রংপুরে সংঘর্ষ : ৫ বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেড় হাজার অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে মামলা

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা সদরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলি, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জের ঘটনায় থানার ওসি দুলাল হোসেনসহ ২২ পুলিশ ও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল বিকেলে পুলিশ বাদী হয়ে ৫০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দেড় হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করেছেন। গঙ্গাচড়া থানার ওসি (তদন্ত) মমতাজুল হক মামলা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৭ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করলেও ৪ জনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়া হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। তারা হলেন বিএনপি নেতা মাহবুব আসিফ, যুবদল নেতা সিদ্দিদ, অয়ন ও নয়ন।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, মামলায় আসামি করা হয়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবু, সাধারণ সম্পাদক আখিরুজ্জামান মিলন সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন লিজুসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের উপজেলার শীর্ষ নেতারা রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপি গঙ্গাচড়া উপজেলা সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবু অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়ে গুলি ছুড়েছে, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ করে শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। উল্টো মামলা করার আগেই দলের শতাধিক নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করেছে। পুলিশ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচণ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, গঙ্গাচড়ায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করেছেন।

এদিকে পুলিশের এ সার্কেলের এএসপি হোসেন রায়হান জানান, বিএনপি নিজেরাই গুজব ছড়িয়ে তাদের ওপর পুলিশ হামলা করে তাদের কয়েক নেতাকে আটক করার চেষ্টা করছে। এসব কথা বলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে ওসি দুলাল হোসেনসহ ২২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি জানান, গঙ্গাচড়া থানার ওসি গুরুতর আহত অবস্থায় গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখনও চিকিৎসাধীন আছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে গঙ্গাচড়া থানার ওসি এবং ওসি (তদন্ত) মমতাজুল হক জানান, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা করে গুরতর আহত করা সরকারি কাজে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি জানান, ঘটনার সময় যারা অঘটন ঘটিয়েছে ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ভোলা ও নারায়ণগঞ্জ বিভিন্ন পুলিশের পুলিশের গুলিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের পুরাতন সোনালী ব্যাংকের মোড় হয়ে বাজার অতিক্রম করে টাকোয়া মসজিদের সামনে সড়কে সমাবেশ করে। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ সমাবেশে বাধা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ সময় পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এতে ২২ পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিক দৈনিক সংবাদ প্রতিনিধি সুজন আহাম্মেদ, মানবজমিন প্রতিনিধি আবদুল বারী স্বপনসহ ৪ সাংবাদিক ও অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়।

শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৬ ভাদ্র ১৪২৯ ১৩ সফর ১৪৪৪

রংপুরে সংঘর্ষ : ৫ বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেড় হাজার অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা সদরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলি, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জের ঘটনায় থানার ওসি দুলাল হোসেনসহ ২২ পুলিশ ও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল বিকেলে পুলিশ বাদী হয়ে ৫০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দেড় হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করেছেন। গঙ্গাচড়া থানার ওসি (তদন্ত) মমতাজুল হক মামলা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৭ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করলেও ৪ জনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়া হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। তারা হলেন বিএনপি নেতা মাহবুব আসিফ, যুবদল নেতা সিদ্দিদ, অয়ন ও নয়ন।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, মামলায় আসামি করা হয়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবু, সাধারণ সম্পাদক আখিরুজ্জামান মিলন সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন লিজুসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের উপজেলার শীর্ষ নেতারা রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপি গঙ্গাচড়া উপজেলা সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবু অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়ে গুলি ছুড়েছে, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ করে শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। উল্টো মামলা করার আগেই দলের শতাধিক নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করেছে। পুলিশ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচণ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, গঙ্গাচড়ায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করেছেন।

এদিকে পুলিশের এ সার্কেলের এএসপি হোসেন রায়হান জানান, বিএনপি নিজেরাই গুজব ছড়িয়ে তাদের ওপর পুলিশ হামলা করে তাদের কয়েক নেতাকে আটক করার চেষ্টা করছে। এসব কথা বলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে ওসি দুলাল হোসেনসহ ২২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি জানান, গঙ্গাচড়া থানার ওসি গুরুতর আহত অবস্থায় গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখনও চিকিৎসাধীন আছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে গঙ্গাচড়া থানার ওসি এবং ওসি (তদন্ত) মমতাজুল হক জানান, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা করে গুরতর আহত করা সরকারি কাজে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি জানান, ঘটনার সময় যারা অঘটন ঘটিয়েছে ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ভোলা ও নারায়ণগঞ্জ বিভিন্ন পুলিশের পুলিশের গুলিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের পুরাতন সোনালী ব্যাংকের মোড় হয়ে বাজার অতিক্রম করে টাকোয়া মসজিদের সামনে সড়কে সমাবেশ করে। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ সমাবেশে বাধা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ সময় পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এতে ২২ পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিক দৈনিক সংবাদ প্রতিনিধি সুজন আহাম্মেদ, মানবজমিন প্রতিনিধি আবদুল বারী স্বপনসহ ৪ সাংবাদিক ও অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়।