ডোমারে ৫ পদে অর্ধকোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

নীলফামারীর ডোমারে সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫টি কর্মচারী পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই বিদ্যালয়ের সভাপতি ফিরোজ চৌধুরী ও প্রধান শিক্ষক রমনী কান্ত রায়ের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উক্ত বিদ্যালয়ের ৫ জন চাকরি প্রার্থী।

যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাকেরিনা বেগমের কাছে। তবে অভিযোগ দিলেও গত বৃহস্পতিবার রাতেই ডিমলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ৫টি পদে নিয়োগ সম্পন্ন করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও সরকারি নির্দেশনা রয়েছে বিদ্যুত সাশ্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

এদিকে কমিটির সভাপতিকে টাকা দিয়েও চাকরি না হওয়ায় উক্ত বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বদরুল আলমের মেয়ে লুৎফন নাহার বন্নী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ পাঁচজন কর্মচারী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গোপনে টাকা নিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। পরিচালনা কমিটি পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থনে লোক দেখানো প্রতিযোগিতার জন্য নিজ নিজ ডামি পরিক্ষার্থী ঠিক করে।

৮ সেপ্টেম্বর বিকালে পাশর্^বর্তী ডিমলা উপজেলায় সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার তারিখ ও সময় নির্ধারণ করেন। নিয়োগ কমিটি তাদের পছন্দের প্রার্থী ছাড়া অন্যেদের পরীক্ষার কথাও জানাননি। তাই তারা নিয়োগ পরীক্ষাটি বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন জানানো পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বলেন। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলার পরও উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার ৫ চাকরি প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়টি উপেক্ষা করেই সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নিয়েই পরীক্ষা নিতে তৎপর হয়ে পরেন। এবং সন্ধ্যার পর পরীক্ষা নেয়া শুরু করেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফল শুনে আয়া পদের লুৎফুন নাহার বন্নী নামে এক পরিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে স্বজনরা দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। লুৎফুন নাহারের পরিবারের দাবি টাকা দিয়েও চাকরি না হওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

পরীক্ষা বন্ধের আবেদন জানানো প্রার্থীরা হলেন,ফজলে রাব্বী,সাহিনা আক্তার বানু, মো. শাহ আলম চৌধুরী, মো. যুবায়ের ইসলাম ও সাহেব আলী।

সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমণী কান্ত রায় জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রেক্ষিতে অফিস সহকারী পদে ২২ জন, কম্পিউটার অপারেটর পদে ৯ জন, অফিস সহায়ক পদে ৬ জন, আয়া পদে ১৩ জন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৯ জন চাকরি আবেদন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। টাকা নিয়ে নিয়োগের বিষয়টি তিনি ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাকেরিনা বেগম জানান, অভিযোগকারীরা নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে অভিযোগ করেন। তাই এই মুহূর্তে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে তাদের অভিযোগটি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম ফিরোজ চৌধুরী বলেন, নিয়ম মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে চাপে রাখতে কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রমিজ আলম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৭ ভাদ্র ১৪২৯ ১৪ সফর ১৪৪৪

ডোমারে ৫ পদে অর্ধকোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

প্রতিনিধি, ডোমার (নীলফামারী)

নীলফামারীর ডোমারে সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫টি কর্মচারী পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই বিদ্যালয়ের সভাপতি ফিরোজ চৌধুরী ও প্রধান শিক্ষক রমনী কান্ত রায়ের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উক্ত বিদ্যালয়ের ৫ জন চাকরি প্রার্থী।

যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাকেরিনা বেগমের কাছে। তবে অভিযোগ দিলেও গত বৃহস্পতিবার রাতেই ডিমলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ৫টি পদে নিয়োগ সম্পন্ন করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও সরকারি নির্দেশনা রয়েছে বিদ্যুত সাশ্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

এদিকে কমিটির সভাপতিকে টাকা দিয়েও চাকরি না হওয়ায় উক্ত বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বদরুল আলমের মেয়ে লুৎফন নাহার বন্নী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ পাঁচজন কর্মচারী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গোপনে টাকা নিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। পরিচালনা কমিটি পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থনে লোক দেখানো প্রতিযোগিতার জন্য নিজ নিজ ডামি পরিক্ষার্থী ঠিক করে।

৮ সেপ্টেম্বর বিকালে পাশর্^বর্তী ডিমলা উপজেলায় সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার তারিখ ও সময় নির্ধারণ করেন। নিয়োগ কমিটি তাদের পছন্দের প্রার্থী ছাড়া অন্যেদের পরীক্ষার কথাও জানাননি। তাই তারা নিয়োগ পরীক্ষাটি বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন জানানো পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বলেন। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলার পরও উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার ৫ চাকরি প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়টি উপেক্ষা করেই সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নিয়েই পরীক্ষা নিতে তৎপর হয়ে পরেন। এবং সন্ধ্যার পর পরীক্ষা নেয়া শুরু করেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফল শুনে আয়া পদের লুৎফুন নাহার বন্নী নামে এক পরিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে স্বজনরা দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। লুৎফুন নাহারের পরিবারের দাবি টাকা দিয়েও চাকরি না হওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

পরীক্ষা বন্ধের আবেদন জানানো প্রার্থীরা হলেন,ফজলে রাব্বী,সাহিনা আক্তার বানু, মো. শাহ আলম চৌধুরী, মো. যুবায়ের ইসলাম ও সাহেব আলী।

সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমণী কান্ত রায় জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রেক্ষিতে অফিস সহকারী পদে ২২ জন, কম্পিউটার অপারেটর পদে ৯ জন, অফিস সহায়ক পদে ৬ জন, আয়া পদে ১৩ জন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৯ জন চাকরি আবেদন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। টাকা নিয়ে নিয়োগের বিষয়টি তিনি ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাকেরিনা বেগম জানান, অভিযোগকারীরা নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে অভিযোগ করেন। তাই এই মুহূর্তে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে তাদের অভিযোগটি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম ফিরোজ চৌধুরী বলেন, নিয়ম মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে চাপে রাখতে কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রমিজ আলম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।