আট মাসে ৩৬৪ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, স্কুল শিক্ষার্থী বেশি

করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। খোলার পর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহননে স্কুল শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি, যা এই সর্বনাশা পথ বেছে নেয়া মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকের বেশি। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা ঢাকা বিভাগে।

সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আর সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা।

আজ বিশ্ব ’আত্মহত্যা’ প্রতিরোধ দিবস। তার আগে গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির গত আট মাসের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ ‘আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাকে’ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। ‘করোনার সময়ে দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকার ফলে অনেকের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন এসেছে। রাগ বেড়েছে, মানসিকভাবে সহজেই ভেঙে পড়ার হারও বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে পড়াশুনার চাপও।

এছাড়া পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যাও বেড়েছে আগের চেয়ে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সবকিছু একসঙ্গে সামাল দিতে পারছে না বলেই তুলনামূলক আত্মহত্যার হার বেড়েছে, যেখানে আমরা আশা করেছিলাম করোনার পর আত্মহত্যা প্রবণতা কমে যাবে,’ বলেন তানসেন।

প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষণ

সমীক্ষায় উঠে আসে গত আট মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়েছে, যা মোট আত্মহননের পথ বেছে নেয়া শিক্ষার্থীদের ৫৩ শতাংশের বেশি। তাদের মধ্যে ৩২.৯৯ শতাংশ ছেলে এবং ৬৭.০১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।

মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ৬০ শতাংশ এবং নারী শিক্ষার্থী ৪০ শতাংশ।

কলেজপড়ুয়াদের মধ্যে ৭৬ জন এই পথ বেছে নেয় যাদের মাঝে ৪৬.০৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৩.৯৫ শতাংশ নারী।

মাদ্রাসায় পড়ুয়া ৪৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনাবসানের পথ বেছে নিয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৯.২৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৬০.৭১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী।

ঢাকায় আত্মহত্যা বেশি

আত্মহত্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। গত ৮ মাসে আত্মহননকারীদের মধ্যে ২৫.২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ঢাকার। চট্টগ্রাম বিভাগের ১৬.৪৮ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগের ১৪.০১ শতাংশ। রংপুর বিভাগে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী ৮.৭৮ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগে ১.৬২ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭.৪২ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৪.০১ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। সিলেট বিভাগে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া শিক্ষার্থী তুলনামূলকভাবে কম, যা প্রায় ৪ শতাংশ।

আত্মহত্যায় স্কুলগামীরা

যেসব শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে তাদের মধ্যে বিদ্যালয়গামী অর্থাৎ প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী ৫৩.৩০ শতাংশ। আত্মহত্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা, যা ২০.৮৮ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩.৭৪ শতাংশ। আত্মহননকারীদের মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছেন শতকরা ১২.০৯ শতাংশ।

আত্মহনন নারীদের বেশি

আত্মহত্যায় এবারেও এগিয়ে আছে নারী শিক্ষার্থীরা যা মোট আত্মহননকারীদের ৬০.৭১ শতাংশ বা ২২১ জন। অন্যদিকে পুরুষ শিক্ষার্থী রয়েছেন ২৯ শতাংশ বা ১৪৩ জন।

বয়সভিত্তিক আত্মহত্যার হার

সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি, যা ৭৮.৬ শতাংশ। বয়সের সীমারেখায় যারা ২১ থেকে ২৬ বছর বয়সী, তাদের মধ্যে ১৩.৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।

জরিপ থেকে আরও জানা যায়, ১৩ বছরের নিচে যাদের বয়স, তারাও এই পথ থেকে পিছপা হয়নি। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭.৯ শতাংশ অর্থাৎ ২৯ জন আত্মহত্যা করে। তবে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা, যার সংখ্যা ১৬০ জন। এছাড়া সর্বনি¤œ সাত বছরের একটি শিশুও আত্মহত্যা করেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

প্রেমঘটিত কারণ সবচেয়ে বেশি দায়ী

আত্মহত্যার ঘটনা অনুসন্ধানে আঁচল ফাউন্ডেশনের তরুণ গবেষকরা আত্মহননের পেছনের বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে জানতে পারে। এর মধ্যে যে কারণগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো, অভিমান, প্রেমঘটিত কারণ, পরিবার থেকে কিছু চেয়ে না পাওয়া, পারিবারিক কলহ, মানসিক সমস্যা, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি।

