ব্রিটেনে চার্লস-যুগ শুরু

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার জ্যেষ্ঠ সন্তান তৃতীয় চার্লসকে রাজা ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে ব্রিটেনের রাজা চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ।

সেন্ট জেমস প্রাসাদে অ্যাকসেশন কাউন্সিলে প্রথম ধাপের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন লর্ড প্রেসিডেন্ট পেনি মর্ডান্ট। রাজা ঘোষণার পরবর্তীতে যেসব আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে তা উল্লেখ করেছেন তিনি। সেখানে উপস্থিত হন রাজা তৃতীয় চার্লস ও তার স্ত্রী ক্যামিলা পার্কার। ভাষণে তার প্রয়াত মা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে স্মরণ করেন চার্লস। এ সময় স্কটল্যান্ডের চার্চের নিরাপত্তা রক্ষা সম্পর্কিত একটি শপথে স্বাক্ষর করেন তিনি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে ইতোমধ্যে আশপাশে জড়ো হয়েছেন বহু মানুষ। প্রাসাদের বাইরের গেটের দিকে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

জেমস প্রসাদের অ্যাকসেশন কাউন্সিলে উপস্থিত হয়েছেন অন্তত ২০০ জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী। অ্যাকসেশন কাউন্সিলে ইতোমধ্যে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, টনি ব্লেয়ার, থেরেসা মেসহ অনেকেই উপস্থিত হয়েছেন।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে প্যালেসের বারান্দায় আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা ঘোষণার পাঠ করে শোনানো হবে। দুপুর ১২টায় লন্ডনের রয়্যাল এক্সচেঞ্জেও এই পাঠ শোনানো হবে। বিকেলে জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্ট হাউজে রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেন। এর আগে গতকাল চার্লস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে যুক্তরাজ্য এবং তার রাজত্বাধীন অন্যান্য রাষ্ট্রকে আজীবন সেবা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, যেভাবে রানী নিজে অটল নিষ্ঠার সঙ্গে এ কাজ করেছেন। আমিও এখন দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের কাছে অঙ্গীকার করছি, ঈশ্বর আমার জন্য বাকি যেটুকু সময় বরাদ্দ রেখেছেন, পুরোটা জুড়ে আমি আমাদের দেশের প্রাণকেন্দ্রে সাংবিধানিক নীতিকে সমুন্নত রাখব। এবং আপনি যুক্তরাজ্যের যেখানেই বাস করুন বা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে এবং ভূখ-ে যেখানেই থাকুন, আপনার প্রেক্ষাপট কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাস যাই হোক, আমি সারাজীবন ধরে বিশ্বস্ততা, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সঙ্গে আপনার সেবা করে যাওয়ার চেষ্টা করব।

সবচেয়ে মর্মস্পর্শী কথা তিনি বলেছেন তার জীবনের প্রাণকেন্দ্রে থাকা দুই নারীকে নিয়ে। এর একজন তার মা রানী এলিজাবেথ এবং অপরজন স্ত্রী ক্যামিলা। ভাষণের শুরুতেই চার্লস বলেন, আজ আমি গভীর দুঃখের অনুভূতি নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি।

মায়ের স্মরণে তিনি বলেন, ‘মহামান্য ?রানী, আমার প্রিয় মা তার সারা জীবন আমার এবং পুরো পরিবারের জন্য অনুপ্রেরণা ও উদাহরণ হয়ে ছিলেন। তার ভালোবাসা, স্নেহ, দিক নির্দেশনা, বোঝাপড়া সবকিছুর জন্যই আমরা তার কাছে ঋণী।’

চার্লস বলেন, “আমি মায়ের স্মৃতি এবং তার আজীবন সেবাকে সম্মান জানাই। আমি জানি তার মৃত্যু আপনাদের অনেকের জন্যই গভীর দুঃখ বয়ে এনেছে। আপনাদের সবার সঙ্গে আমিও এই হারানোর অনুভূতি ভাগ করে নিচ্ছি।”

মায়ের শেষকৃত্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার প্রিয় মা কে অন্তিম শয্যায় শায়িত করতে আর সপ্তাহখানেক পরই আমরা জাতি হিসাবে, কমনওয়েলথ হিসাবে এবং সর্বোপরি বিশ্ব সম্প্রদায় হিসাবে একত্রিত হব।

চালর্স ভাষণ শেষ করেছেন মা-কে ধন্যবাদ জানিয়ে। তিনি বলেন, প্রিয় মা, আমার প্রয়াত বাবার কাছে আপনার শেষযাত্রা শুরুর এই সময়ে আমি শুধু এ কথাটিই বলতে চাইÑআপনাকে ধন্যবাদ।

৭৩ বছর বয়সে রাজ্যাভিষেক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে রাজা হওয়ার তকমাটা জুটল তার নামের পাশেই। চার্লসের আগে সবচেয়ে বেশি বয়সে রাজ সিংহাসনে বসেছিলেন রাজা চতুর্থ উইলিয়াম। ১৮৩০ সালে ৬৪ বছর বয়সে ব্রিটিশ সিংহাসনে বসেন।

চার্লস একজন স্পষ্টভাষী মানুষ। তিনি জিন পরিবর্তন করা ফসল থেকে শুরু করে হোমিওপ্যাথি ওষুধ বা স্থাপত্যের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে স্পষ্টভাষায় নিজের বক্তব্য প্রকাশ করেছেন, যা তার মায়ের ব্যক্তিত্ব থেকে তাকে আলাদা মানুষ হিসেবে চিনিয়েছে।

