধারণার উদ্ভব হয়।

সমাজে মানুষের কর্তব্যের স্বরূপ আবিষ্কার করতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে সমাজ কী। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ জীবনকে বেছে নিয়েছে, যে কারণে বর্তমান সমাজ বিবর্তিত হয়েছে। বিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্ন যুগ-উপযুক্ত নিয়ম, সংস্কৃতি ও সহযোগিতা ও সহাবস্থানের মানসিকতা গড়ে উঠেছে মানুষের জোট বা গোষ্ঠীতে।

সমাজ একটি মানব গোষ্ঠী যা ঐক্যবদ্ধ চিন্তাভাবনা এবং পারস্পরিক সহাবস্থানের সমন্বয়ের মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তথাকথিত সনাতন সমাজের বন্ধন তুলনামূলকভাবে শিথিল হলেও মানবজীবনে সমাজের গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। এই মহান গুরুত্বের কারণে, মানুষকে সমাজের প্রতি নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয় এবং আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপন করা থেকে বিরত থাকতে হয়। এ সমস্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য চিন্তা, সংস্কৃতি এবং পারস্পরিক সহাবস্থানকে ঐক্যবদ্ধ করতে সাহায্য করে। সমাজে এ দায়িত্ব ও কর্তব্যের স্বাভাবিক রূপ হলো একটি সুস্থ সংস্কৃতি বজায় রাখা, সংস্কৃতির বিকাশ সাধন এবং পর্যাপ্তভাবে নিজের ক্ষমতা প্রকাশ করা।

সমাজে প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক কর্তব্য আলোচনা করতে গিয়ে প্রতিবন্ধী কারা তা আলোচনা করা দরকার। প্রতিটি সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বাস করে, যাদের অধিকাংশই প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারে। যাই হোক, সমাজে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা কিছু কারণে অন্যের সাহায্য ছাড়া তাদের জীবন চালিয়ে যেতে পারে না।

কেউ হতে পারে অন্ধ, কেউ হতে পারে শ্রবণ বা বাকশক্তিহীন, কেউ হতে পারে বিশেষ অঙ্গহীন বা কারো থাকতে পারে শারীরিক অক্ষমতা এবং কেউ মানসিকভাবে অক্ষম। এরাই সমাজের প্রতিবন্ধী মানুষ। এই সমস্ত প্রতিবন্ধী জন্মগত বা দুর্ঘটনার কারণে হতে পারে এবং তাদের সবারই সমাজে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য অন্যান্য মানুষের সাহায্য প্রয়োজন।

যেহেতু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা দৈনন্দিন স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারে না, তাই তাদের বেঁচে থাকার জন্য অন্যান্য মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। মানুষের এই প্রয়োজন অনুসারে সমাজে দায়িত্ব ও কর্তব্যের ধারণার ভিত্তিতে প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক কর্তব্যের দিকটি ফুটে ওঠে। এ সামাজিক কর্তব্য শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজব্যাপী হওয়া উচিত। কারণ মানুষ শুধু পরিবারে বাস করে না, মানুষ সমাজেও বাস করে।

তাই প্রত্যেক অ-প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উচিত প্রতিবন্ধীদের তাদের জীবনযাত্রায় প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করা। এ সাহায্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন- দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের হাঁটতে সহায়তা করা, বধির এবং শ্রবণশক্তিহীন লোকদের কিছু ব্যাখ্যা করা, বাকপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তাদের চিন্তা প্রকাশ করতে সাহায্য করা, বা অন্য কোনো প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য করা- সবই প্রতিবন্ধীদের প্রতি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সামাজিক কর্তব্য।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আগেই বলা হয়েছে যে, সব মানুষই সামাজিক জীব এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও সমাজের অংশ। তাই সমাজে সহযোগিতা ও সহাবস্থানের নীতি অনুসারে গড়ে ওঠা দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিবন্ধীদের ওপরও বর্তায়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতপক্ষে সমাজের বন্ধনকে মজবুত ভিত্তির ওপর স্থাপন করতে সাহায্য করে।