এছাড়া পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, চুরি বা মিথ্যা অপবাদ, বিয়েতে প্রত্যাখ্যাত বা স্বামী পছন্দ না হওয়া, সেশনজট, পড়াশোনার চাপ ইত্যাদি। আরও রয়েছে বাসা থেকে মোটরবাইক কিনে না দেয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, বিষণœতা, আর্থিক সমস্যার মতো বিষয়ও।

প্রাপ্ত উপাত্ত অনুসারে, সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ২৫.২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। অভিমান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ২৪.৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে চাওয়া-পাওয়ার অমিল হওয়ায় ৭.৪২ শতাংশ এবং পারিবারিক কলহের কারণে ৬.৫৯ শতাংশ আত্মহত্যা করেছেন।

ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানির কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ৪.৬৭ শতাংশ। মানসিক সমস্যার কারণে এই পথে ধাবিত হন ৬.৫৯ শতাংশ। তাছাড়া পড়াশোনার চাপে ০.৮২ শতাংশ, সেশনজটের কারণে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে ০.৮২ শতাংশ এবং পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ১.৯২ শতাংশ আত্মহননের দিকে এগিয়ে যান। ১.৬৫ শতাংশ চুরির মিথ্যা অপবাদে, ১.৯২ শতাংশ আর্থিক সমস্যায়, ০.৫৫ শতাংশ বন্ধুর মৃত্যুতে বিষাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এবং স্বামী পছন্দ না হওয়ায় ১.১০ শতাংশ। তবে ১৫.৯৩ শতাংশের আত্মহননের কারণ জানা যায়নি।

আত্মহত্যার ভিন্ন কিছু দিক

আত্মহননকারী কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের মানসিক অবসাদ কিংবা বিদায় নেয়ার কথা জানান দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। তাদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন ৮ জন, ভিডিও কলে এসে আত্মহত্যা করেন ২ জন। আর সেলফি মোডে ক্যামেরা নিজেদের দিকে তাক করে আত্মহত্যা করেন ০.২৭ শতাংশ প্রেমিক যুগল। এছাড়া মৃত্যুর আগে চিরকুট বা সুইসাইড নোট লিখে ৮ জন আত্মহত্যা করেছেন।

আত্মহত্যার পেছনে দায়ী সাইবারক্রাইমও

এই অনলাইন নির্ভরশীলতার যুগে প্রাত্যহিক জীবনের একটা বড় সময় কেটে যায় ইন্টারনেটে। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে তা কখনো কখনো সমস্যাও তৈরি করে যেমনটা ঘটেছে ৪ জন শিক্ষার্থীর জীবনে। আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ৪ জন শিক্ষার্থী।

সমাধানের উপায়

তানসেন রোজ বলেন, ‘সাত বছরের একজন যার আত্মহত্যা বুঝার মতো বয়সও হয়নি তার আত্মহত্যার পেছনের কারণগুলোও বিশ্লেষণ করে শিশু অবস্থা থেকেই শিক্ষার্থীদের মনোবল শক্ত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের শুরুতেই অনুধাবন করতে হবে, এই সংকট করোনার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ৩৬৪ জনের আত্মহত্যা অনেক বড় একটি সংখ্যা। তাই এটিকে সংকট হিসেবে আখ্যা দিয়ে সরকার, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিসহ প্রতিটা স্টেকহোল্ডারের অংশগ্রহণ জরুরি। সবাই যার যার জায়গা থেকে সচেতন হলে এ সমস্যা সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভবপর হবে।’

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যার ঘটনাগুলো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে কম বয়সী স্কুলগামী থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্মদের মাঝে এই প্রবণতা বেশি। এই হার এত উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে কোন কারণগুলো আছে। তা খুঁজে বের করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা এখন যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে আত্মহত্যা না করলেও তাদের অন্যান্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। পেশাজীবীদেরও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত এবং কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে সমন্বিত কাজ করা প্রয়োজন। এছাড়া সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে’

