মন্দা কাটছে না, রাশিয়ার গম রপ্তানি কমেছে ২২ শতাংশ

গত জুলাইয়ে রাশিয়ায় গম বিপণন মৌসুম শুরু হয়েছে। মৌসুমের প্রথম দুই মাসে শস্যটির রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ কমেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে। ফলে গমসহ প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো পরিবহনে ব্যাপক জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দেশটিকে। এ কারণেই মূলত দেশটির গম রপ্তানিতে মন্দা কাটছে না।

চলতি বছর রাশিয়ায় রেকর্ড পরিমাণ গম উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে শস্যটির রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেখবে না। নতুন বিপণন মৌসুমের প্রথম দুই মাসে দেশটি ৬৩ লাখ টন গম রপ্তানি করেছে।

বিশ্বের শীর্ষ গম রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় দেশটি সবচেয়ে বেশি গম রপ্তানি করে। রুশ কৃষি পরামর্শক সংস্থা সোভিকনের পূর্বাভাস বলছে, এ বছর প্রায় ৯ কোটি ৪৭ লাখ টন গম উৎপাদন হতে পারে, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে খাদ্য ও সার তার আওতায় পড়বে না। তবে রুশ ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেন করতে বাধার মুখে পড়ছে। এ কারণেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানি।

জানা গেছে, গত বিপণন মৌসুমের শেষ দিকে গম রপ্তানিতে কোটা বেঁধে দেয় রাশিয়া। উদ্দেশ্য ছিল রপ্তানি সীমিত করার মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়ানো। কিন্তু নতুন মৌসুমে কোটার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেয়া হয়। ফলে প্রত্যাশা ছিল রপ্তানি বাড়ার।

আইকেএআরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি মাসে গম রপ্তানি বেড়ে ৪০ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের একই সময় দেশটি ৩৭ লাখ টন গম রপ্তানি করেছিল।

এদিকে কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর দিয়ে আবারও খাদ্য রপ্তানি শুরু করেছে ইউক্রেন। মূলত কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর দিয়ে দেশটির রপ্তানি পুনরায় চালু হওয়ায় রপ্তানিতে ঊর্ধ্বমুখিতা লক্ষ করা গিয়েছে। ইউক্রেনের উপকৃষিমন্ত্রী তারাস ভিসোতস্কি সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন।

সম্প্রতি এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আগস্টে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য তেলবীজ রপ্তানি বেড়ে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। এর আগের মাসে দেশটি ৩০ লাখ টন রপ্তানি করেছিল।’

আগস্টে মোট রপ্তানিকৃত খাদ্যশস্য ও তেলবীজের মধ্যে ৩০ লাখ টনই জাহাজীকরণ করা হয়েছে দানিয়ুব নদী ও কৃষ্ণ সাগরীয় সমুদ্রবন্দর দিয়ে। বাকি ১০ লাখ টন রেলপথে এবং ছয় লাখ টন সড়কপথে ট্রাকের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর দেশটির কৃষ্ণ সাগরীয় সমুদ্রবন্দর অবরোধ করে ফেলা হয়। ফলে সমুদ্রপথে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রপ্তানিকারক দেশটির সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। বিশ্বজুড়ে দেখা দেয় খাদ্যশস্য ও তেলবীজের তীব্র সংকট। ইউক্রেন পশ্চিম সীমান্ত ব্যবহার করে স্থলপথে রপ্তানি করতে বাধ্য হয়। যুদ্ধের আগে দেশটি প্রতি মাসে ৫০-৬০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করলেও যুদ্ধের পর তা কমে ১০ লাখ টনে নেমে আসে।

পরিস্থিতি অনেক বেশি নেতিবাচক দিকে মোড় নিলে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের সঙ্গে একটি চুক্তি করে রাশিয়া। এর আওতায় ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর থেকে অবরোধ উঠিয়ে নেয়া হয়।

এতে রপ্তানি আগের অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখছে ইউক্রেন। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে দেশটির সরকার জানিয়েছে, চলতি মাসে খাদ্যশস্য রপ্তানি ৫০ লাখ টনে পৌঁছতে পারে।

শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৬ ভাদ্র ১৪২৯ ১৩ সফর ১৪৪৪

মন্দা কাটছে না, রাশিয়ার গম রপ্তানি কমেছে ২২ শতাংশ

সংবাদ ডেস্ক

image

গত জুলাইয়ে রাশিয়ায় গম বিপণন মৌসুম শুরু হয়েছে। মৌসুমের প্রথম দুই মাসে শস্যটির রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ কমেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে। ফলে গমসহ প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো পরিবহনে ব্যাপক জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দেশটিকে। এ কারণেই মূলত দেশটির গম রপ্তানিতে মন্দা কাটছে না।

চলতি বছর রাশিয়ায় রেকর্ড পরিমাণ গম উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে শস্যটির রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেখবে না। নতুন বিপণন মৌসুমের প্রথম দুই মাসে দেশটি ৬৩ লাখ টন গম রপ্তানি করেছে।

বিশ্বের শীর্ষ গম রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় দেশটি সবচেয়ে বেশি গম রপ্তানি করে। রুশ কৃষি পরামর্শক সংস্থা সোভিকনের পূর্বাভাস বলছে, এ বছর প্রায় ৯ কোটি ৪৭ লাখ টন গম উৎপাদন হতে পারে, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে খাদ্য ও সার তার আওতায় পড়বে না। তবে রুশ ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেন করতে বাধার মুখে পড়ছে। এ কারণেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানি।

জানা গেছে, গত বিপণন মৌসুমের শেষ দিকে গম রপ্তানিতে কোটা বেঁধে দেয় রাশিয়া। উদ্দেশ্য ছিল রপ্তানি সীমিত করার মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়ানো। কিন্তু নতুন মৌসুমে কোটার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেয়া হয়। ফলে প্রত্যাশা ছিল রপ্তানি বাড়ার।

আইকেএআরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি মাসে গম রপ্তানি বেড়ে ৪০ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের একই সময় দেশটি ৩৭ লাখ টন গম রপ্তানি করেছিল।

এদিকে কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর দিয়ে আবারও খাদ্য রপ্তানি শুরু করেছে ইউক্রেন। মূলত কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর দিয়ে দেশটির রপ্তানি পুনরায় চালু হওয়ায় রপ্তানিতে ঊর্ধ্বমুখিতা লক্ষ করা গিয়েছে। ইউক্রেনের উপকৃষিমন্ত্রী তারাস ভিসোতস্কি সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন।

সম্প্রতি এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আগস্টে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য তেলবীজ রপ্তানি বেড়ে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। এর আগের মাসে দেশটি ৩০ লাখ টন রপ্তানি করেছিল।’

আগস্টে মোট রপ্তানিকৃত খাদ্যশস্য ও তেলবীজের মধ্যে ৩০ লাখ টনই জাহাজীকরণ করা হয়েছে দানিয়ুব নদী ও কৃষ্ণ সাগরীয় সমুদ্রবন্দর দিয়ে। বাকি ১০ লাখ টন রেলপথে এবং ছয় লাখ টন সড়কপথে ট্রাকের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর দেশটির কৃষ্ণ সাগরীয় সমুদ্রবন্দর অবরোধ করে ফেলা হয়। ফলে সমুদ্রপথে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রপ্তানিকারক দেশটির সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। বিশ্বজুড়ে দেখা দেয় খাদ্যশস্য ও তেলবীজের তীব্র সংকট। ইউক্রেন পশ্চিম সীমান্ত ব্যবহার করে স্থলপথে রপ্তানি করতে বাধ্য হয়। যুদ্ধের আগে দেশটি প্রতি মাসে ৫০-৬০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করলেও যুদ্ধের পর তা কমে ১০ লাখ টনে নেমে আসে।

পরিস্থিতি অনেক বেশি নেতিবাচক দিকে মোড় নিলে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের সঙ্গে একটি চুক্তি করে রাশিয়া। এর আওতায় ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর থেকে অবরোধ উঠিয়ে নেয়া হয়।

এতে রপ্তানি আগের অবস্থায় ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখছে ইউক্রেন। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে দেশটির সরকার জানিয়েছে, চলতি মাসে খাদ্যশস্য রপ্তানি ৫০ লাখ টনে পৌঁছতে পারে।