শোকে স্তব্ধ যুক্তরাজ্য, দশ দিনের কর্মসূচি

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ গোটা যুক্তরাজ্য। রানীকে শ্রদ্ধা জানাতে বাকিংহাম প্যালেসের বাইরের এলাকা পরিণত হয় শোকাচ্ছন্ন জনসমুদ্রে। শুধু যুক্তরাজ্য নয়, রানীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া পড়েছে বিশ্বজুড়ে। যুক্তরাজ্য সরকার ১০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, নীরবতা পালনসহ রয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। যার কারণে ব্যাংকগুলো ছুটি ঘোষণা করা হতে পারে। স্কুলও বন্ধ থাকতে পারে। শিক্ষা অধিদপ্তর ও নিয়োজিত প্রশাসন পরামর্শ প্রদান করবে এ বিষয়ে।

রানীর মৃত্যুতে বাতিল করা হয়েছে ইংলিশ ফুটবল লীগ ও উত্তর আয়ারল্যান্ড ফুটবল লীগের ফুটবল ম্যাচসহ গতকালের নির্ধারিত ম্যাচ। গতাকালের অন্যান্য খেলার ইভেন্টগুলোও বাতিল করা হয়েছে।

ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের খেলা স্থগিত করা হয়েছে। বাকি পাঁচ দিনের খেলা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। বাতিল করা হয়েছে মার্কারি মিউজিক প্রাইজের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। আগামী ১২ দিনের জন্য বিবিসি সম্প্রচার মাধ্যম বাতিল করেছে তাদের সব কমেডি শো।

মেরিটাইম অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট (আরএমটি) ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে, ১৫ ও ১৭ সেপ্টেম্বরের পরিকল্পিত ধর্মঘট রানীর শ্রদ্ধায় বাতিল করা হবে। গতকালের ধর্মঘটও বাতিল করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন মুকুটধারী রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সত্তর বছর রাজত্ব করার পর ব্যালমোরাল প্রাসাদে ৯৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর রানীর মৃত্যুর ঘোষণা দেয় বাকিংহাম প্যালেস। তার মৃত্যুর পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত ঘটনাগুলো কীভাবে সম্পন্ন হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাজ শেষ করতে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রথম দিন : বাকিংহাম প্যালেস থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে একটি ‘কল কাসকেড’ করা হয়। রানীর ব্যক্তিগত সচিব প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে শোক সংবাদটি জানানো। এরপর সংবাদটি ক্যাবিনেট সেক্রেটারি এবং প্রাইভি কাউন্সিলের অফিসে পৌঁছে দেয়া হবে। প্রাইভি কাউন্সিল মূলত রানীর পক্ষে সরকারি কাজের সমন্বয় করে। এদিন ‘সরকারি বিজ্ঞপ্তি’ দিয়ে জনসাধারণকে রানীর মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়। এরইমধ্যে ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর দেশটির নতুন রাজা হয়েছেন রানীর ছেলে ও সাবেক প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লস।

দ্বিতীয় দিন : এদিন সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং প্রাইভি কাউন্সেলরদের নিয়ে গঠিত অভিষেক পরিষদ সেন্ট জেমস প্রাসাদে মিলিত হবেন। এখানে নতুন রাজার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। এই ঘোষণা সেন্ট জেমস প্যালেসের বারান্দা থেকে জনসমক্ষে পাঠ করা হবে। লন্ডন শহরের রয়্যাল এক্সচেঞ্জে আরও একটি ঘোষণা পাঠ করা হবে। বিকেলে নতুন রাজা প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ, বিরোধী দলের নেতা, ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ এবং ওয়েস্টমিনস্টারের ডিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। রানী এলিজাবেথের মরদেহ বাকিংহাম প্যালেসে নিয়ে আসা হবে। এডিনবার্গ, কার্ডিফ এবং বেলফাস্টে স্বনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে মধ্যাহ্নে একযোগে নতুন রাজার নাম ঘোষণা করা হবে। সংসদে শ্রদ্ধাঞ্জলি অব্যাহত থাকবে।

