ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমে উঠেছে ধানের চারার হাট, ক্রেতাদের ঢল

চলতি আমন মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমে উঠেছে ধানের চারার হাট। স্থানীয় ভাষায় ধানের চারাকে বলা হয় জালা।

কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের নন্দনপুর বাজারে জমে উঠেছে সদর উপজেলার সবচেয়ে বড় ধানের চারার হাটটি। প্রতিদিন জেলা ও জেলার আশপাশ এলাকা থেকে কৃষকরা এসে এখান থেকে ধানের চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে প্রতিদিন সকালে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদভারে মুখরিত থাকে বাজারটি। মূলত সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১ পর্যন্ত চলে বেচা-কেনা।

প্রতিদিন সকালে কৃষকরা তাদের বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে আঁটি বেঁধে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন এই বাজারে।

প্রকার ভেদে প্রতি আঁটি ৭০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা দরে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। চাহিদানুযায়ী কাক্সিক্ষত চারা পেয়ে খুশি কৃষকরা। বিক্রেতারা জানান, এ বছর ধানের চারার। বিক্রি ভালো। তারা লাভবান হচ্ছেন। ক্রেতারাও সহনীয় মূল্যে চারা কিনতে পেরে খুশি। বাজার ঘুরে এই তথ্য জানা গেছে।

এই বাজারে চারা কিনতে আসা জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক গ্রামের কৃষক মো. আমীর আলী বলেন, তাদের এলাকায় বন্যাসহ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার জন্য ধানের বীজতলা করা সম্ভব হয়নি। তাই এই হাট থেকে চাহিদা অনুযায়ী ধানের চারা কিনেছেন। তিনি বলেন, তিনি বাজার থেকে তার দুই কানি (৩০ শতাংশ এক কানি) জমির জন্য চারা কিনেছেন। আশা করি ভালো ফলন হবে। তিনি বলেন, বাজারে চারা মূল্য রয়েছে কৃষকের নাগালের ভিতরে (দাম খুব বেশিও নয় আবার খুব কমও নয়)। তিনি বলেন, প্রতি আঁটি ধানের চারা প্রকার ভেদে ৭০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা দরে কিনেছি।

কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থেকে আসা কৃষক মো. সিদ্দিক মিয়া বলেন, এই বাজারে বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা তাদের বীজতলা থেকে চারা নিয়ে আসেন। আমরাও সহনীয় দামে এই বাজার থেকে ধানের চারা কিনতে পারি। তিনি বলেন, এই বাজারে ভালো চারা পাওয়া যায় এতে জমিতে ফলন ভালো হয়। তাই প্রতিবছর এই বাজার থেকেই চারা কিনি।

মো. আবুল কালাম নামে ধানের চারা বিক্রেতা বলেন, এই হাটে বিআর-২২, বিআর-৪৯ এবং বিআর-৫০ ধানের চারার পাশাপাশি, খাসা, কালিজিরা, বরজ খাসা ধানের চারাসহ বিভিন্ন ধানের চারা বিক্রি হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকসহ হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা থেকে পাইকাররা এসে ধানের চারা নিয়ে যায়। তিনি বলেন, বন্যা ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার জন্য তাদের এলাকায় ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। সেজন্য তারা এখন এই বাজারে আসছেন। আমরাও সহনীয় মূল্যে তাদের কাছে ধানের চারা বিক্রি করি।

মো. সোলায়মান মিয়া নামে আরেকজন ধানের চারা বিক্রেতা নামে আরেক কৃষক বলেন, চারা গাছের দাম এবার কিছুটা ভাল। প্রতিকানি (৩০ শতাংশ) জমির জন্য ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত চারার দাম পড়ে। জেলার নাসিরনগর ও বৃহত্তম সিলেট অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে এই বাজার থেকে ধানের চারা কিনে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, এবার ক্রেতা সমাগম অনেক ভালো। বেচা-কেনাও ভালো হচ্ছে। আমরাও খুশি।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ- পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে ধানের বীজতলা করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বীজতলা করা হয়েছে ২ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা নিজের জমির পাশাপাশি বাজারে বিক্রির জন্য অতিরিক্ত কিছু চারা রোপন করেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৪৭০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৫১৫ হেক্টর। আমরা আশা করি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হবে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৭ ভাদ্র ১৪২৯ ১৪ সফর ১৪৪৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমে উঠেছে ধানের চারার হাট, ক্রেতাদের ঢল