মূল্যবোধ ও চেতনার সম্মিলিত অভিব্যক্তি হলো মানুষ। এ মূল্যবোধ ও প্রবৃত্তি থেকে উদ্ভূত মানবতার বোধ প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক কর্তব্য পালনে প্রকাশ পায়। এসব সামাজিক কর্তব্যের মধ্য দিয়ে মানুষ সমাজে মিথস্ক্রিয়া করে এবং সমাজের নীতি মেনে চলা মানুষের মনুষ্যত্বকেও সমৃদ্ধ করে। অন্যদিকে এই স্বাভাবিক মানবিক দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধীরাও তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন সুপ্ত সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করার সুযোগ পায়। সমাজের সহায়তায়, তারা বাধা অতিক্রম করতে পারে এবং তাদের প্রতিভা দিয়ে সমাজে অবদান রাখতে পারে।

মানুষের এই স্বাভাবিক সামাজিক কর্তব্যের ধারণা থেকেই বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই এক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশের সরকার বিভিন্ন দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, চলাচল ও যোগাযোগে সহায়তার জন্য গৃহীত অসাধারণ পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। আমাদের দেশে সরকারিভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান শিক্ষা এবং বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুপ্ত প্রতিভা আবিষ্কার করতে সহায়তা ও উৎসাহিত করে। একদিকে এই প্রতিভাধর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কিছুটা হলেও স্বাবলম্বী জীবনযাপন করতে পারে; অন্যদিকে তারা সমাজে একটি ব্যতিক্রমী অবদান রাখে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা মানবতার শ্রেষ্ঠ কাজ বলে বিবেচিত হয়। সব যুগের সকল চিন্তাবিদ ও দার্শনিক এই দায়িত্বকে মানবজাতির পবিত্র কর্তব্য বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, আমাদের সবারই দায়িত্ব হওয়া উচিত আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাহায্য করা।

[লেখক : গবেষক ও উন্নয়নকর্মী]

শুক্রবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৫ ভাদ্র ১৪২৯ ১২ সফর ১৪৪৪

প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা

মতিউর রহমান

কোনো মানুষ একা থাকতে পারে না। তাই মানুষ সমাজ গঠন করে। সেই কারণে সমাজের প্রতি মানুষের নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সমাজে প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে। প্রতিবন্ধীরাও সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। সুতরাং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করা প্রতিটি মানুষের সামাজিক কর্তব্য।

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেউ একাকী স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারে না। সমাজের নিয়ম অনুযায়ী আদর্শ জীবনযাপনের প্রাথমিক শর্ত হলো সহযোগিতা এবং সহাবস্থান। সহযোগিতা এবং সহাবস্থানের এই নীতির ওপর ভিত্তি করে, সমাজের মানুষের মধ্যে সামাজিক বন্ধন গড়ে ওঠে।

তাছাড়া এই পৃথিবীতে কোনো মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। মানুষের প্রয়োজনে সমাজের কারো ওপর নির্ভর করতেই হয়। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যকে সাহায্য করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সমাজ থেকে সাহায্য নেওয়ার এই পারস্পরিক আদান-প্রদানের মধ্য দিয়েই সমাজ সচল থাকে। সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যকে সাহায্য করার এই তত্ত্বের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে সামাজিক কর্তব্যের ধারণার উদ্ভব হয়।

সমাজে মানুষের কর্তব্যের স্বরূপ আবিষ্কার করতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে সমাজ কী। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ জীবনকে বেছে নিয়েছে, যে কারণে বর্তমান সমাজ বিবর্তিত হয়েছে। বিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্ন যুগ-উপযুক্ত নিয়ম, সংস্কৃতি ও সহযোগিতা ও সহাবস্থানের মানসিকতা গড়ে উঠেছে মানুষের জোট বা গোষ্ঠীতে।

সমাজ একটি মানব গোষ্ঠী যা ঐক্যবদ্ধ চিন্তাভাবনা এবং পারস্পরিক সহাবস্থানের সমন্বয়ের মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তথাকথিত সনাতন সমাজের বন্ধন তুলনামূলকভাবে শিথিল হলেও মানবজীবনে সমাজের গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। এই মহান গুরুত্বের কারণে, মানুষকে সমাজের প্রতি নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয় এবং আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপন করা থেকে বিরত থাকতে হয়। এ সমস্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য চিন্তা, সংস্কৃতি এবং পারস্পরিক সহাবস্থানকে ঐক্যবদ্ধ করতে সাহায্য করে। সমাজে এ দায়িত্ব ও কর্তব্যের স্বাভাবিক রূপ হলো একটি সুস্থ সংস্কৃতি বজায় রাখা, সংস্কৃতির বিকাশ সাধন এবং পর্যাপ্তভাবে নিজের ক্ষমতা প্রকাশ করা।

