রানীর মৃত্যু, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা বলা হয়েছে

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অধ্যায় সমাপ্তি ঘটলো। রানীর মৃত্যুর খবর ছড়ালে সারাবিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোক জানাতে অনেকে ফেইসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে পোস্ট করে থাকেন। যার প্রভাবে টুইটারের পরিষেবা বিপর্যস্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। রানীর মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষেরও আগ্রহের কমতি ছিল না। তবে এ নিয়ে ফেইসবুকে পোস্টকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কেউ কেউ যেমন রানীর মৃত্যুতে বিশ্ব একজন অভিজ্ঞ অভিভাবককে হারানোর কথা বলছেন। তেমন আবার কেউ কেউ এ অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের নানা ইতিহাস তুলে বিরূপ মন্তব্যও ছুড়ে দিয়েছেন।

শফিকুল ইসলাম নাঈম নামের একজন ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কমনওয়েলথ দেশভুক্ত মানুষের রানীর আকস্মিক মৃত্যুতে কমনওয়েলথ দেশসমূহ এবং একই সঙ্গে সারা বিশ্ব একজন প্রবীন অভিজ্ঞ অভিভাবককে হারালো।’

শফিকুল ইসলাম নাঈমের মতো অনেকেই দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে আবেগঘন পোস্ট দিলেও অনেকেই ব্রিটিশদের সমালোচনা করে পোস্ট করছেন।

আলম খান নামের এক ফেইসবুক ব্যবহারকারী ব্রিটিশদের সমালোচনা করে তার পোস্টে লিখেন, ‘বিশ্বের ক্ষমতাধর নারী এবং সবচেয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা রানী এলিজাবেথের মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে লুণ্ঠনকারী, ডাকাতি, ধর্মযুদ্ধ, দাঙ্গা, লুটপাট, সম্পদ, ফসল সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে ব্রিটিশ চক্রান্তকারী সাম্রাজ্য গড়েছে রাজ পরিবার। সারা পৃথিবীতে যারা ধর্মযুদ্ধ, ভাষাযুদ্ধে লাগিয়ে ও বিশ্বযুদ্ধ লাগিয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন তেজপাতা করে দিয়েছে, সম্রাট শাহজাহানের, ভারতের ‘মূল্যবান কোহীনুর ও চুরি লুণ্ঠন করেছে ব্রিটিশরা।’

ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন আমলের একটি ছবি পোস্ট দিয়ে লামিউল ইসলাম লামি লিখেন, ‘৭৫টা বছর পেরিয়ে গেল। আমাদের অনেকেরই এখনও ব্রিটিশ দাসত্বের হ্যাংওভার কাটেনি, ফেইসবুকের টাইমলাইন দেখে মনে হচ্ছে।’

তিনি লিখেন, ‘রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মসনদে বসে যেসব রতœ, মানিক গায়ে জড়িয়েছিলেন তার সবটাই উপমহাদেশ থেকে লুট করে নেয়া। সেই রানীর মৃত্যু আমার কাছে আর দশটা সাধারণ মৃত্যুর মতোই। আহ্লাদে চোখের জল বিসর্জন দেয়ার মতো কিছুই না। তাকে সম্মান জানালে শহীদ তিতুমীর, সিরাজদৌলা, টিপু সুলতান, মাস্টার দা সুর্য সেন, খুদিরাম, হাজী শরিয়তুল্লা, সিপাহি বিদ্রোহে শহীদদের অসম্মান করা হবে। অসম্মান করা হবে ২০০ বছরের নির্মম ইতিহাসকে...’

‘অনেক সভ্যতা ধংসের সাক্ষী অনেক দেশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার সাক্ষী কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন ভেঙে দেয়ার কারিগর উপনিবেশবাদী ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে আমি শোকাহত নয় কারণ অত্যাচারী শাসকের মৃত্যুতে নিপিড়ীত শোষিত মানুষের মুখে হাসি ফুটে উঠে।’ পোস্টে যোগ করেন লামি।

আতিক রহমান তার ফেইসবুক পোস্টে বেশ সমালোচনা করেন, ‘ রানী এলিজাবেথের মৃত্যু নিয়ে কিছু লোকের পোস্ট পড়লাম। একজন মানুষ যখন লোকান্তরে যায় সে যে ধর্মের বা বর্ণেরই হোক আরআইপি বা রেস্ট ইন পিস, পরলোকে শান্তিতে থাকুক, এ কথা লেখা বা বলা সাধারণ সৌজন্যবোধের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এইসব মহান ব্যক্তিরা যে অন্য জগতে শান্তি পাবে বা তাদের শান্তি পাওয়ার অধিকার আছে এ সম্বন্ধে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে।’

