বেদে পল্লী ঘিরে মাদকের কারবার

অসাধু পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতারা সহযোগিতায়

নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের বেদে পল্লীকে ঘিরে অসাধু পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় সক্রিয় হয়ে ওঠেছে ইয়াবা কারবারিরা। রাজনৈতিক কিছু নেতা ও পাতি নেতা ও কিছু অসাধু পুলিশের সহযোগিতায় মাদক সম্রাজ্য গড়ে উঠেছে ওই বেদে পল্লীতে। এ পল্লীর এবং পল্লীর বাইরের ইয়াবা কারবারিরা অনেকটা নিরাপদে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক বেচাকেনা করে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও প্রভাবশালীদের চত্রছায়ায় থাকা এসব ইয়াবা কারবারিদের কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। আবার অনেক সময় অভিযান চালানোর খবর আগেই পৌঁছে যায় মাদক কারবারিদের কাছে।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে বসবাস শুরু করে বেদেরা। এখানে বসবাসের পর বেদেদের মধ্যে একটি দল স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় শুরু করে মাদক (ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজা) ব্যবসা। অতি লাভের আশায় সাপের বাক্স, সস্তা চুড়ি বা কসমেটিকের ঝাপিতে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় তাবিজ-কবজের আড়ালে ওই মাদক বহন এবং বিক্রি করে আসছে তারা। পর্যায়ক্রমে তাদের এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় যুবকরা। বেদেদের এখন আর মাদকের খুচরা কারবার করতে হয় না। তারা মাদকের বড় চালান নিয়ে এসে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা চক্রের হাতে তুলে দেয় ইয়াবাসহ যাবতীয় মাদক।

এক কথায় জেলার মাদকের বড় আস্তানাগুলোর একটি হলো এওজবালিয়ার বেদে পল্লী। এই বেদে পল্লীর কড়ইতলা, মুন্সি বাজার ও শাজাহান খোনার মসজিদ এলাকায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজার মতো মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হচ্ছে প্রতিনিয়তই।

প্রায় ৫০০ পরিবারে ৩ হাজারের বেশি বেদের বসবাস এই পল্লীতে। বেদে পল্লীর মানুষগুলো এক সময়ে বন-বাঁদারে সাপ খুঁজে বেড়াতো। সাপ খেলা দেখিয়ে, তাবিজ-কবজ দিয়ে এবং সিঙ্গা লাগিয়ে মানুষের টোটকা চিকিৎসা করে জীবিকা নির্বাহ করত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন সেই সবই অতীত এবং ইতিহাস।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের অনেক সরদার বেদে পল্লীর পাশের এলাকা মন্তাজের বাপের দোকান, হানিফ চেয়ারম্যান বাজার, মান্নান হাইস্কুল, মান্নান নগর, খলিল মিয়ার দরজা, সাহেবের হাট, হায়দার মিয়ার হাট, খাসের হাট ও মমিন নগর এলকার চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিদের নিয়ে বিশাল চক্র গড়ে তুলেছেন।

ওই চক্রের সদস্যরা সাভার, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য কিনে এনে বেদে পল্লীতে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এওজবালিয়া বেদে পল্লী এলাকা থেকে ১৮০ পিস ইয়াবাসহ মো. নুর উদ্দিন (২৮) ও আবদুল মোতালেব মাসুম (২৫) নামের দুই ইয়াবা কারবারিকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। অথচ তাদের গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বেদে পল্লীর মাদক কারবারি তরিকুল হাসানকে মাদকের একটি চালানসহ গ্রেপ্তার করে জেলা ডিবি পুলিশ। এর আগে ২০১৪ সালে মাদক কারবারি মো. মোস্তাককেও মাদকসহ গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল বেদে পল্লীতে মাদকের বেচাকেনা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়।

এছাড়া মাদক কারবারিদের মধ্যে বেদে পল্লীর সুরত আলীর ছেলে ওসমান, রাখালের ছেলে আলমগীর ও রাজু মিয়ার ছেলে আরিফ ইয়াবার মামলায় জেল খেটেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, বেদে পল্লীতে প্রথমে ইয়াবা কারবার শুরু করেন সরদার জাকির, ওয়াসিম, তরিকুল, বেদে পল্লী যুবসমাজের সভাপতি মো. ফরহাদ হোসেন, আলমগীর, টুকু ও মোস্তাক। তবে বেদে পল্লীতে মাদক কারবার এখন আর একক তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুরো এওজবালিয়া ইউনিয়ন ও নোয়াখালী ইউনিয়নের শতাধিক যুবক। এরা সবাই প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় থেকে মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। গত বৃহস্পতিবার ইয়াবাসহ আটক হওয়া দু’জনই বেদে পল্লীর বাইরের স্থানীয় যুবক।