তৃতীয় দিন : এদিন সকালে রাজা চার্লস ওয়েস্টমিনস্টার হলে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। বিকেলে তিনি যুক্তরাজ্য সফরে যাত্রা শুরু করবেন। এ সময় স্কটল্যান্ডে স্কটিশ পার্লামেন্ট পরিদর্শন করবেন এবং এডিনবার্গের সেন্ট জাইলস ক্যাথেড্রালে একটি প্রার্থনায় অংশ নেবেন।

চতুর্থ দিন : এদিন রাজা চার্লস উত্তর আয়ারল্যান্ডে আসবেন এবং হিলসবোরো দুর্গে ভ্রমণ করবেন। রাজা চার্লসের উপস্থিতিতে হিলসবরো ক্যাসেলে আরেকটি শোকপ্রস্তাব উত্থাপিত হবে এবং পরে তিনি বেলফাস্টের সেন্ট অ্যান’স ক্যাথেড্রালে একটি প্রার্থনায় অংশ নেবেন। এদিন বাকিংহাম প্যালেস থেকে ওয়েস্টমিনস্টার হল পর্যন্ত রানীর কফিনবাহী একটি শোকযাত্রা হবে।

পঞ্চম দিন : রানীর কফিনটি বাকিংহাম প্যালেস থেকে লন্ডন হয়ে একটি আনুষ্ঠানিক পথ ধরে ওয়েস্টমিনস্টারের প্রাসাদে শোকযাত্রার মাধ্যমে নিয়ে

যাওয়া হবে। কফিনের আগমনের পর ওয়েস্টমিনস্টার হলে একটি প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

৬ষ্ঠ থেকে নবম দিন : রানীর কফিন বাকিংহাম প্যালেস থেকে ওয়েস্টমিনস্টার হলে নেয়ার পর সেখানে পাঁচ দিন রাখা হবে। রানীর কফিনের আগমন উপলক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধার সময় সাধারণ জনগণও রানীকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন। কফিনটি ওয়েস্টমিনস্টার হলের মাঝখানে একটি সুসজ্জিত শবমঞ্চে রাখা হবে। দৈনিক ২৩ ঘণ্টা জনসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

এ সময়ের মধ্যে রাজা চার্লস কার্ডিফের লাল্যান্ডফ ক্যাথেড্রালে একটি প্রার্থনায় যোগ দিতে ওয়েলসে যাবেন। এরপর ওয়েলস সেনেডে (পার্লামেন্ট) যাবেন এবং সদস্যদের সমবেদনা গ্রহণ করবেন। প্রথমে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ওয়েলসের ফার্স্ট মিনিস্টার। শুক্রবার কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা লন্ডনে আসতে শুরু করবেন।

শনিবার রাজা চার্লস বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা গভর্নর জেনারেল এবং প্রধানমন্ত্রীদের অভ্যর্থনা জানাবেন। এদিন ওয়েস্টমিনস্টার হলে শবদেহ রাখার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগের রাতে যুক্তরাজ্যের গির্জাগুলোতে প্রার্থনা চলবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পরিবহন বিভাগ সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় থাকবে।

দশম দিন : এদিন যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষ রানীকে শ্রদ্ধা জানাবেন। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাষ্ট্রীয় শবযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে শবযাত্রা অ্যাবেতে নেয়া হবে। সারাদেশে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এক ঘণ্টার একটি আনুষ্ঠানিকতার পর বড় পরিসরে আনুষ্ঠানিক শবযাত্রা হাইড পার্কে যাবে। সেখানে কফিনটি সাঁজোয়া গাড়ি থেকে রাষ্ট্রীয় শবযানে স্থানান্তরিত হবে এবং কফিনটি উইন্ডসরে নেয়া হবে। উইন্ডসরে শবযাত্রার পর উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে শেষ বিদায় জানানোর পর রাজকীয় ভল্টে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে সমাধিস্ত করা হবে।

১৯৫২ সালে ব্রিটিশ সিংহাসনে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক ঘটে। তবে অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। সেদিনও উৎসবে মেতে উঠেছিল মানুষ। খুশিতে, আনন্দে, উত্তেজনায় কাঁপছিল পুরো লন্ডন শহর। সেদিন শহরজুড়ে সব ভবন ঢাকা পড়ে গিয়েছিল অভিষেক উৎসবের সাজে, কেবল বাকিংহাম প্রাসাদের পূর্বদিকের সম্মুখভাগটাই যেন বাদ পড়েছিল। শুধু লন্ডন নয়, পুরো কমনওয়েলথজুড়েই সবার দৃষ্টি তখন রানীর অভিষেক অনুষ্ঠানের দিকে।