তিনি আরও লিখেন, ‘সারা বিশ্বের নিরীহ শিশু, মহিলা, সাধারণ মানুষের রক্ত যাদের হাতে লেগে আছে শান্তিকামী অসহায় মানুষের চরম সংকটময় পরিস্থিতিতে ফেলা তার সঙ্গে এক বিরাট সংখ্যক আদম সন্তানদের উদ্বাস্তুতে পরিণত করার পেছনে যারা দায়ী, পাঠক ক্ষমা করবেন, তাদের কেউ জীবিত অথবা পরলোকে শান্তিতে থাকবে এই প্রার্থনা আমি করতে পারবো না। রানী এলিজাবেথের পূর্বসূরীরা তো ভারতবর্ষে যে লুটপাট, নির্যাতন চালিয়েছে, একবারও কি সে তার জন্য ক্ষমা চেয়েছে?’

আতিক তার পোস্টে আরও লিখেন, ‘সম্প্রতি ইরাক, আফগানিস্থান, লিবিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি জায়গায় ব্রিটিশ বাহিনী, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে পরিমাণ অসহায় সাধারণ মানুষ নিধন করেছে তার জন্যও কি রানী একেবারে দায়মুক্ত হতে পারবে। জানি তার ক্ষমতা নেই, কিন্তু বিবেকও কি থাকতে হয় না, দুঃখ প্রকাশও তো করতে পারত, কই কোথাও তো এরকম কিছু দেখলাম না বরং পরম নিশ্চিন্তে যুক্তরাজ্যের জনসাধারণের আয়কর আর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চাঁদা খেয়ে অলস সময় পার করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে শেষ পর্যন্ত পটোলও তুলে ফেলেছে। কথা আর বাড়াবো না, তাই এসব তথাকথিত বিখ্যাত! লোক মানবসমাজের শান্তি স্থিতিশীলতা নষ্ট করে পরজীবনে শান্তিতে থাকবে এ দোয়া বা আশা না করাই উচিত।’

হাছান শিশির মেহেদী তার পোস্টে লিখেন, ‘পাকিস্তানের ২৩ বছরের দুঃশাসন এখনও আমরা ক্ষমা করতে পারি নাই। সেখানে ব্রিটিশদের ২০০ বছরের নির্যাতন-নিপীড়ন আর শোষণের ইতিহাস কিভাবে ভুলে যাই? রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোকে মাতম বাঙালিপাড়া। বর্তমান অবস্থা জানলে তিতুমীর আর ক্ষুদিরাম বসুরা সেদিন জীবন দিতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো না। এ জাতির চেতন ফিরলো না ২০০ বছরেও এদের দাস হিসেবেই ভালো মানায়!’

নাছিম উস-সাবাহ সিয়াম তার পোস্টে লিখেন, ‘রানী ২য় এলিজাবেথের মৃত্যু সংবাদে অনেক বাঙালির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, হওয়াটাও স্বাভাবিক। আপনার রক্তে যদি দাসত্ব থাকে, আপনি যদি ন্যূনতম ইতিহাস না জানেন মানে আপনি একজন মূর্খ হন, আপনি যদি নিজেরে দাস হিসেবে ভাবতেই আরাম পান মানে সত্যি বলতে আপনি যদি একজন প্রতিষ্ঠিত লিখিত সর্বজননিন্দিত বোকা হন তাইলে আপনার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হবেই। এই দেশের মতো এত বেশি বোকা বিলিভ মি আপনি পৃথিবীর কোথাও পাবেন না।’

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের একটি ছবি পোস্ট করে মাহতাব হোসাইন নামের একজন লিখেন, ‘জ্ঞানী মানুষকে সম্মান দেখানো বা স্মরণ করার রীতি আমাদের সমাজ থেকে বিদায় হতে চলেছে। একই দিনে দুজন ব্যক্তির মৃত্যু। একজন হলেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য গবেষক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক আমলা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ এবং শিক্ষকসহ বহুবিধ পদে অধিষ্ঠিত ড. আকবর আলি খান ও অপরজন হলেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। আমরা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করছি অথচ ড. আকবর আলি খানের মৃত্যুর খবর আমাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে। যে ব্রিটিশরা আমাদের পূর্ব-পুরুষদের শোষণ করে গেছে তাদের এখনও আমরা সম্মান ও স্মরণ করে যাচ্ছি অথচ দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষের আমরা কোন খবরও রাখি না।

শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৬ ভাদ্র ১৪২৯ ১৩ সফর ১৪৪৪

রানীর মৃত্যু, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা বলা হয়েছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অধ্যায় সমাপ্তি ঘটলো। রানীর মৃত্যুর খবর ছড়ালে সারাবিশ্বে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোক জানাতে অনেকে ফেইসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে পোস্ট করে থাকেন। যার প্রভাবে টুইটারের পরিষেবা বিপর্যস্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। রানীর মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষেরও আগ্রহের কমতি ছিল না। তবে এ নিয়ে ফেইসবুকে পোস্টকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কেউ কেউ যেমন রানীর মৃত্যুতে বিশ্ব একজন অভিজ্ঞ অভিভাবককে হারানোর কথা বলছেন। তেমন আবার কেউ কেউ এ অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের নানা ইতিহাস তুলে বিরূপ মন্তব্যও ছুড়ে দিয়েছেন।

শফিকুল ইসলাম নাঈম নামের একজন ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কমনওয়েলথ দেশভুক্ত মানুষের রানীর আকস্মিক মৃত্যুতে কমনওয়েলথ দেশসমূহ এবং একই সঙ্গে সারা বিশ্ব একজন প্রবীন অভিজ্ঞ অভিভাবককে হারালো।’

শফিকুল ইসলাম নাঈমের মতো অনেকেই দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে আবেগঘন পোস্ট দিলেও অনেকেই ব্রিটিশদের সমালোচনা করে পোস্ট করছেন।

আলম খান নামের এক ফেইসবুক ব্যবহারকারী ব্রিটিশদের সমালোচনা করে তার পোস্টে লিখেন, ‘বিশ্বের ক্ষমতাধর নারী এবং সবচেয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা রানী এলিজাবেথের মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে লুণ্ঠনকারী, ডাকাতি, ধর্মযুদ্ধ, দাঙ্গা, লুটপাট, সম্পদ, ফসল সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে ব্রিটিশ চক্রান্তকারী সাম্রাজ্য গড়েছে রাজ পরিবার। সারা পৃথিবীতে যারা ধর্মযুদ্ধ, ভাষাযুদ্ধে লাগিয়ে ও বিশ্বযুদ্ধ লাগিয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন তেজপাতা করে দিয়েছে, সম্রাট শাহজাহানের, ভারতের ‘মূল্যবান কোহীনুর ও চুরি লুণ্ঠন করেছে ব্রিটিশরা।’

ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন আমলের একটি ছবি পোস্ট দিয়ে লামিউল ইসলাম লামি লিখেন, ‘৭৫টা বছর পেরিয়ে গেল। আমাদের অনেকেরই এখনও ব্রিটিশ দাসত্বের হ্যাংওভার কাটেনি, ফেইসবুকের টাইমলাইন দেখে মনে হচ্ছে।’

তিনি লিখেন, ‘রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মসনদে বসে যেসব রতœ, মানিক গায়ে জড়িয়েছিলেন তার সবটাই উপমহাদেশ থেকে লুট করে নেয়া। সেই রানীর মৃত্যু আমার কাছে আর দশটা সাধারণ মৃত্যুর মতোই। আহ্লাদে চোখের জল বিসর্জন দেয়ার মতো কিছুই না। তাকে সম্মান জানালে শহীদ তিতুমীর, সিরাজদৌলা, টিপু সুলতান, মাস্টার দা সুর্য সেন, খুদিরাম, হাজী শরিয়তুল্লা, সিপাহি বিদ্রোহে শহীদদের অসম্মান করা হবে। অসম্মান করা হবে ২০০ বছরের নির্মম ইতিহাসকে...’

‘অনেক সভ্যতা ধংসের সাক্ষী অনেক দেশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার সাক্ষী কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন ভেঙে দেয়ার কারিগর উপনিবেশবাদী ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে আমি শোকাহত নয় কারণ অত্যাচারী শাসকের মৃত্যুতে নিপিড়ীত শোষিত মানুষের মুখে হাসি ফুটে উঠে।’ পোস্টে যোগ করেন লামি।

আতিক রহমান তার ফেইসবুক পোস্টে বেশ সমালোচনা করেন, ‘ রানী এলিজাবেথের মৃত্যু নিয়ে কিছু লোকের পোস্ট পড়লাম। একজন মানুষ যখন লোকান্তরে যায় সে যে ধর্মের বা বর্ণেরই হোক আরআইপি বা রেস্ট ইন পিস, পরলোকে শান্তিতে থাকুক, এ কথা লেখা বা বলা সাধারণ সৌজন্যবোধের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এইসব মহান ব্যক্তিরা যে অন্য জগতে শান্তি পাবে বা তাদের শান্তি পাওয়ার অধিকার আছে এ সম্বন্ধে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে।’