বেদে পল্লীর বাসিন্দারা বলেন, গুটিকয়েক মাদকের ডিলার, বিক্রেতা ও সেবীর কারণে আমাদের বেদে পল্লীর শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে। তারা বহিরাগত মাদক কারবারিদের এখানে জায়গা করে দিচ্ছে কারবারের জন্য। এতে আমাদের শান্তিপূর্ণ পল্লীকে মাদকের আস্তানা হিসেবে অনেকেই বলাবলি করছে। কিন্তু আমরা এসবের সঙ্গে জড়িত নই। স্থানীয় যুবকরা এখানে আসলে আমরা বাধাও দিতে পারি না। তারা আমাদের ওপর ক্ষেপে যায়। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।

বেদেরা আরও বলেন, বেদে পল্লীর মাদক কারবারি ও সেবীদের নাম ইউনিয়ন পরিষদ ও থানা পুলিশকে জানিয়েছেন তারা। বেদে পল্লীর শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রশাসনের সহযোগিতা চান বেদেরা।

বেদে পল্লীকে ঘিরে ইয়াবা কারবারিদের সক্রিয়তার সত্যতা স্বীকার করে এওজবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় এই বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযত ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতিনিয়তই ইয়াবা কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠছে। বেদে পল্লীর ভেতরে এবং বাইরের ইয়াবা কারবারিদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি।

সুধারাম মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বেদেপাড়ায় মাদকের বেচাকেনার ঘটনায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বেদেদের মধ্যে দুটি গ্রুপ থাকায় তারা মাদকসহ যাবতীয় বিষয়ে একে-অন্যকে দোষ দেয়ার চেষ্টা করেন। তাদের সহযোগিতায় আশপাশের এলাকা থেকেও বেশ কিছু যুবক সেখানে গিয়ে মাদক বেচাকেনা করার খবর রয়েছে।

ওসি বলেন, মাদক কারবারিদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক কারবারি জানান, কারবার করে আমরা কি একা খাই? এর ভাগ দিতে হয় পুলিশকে ও রাজনৈতিক দলের কর্মীদের। পুলিশকে বকরা দিতে দেরি হলে ধরে নিয়ে ইয়াবা দিয়ে চালান করেন, আর নেতাদের বকরা দিতে দেরি হলে মারধর করে অস্ত্র দিয়ে চালানের ভয় দেখায়।

রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৭ ভাদ্র ১৪২৯ ১৪ সফর ১৪৪৪

নোয়াখালীর এওয়াজবালিয়া

বেদে পল্লী ঘিরে মাদকের কারবার

অসাধু পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতারা সহযোগিতায়

মনিরুজ্জামান চৌধুরী, নোয়াখালী

নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামের বেদে পল্লীকে ঘিরে অসাধু পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় সক্রিয় হয়ে ওঠেছে ইয়াবা কারবারিরা। রাজনৈতিক কিছু নেতা ও পাতি নেতা ও কিছু অসাধু পুলিশের সহযোগিতায় মাদক সম্রাজ্য গড়ে উঠেছে ওই বেদে পল্লীতে। এ পল্লীর এবং পল্লীর বাইরের ইয়াবা কারবারিরা অনেকটা নিরাপদে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক বেচাকেনা করে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও প্রভাবশালীদের চত্রছায়ায় থাকা এসব ইয়াবা কারবারিদের কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। আবার অনেক সময় অভিযান চালানোর খবর আগেই পৌঁছে যায় মাদক কারবারিদের কাছে।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালে পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে বসবাস শুরু করে বেদেরা। এখানে বসবাসের পর বেদেদের মধ্যে একটি দল স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় শুরু করে মাদক (ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজা) ব্যবসা। অতি লাভের আশায় সাপের বাক্স, সস্তা চুড়ি বা কসমেটিকের ঝাপিতে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় তাবিজ-কবজের আড়ালে ওই মাদক বহন এবং বিক্রি করে আসছে তারা। পর্যায়ক্রমে তাদের এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় যুবকরা। বেদেদের এখন আর মাদকের খুচরা কারবার করতে হয় না। তারা মাদকের বড় চালান নিয়ে এসে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা চক্রের হাতে তুলে দেয় ইয়াবাসহ যাবতীয় মাদক।

এক কথায় জেলার মাদকের বড় আস্তানাগুলোর একটি হলো এওজবালিয়ার বেদে পল্লী। এই বেদে পল্লীর কড়ইতলা, মুন্সি বাজার ও শাজাহান খোনার মসজিদ এলাকায় ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজার মতো মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হচ্ছে প্রতিনিয়তই।

