শরীয়তপুরে বাপেক্সের গ্যাস অনুসন্ধানে কূপ খনন

শরীয়তপুরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধ্যান কূপ খনন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে বাপেক্স। প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন আর অবোকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ। শীঘ্রই শুরু হবে কূপ খননের কাজ। গ্যাসের মজুদ নিশ্চিত হলেই এরপর উত্তোলনের কাজ করবে বাপেক্স। গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হলে পাল্টে যাবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ সালে ভূ-কম্পন জরিপে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দিনার গ্রামে সন্ধ্যান মেলে প্রাকৃতিক গ্যাসের। আর সেই গ্যাসের মুজদ জানতে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। ২০২১ সালে ৬দশমিক ৪৯ একর জমির হুকুম দখল বুঝে নেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর শুরু হয় ভূমি উন্নয়ন কাজ। প্রকল্প এলাকায় যাতায়াত ও ভারী যন্ত্রাংশ আনা নেয়ার জন্য নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক ও কালভার্ট। নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেয়া হয়েছে কাটাতারের বেড়া, পানি নিস্কাসনের ড্রেনেজ ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নিরাপদ খাবার পানির জন্য গভীর নলকূপও স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পে কর্মকরদের আবাসন নিশ্চিতে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ শেষ। দেড় বছর মেয়াদী “শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধ্যান কূপ খনন প্রকল্প” এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা। গ্যাসের খবরে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। দেখছেন নতুন নতুন স্বপ্ন। প্রত্যাশা মিলবে গ্যাস। নির্মাণ হবে কলকারখানা। পাবে নগরায়নের ছোঁয়া, সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। তাই জমি হারালেও তাদের মাঝে নেই কোন ক্ষোভ। দিনারা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের মাঝে দুই বছরের ফসলের ক্ষতিপূরণ জন্য দেয়া হয়েছে ২৫ লাখ ১৮হাজার ৫৫৬ টাকা।

দিনার গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোসলেম আলী বলেন, দেশের অনেক জায়গায় পরীক্ষা হইছে কিন্তু গ্যাস পাওয়া যায় নাই আমাদের এখানে পাওয়া গেছে তাই আমরা সন্তুষ্ট। অনেক লোকই কাজ করতেছে। আমার ৩৪ শতাংশের একটা ব্যক্তিগত জমি বালি দিয়ে ভারাট করা হয়েছে। ক্ষতির তুলনায় আমরা লাভবান বেশি। দেশের বৃহত্তম স্বার্থে আমরা এ জমি ছেড়ে দিয়েছি। এলাকার লোকের কর্মসংস্থান হবে। দেশের উন্নয়ন হবে।

ইতালি প্রবাসী দিনারা গ্রামের সিদ্দিক ঢালী বলেন, বাপেক্সের গ্যাস উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এলাকায় যে উন্নয়ন হচ্ছে রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট যা এলাকার উন্নয়নে সহায়ক হবে। গ্যাস পেলে তো আরও উন্নয়ন হবে দেশের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে, চাঙ্গা হবে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে।

মানুষের জীবন যাত্রার মান বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে দেশ এগিয়ে যাবে। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সিরাজ উদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতুর চালু হয়েছে। এখন গ্যাস পাওয়া গেলে কলকারখানা নির্মাণ হবে।

গ্যাসের মজুদ জানতে পারলে উদ্যোগক্তারা এগিয়ে আসবে। পদ্মা পাড়ে গড়ে উঠবে নতুন নতুন মিল কারখানা। এলাকার অর্থনীতি পাল্টে যাবে।

বাপেক্সের পুরকৌশল ব্যবস্থাপক আলতাফ হোসেন বলেন, ভৌত অবকাঠামোর কাজ ৯৮ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষেই খনন কাজের যন্ত্রপাতি আনার কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যেই শ্রমিকদের অস্থায়ী আবাসন শেড নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন শুধু খননের অপেক্ষা।

প্রকল্প পরিচালক তোফায়েল সিকদার বলেন, অনুসন্ধ্যানের উদ্দেশ্যেই এখানে কূপ খনন করা হচ্ছে। আমরা কূপ খনন করে টেস্টিং করব। টেস্টিংয়ের রেজাল্টের ভিত্তিতে গ্যাসের অবস্থা বুঝতে পারবো। এরপর গ্যাসের পরিমাণের ওপরে মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ী পরবর্তীতে কার্যক্রম নেয়া হবে।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য দু বছরের জন্য জমির হুকুম দখল নেয়া হয়েছে। জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিক তারা দু বছরের জন্য মূলত ফসলের তিনগুল ক্ষতিপূরণ পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে শরীয়তপুরে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেখানে বাপেক্সের যে কূপ খনন পর যদি গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে আমাদের এই অঞ্চলে শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে। এখানে ইপিজেড হওয়ার একটা সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আমাদের জন্য খুব আনন্দের খবর যে বাপেক্স এ উদ্যোগটি নিয়েছে এবং জালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এই কাজটির তদারকি করছে এবং এই কাজের সঙ্গে জেলা প্রশাসন সম্পৃক্ত হতে পেরেছি।

শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৬ ভাদ্র ১৪২৯ ১৩ সফর ১৪৪৪

শরীয়তপুরে বাপেক্সের গ্যাস অনুসন্ধানে কূপ খনন

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর

শরীয়তপুরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধ্যান কূপ খনন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে বাপেক্স। প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন আর অবোকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ। শীঘ্রই শুরু হবে কূপ খননের কাজ। গ্যাসের মজুদ নিশ্চিত হলেই এরপর উত্তোলনের কাজ করবে বাপেক্স। গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হলে পাল্টে যাবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ সালে ভূ-কম্পন জরিপে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দিনার গ্রামে সন্ধ্যান মেলে প্রাকৃতিক গ্যাসের। আর সেই গ্যাসের মুজদ জানতে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। ২০২১ সালে ৬দশমিক ৪৯ একর জমির হুকুম দখল বুঝে নেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর শুরু হয় ভূমি উন্নয়ন কাজ। প্রকল্প এলাকায় যাতায়াত ও ভারী যন্ত্রাংশ আনা নেয়ার জন্য নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক ও কালভার্ট। নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেয়া হয়েছে কাটাতারের বেড়া, পানি নিস্কাসনের ড্রেনেজ ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নিরাপদ খাবার পানির জন্য গভীর নলকূপও স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পে কর্মকরদের আবাসন নিশ্চিতে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ শেষ। দেড় বছর মেয়াদী “শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধ্যান কূপ খনন প্রকল্প” এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা। গ্যাসের খবরে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। দেখছেন নতুন নতুন স্বপ্ন। প্রত্যাশা মিলবে গ্যাস। নির্মাণ হবে কলকারখানা। পাবে নগরায়নের ছোঁয়া, সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। তাই জমি হারালেও তাদের মাঝে নেই কোন ক্ষোভ। দিনারা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের মাঝে দুই বছরের ফসলের ক্ষতিপূরণ জন্য দেয়া হয়েছে ২৫ লাখ ১৮হাজার ৫৫৬ টাকা।

দিনার গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোসলেম আলী বলেন, দেশের অনেক জায়গায় পরীক্ষা হইছে কিন্তু গ্যাস পাওয়া যায় নাই আমাদের এখানে পাওয়া গেছে তাই আমরা সন্তুষ্ট। অনেক লোকই কাজ করতেছে। আমার ৩৪ শতাংশের একটা ব্যক্তিগত জমি বালি দিয়ে ভারাট করা হয়েছে। ক্ষতির তুলনায় আমরা লাভবান বেশি। দেশের বৃহত্তম স্বার্থে আমরা এ জমি ছেড়ে দিয়েছি। এলাকার লোকের কর্মসংস্থান হবে। দেশের উন্নয়ন হবে।

ইতালি প্রবাসী দিনারা গ্রামের সিদ্দিক ঢালী বলেন, বাপেক্সের গ্যাস উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এলাকায় যে উন্নয়ন হচ্ছে রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট যা এলাকার উন্নয়নে সহায়ক হবে। গ্যাস পেলে তো আরও উন্নয়ন হবে দেশের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে, চাঙ্গা হবে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে।

মানুষের জীবন যাত্রার মান বেড়ে যাবে। সার্বিকভাবে দেশ এগিয়ে যাবে। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সিরাজ উদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতুর চালু হয়েছে। এখন গ্যাস পাওয়া গেলে কলকারখানা নির্মাণ হবে।

গ্যাসের মজুদ জানতে পারলে উদ্যোগক্তারা এগিয়ে আসবে। পদ্মা পাড়ে গড়ে উঠবে নতুন নতুন মিল কারখানা। এলাকার অর্থনীতি পাল্টে যাবে।

বাপেক্সের পুরকৌশল ব্যবস্থাপক আলতাফ হোসেন বলেন, ভৌত অবকাঠামোর কাজ ৯৮ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষেই খনন কাজের যন্ত্রপাতি আনার কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যেই শ্রমিকদের অস্থায়ী আবাসন শেড নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন শুধু খননের অপেক্ষা।

প্রকল্প পরিচালক তোফায়েল সিকদার বলেন, অনুসন্ধ্যানের উদ্দেশ্যেই এখানে কূপ খনন করা হচ্ছে। আমরা কূপ খনন করে টেস্টিং করব। টেস্টিংয়ের রেজাল্টের ভিত্তিতে গ্যাসের অবস্থা বুঝতে পারবো। এরপর গ্যাসের পরিমাণের ওপরে মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ী পরবর্তীতে কার্যক্রম নেয়া হবে।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য দু বছরের জন্য জমির হুকুম দখল নেয়া হয়েছে। জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিক তারা দু বছরের জন্য মূলত ফসলের তিনগুল ক্ষতিপূরণ পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে শরীয়তপুরে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেখানে বাপেক্সের যে কূপ খনন পর যদি গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে আমাদের এই অঞ্চলে শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে। এখানে ইপিজেড হওয়ার একটা সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আমাদের জন্য খুব আনন্দের খবর যে বাপেক্স এ উদ্যোগটি নিয়েছে এবং জালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এই কাজটির তদারকি করছে এবং এই কাজের সঙ্গে জেলা প্রশাসন সম্পৃক্ত হতে পেরেছি।