তিনি আরও লিখেন, ‘সারা বিশ্বের নিরীহ শিশু, মহিলা, সাধারণ মানুষের রক্ত যাদের হাতে লেগে আছে শান্তিকামী অসহায় মানুষের চরম সংকটময় পরিস্থিতিতে ফেলা তার সঙ্গে এক বিরাট সংখ্যক আদম সন্তানদের উদ্বাস্তুতে পরিণত করার পেছনে যারা দায়ী, পাঠক ক্ষমা করবেন, তাদের কেউ জীবিত অথবা পরলোকে শান্তিতে থাকবে এই প্রার্থনা আমি করতে পারবো না। রানী এলিজাবেথের পূর্বসূরীরা তো ভারতবর্ষে যে লুটপাট, নির্যাতন চালিয়েছে, একবারও কি সে তার জন্য ক্ষমা চেয়েছে?’

আতিক তার পোস্টে আরও লিখেন, ‘সম্প্রতি ইরাক, আফগানিস্থান, লিবিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি জায়গায় ব্রিটিশ বাহিনী, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে পরিমাণ অসহায় সাধারণ মানুষ নিধন করেছে তার জন্যও কি রানী একেবারে দায়মুক্ত হতে পারবে। জানি তার ক্ষমতা নেই, কিন্তু বিবেকও কি থাকতে হয় না, দুঃখ প্রকাশও তো করতে পারত, কই কোথাও তো এরকম কিছু দেখলাম না বরং পরম নিশ্চিন্তে যুক্তরাজ্যের জনসাধারণের আয়কর আর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চাঁদা খেয়ে অলস সময় পার করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে শেষ পর্যন্ত পটোলও তুলে ফেলেছে। কথা আর বাড়াবো না, তাই এসব তথাকথিত বিখ্যাত! লোক মানবসমাজের শান্তি স্থিতিশীলতা নষ্ট করে পরজীবনে শান্তিতে থাকবে এ দোয়া বা আশা না করাই উচিত।’

হাছান শিশির মেহেদী তার পোস্টে লিখেন, ‘পাকিস্তানের ২৩ বছরের দুঃশাসন এখনও আমরা ক্ষমা করতে পারি নাই। সেখানে ব্রিটিশদের ২০০ বছরের নির্যাতন-নিপীড়ন আর শোষণের ইতিহাস কিভাবে ভুলে যাই? রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোকে মাতম বাঙালিপাড়া। বর্তমান অবস্থা জানলে তিতুমীর আর ক্ষুদিরাম বসুরা সেদিন জীবন দিতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো না। এ জাতির চেতন ফিরলো না ২০০ বছরেও এদের দাস হিসেবেই ভালো মানায়!’

নাছিম উস-সাবাহ সিয়াম তার পোস্টে লিখেন, ‘রানী ২য় এলিজাবেথের মৃত্যু সংবাদে অনেক বাঙালির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, হওয়াটাও স্বাভাবিক। আপনার রক্তে যদি দাসত্ব থাকে, আপনি যদি ন্যূনতম ইতিহাস না জানেন মানে আপনি একজন মূর্খ হন, আপনি যদি নিজেরে দাস হিসেবে ভাবতেই আরাম পান মানে সত্যি বলতে আপনি যদি একজন প্রতিষ্ঠিত লিখিত সর্বজননিন্দিত বোকা হন তাইলে আপনার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হবেই। এই দেশের মতো এত বেশি বোকা বিলিভ মি আপনি পৃথিবীর কোথাও পাবেন না।’

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের একটি ছবি পোস্ট করে মাহতাব হোসাইন নামের একজন লিখেন, ‘জ্ঞানী মানুষকে সম্মান দেখানো বা স্মরণ করার রীতি আমাদের সমাজ থেকে বিদায় হতে চলেছে। একই দিনে দুজন ব্যক্তির মৃত্যু। একজন হলেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য গবেষক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক আমলা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ এবং শিক্ষকসহ বহুবিধ পদে অধিষ্ঠিত ড. আকবর আলি খান ও অপরজন হলেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। আমরা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করছি অথচ ড. আকবর আলি খানের মৃত্যুর খবর আমাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে। যে ব্রিটিশরা আমাদের পূর্ব-পুরুষদের শোষণ করে গেছে তাদের এখনও আমরা সম্মান ও স্মরণ করে যাচ্ছি অথচ দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষের আমরা কোন খবরও রাখি না।