প্রায় ৫০০ পরিবারে ৩ হাজারের বেশি বেদের বসবাস এই পল্লীতে। বেদে পল্লীর মানুষগুলো এক সময়ে বন-বাঁদারে সাপ খুঁজে বেড়াতো। সাপ খেলা দেখিয়ে, তাবিজ-কবজ দিয়ে এবং সিঙ্গা লাগিয়ে মানুষের টোটকা চিকিৎসা করে জীবিকা নির্বাহ করত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন সেই সবই অতীত এবং ইতিহাস।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের অনেক সরদার বেদে পল্লীর পাশের এলাকা মন্তাজের বাপের দোকান, হানিফ চেয়ারম্যান বাজার, মান্নান হাইস্কুল, মান্নান নগর, খলিল মিয়ার দরজা, সাহেবের হাট, হায়দার মিয়ার হাট, খাসের হাট ও মমিন নগর এলকার চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিদের নিয়ে বিশাল চক্র গড়ে তুলেছেন।

ওই চক্রের সদস্যরা সাভার, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য কিনে এনে বেদে পল্লীতে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এওজবালিয়া বেদে পল্লী এলাকা থেকে ১৮০ পিস ইয়াবাসহ মো. নুর উদ্দিন (২৮) ও আবদুল মোতালেব মাসুম (২৫) নামের দুই ইয়াবা কারবারিকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। অথচ তাদের গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বেদে পল্লীর মাদক কারবারি তরিকুল হাসানকে মাদকের একটি চালানসহ গ্রেপ্তার করে জেলা ডিবি পুলিশ। এর আগে ২০১৪ সালে মাদক কারবারি মো. মোস্তাককেও মাদকসহ গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল বেদে পল্লীতে মাদকের বেচাকেনা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়।

এছাড়া মাদক কারবারিদের মধ্যে বেদে পল্লীর সুরত আলীর ছেলে ওসমান, রাখালের ছেলে আলমগীর ও রাজু মিয়ার ছেলে আরিফ ইয়াবার মামলায় জেল খেটেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, বেদে পল্লীতে প্রথমে ইয়াবা কারবার শুরু করেন সরদার জাকির, ওয়াসিম, তরিকুল, বেদে পল্লী যুবসমাজের সভাপতি মো. ফরহাদ হোসেন, আলমগীর, টুকু ও মোস্তাক। তবে বেদে পল্লীতে মাদক কারবার এখন আর একক তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুরো এওজবালিয়া ইউনিয়ন ও নোয়াখালী ইউনিয়নের শতাধিক যুবক। এরা সবাই প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় থেকে মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। গত বৃহস্পতিবার ইয়াবাসহ আটক হওয়া দু’জনই বেদে পল্লীর বাইরের স্থানীয় যুবক।

বেদে পল্লীর বাসিন্দারা বলেন, গুটিকয়েক মাদকের ডিলার, বিক্রেতা ও সেবীর কারণে আমাদের বেদে পল্লীর শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে। তারা বহিরাগত মাদক কারবারিদের এখানে জায়গা করে দিচ্ছে কারবারের জন্য। এতে আমাদের শান্তিপূর্ণ পল্লীকে মাদকের আস্তানা হিসেবে অনেকেই বলাবলি করছে। কিন্তু আমরা এসবের সঙ্গে জড়িত নই। স্থানীয় যুবকরা এখানে আসলে আমরা বাধাও দিতে পারি না। তারা আমাদের ওপর ক্ষেপে যায়। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।

বেদেরা আরও বলেন, বেদে পল্লীর মাদক কারবারি ও সেবীদের নাম ইউনিয়ন পরিষদ ও থানা পুলিশকে জানিয়েছেন তারা। বেদে পল্লীর শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রশাসনের সহযোগিতা চান বেদেরা।

বেদে পল্লীকে ঘিরে ইয়াবা কারবারিদের সক্রিয়তার সত্যতা স্বীকার করে এওজবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় এই বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযত ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতিনিয়তই ইয়াবা কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠছে। বেদে পল্লীর ভেতরে এবং বাইরের ইয়াবা কারবারিদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি।

সুধারাম মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বেদেপাড়ায় মাদকের বেচাকেনার ঘটনায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বেদেদের মধ্যে দুটি গ্রুপ থাকায় তারা মাদকসহ যাবতীয় বিষয়ে একে-অন্যকে দোষ দেয়ার চেষ্টা করেন। তাদের সহযোগিতায় আশপাশের এলাকা থেকেও বেশ কিছু যুবক সেখানে গিয়ে মাদক বেচাকেনা করার খবর রয়েছে।

ওসি বলেন, মাদক কারবারিদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক কারবারি জানান, কারবার করে আমরা কি একা খাই? এর ভাগ দিতে হয় পুলিশকে ও রাজনৈতিক দলের কর্মীদের। পুলিশকে বকরা দিতে দেরি হলে ধরে নিয়ে ইয়াবা দিয়ে চালান করেন, আর নেতাদের বকরা দিতে দেরি হলে মারধর করে অস্ত্র দিয়ে চালানের ভয় দেখায়।