নারায়ণগঞ্জ জেলার এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি ডিভিশন) আজিজুল হক মামুন বলেন, ‘শ্রেণীভিত্তিক শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সিলিং করতে হবে। এক্ষেত্রে মাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ের স্কুলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের কো-কারিকুলার কার্যক্রমে বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাছাড়া কলেজ বা মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে কালচারাল শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।’

আঁচল ফাউন্ডেশনের জেনারেল সেক্রেটারি সামিরা আক্তার সিয়াম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাস্তব জীবনের দক্ষতার চর্চা পাঠক্রমে যুক্ত করা উচিত, যেমনÑ যোগব্যায়াম, মননশীলতার অনুশীলন, চাপ ব্যবস্থাপনা, রাগ ব্যবস্থাপনা, সহানুভূতি, নিজের যতœ নেয়ার মতো বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করা উচিত। পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে সামাজিক মূল্যবোধ এবং জীবনে ভালো থাকতে পারার চর্চাগুলো ছোটকাল থেকে শিখলে, সমাজের আত্মহত্যার মতো অভিশাপগুলো কমিয়ে আনা সম্ভব।’

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবনা

১. আত্মহত্যা মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন, ২. পাঠ্যপুস্তকে মানসিক শিক্ষাকে এবং মনের যতেœর কৌশলগুলোকে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা, ৩. স্কুল-কলেজের অভিভাবক সমাবেশের আলোচিত সূচিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যা সম্পর্কিত এজেন্ডা রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রদান, ৪. মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও আত্মহত্যা প্রতিরোধে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা, ৫. প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রদান, ৬. সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, ৭. মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা, ৮. হতাশা, আপত্তিকর ছবি, আত্মহত্যার লাইভ স্ট্রিমিং, জীবননাশের পোস্ট ইত্যাদি চিহ্নিত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষ টুলস ব্যবহার করা, ৯. আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবার ও পরিচিতজনদের দায় অনুসন্ধানে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকা, ১০. মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দ্রুত ও সহজলভ্য করতে একটি টোল ফ্রি জাতীয় হট লাইন নম্বর চালু করা।

শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৬ ভাদ্র ১৪২৯ ১৩ সফর ১৪৪৪

আট মাসে ৩৬৪ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, স্কুল শিক্ষার্থী বেশি

খালেদ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। খোলার পর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহননে স্কুল শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি, যা এই সর্বনাশা পথ বেছে নেয়া মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকের বেশি। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা ঢাকা বিভাগে।

সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আর সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা।

আজ বিশ্ব ’আত্মহত্যা’ প্রতিরোধ দিবস। তার আগে গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির গত আট মাসের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ ‘আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাকে’ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। ‘করোনার সময়ে দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকার ফলে অনেকের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন এসেছে। রাগ বেড়েছে, মানসিকভাবে সহজেই ভেঙে পড়ার হারও বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে পড়াশুনার চাপও।

এছাড়া পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যাও বেড়েছে আগের চেয়ে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সবকিছু একসঙ্গে সামাল দিতে পারছে না বলেই তুলনামূলক আত্মহত্যার হার বেড়েছে, যেখানে আমরা আশা করেছিলাম করোনার পর আত্মহত্যা প্রবণতা কমে যাবে,’ বলেন তানসেন।

প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষণ

সমীক্ষায় উঠে আসে গত আট মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১৯৪ জন স্কুলগামী শিক্ষার্থী আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়েছে, যা মোট আত্মহননের পথ বেছে নেয়া শিক্ষার্থীদের ৫৩ শতাংশের বেশি। তাদের মধ্যে ৩২.৯৯ শতাংশ ছেলে এবং ৬৭.০১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।

মোট আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ৬০ শতাংশ এবং নারী শিক্ষার্থী ৪০ শতাংশ।

কলেজপড়ুয়াদের মধ্যে ৭৬ জন এই পথ বেছে নেয় যাদের মাঝে ৪৬.০৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৩.৯৫ শতাংশ নারী।

মাদ্রাসায় পড়ুয়া ৪৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনাবসানের পথ বেছে নিয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৯.২৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৬০.৭১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী।

