রানী এলিজাবেথের ঢাকা সফরের স্মৃতি

সিংহাসনে অভিষিক্ত হওয়ার আট বছরের মাথায় প্রথমবার এসেছিলেন তিনি ঢাকায়। ৭০ বছর যুক্তরাজ্য শাসনের সময়কালে আরও একবার রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দেখা মিলেছিল।

দু’দফার সফরেই একসময় ব্রিটিশ শাসনে থাকা বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন দেখতে গিয়েছিলেন তিনি; করেছেন নৌ ও ট্রেন ভ্রমণ।

রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ করা হয় রানিকে। শহরের বাইরের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে উচ্ছাসও প্রকাশ করেন রানী এলিজাবেথ। উভয় সফরেই সঙ্গে ছিলেন তার জীবনসঙ্গী প্রিন্স ফিলিপ।

সবশেষ ১৯৮৩ সালে তার ঢাকা সফরের সময়ে গাজীপুরের শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রাম পরিদর্শনের কথাই বেশি আলোচনায় আসে।

সেখানে তিনি গ্রামীণ নারীদের সঙ্গে সময় কাটান। নারীরা কিভাবে মুড়ি ভাজে সেটি তাকে দেখান।

স্বনির্ভর একটি গ্রাম হিসেবে রানীর কাছে তুলে ধরা হয় বৈরাগীচালাকে। তার আগমন উপলক্ষে ওই গ্রামকে মডেল গ্রামে রূপান্তর করা হয়।

সেই রূপান্তরে ওই সময় সরকার পাঁচ লাখ ডলার খরচ করেছিল বলে ওই সময় এক খবরে জানায় মার্কিন সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল।

নভেম্বর মাসের সেই সফরকালে ঢাকায় উষ্ণ অর্ভ্যথনার পর ট্রেনে চড়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে যান তিনি। স্টেশনে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেখান থেকে গাড়িতে করে তাকে বেশ কিছু দূরের বৈরাগীচালা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।

ব্রিটিশ রানীর ঢাকার স্মৃতি

ওই গ্রামে বেশ কিছুটা সময় তিনি কাটান। স্বনির্ভর একটি গ্রামে মাছ চাষের মাধ্যমে বাসিন্দাদের পুষ্টি পূরণের কথা জানানো হয় তাকে। তার সামনে পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরে দেখান জেলেরা। ওই সময় রানী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সামনে দেখানো হয় গ্রামীণ নারীদের হস্তশিল্প। তুলে ধরা হয় গ্রামের সংস্কৃতি।

দুই দফায় রানীর ঢাকা সফরকালে তৎকালীন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন দুই সামরিক শাসক।

প্রথম সফরের ২২ বছরের মাথায় ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে যখন দ্বিতীয় দফায় রানী স্বাধীন বাংলাদেশের ঢাকায় আসেন তখনও রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন সামরিক শাসক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

সেবার ঢাকায় ব্রিটিশ সহায়তা সংস্থা সেইভ দ্য চিলড্রেনের কার্যক্রমও পরিদর্শন করেছিলেন রানী।

রানীর সম্মানে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ডাকটিকেট প্রকাশ করা হয়। সফর শেষ করে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধনের জন্য দিল্লিতে যান তিনি।

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের রজতজয়ন্তীতে কয়েকটি স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ।

এর আগে পশ্চিম পাকিস্তান ঘুরে প্রথমবার ১৯৬১ সালে যখন রানী পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় আসেন তখন তার রাজ সিংহাসনের আরোহণের আট বছর পেরিয়েছে।

এর মাত্র ১৪ বছর আগে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান, তখন রাজা ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ। তার মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে যুক্তরাজ্যের রানী হন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

পাকিস্তান আমলে ওই সফরে ঢাকার বাইরে আদমজী জুট মিলে এবং বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রাম সফরে যান রানী।

পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে ঢাকা আসার পর রানীর সম্মানে আতশবাজি পোড়ানোর বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়।

এ শতকের শুরুর দিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিল রানীর সফরের সময় ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল। কীভাবে এ জুট মিলে চট উৎপাদন হয়, সেটা দেখার আগ্রহ ছিল রানীর।

ব্রিটিশ রানীর ঢাকার স্মৃতি

মেরি অ্যান্ডারসন লঞ্চে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌবিহারে বের হন রানী ও তার সফরসঙ্গীরা। ওই লঞ্চের দুদিকে শত শত সুসজ্জিত নৌকায় দাঁড়িয়ে মানুষজন রানীকে অভ্যর্থনা জানায়। তাতে তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত হন।

ওই সফরে চট্টগ্রামে গিয়েও বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেখানে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

সেই অনুষ্ঠানে রানী বলেন, ‘চট্টগ্রামে আসার পর থেকে আপনাদের আতিথ্য আমার স্বামী ও আমার হৃদয় ছুঁয়েছে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন গত অক্টোবর মাসে বয়ে যাওয়া দুর্যোগের (ঘূর্ণিঝড়) ক্ষত এখনও রয়েছে আপনাদের মনে।

‘সরকারি ও বেসরকারি খাতের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য যা কিছু করতে পেরেছি, তাতে আমি আনন্দিত।’

শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৬ ভাদ্র ১৪২৯ ১৩ সফর ১৪৪৪

রানী এলিজাবেথের ঢাকা সফরের স্মৃতি

সংবাদ ডেস্ক

সিংহাসনে অভিষিক্ত হওয়ার আট বছরের মাথায় প্রথমবার এসেছিলেন তিনি ঢাকায়। ৭০ বছর যুক্তরাজ্য শাসনের সময়কালে আরও একবার রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দেখা মিলেছিল।

দু’দফার সফরেই একসময় ব্রিটিশ শাসনে থাকা বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন দেখতে গিয়েছিলেন তিনি; করেছেন নৌ ও ট্রেন ভ্রমণ।

রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ করা হয় রানিকে। শহরের বাইরের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে উচ্ছাসও প্রকাশ করেন রানী এলিজাবেথ। উভয় সফরেই সঙ্গে ছিলেন তার জীবনসঙ্গী প্রিন্স ফিলিপ।

সবশেষ ১৯৮৩ সালে তার ঢাকা সফরের সময়ে গাজীপুরের শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রাম পরিদর্শনের কথাই বেশি আলোচনায় আসে।

সেখানে তিনি গ্রামীণ নারীদের সঙ্গে সময় কাটান। নারীরা কিভাবে মুড়ি ভাজে সেটি তাকে দেখান।

স্বনির্ভর একটি গ্রাম হিসেবে রানীর কাছে তুলে ধরা হয় বৈরাগীচালাকে। তার আগমন উপলক্ষে ওই গ্রামকে মডেল গ্রামে রূপান্তর করা হয়।

সেই রূপান্তরে ওই সময় সরকার পাঁচ লাখ ডলার খরচ করেছিল বলে ওই সময় এক খবরে জানায় মার্কিন সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল।

নভেম্বর মাসের সেই সফরকালে ঢাকায় উষ্ণ অর্ভ্যথনার পর ট্রেনে চড়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে যান তিনি। স্টেশনে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেখান থেকে গাড়িতে করে তাকে বেশ কিছু দূরের বৈরাগীচালা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।

ব্রিটিশ রানীর ঢাকার স্মৃতি

ওই গ্রামে বেশ কিছুটা সময় তিনি কাটান। স্বনির্ভর একটি গ্রামে মাছ চাষের মাধ্যমে বাসিন্দাদের পুষ্টি পূরণের কথা জানানো হয় তাকে। তার সামনে পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরে দেখান জেলেরা। ওই সময় রানী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সামনে দেখানো হয় গ্রামীণ নারীদের হস্তশিল্প। তুলে ধরা হয় গ্রামের সংস্কৃতি।

দুই দফায় রানীর ঢাকা সফরকালে তৎকালীন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন দুই সামরিক শাসক।

প্রথম সফরের ২২ বছরের মাথায় ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে যখন দ্বিতীয় দফায় রানী স্বাধীন বাংলাদেশের ঢাকায় আসেন তখনও রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন সামরিক শাসক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

সেবার ঢাকায় ব্রিটিশ সহায়তা সংস্থা সেইভ দ্য চিলড্রেনের কার্যক্রমও পরিদর্শন করেছিলেন রানী।

রানীর সম্মানে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ডাকটিকেট প্রকাশ করা হয়। সফর শেষ করে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধনের জন্য দিল্লিতে যান তিনি।

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের রজতজয়ন্তীতে কয়েকটি স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ।

এর আগে পশ্চিম পাকিস্তান ঘুরে প্রথমবার ১৯৬১ সালে যখন রানী পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় আসেন তখন তার রাজ সিংহাসনের আরোহণের আট বছর পেরিয়েছে।

এর মাত্র ১৪ বছর আগে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান, তখন রাজা ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ। তার মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে যুক্তরাজ্যের রানী হন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

পাকিস্তান আমলে ওই সফরে ঢাকার বাইরে আদমজী জুট মিলে এবং বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রাম সফরে যান রানী।

পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে ঢাকা আসার পর রানীর সম্মানে আতশবাজি পোড়ানোর বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়।

এ শতকের শুরুর দিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিল রানীর সফরের সময় ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল। কীভাবে এ জুট মিলে চট উৎপাদন হয়, সেটা দেখার আগ্রহ ছিল রানীর।

ব্রিটিশ রানীর ঢাকার স্মৃতি

মেরি অ্যান্ডারসন লঞ্চে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌবিহারে বের হন রানী ও তার সফরসঙ্গীরা। ওই লঞ্চের দুদিকে শত শত সুসজ্জিত নৌকায় দাঁড়িয়ে মানুষজন রানীকে অভ্যর্থনা জানায়। তাতে তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত হন।

ওই সফরে চট্টগ্রামে গিয়েও বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেখানে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

সেই অনুষ্ঠানে রানী বলেন, ‘চট্টগ্রামে আসার পর থেকে আপনাদের আতিথ্য আমার স্বামী ও আমার হৃদয় ছুঁয়েছে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন গত অক্টোবর মাসে বয়ে যাওয়া দুর্যোগের (ঘূর্ণিঝড়) ক্ষত এখনও রয়েছে আপনাদের মনে।

‘সরকারি ও বেসরকারি খাতের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য যা কিছু করতে পেরেছি, তাতে আমি আনন্দিত।’