সোনায় মোড়ানো শকটে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অভিষেক অনুষ্ঠানে রানী যখন বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে যান, তখন সহচরী হিসেবে তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছিল ছয় তরুণীকে। তাদের দায়িত্ব ছিল রানীর দীর্ঘ পরিচ্ছদের ভেলভেটের শেষ প্রান্তভাগ ধরে রাখা, আর সেই সঙ্গে নিজেদেরও সুন্দর সাজে ফুটিয়ে তোলা।

রানী এলিজাবেথের বয়স তখন ২৫। তিনি আবদার করেছিলেন যে, তার অভিষেক অনুষ্ঠানটি যেন সরাসরি টেলিভিশনে দেখানো হয়। রাজপরিবারের এ অনুষ্ঠানটির কিছু কিছু ঐতিহ্য বহু শতকের, ৯০০ বছর আগে থেকে চলছে। কিন্তু সেবার অনুষ্ঠানটি যত মানুষ দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন, তেমনটি এর আগে কখনো ঘটেনি।

রানীর মৃত্যুতে যা কিছু বদলাবে

রানীর মৃত্যুতে যুক্তরাজ্যের জনজীবনে আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও সিংহাসনে আরোহণ করেননি রাজা চার্লস। এর আগে বেশ কিছু পরিবর্তনের অপেক্ষায় আছেন ব্রিটিশরা।

পতাকা : যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে থাকা পুলিশ স্টেশনগুলো থেকে শুরু করে নৌবাহিনীর জাহাজে হাজার হাজার পতাকা বদলে ফেলতে হবে। ‘কুইন্স কালার্স’ পতাকা ব্যবহার করে দেশটির সামরিক রেজিমেন্ট, ফায়ার সার্ভিসের পতাকায় রয়েছে রানীর আদ্যক্ষর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডসহ যেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন রানী এলিজাবেথ সেসব দেশের পতাকাকে ‘ই ফ্ল্যাগস’ বলা হয়, এসব পরিবর্তন করা হবে।

বদলাতে পারে রাজপ্রাসাদের পতাকাও। রানী এলিজাবেথ যে পতাকা ব্যবহার করতেন তাতে প্রতীকীভাবে স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসকে তুলে ধরা হয়েছে। এটি তৈরি করা হয়েছিল ওয়েলস নিজেদের পতাকা পাওয়ার আগেই।

ব্যাংক নোট ও মুদ্রা : বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং ব্যাংক নোটে রানী এলিজাবেথের মুখ ছাপা রয়েছে। এগুলোর মূল্যমান ৮০ বিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড। নতুন রাজার ছবিযুক্ত ব্যাংক নোট দিয়ে এগুলো স্থলাভিষিক্ত করতে অন্তত দুই বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় সংগীত : তাত্ত্বিকভাবে সবচেয়ে সহজবোধ্য পরিবর্তন আসতে পারে জাতীয় সংগীতের কথায়। ‘গড সেভ আওয়ার গ্রেসিয়াস কুইন’ এর বদলে হতে পারে ‘গড সেভ আওয়ার গ্রেসিয়াস কিং’।

প্রার্থনা : রানী এলিজাবেথ ছিলেন চার্চ অব ইংল্যান্ডের ‘ডিফেন্ডার অব দ্য ফেইথ অ্যান্ড সুপ্রিম গভর্নর’ (ধর্মের রক্ষাকারী ও সর্বোচ্চ গভর্নর)। ‘বুক অব কমন প্রেয়ার’-এ যে কথাগুলো আছে সেগুলোতে রানীর কথা বলা হয়েছে। প্রার্থনায় বলা হয়, ‘তাকে আপনার পবিত্র আত্মার অনুগ্রহে পূর্ণ করুন, যাতে সে সর্বদা আপনার ইচ্ছার প্রতি ঝুঁকে থাকে এবং আপনার পথে চলতে পারে’। নতুন রাজার জন্য প্রার্থনায় তাই পরিবর্তন আসবে।