ঢাকায় আত্মহত্যা বেশি

আত্মহত্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। গত ৮ মাসে আত্মহননকারীদের মধ্যে ২৫.২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ঢাকার। চট্টগ্রাম বিভাগের ১৬.৪৮ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগের ১৪.০১ শতাংশ। রংপুর বিভাগে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী ৮.৭৮ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগে ১.৬২ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭.৪২ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৪.০১ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। সিলেট বিভাগে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া শিক্ষার্থী তুলনামূলকভাবে কম, যা প্রায় ৪ শতাংশ।

আত্মহত্যায় স্কুলগামীরা

যেসব শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে তাদের মধ্যে বিদ্যালয়গামী অর্থাৎ প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী ৫৩.৩০ শতাংশ। আত্মহত্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা, যা ২০.৮৮ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩.৭৪ শতাংশ। আত্মহননকারীদের মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছেন শতকরা ১২.০৯ শতাংশ।

আত্মহনন নারীদের বেশি

আত্মহত্যায় এবারেও এগিয়ে আছে নারী শিক্ষার্থীরা যা মোট আত্মহননকারীদের ৬০.৭১ শতাংশ বা ২২১ জন। অন্যদিকে পুরুষ শিক্ষার্থী রয়েছেন ২৯ শতাংশ বা ১৪৩ জন।

বয়সভিত্তিক আত্মহত্যার হার

সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি, যা ৭৮.৬ শতাংশ। বয়সের সীমারেখায় যারা ২১ থেকে ২৬ বছর বয়সী, তাদের মধ্যে ১৩.৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।

জরিপ থেকে আরও জানা যায়, ১৩ বছরের নিচে যাদের বয়স, তারাও এই পথ থেকে পিছপা হয়নি। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭.৯ শতাংশ অর্থাৎ ২৯ জন আত্মহত্যা করে। তবে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা, যার সংখ্যা ১৬০ জন। এছাড়া সর্বনি¤œ সাত বছরের একটি শিশুও আত্মহত্যা করেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

প্রেমঘটিত কারণ সবচেয়ে বেশি দায়ী

আত্মহত্যার ঘটনা অনুসন্ধানে আঁচল ফাউন্ডেশনের তরুণ গবেষকরা আত্মহননের পেছনের বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে জানতে পারে। এর মধ্যে যে কারণগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো, অভিমান, প্রেমঘটিত কারণ, পরিবার থেকে কিছু চেয়ে না পাওয়া, পারিবারিক কলহ, মানসিক সমস্যা, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি।

এছাড়া পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, চুরি বা মিথ্যা অপবাদ, বিয়েতে প্রত্যাখ্যাত বা স্বামী পছন্দ না হওয়া, সেশনজট, পড়াশোনার চাপ ইত্যাদি। আরও রয়েছে বাসা থেকে মোটরবাইক কিনে না দেয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, বিষণœতা, আর্থিক সমস্যার মতো বিষয়ও।

প্রাপ্ত উপাত্ত অনুসারে, সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ২৫.২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। অভিমান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ২৪.৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে চাওয়া-পাওয়ার অমিল হওয়ায় ৭.৪২ শতাংশ এবং পারিবারিক কলহের কারণে ৬.৫৯ শতাংশ আত্মহত্যা করেছেন।

ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানির কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ৪.৬৭ শতাংশ। মানসিক সমস্যার কারণে এই পথে ধাবিত হন ৬.৫৯ শতাংশ। তাছাড়া পড়াশোনার চাপে ০.৮২ শতাংশ, সেশনজটের কারণে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে ০.৮২ শতাংশ এবং পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ১.৯২ শতাংশ আত্মহননের দিকে এগিয়ে যান। ১.৬৫ শতাংশ চুরির মিথ্যা অপবাদে, ১.৯২ শতাংশ আর্থিক সমস্যায়, ০.৫৫ শতাংশ বন্ধুর মৃত্যুতে বিষাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এবং স্বামী পছন্দ না হওয়ায় ১.১০ শতাংশ। তবে ১৫.৯৩ শতাংশের আত্মহননের কারণ জানা যায়নি।

