রংপুরে সার সংকট, কৃষকদের মহাসড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ

ইউরিয়া সারের দাবিতে রংপুরের পীরগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শত শত কৃষক। গতকাল সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ চলাকালে রংপুর ঢাকা মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকাপড়ে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায়ের নেতৃত্বে কর্মকর্তারা সার সরবরাহের আশ্বাস দিলে কৃষকেরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। পীরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ জানায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় স্থানীয় কয়েকশ’ কৃষক ইউরিয়া সার না পেয়ে সার সরবরাহের দাবিতে উপজেলা পরিষদের সামনে রামনাথপুর ইউনিয়নের ঘোলা বোটের ঘর নামক স্থানে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন এলাকার শত শত সাধারণ মানুষ। এ সময় সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনে অংশ নেয়া কৃষক আশরাফ আলী, সাদেক হোসেন, রবিউল ইসলামসহ অনেক কৃষকের অভিযোগ, গত ১০ দিন ধরে খুচরা দোকান ও ডিলারের কাছে ধরনা দিয়েও এক কেজি ইউরিয়া সার জোগাড় করতে পারছেন না তারা। পীরগঞ্জে হাট-বাজার আর ডিলারের কাছে ধরনা দিয়েও সার মিলছে না। এক বস্তা সার দেড় হাজার টাকা থেকে ১৮০০ টাকা দিয়েও ইউরিয়া সার পাওয়া যাচ্ছে না। তারা জানান, এমনিতেই ভয়াবহ খরার কারণে আমন ধানের চাষ ২০ থেকে ২৫ দিন পিছিয়েছে। তারপরও ডিজেচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে জমি তৈরি করে চারা রোপণ করে জমিতে আমন ধান আবাদ করা হচ্ছে। এখন জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সার না দিয়ে চারা পুষ্ট হবে না, ধানের ফলনও ভালো হবে না। সার না পেয়ে বাধ্য হয়ে তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। খবর পেয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী ও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সার সরবরারে আশ্বাস দিলেও কৃষকরা অবরোধ তুলে নিতে অস্বীকার করে। খবর পেয়ে রংপুর থেকে জেলা আসিব আহসানসহ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে দুই ঘণ্টার মধ্যে কৃষকদের সার সরবরাহের আশ্বাস দিলে কৃষকেরা অবরোধ তুলে নেন। পরে দুপুরে রংপুর থেকে ৫০০ টন ইউরিয়া সার নিয়ে দুটি ট্রাক পীরগঞ্জে আনা হয়, এরপর ৫টি স্থানে কৃষকদের মাঝে সার বিক্রি শুরু হয়।

এ ব্যাপারে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান সাংবাদিকদের জানান, ইউরিয়া সারসহ কোন সারের সংকট নেই। আমরা কৃষকদের জরুরি ভিত্তিতে সার দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। সার সরবরাহ শুরু হয়েছে তিনি নিজেও তদারকি করছেন।

এদিকে পীরগঞ্জ ছাড়াও পুরো জেলায় ইউরিয়া, পটাশ, এমওপি সারের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সার ডিলাররা অভিযোগ করেছেন, প্রয়োজনের তুলনায় তারা বরাদ্দ পাচ্ছেন কম, ফলে প্রয়োজন মতো সারের সরবরাহ দেয়া যাচ্ছে না। বরাদ্দ বাড়ালে সমস্যা থাকবে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, রংপুর জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ১ লাখ ৬৬ হ্জাার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধান চাষ হচ্ছে। তবে সারের এ কটু সংকট থাকলেও এক শ্রেণীর মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৭ ভাদ্র ১৪২৯ ১৪ সফর ১৪৪৪

রংপুরে সার সংকট, কৃষকদের মহাসড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

image

ইউরিয়া সারের দাবিতে রংপুরের পীরগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শত শত কৃষক। গতকাল সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ চলাকালে রংপুর ঢাকা মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকাপড়ে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায়ের নেতৃত্বে কর্মকর্তারা সার সরবরাহের আশ্বাস দিলে কৃষকেরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। পীরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ জানায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় স্থানীয় কয়েকশ’ কৃষক ইউরিয়া সার না পেয়ে সার সরবরাহের দাবিতে উপজেলা পরিষদের সামনে রামনাথপুর ইউনিয়নের ঘোলা বোটের ঘর নামক স্থানে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন এলাকার শত শত সাধারণ মানুষ। এ সময় সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনে অংশ নেয়া কৃষক আশরাফ আলী, সাদেক হোসেন, রবিউল ইসলামসহ অনেক কৃষকের অভিযোগ, গত ১০ দিন ধরে খুচরা দোকান ও ডিলারের কাছে ধরনা দিয়েও এক কেজি ইউরিয়া সার জোগাড় করতে পারছেন না তারা। পীরগঞ্জে হাট-বাজার আর ডিলারের কাছে ধরনা দিয়েও সার মিলছে না। এক বস্তা সার দেড় হাজার টাকা থেকে ১৮০০ টাকা দিয়েও ইউরিয়া সার পাওয়া যাচ্ছে না। তারা জানান, এমনিতেই ভয়াবহ খরার কারণে আমন ধানের চাষ ২০ থেকে ২৫ দিন পিছিয়েছে। তারপরও ডিজেচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে জমি তৈরি করে চারা রোপণ করে জমিতে আমন ধান আবাদ করা হচ্ছে। এখন জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সার না দিয়ে চারা পুষ্ট হবে না, ধানের ফলনও ভালো হবে না। সার না পেয়ে বাধ্য হয়ে তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। খবর পেয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী ও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সার সরবরারে আশ্বাস দিলেও কৃষকরা অবরোধ তুলে নিতে অস্বীকার করে। খবর পেয়ে রংপুর থেকে জেলা আসিব আহসানসহ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে দুই ঘণ্টার মধ্যে কৃষকদের সার সরবরাহের আশ্বাস দিলে কৃষকেরা অবরোধ তুলে নেন। পরে দুপুরে রংপুর থেকে ৫০০ টন ইউরিয়া সার নিয়ে দুটি ট্রাক পীরগঞ্জে আনা হয়, এরপর ৫টি স্থানে কৃষকদের মাঝে সার বিক্রি শুরু হয়।

এ ব্যাপারে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান সাংবাদিকদের জানান, ইউরিয়া সারসহ কোন সারের সংকট নেই। আমরা কৃষকদের জরুরি ভিত্তিতে সার দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। সার সরবরাহ শুরু হয়েছে তিনি নিজেও তদারকি করছেন।

এদিকে পীরগঞ্জ ছাড়াও পুরো জেলায় ইউরিয়া, পটাশ, এমওপি সারের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সার ডিলাররা অভিযোগ করেছেন, প্রয়োজনের তুলনায় তারা বরাদ্দ পাচ্ছেন কম, ফলে প্রয়োজন মতো সারের সরবরাহ দেয়া যাচ্ছে না। বরাদ্দ বাড়ালে সমস্যা থাকবে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, রংপুর জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ১ লাখ ৬৬ হ্জাার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধান চাষ হচ্ছে। তবে সারের এ কটু সংকট থাকলেও এক শ্রেণীর মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।