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নন্দনপুরে ধানের চারার হাট -সংবাদ

চলতি আমন মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমে উঠেছে ধানের চারার হাট। স্থানীয় ভাষায় ধানের চারাকে বলা হয় জালা।

কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের নন্দনপুর বাজারে জমে উঠেছে সদর উপজেলার সবচেয়ে বড় ধানের চারার হাটটি। প্রতিদিন জেলা ও জেলার আশপাশ এলাকা থেকে কৃষকরা এসে এখান থেকে ধানের চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে প্রতিদিন সকালে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদভারে মুখরিত থাকে বাজারটি। মূলত সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১ পর্যন্ত চলে বেচা-কেনা।

প্রতিদিন সকালে কৃষকরা তাদের বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে আঁটি বেঁধে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন এই বাজারে।

প্রকার ভেদে প্রতি আঁটি ৭০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা দরে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। চাহিদানুযায়ী কাক্সিক্ষত চারা পেয়ে খুশি কৃষকরা। বিক্রেতারা জানান, এ বছর ধানের চারার। বিক্রি ভালো। তারা লাভবান হচ্ছেন। ক্রেতারাও সহনীয় মূল্যে চারা কিনতে পেরে খুশি। বাজার ঘুরে এই তথ্য জানা গেছে।

এই বাজারে চারা কিনতে আসা জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক গ্রামের কৃষক মো. আমীর আলী বলেন, তাদের এলাকায় বন্যাসহ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার জন্য ধানের বীজতলা করা সম্ভব হয়নি। তাই এই হাট থেকে চাহিদা অনুযায়ী ধানের চারা কিনেছেন। তিনি বলেন, তিনি বাজার থেকে তার দুই কানি (৩০ শতাংশ এক কানি) জমির জন্য চারা কিনেছেন। আশা করি ভালো ফলন হবে। তিনি বলেন, বাজারে চারা মূল্য রয়েছে কৃষকের নাগালের ভিতরে (দাম খুব বেশিও নয় আবার খুব কমও নয়)। তিনি বলেন, প্রতি আঁটি ধানের চারা প্রকার ভেদে ৭০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা দরে কিনেছি।

কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থেকে আসা কৃষক মো. সিদ্দিক মিয়া বলেন, এই বাজারে বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা তাদের বীজতলা থেকে চারা নিয়ে আসেন। আমরাও সহনীয় দামে এই বাজার থেকে ধানের চারা কিনতে পারি। তিনি বলেন, এই বাজারে ভালো চারা পাওয়া যায় এতে জমিতে ফলন ভালো হয়। তাই প্রতিবছর এই বাজার থেকেই চারা কিনি।

মো. আবুল কালাম নামে ধানের চারা বিক্রেতা বলেন, এই হাটে বিআর-২২, বিআর-৪৯ এবং বিআর-৫০ ধানের চারার পাশাপাশি, খাসা, কালিজিরা, বরজ খাসা ধানের চারাসহ বিভিন্ন ধানের চারা বিক্রি হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকসহ হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা থেকে পাইকাররা এসে ধানের চারা নিয়ে যায়। তিনি বলেন, বন্যা ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার জন্য তাদের এলাকায় ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। সেজন্য তারা এখন এই বাজারে আসছেন। আমরাও সহনীয় মূল্যে তাদের কাছে ধানের চারা বিক্রি করি।

মো. সোলায়মান মিয়া নামে আরেকজন ধানের চারা বিক্রেতা নামে আরেক কৃষক বলেন, চারা গাছের দাম এবার কিছুটা ভাল। প্রতিকানি (৩০ শতাংশ) জমির জন্য ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত চারার দাম পড়ে। জেলার নাসিরনগর ও বৃহত্তম সিলেট অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে এই বাজার থেকে ধানের চারা কিনে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, এবার ক্রেতা সমাগম অনেক ভালো। বেচা-কেনাও ভালো হচ্ছে। আমরাও খুশি।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ- পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে ধানের বীজতলা করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বীজতলা করা হয়েছে ২ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা নিজের জমির পাশাপাশি বাজারে বিক্রির জন্য অতিরিক্ত কিছু চারা রোপন করেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৪৭০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৫১৫ হেক্টর। আমরা আশা করি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হবে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।