ওএমএসের প্রভাবে কমেছে চালের দাম, বেড়েছে ডিমের

ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে বাড়তে থাকা চালের দাম এবার কমতে শুরু করেছে। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের চালের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারাদেশে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রি ও ভারত থেকে আমদানির খবরে বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বাজারে পাইকারি ও খুচরা সব ধরনের চালের দাম কমেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। তবে ডিমের দাম বাড়লেও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা।

গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০, নাজিরশাইল ৭৪, পাইজাম ৫২-৫৩ ও বিআর-২৮ ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের একজন চাল বিক্রেতা বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগের তুলনায় কেজিপ্রতি চালের দাম ৩-৬ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার খোলাবাজারে ৩০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি শুরু করার পর থেকে বাজারে চাল বিক্রি কমেছে। তাই দামও কমেছে।’

সপ্তাহের ব্যবধানে ফের বেড়েছে ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ১০ টাকা। তবে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা। এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দাম। সেই সঙ্গে অপরিবর্তিত রয়েছে বেশিরভাগ সবজির দামও। পাশাপাশি মাছের দামেও তেমন পরিবর্তন আসেনি। সবজি, মাছ, মুরগি আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ডিমের ডজন বিক্রি করছেন ১৩০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১২০ টাকা।

ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাঝে ডিমের ডজন ১৬০ টাকা হয়েছিল। সে সময় ডিমের চাহিদা কমে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাম কমে ডজন ১২০ টাকা নেমেছিল। তবে এখন আবার ডিমের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।

এদিকে ডিমের দাম বাড়লেও কমেছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর পাইকারিতে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে পাইকারিতে পেঁয়াজের কেজি ৩৫ টাকার ওপরে ছিল।

কিছুদিন আগে অস্বাভাবিক দাম বেড়ে কাঁচা মরিচের কেজি ২০০ টাকা হয়ে যায়। তবে গত সপ্তাহে দাম কমে কাঁচা মরিচের কেজি ৪০ টাকায় নেমে আসে। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দামে কোন পরিবর্তন আসেনি। গত সপ্তাহের মতো বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন। আর এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

কাঁচা মরিচের পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দাম। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর ব্রয়লার মুরগি কেজি ২০০ টাকায় উঠেছিল। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনানি মুরগির দাম। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সোনানি মুরগির কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা বিক্রি হয়।

এদিকে বাজারে নতুন সবজি হিসেবে শিম ও ফুলকপি প্রায় এক মাস ধরে পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছে না। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এই দুই সবজি। পাশাপাশি অন্যান্য সবজির দামও বেশ চড়া।

আগের মতো বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। গত সপ্তাহে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শিম এখন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। শিমের দাম কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে পাকা টমেটো, গাজর এবং বরবটির দাম। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

দামি এই সবজিগুলোর পাশাপাশি বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি।

দাম অপরিবর্তিত থাকলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিংড়ি এবং ইলিশ। চিংড়ির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।

শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৬ ভাদ্র ১৪২৯ ১৩ সফর ১৪৪৪

ওএমএসের প্রভাবে কমেছে চালের দাম, বেড়েছে ডিমের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে বাড়তে থাকা চালের দাম এবার কমতে শুরু করেছে। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের চালের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারাদেশে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রি ও ভারত থেকে আমদানির খবরে বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বাজারে পাইকারি ও খুচরা সব ধরনের চালের দাম কমেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। তবে ডিমের দাম বাড়লেও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা।

গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০, নাজিরশাইল ৭৪, পাইজাম ৫২-৫৩ ও বিআর-২৮ ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের একজন চাল বিক্রেতা বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগের তুলনায় কেজিপ্রতি চালের দাম ৩-৬ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার খোলাবাজারে ৩০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি শুরু করার পর থেকে বাজারে চাল বিক্রি কমেছে। তাই দামও কমেছে।’

সপ্তাহের ব্যবধানে ফের বেড়েছে ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ১০ টাকা। তবে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা। এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দাম। সেই সঙ্গে অপরিবর্তিত রয়েছে বেশিরভাগ সবজির দামও। পাশাপাশি মাছের দামেও তেমন পরিবর্তন আসেনি। সবজি, মাছ, মুরগি আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ডিমের ডজন বিক্রি করছেন ১৩০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১২০ টাকা।

ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাঝে ডিমের ডজন ১৬০ টাকা হয়েছিল। সে সময় ডিমের চাহিদা কমে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাম কমে ডজন ১২০ টাকা নেমেছিল। তবে এখন আবার ডিমের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।

এদিকে ডিমের দাম বাড়লেও কমেছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর পাইকারিতে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে পাইকারিতে পেঁয়াজের কেজি ৩৫ টাকার ওপরে ছিল।

কিছুদিন আগে অস্বাভাবিক দাম বেড়ে কাঁচা মরিচের কেজি ২০০ টাকা হয়ে যায়। তবে গত সপ্তাহে দাম কমে কাঁচা মরিচের কেজি ৪০ টাকায় নেমে আসে। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দামে কোন পরিবর্তন আসেনি। গত সপ্তাহের মতো বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন। আর এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

কাঁচা মরিচের পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দাম। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর ব্রয়লার মুরগি কেজি ২০০ টাকায় উঠেছিল। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনানি মুরগির দাম। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সোনানি মুরগির কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা বিক্রি হয়।

এদিকে বাজারে নতুন সবজি হিসেবে শিম ও ফুলকপি প্রায় এক মাস ধরে পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছে না। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এই দুই সবজি। পাশাপাশি অন্যান্য সবজির দামও বেশ চড়া।

আগের মতো বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। গত সপ্তাহে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শিম এখন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। শিমের দাম কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে পাকা টমেটো, গাজর এবং বরবটির দাম। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

দামি এই সবজিগুলোর পাশাপাশি বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপের কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি।

দাম অপরিবর্তিত থাকলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিংড়ি এবং ইলিশ। চিংড়ির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।