র?য়্যাল আর্মস : গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্যে থাকবে রয়্যাল আর্মস। এতে একটি সিংহ ও ঢালের বিরুদ্ধে আক্রমণে উদ্যত ইউনিকর্ন রয়েছে। সরকারি চত্বর এবং স্টেশনারিতে এটি ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এগুলোর পরিবর্তন ব্যয়বহুল। তবু এগুলোর পরিবর্তন করা প্রয়োজন হতে পারে।

রয়্যাল ওয়ারেন্ট : রয়্যাল ওয়ারেন্টেও আসবে পরিবর্তন। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো থেকে শুরু সাসেস্কের ৬ শতাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ওয়ারেন্ট ব্যবহার করে।

ডাকবাক্স ও ডাকটিকেট : রয়্যাল মেইলের ডাকবাক্সগুলোতে রানী এলিজাবেথের রাজকীয় সংকেত সংবলিত প্রতীক (সাইফার) রয়েছে। এই প্রতীক বদলে ফেলা হতে পারে। অবশ্য মৃত্যুর ৭০ বছর পরও রাজা ষষ্ঠ জর্জের কিছু সাইফার এখনও ব্যবহৃত হয়। ডাকটিকেটে পরিবর্তন আনবে ডাকঘর। নতুন ডাকটিকেটে রাজার ছবি ব্যবহার করা হবে।

আনুগত্যের অঙ্গীকার : রাজমুকুটের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার ছাড়া ব্রিটিশ এমপিরা হাউজ অব কমন্স, বিতর্কে অংশগ্রহণ, ভোট বা বেতন পান না। ১৯৫২ সাল থেকে আনুগত্যের অঙ্গীকারে ‘মহামান্য রানী এলিজাবেথ’-এর প্রতি আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে। এখন নতুন এমপিরা নতুন রাজা ও তার উত্তরাধিকারীদের প্রতি আনুগত্য জানাবেন।

কমনওয়েলথ : কমনওয়েলথভুক্ত ১৪টি দেশ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে রানীকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে রানীর স্থলে নতুন রাজাকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

রাজমুকুট কবে পাবেন তৃতীয় চার্লস

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই এবং কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সিংহাসনের অধিকারী হয়েছেন চার্লস, যিনি এখন সাবেক প্রিন্স অব ওয়েলস। কিন্তু একজন মুকুটধারী রাজা হতে ‘বাস্তব এবং প্রথাগত’ কিছু পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হবে।

নতুন রাজাকে কী নামে ডাকা হবে? তিনি পরিচিত হবেন রাজা তৃতীয় চার্লস নামে। এটাই হলো নতুন রাজার নেয়া প্রথম সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। চার্লস তার চারটি নামের যেকোন একটি বেছে নিতে পারতেন, চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ।

অবশ্য পদবী পরিবর্তন কেবলমাত্র তার একার ক্ষেত্রেই ঘটছে না। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হলেও প্রিন্স উইলিয়াম স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রিন্স অব ওয়েলস হবেন না। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে অবশ্য তার বাবার অন্য আরেকটি পদবী ‘ডিউক অব কর্নওয়াল’ পেয়ে গেছেন। তার স্ত্রী ক্যাথরিন পরিচিত হবেন ডাচেস অব কর্নওয়াল হিসেবে। চার্লসের স্ত্রীর জন্যও নতুন পদবী আসবে। তার পূর্ণাঙ্গ পদবী হলো কুইন কনসর্ট। কনসর্ট শব্দটি রাজা বা রানীর স্ত্রী অথবা স্বামীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

মায়ের মৃত্যুর প্রথম ২৪ ঘণ্টা বা কমবেশি কিছু সময়ের মধ্যে চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা হিসেবে ঘোষিত হবেন। এটি ঘটবে লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে ‘অ্যাকসেশন কাউন্সিল’ নামে এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতার যে সংঘ রয়েছে, তাদের সামনে।

শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৬ ভাদ্র ১৪২৯ ১৩ সফর ১৪৪৪

শোকে স্তব্ধ যুক্তরাজ্য, দশ দিনের কর্মসূচি

সংবাদ ডেস্ক

image

রানী এলিজাবেথের মৃত্যু ঘোষণার পর ধীরে ধীরে বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে জড়ো হতে থাকেন শোকার্ত জনসাধারণ

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ গোটা যুক্তরাজ্য। রানীকে শ্রদ্ধা জানাতে বাকিংহাম প্যালেসের বাইরের এলাকা পরিণত হয় শোকাচ্ছন্ন জনসমুদ্রে। শুধু যুক্তরাজ্য নয়, রানীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া পড়েছে বিশ্বজুড়ে। যুক্তরাজ্য সরকার ১০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, নীরবতা পালনসহ রয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। যার কারণে ব্যাংকগুলো ছুটি ঘোষণা করা হতে পারে। স্কুলও বন্ধ থাকতে পারে। শিক্ষা অধিদপ্তর ও নিয়োজিত প্রশাসন পরামর্শ প্রদান করবে এ বিষয়ে।

রানীর মৃত্যুতে বাতিল করা হয়েছে ইংলিশ ফুটবল লীগ ও উত্তর আয়ারল্যান্ড ফুটবল লীগের ফুটবল ম্যাচসহ গতকালের নির্ধারিত ম্যাচ। গতাকালের অন্যান্য খেলার ইভেন্টগুলোও বাতিল করা হয়েছে।

ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের খেলা স্থগিত করা হয়েছে। বাকি পাঁচ দিনের খেলা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। বাতিল করা হয়েছে মার্কারি মিউজিক প্রাইজের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। আগামী ১২ দিনের জন্য বিবিসি সম্প্রচার মাধ্যম বাতিল করেছে তাদের সব কমেডি শো।

মেরিটাইম অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট (আরএমটি) ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে, ১৫ ও ১৭ সেপ্টেম্বরের পরিকল্পিত ধর্মঘট রানীর শ্রদ্ধায় বাতিল করা হবে। গতকালের ধর্মঘটও বাতিল করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন মুকুটধারী রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সত্তর বছর রাজত্ব করার পর ব্যালমোরাল প্রাসাদে ৯৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর রানীর মৃত্যুর ঘোষণা দেয় বাকিংহাম প্যালেস। তার মৃত্যুর পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত ঘটনাগুলো কীভাবে সম্পন্ন হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাজ শেষ করতে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রথম দিন : বাকিংহাম প্যালেস থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে একটি ‘কল কাসকেড’ করা হয়। রানীর ব্যক্তিগত সচিব প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে শোক সংবাদটি জানানো। এরপর সংবাদটি ক্যাবিনেট সেক্রেটারি এবং প্রাইভি কাউন্সিলের অফিসে পৌঁছে দেয়া হবে। প্রাইভি কাউন্সিল মূলত রানীর পক্ষে সরকারি কাজের সমন্বয় করে। এদিন ‘সরকারি বিজ্ঞপ্তি’ দিয়ে জনসাধারণকে রানীর মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়। এরইমধ্যে ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর দেশটির নতুন রাজা হয়েছেন রানীর ছেলে ও সাবেক প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লস।

দ্বিতীয় দিন : এদিন সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং প্রাইভি কাউন্সেলরদের নিয়ে গঠিত অভিষেক পরিষদ সেন্ট জেমস প্রাসাদে মিলিত হবেন। এখানে নতুন রাজার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। এই ঘোষণা সেন্ট জেমস প্যালেসের বারান্দা থেকে জনসমক্ষে পাঠ করা হবে। লন্ডন শহরের রয়্যাল এক্সচেঞ্জে আরও একটি ঘোষণা পাঠ করা হবে। বিকেলে নতুন রাজা প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ, বিরোধী দলের নেতা, ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ এবং ওয়েস্টমিনস্টারের ডিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। রানী এলিজাবেথের মরদেহ বাকিংহাম প্যালেসে নিয়ে আসা হবে। এডিনবার্গ, কার্ডিফ এবং বেলফাস্টে স্বনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে মধ্যাহ্নে একযোগে নতুন রাজার নাম ঘোষণা করা হবে। সংসদে শ্রদ্ধাঞ্জলি অব্যাহত থাকবে।

