জয়-লেখকের ‘অপকর্মের’ তালিকা তৈরি করেছে ছাত্রলীগের একাংশ

চাঁদাবাজি, দলের বিভিন্ন কমিটির পদ বিক্রি-বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বহিষ্কার করা হয় ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানীকে। তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেয়া হয় যথাক্রমে সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। পরের বছর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তারা পূর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই জেলা পর্যায়ের কমিটি না দেয়া, সম্মেলন না করে ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তির’ মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানানো, দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপেক্ষা ও সমন্বয়হীনতা, কমিটি ও পদ-বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের এই দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে। যদিও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমকে দেয়া বক্তব্যে জয়-লেখক অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আসছেন।

এদিকে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি বড় অংশ জয়-লেখকেরের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ এনে সম্মেলনের দাবি করে আসছে। এবার এ দুই নেতার বিভিন্ন কর্মকা-ের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ‘অপকর্মের’ তালিকা তৈরি করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠাবে কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ। সংগঠনের শতাধিক নেতার সই করা লিখিত অভিযোগপত্রটি গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বরাবর জমা দেয়ার কথা থাকলেও তিনি এটি গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কামাল খান।

তিনি সংবাদকে বলেন, আমরা দলের কার্যালয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অভিযোগপত্র নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তিনি অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের কথা বলে কার্যালয় থেকে চলে যান। সেজন্য আমরা অভিযোগপত্রটি জমা দিতে পারিনি।

কামাল খান আরও বলেন, আমরা আগামীকাল (আজ) অভিযোগপত্রটি জমা দেয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। আমরা তাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। আগামীকাল তার সঙ্গেও আমরা বসবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরেক সহ-সভাপতি সোহান খান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম বর্তমানে শূন্য অবস্থায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাজ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া। কিন্তু ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি থাকা সত্ত্বেও তারা সাংগঠনিক সফর দিতে ব্যর্থ হয়েছে, আমাদের কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সংগঠনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। তাছাড়া এ কমিটির মেয়াদও সাড়ে তিন বছর অতিক্রম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জয়-লেখক যে কমিটি দিয়েছেন সেগুলোর ৯০ শতাংশ কমিটিতেই দুর্বল নেতৃত্ব এনেছেন। এছাড়া কমিটিগুলোতে অছাত্র, বিবাহিত, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্য, মাদক ব্যবসায়ী ও চিহ্নিত অপরাধীদের স্থান দিয়েছেন। তারা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি করছেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আমানতের খেয়ানত।’

যেসব অভিযোগ জয়-লেখকের বিরুদ্ধে

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই মাস পরপর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাধারণ সভা হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান কমিটির পুরো তিন বছর মেয়াদে মাত্র একটি সভা হয়েছে। অভিযোগ আছে, নিজেদের প্রভাব বলয়ের কয়েকজন নেতাকে নিয়েই তারা সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এক্ষেত্রে অন্যদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়।

কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই আগস্টের শুরুতে একদিনে জেলা, উপজেলা মিলে ১১টি কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও নির্বাহী কমিটির শূন্য পদ ছিল ৩০টির মতো। সেগুলোতেও চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে কয়েকশ’ প্রার্থীকে শূন্যপদে পদায়ন করার অভিযোগও রয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

ছাত্রলীগের একটি অংশের অভিযোগ, জয়-লেখক নেতৃত্বে আসার পর থেকেই তারা বিলাসী জীবনযাপন শুরু করেন। তারা হল ছেড়ে দুটি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস শুরু করেন। তাদের একাধিক গাড়ি ব্যবহারের নজির রয়েছে বলেও অভিযোগ। এসব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবরও বেড়িয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জয় ও লেখককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে এবং ম্যাসেঞ্জারে চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৭ ভাদ্র ১৪২৯ ১৪ সফর ১৪৪৪

জয়-লেখকের ‘অপকর্মের’ তালিকা তৈরি করেছে ছাত্রলীগের একাংশ

খালেদ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

চাঁদাবাজি, দলের বিভিন্ন কমিটির পদ বিক্রি-বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বহিষ্কার করা হয় ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানীকে। তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেয়া হয় যথাক্রমে সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। পরের বছর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তারা পূর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই জেলা পর্যায়ের কমিটি না দেয়া, সম্মেলন না করে ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তির’ মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানানো, দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপেক্ষা ও সমন্বয়হীনতা, কমিটি ও পদ-বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের এই দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে। যদিও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমকে দেয়া বক্তব্যে জয়-লেখক অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আসছেন।

এদিকে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি বড় অংশ জয়-লেখকেরের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ এনে সম্মেলনের দাবি করে আসছে। এবার এ দুই নেতার বিভিন্ন কর্মকা-ের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ‘অপকর্মের’ তালিকা তৈরি করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠাবে কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ। সংগঠনের শতাধিক নেতার সই করা লিখিত অভিযোগপত্রটি গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বরাবর জমা দেয়ার কথা থাকলেও তিনি এটি গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কামাল খান।

তিনি সংবাদকে বলেন, আমরা দলের কার্যালয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অভিযোগপত্র নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তিনি অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের কথা বলে কার্যালয় থেকে চলে যান। সেজন্য আমরা অভিযোগপত্রটি জমা দিতে পারিনি।

কামাল খান আরও বলেন, আমরা আগামীকাল (আজ) অভিযোগপত্রটি জমা দেয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। আমরা তাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। আগামীকাল তার সঙ্গেও আমরা বসবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরেক সহ-সভাপতি সোহান খান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম বর্তমানে শূন্য অবস্থায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাজ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া। কিন্তু ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি থাকা সত্ত্বেও তারা সাংগঠনিক সফর দিতে ব্যর্থ হয়েছে, আমাদের কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সংগঠনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। তাছাড়া এ কমিটির মেয়াদও সাড়ে তিন বছর অতিক্রম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জয়-লেখক যে কমিটি দিয়েছেন সেগুলোর ৯০ শতাংশ কমিটিতেই দুর্বল নেতৃত্ব এনেছেন। এছাড়া কমিটিগুলোতে অছাত্র, বিবাহিত, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্য, মাদক ব্যবসায়ী ও চিহ্নিত অপরাধীদের স্থান দিয়েছেন। তারা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি করছেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আমানতের খেয়ানত।’

যেসব অভিযোগ জয়-লেখকের বিরুদ্ধে

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই মাস পরপর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাধারণ সভা হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান কমিটির পুরো তিন বছর মেয়াদে মাত্র একটি সভা হয়েছে। অভিযোগ আছে, নিজেদের প্রভাব বলয়ের কয়েকজন নেতাকে নিয়েই তারা সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এক্ষেত্রে অন্যদের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়।

কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই আগস্টের শুরুতে একদিনে জেলা, উপজেলা মিলে ১১টি কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও নির্বাহী কমিটির শূন্য পদ ছিল ৩০টির মতো। সেগুলোতেও চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে কয়েকশ’ প্রার্থীকে শূন্যপদে পদায়ন করার অভিযোগও রয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

ছাত্রলীগের একটি অংশের অভিযোগ, জয়-লেখক নেতৃত্বে আসার পর থেকেই তারা বিলাসী জীবনযাপন শুরু করেন। তারা হল ছেড়ে দুটি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস শুরু করেন। তাদের একাধিক গাড়ি ব্যবহারের নজির রয়েছে বলেও অভিযোগ। এসব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবরও বেড়িয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জয় ও লেখককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে এবং ম্যাসেঞ্জারে চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।