সমাজে প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক কর্তব্য আলোচনা করতে গিয়ে প্রতিবন্ধী কারা তা আলোচনা করা দরকার। প্রতিটি সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বাস করে, যাদের অধিকাংশই প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারে। যাই হোক, সমাজে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা কিছু কারণে অন্যের সাহায্য ছাড়া তাদের জীবন চালিয়ে যেতে পারে না।

কেউ হতে পারে অন্ধ, কেউ হতে পারে শ্রবণ বা বাকশক্তিহীন, কেউ হতে পারে বিশেষ অঙ্গহীন বা কারো থাকতে পারে শারীরিক অক্ষমতা এবং কেউ মানসিকভাবে অক্ষম। এরাই সমাজের প্রতিবন্ধী মানুষ। এই সমস্ত প্রতিবন্ধী জন্মগত বা দুর্ঘটনার কারণে হতে পারে এবং তাদের সবারই সমাজে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য অন্যান্য মানুষের সাহায্য প্রয়োজন।

যেহেতু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা দৈনন্দিন স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারে না, তাই তাদের বেঁচে থাকার জন্য অন্যান্য মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। মানুষের এই প্রয়োজন অনুসারে সমাজে দায়িত্ব ও কর্তব্যের ধারণার ভিত্তিতে প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক কর্তব্যের দিকটি ফুটে ওঠে। এ সামাজিক কর্তব্য শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজব্যাপী হওয়া উচিত। কারণ মানুষ শুধু পরিবারে বাস করে না, মানুষ সমাজেও বাস করে।

তাই প্রত্যেক অ-প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উচিত প্রতিবন্ধীদের তাদের জীবনযাত্রায় প্রয়োজন অনুযায়ী সাহায্য করা। এ সাহায্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন- দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের হাঁটতে সহায়তা করা, বধির এবং শ্রবণশক্তিহীন লোকদের কিছু ব্যাখ্যা করা, বাকপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তাদের চিন্তা প্রকাশ করতে সাহায্য করা, বা অন্য কোনো প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য করা- সবই প্রতিবন্ধীদের প্রতি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সামাজিক কর্তব্য।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আগেই বলা হয়েছে যে, সব মানুষই সামাজিক জীব এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও সমাজের অংশ। তাই সমাজে সহযোগিতা ও সহাবস্থানের নীতি অনুসারে গড়ে ওঠা দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিবন্ধীদের ওপরও বর্তায়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতপক্ষে সমাজের বন্ধনকে মজবুত ভিত্তির ওপর স্থাপন করতে সাহায্য করে।

মূল্যবোধ ও চেতনার সম্মিলিত অভিব্যক্তি হলো মানুষ। এ মূল্যবোধ ও প্রবৃত্তি থেকে উদ্ভূত মানবতার বোধ প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক কর্তব্য পালনে প্রকাশ পায়। এসব সামাজিক কর্তব্যের মধ্য দিয়ে মানুষ সমাজে মিথস্ক্রিয়া করে এবং সমাজের নীতি মেনে চলা মানুষের মনুষ্যত্বকেও সমৃদ্ধ করে। অন্যদিকে এই স্বাভাবিক মানবিক দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধীরাও তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন সুপ্ত সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করার সুযোগ পায়। সমাজের সহায়তায়, তারা বাধা অতিক্রম করতে পারে এবং তাদের প্রতিভা দিয়ে সমাজে অবদান রাখতে পারে।

মানুষের এই স্বাভাবিক সামাজিক কর্তব্যের ধারণা থেকেই বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই এক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশের সরকার বিভিন্ন দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, চলাচল ও যোগাযোগে সহায়তার জন্য গৃহীত অসাধারণ পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। আমাদের দেশে সরকারিভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান শিক্ষা এবং বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুপ্ত প্রতিভা আবিষ্কার করতে সহায়তা ও উৎসাহিত করে। একদিকে এই প্রতিভাধর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কিছুটা হলেও স্বাবলম্বী জীবনযাপন করতে পারে; অন্যদিকে তারা সমাজে একটি ব্যতিক্রমী অবদান রাখে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা মানবতার শ্রেষ্ঠ কাজ বলে বিবেচিত হয়। সব যুগের সকল চিন্তাবিদ ও দার্শনিক এই দায়িত্বকে মানবজাতির পবিত্র কর্তব্য বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, আমাদের সবারই দায়িত্ব হওয়া উচিত আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাহায্য করা।

[লেখক : গবেষক ও উন্নয়নকর্মী]