তৃতীয় দিন : এদিন সকালে রাজা চার্লস ওয়েস্টমিনস্টার হলে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। বিকেলে তিনি যুক্তরাজ্য সফরে যাত্রা শুরু করবেন। এ সময় স্কটল্যান্ডে স্কটিশ পার্লামেন্ট পরিদর্শন করবেন এবং এডিনবার্গের সেন্ট জাইলস ক্যাথেড্রালে একটি প্রার্থনায় অংশ নেবেন।

চতুর্থ দিন : এদিন রাজা চার্লস উত্তর আয়ারল্যান্ডে আসবেন এবং হিলসবোরো দুর্গে ভ্রমণ করবেন। রাজা চার্লসের উপস্থিতিতে হিলসবরো ক্যাসেলে আরেকটি শোকপ্রস্তাব উত্থাপিত হবে এবং পরে তিনি বেলফাস্টের সেন্ট অ্যান’স ক্যাথেড্রালে একটি প্রার্থনায় অংশ নেবেন। এদিন বাকিংহাম প্যালেস থেকে ওয়েস্টমিনস্টার হল পর্যন্ত রানীর কফিনবাহী একটি শোকযাত্রা হবে।

পঞ্চম দিন : রানীর কফিনটি বাকিংহাম প্যালেস থেকে লন্ডন হয়ে একটি আনুষ্ঠানিক পথ ধরে ওয়েস্টমিনস্টারের প্রাসাদে শোকযাত্রার মাধ্যমে নিয়ে

যাওয়া হবে। কফিনের আগমনের পর ওয়েস্টমিনস্টার হলে একটি প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

৬ষ্ঠ থেকে নবম দিন : রানীর কফিন বাকিংহাম প্যালেস থেকে ওয়েস্টমিনস্টার হলে নেয়ার পর সেখানে পাঁচ দিন রাখা হবে। রানীর কফিনের আগমন উপলক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধার সময় সাধারণ জনগণও রানীকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন। কফিনটি ওয়েস্টমিনস্টার হলের মাঝখানে একটি সুসজ্জিত শবমঞ্চে রাখা হবে। দৈনিক ২৩ ঘণ্টা জনসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

এ সময়ের মধ্যে রাজা চার্লস কার্ডিফের লাল্যান্ডফ ক্যাথেড্রালে একটি প্রার্থনায় যোগ দিতে ওয়েলসে যাবেন। এরপর ওয়েলস সেনেডে (পার্লামেন্ট) যাবেন এবং সদস্যদের সমবেদনা গ্রহণ করবেন। প্রথমে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ওয়েলসের ফার্স্ট মিনিস্টার। শুক্রবার কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা লন্ডনে আসতে শুরু করবেন।

শনিবার রাজা চার্লস বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা গভর্নর জেনারেল এবং প্রধানমন্ত্রীদের অভ্যর্থনা জানাবেন। এদিন ওয়েস্টমিনস্টার হলে শবদেহ রাখার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগের রাতে যুক্তরাজ্যের গির্জাগুলোতে প্রার্থনা চলবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পরিবহন বিভাগ সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় থাকবে।

দশম দিন : এদিন যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষ রানীকে শ্রদ্ধা জানাবেন। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাষ্ট্রীয় শবযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে শবযাত্রা অ্যাবেতে নেয়া হবে। সারাদেশে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এক ঘণ্টার একটি আনুষ্ঠানিকতার পর বড় পরিসরে আনুষ্ঠানিক শবযাত্রা হাইড পার্কে যাবে। সেখানে কফিনটি সাঁজোয়া গাড়ি থেকে রাষ্ট্রীয় শবযানে স্থানান্তরিত হবে এবং কফিনটি উইন্ডসরে নেয়া হবে। উইন্ডসরে শবযাত্রার পর উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে শেষ বিদায় জানানোর পর রাজকীয় ভল্টে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে সমাধিস্ত করা হবে।