আত্মহত্যার ভিন্ন কিছু দিক

আত্মহননকারী কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মহত্যার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের মানসিক অবসাদ কিংবা বিদায় নেয়ার কথা জানান দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। তাদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন ৮ জন, ভিডিও কলে এসে আত্মহত্যা করেন ২ জন। আর সেলফি মোডে ক্যামেরা নিজেদের দিকে তাক করে আত্মহত্যা করেন ০.২৭ শতাংশ প্রেমিক যুগল। এছাড়া মৃত্যুর আগে চিরকুট বা সুইসাইড নোট লিখে ৮ জন আত্মহত্যা করেছেন।

আত্মহত্যার পেছনে দায়ী সাইবারক্রাইমও

এই অনলাইন নির্ভরশীলতার যুগে প্রাত্যহিক জীবনের একটা বড় সময় কেটে যায় ইন্টারনেটে। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে তা কখনো কখনো সমস্যাও তৈরি করে যেমনটা ঘটেছে ৪ জন শিক্ষার্থীর জীবনে। আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ৪ জন শিক্ষার্থী।

সমাধানের উপায়

তানসেন রোজ বলেন, ‘সাত বছরের একজন যার আত্মহত্যা বুঝার মতো বয়সও হয়নি তার আত্মহত্যার পেছনের কারণগুলোও বিশ্লেষণ করে শিশু অবস্থা থেকেই শিক্ষার্থীদের মনোবল শক্ত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’

আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের শুরুতেই অনুধাবন করতে হবে, এই সংকট করোনার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ৩৬৪ জনের আত্মহত্যা অনেক বড় একটি সংখ্যা। তাই এটিকে সংকট হিসেবে আখ্যা দিয়ে সরকার, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিসহ প্রতিটা স্টেকহোল্ডারের অংশগ্রহণ জরুরি। সবাই যার যার জায়গা থেকে সচেতন হলে এ সমস্যা সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভবপর হবে।’

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যার ঘটনাগুলো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে কম বয়সী স্কুলগামী থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্মদের মাঝে এই প্রবণতা বেশি। এই হার এত উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে কোন কারণগুলো আছে। তা খুঁজে বের করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা এখন যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে আত্মহত্যা না করলেও তাদের অন্যান্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। পেশাজীবীদেরও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত এবং কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে সমন্বিত কাজ করা প্রয়োজন। এছাড়া সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে’

নারায়ণগঞ্জ জেলার এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি ডিভিশন) আজিজুল হক মামুন বলেন, ‘শ্রেণীভিত্তিক শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সিলিং করতে হবে। এক্ষেত্রে মাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ের স্কুলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের কো-কারিকুলার কার্যক্রমে বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাছাড়া কলেজ বা মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে কালচারাল শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।’

আঁচল ফাউন্ডেশনের জেনারেল সেক্রেটারি সামিরা আক্তার সিয়াম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাস্তব জীবনের দক্ষতার চর্চা পাঠক্রমে যুক্ত করা উচিত, যেমনÑ যোগব্যায়াম, মননশীলতার অনুশীলন, চাপ ব্যবস্থাপনা, রাগ ব্যবস্থাপনা, সহানুভূতি, নিজের যতœ নেয়ার মতো বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করা উচিত। পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে সামাজিক মূল্যবোধ এবং জীবনে ভালো থাকতে পারার চর্চাগুলো ছোটকাল থেকে শিখলে, সমাজের আত্মহত্যার মতো অভিশাপগুলো কমিয়ে আনা সম্ভব।’

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবনা

১. আত্মহত্যা মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন, ২. পাঠ্যপুস্তকে মানসিক শিক্ষাকে এবং মনের যতেœর কৌশলগুলোকে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা, ৩. স্কুল-কলেজের অভিভাবক সমাবেশের আলোচিত সূচিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যা সম্পর্কিত এজেন্ডা রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রদান, ৪. মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও আত্মহত্যা প্রতিরোধে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা, ৫. প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রদান, ৬. সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, ৭. মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা, ৮. হতাশা, আপত্তিকর ছবি, আত্মহত্যার লাইভ স্ট্রিমিং, জীবননাশের পোস্ট ইত্যাদি চিহ্নিত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষ টুলস ব্যবহার করা, ৯. আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবার ও পরিচিতজনদের দায় অনুসন্ধানে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকা, ১০. মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দ্রুত ও সহজলভ্য করতে একটি টোল ফ্রি জাতীয় হট লাইন নম্বর চালু করা।