১৯৫২ সালে ব্রিটিশ সিংহাসনে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক ঘটে। তবে অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। সেদিনও উৎসবে মেতে উঠেছিল মানুষ। খুশিতে, আনন্দে, উত্তেজনায় কাঁপছিল পুরো লন্ডন শহর। সেদিন শহরজুড়ে সব ভবন ঢাকা পড়ে গিয়েছিল অভিষেক উৎসবের সাজে, কেবল বাকিংহাম প্রাসাদের পূর্বদিকের সম্মুখভাগটাই যেন বাদ পড়েছিল। শুধু লন্ডন নয়, পুরো কমনওয়েলথজুড়েই সবার দৃষ্টি তখন রানীর অভিষেক অনুষ্ঠানের দিকে।

সোনায় মোড়ানো শকটে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অভিষেক অনুষ্ঠানে রানী যখন বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে যান, তখন সহচরী হিসেবে তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছিল ছয় তরুণীকে। তাদের দায়িত্ব ছিল রানীর দীর্ঘ পরিচ্ছদের ভেলভেটের শেষ প্রান্তভাগ ধরে রাখা, আর সেই সঙ্গে নিজেদেরও সুন্দর সাজে ফুটিয়ে তোলা।

রানী এলিজাবেথের বয়স তখন ২৫। তিনি আবদার করেছিলেন যে, তার অভিষেক অনুষ্ঠানটি যেন সরাসরি টেলিভিশনে দেখানো হয়। রাজপরিবারের এ অনুষ্ঠানটির কিছু কিছু ঐতিহ্য বহু শতকের, ৯০০ বছর আগে থেকে চলছে। কিন্তু সেবার অনুষ্ঠানটি যত মানুষ দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন, তেমনটি এর আগে কখনো ঘটেনি।

রানীর মৃত্যুতে যা কিছু বদলাবে

রানীর মৃত্যুতে যুক্তরাজ্যের জনজীবনে আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও সিংহাসনে আরোহণ করেননি রাজা চার্লস। এর আগে বেশ কিছু পরিবর্তনের অপেক্ষায় আছেন ব্রিটিশরা।

পতাকা : যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে থাকা পুলিশ স্টেশনগুলো থেকে শুরু করে নৌবাহিনীর জাহাজে হাজার হাজার পতাকা বদলে ফেলতে হবে। ‘কুইন্স কালার্স’ পতাকা ব্যবহার করে দেশটির সামরিক রেজিমেন্ট, ফায়ার সার্ভিসের পতাকায় রয়েছে রানীর আদ্যক্ষর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডসহ যেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন রানী এলিজাবেথ সেসব দেশের পতাকাকে ‘ই ফ্ল্যাগস’ বলা হয়, এসব পরিবর্তন করা হবে।

বদলাতে পারে রাজপ্রাসাদের পতাকাও। রানী এলিজাবেথ যে পতাকা ব্যবহার করতেন তাতে প্রতীকীভাবে স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসকে তুলে ধরা হয়েছে। এটি তৈরি করা হয়েছিল ওয়েলস নিজেদের পতাকা পাওয়ার আগেই।

ব্যাংক নোট ও মুদ্রা : বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং ব্যাংক নোটে রানী এলিজাবেথের মুখ ছাপা রয়েছে। এগুলোর মূল্যমান ৮০ বিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড। নতুন রাজার ছবিযুক্ত ব্যাংক নোট দিয়ে এগুলো স্থলাভিষিক্ত করতে অন্তত দুই বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় সংগীত : তাত্ত্বিকভাবে সবচেয়ে সহজবোধ্য পরিবর্তন আসতে পারে জাতীয় সংগীতের কথায়। ‘গড সেভ আওয়ার গ্রেসিয়াস কুইন’ এর বদলে হতে পারে ‘গড সেভ আওয়ার গ্রেসিয়াস কিং’।

প্রার্থনা : রানী এলিজাবেথ ছিলেন চার্চ অব ইংল্যান্ডের ‘ডিফেন্ডার অব দ্য ফেইথ অ্যান্ড সুপ্রিম গভর্নর’ (ধর্মের রক্ষাকারী ও সর্বোচ্চ গভর্নর)। ‘বুক অব কমন প্রেয়ার’-এ যে কথাগুলো আছে সেগুলোতে রানীর কথা বলা হয়েছে। প্রার্থনায় বলা হয়, ‘তাকে আপনার পবিত্র আত্মার অনুগ্রহে পূর্ণ করুন, যাতে সে সর্বদা আপনার ইচ্ছার প্রতি ঝুঁকে থাকে এবং আপনার পথে চলতে পারে’। নতুন রাজার জন্য প্রার্থনায় তাই পরিবর্তন আসবে।

র?য়্যাল আর্মস : গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্যে থাকবে রয়্যাল আর্মস। এতে একটি সিংহ ও ঢালের বিরুদ্ধে আক্রমণে উদ্যত ইউনিকর্ন রয়েছে। সরকারি চত্বর এবং স্টেশনারিতে এটি ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এগুলোর পরিবর্তন ব্যয়বহুল। তবু এগুলোর পরিবর্তন করা প্রয়োজন হতে পারে।

রয়্যাল ওয়ারেন্ট : রয়্যাল ওয়ারেন্টেও আসবে পরিবর্তন। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো থেকে শুরু সাসেস্কের ৬ শতাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ওয়ারেন্ট ব্যবহার করে।

ডাকবাক্স ও ডাকটিকেট : রয়্যাল মেইলের ডাকবাক্সগুলোতে রানী এলিজাবেথের রাজকীয় সংকেত সংবলিত প্রতীক (সাইফার) রয়েছে। এই প্রতীক বদলে ফেলা হতে পারে। অবশ্য মৃত্যুর ৭০ বছর পরও রাজা ষষ্ঠ জর্জের কিছু সাইফার এখনও ব্যবহৃত হয়। ডাকটিকেটে পরিবর্তন আনবে ডাকঘর। নতুন ডাকটিকেটে রাজার ছবি ব্যবহার করা হবে।

আনুগত্যের অঙ্গীকার : রাজমুকুটের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার ছাড়া ব্রিটিশ এমপিরা হাউজ অব কমন্স, বিতর্কে অংশগ্রহণ, ভোট বা বেতন পান না। ১৯৫২ সাল থেকে আনুগত্যের অঙ্গীকারে ‘মহামান্য রানী এলিজাবেথ’-এর প্রতি আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে। এখন নতুন এমপিরা নতুন রাজা ও তার উত্তরাধিকারীদের প্রতি আনুগত্য জানাবেন।

কমনওয়েলথ : কমনওয়েলথভুক্ত ১৪টি দেশ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে রানীকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে রানীর স্থলে নতুন রাজাকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।

রাজমুকুট কবে পাবেন তৃতীয় চার্লস

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই এবং কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সিংহাসনের অধিকারী হয়েছেন চার্লস, যিনি এখন সাবেক প্রিন্স অব ওয়েলস। কিন্তু একজন মুকুটধারী রাজা হতে ‘বাস্তব এবং প্রথাগত’ কিছু পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হবে।

নতুন রাজাকে কী নামে ডাকা হবে? তিনি পরিচিত হবেন রাজা তৃতীয় চার্লস নামে। এটাই হলো নতুন রাজার নেয়া প্রথম সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। চার্লস তার চারটি নামের যেকোন একটি বেছে নিতে পারতেন, চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ।

অবশ্য পদবী পরিবর্তন কেবলমাত্র তার একার ক্ষেত্রেই ঘটছে না। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হলেও প্রিন্স উইলিয়াম স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রিন্স অব ওয়েলস হবেন না। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে অবশ্য তার বাবার অন্য আরেকটি পদবী ‘ডিউক অব কর্নওয়াল’ পেয়ে গেছেন। তার স্ত্রী ক্যাথরিন পরিচিত হবেন ডাচেস অব কর্নওয়াল হিসেবে। চার্লসের স্ত্রীর জন্যও নতুন পদবী আসবে। তার পূর্ণাঙ্গ পদবী হলো কুইন কনসর্ট। কনসর্ট শব্দটি রাজা বা রানীর স্ত্রী অথবা স্বামীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

মায়ের মৃত্যুর প্রথম ২৪ ঘণ্টা বা কমবেশি কিছু সময়ের মধ্যে চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা হিসেবে ঘোষিত হবেন। এটি ঘটবে লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে ‘অ্যাকসেশন কাউন্সিল’ নামে এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতার যে সংঘ রয়েছে, তাদের সামনে।