প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার ৭০ বছরের রাজত্বে কোন বিষয়ে ব্যক্তিগত আবেগ প্রকাশ করেছেন এমন ঘটনা বিরল। তার নীতি ছিল কাউকে আক্রমণ করে কথা না বলা বা অসন্তষ্ট না করা। কোনো বিষয় নিয়ে রানী বড়জোর নিজের মতামত দিতেন।

কিন্তু চার্লসকে প্রায়ই নিজের কাজের প্রতি আবেগ সামাল দিতে লড়াই করতে হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে তিনি বক্তৃতা দেয়ার সময় নিজের আশা এবং উৎকণ্ঠার কথা প্রকাশ করে ফেলেছেন। সেজন্য সমালোচনারও শিকার হতে হয়েছে। বলা হয়েছে, চার্লসের বক্তব্য হবু রাজার মতো নয়, বরং ক্যাম্পেইনারের মতো।

তবে চার্লস সবসময় মায়ের নেতৃত্বের ধরন অনুসরণ করার ইচ্ছাই জোরালোভাবে প্রকাশ করে এসেছেন এবং রাজসিংহাসনে বসার পর অনেক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বন্ধ করবেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৭ ভাদ্র ১৪২৯ ১৪ সফর ১৪৪৪

ব্রিটেনে চার্লস-যুগ শুরু

সংবাদ ডেস্ক

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার জ্যেষ্ঠ সন্তান তৃতীয় চার্লসকে রাজা ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে ব্রিটেনের রাজা চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ।

সেন্ট জেমস প্রাসাদে অ্যাকসেশন কাউন্সিলে প্রথম ধাপের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন লর্ড প্রেসিডেন্ট পেনি মর্ডান্ট। রাজা ঘোষণার পরবর্তীতে যেসব আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে তা উল্লেখ করেছেন তিনি। সেখানে উপস্থিত হন রাজা তৃতীয় চার্লস ও তার স্ত্রী ক্যামিলা পার্কার। ভাষণে তার প্রয়াত মা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে স্মরণ করেন চার্লস। এ সময় স্কটল্যান্ডের চার্চের নিরাপত্তা রক্ষা সম্পর্কিত একটি শপথে স্বাক্ষর করেন তিনি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে ইতোমধ্যে আশপাশে জড়ো হয়েছেন বহু মানুষ। প্রাসাদের বাইরের গেটের দিকে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

জেমস প্রসাদের অ্যাকসেশন কাউন্সিলে উপস্থিত হয়েছেন অন্তত ২০০ জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী। অ্যাকসেশন কাউন্সিলে ইতোমধ্যে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, টনি ব্লেয়ার, থেরেসা মেসহ অনেকেই উপস্থিত হয়েছেন।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে প্যালেসের বারান্দায় আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা ঘোষণার পাঠ করে শোনানো হবে। দুপুর ১২টায় লন্ডনের রয়্যাল এক্সচেঞ্জেও এই পাঠ শোনানো হবে। বিকেলে জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্ট হাউজে রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেন। এর আগে গতকাল চার্লস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে যুক্তরাজ্য এবং তার রাজত্বাধীন অন্যান্য রাষ্ট্রকে আজীবন সেবা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, যেভাবে রানী নিজে অটল নিষ্ঠার সঙ্গে এ কাজ করেছেন। আমিও এখন দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের কাছে অঙ্গীকার করছি, ঈশ্বর আমার জন্য বাকি যেটুকু সময় বরাদ্দ রেখেছেন, পুরোটা জুড়ে আমি আমাদের দেশের প্রাণকেন্দ্রে সাংবিধানিক নীতিকে সমুন্নত রাখব। এবং আপনি যুক্তরাজ্যের যেখানেই বাস করুন বা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে এবং ভূখ-ে যেখানেই থাকুন, আপনার প্রেক্ষাপট কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাস যাই হোক, আমি সারাজীবন ধরে বিশ্বস্ততা, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সঙ্গে আপনার সেবা করে যাওয়ার চেষ্টা করব।

সবচেয়ে মর্মস্পর্শী কথা তিনি বলেছেন তার জীবনের প্রাণকেন্দ্রে থাকা দুই নারীকে নিয়ে। এর একজন তার মা রানী এলিজাবেথ এবং অপরজন স্ত্রী ক্যামিলা। ভাষণের শুরুতেই চার্লস বলেন, আজ আমি গভীর দুঃখের অনুভূতি নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি।

মায়ের স্মরণে তিনি বলেন, ‘মহামান্য ?রানী, আমার প্রিয় মা তার সারা জীবন আমার এবং পুরো পরিবারের জন্য অনুপ্রেরণা ও উদাহরণ হয়ে ছিলেন। তার ভালোবাসা, স্নেহ, দিক নির্দেশনা, বোঝাপড়া সবকিছুর জন্যই আমরা তার কাছে ঋণী।’

চার্লস বলেন, “আমি মায়ের স্মৃতি এবং তার আজীবন সেবাকে সম্মান জানাই। আমি জানি তার মৃত্যু আপনাদের অনেকের জন্যই গভীর দুঃখ বয়ে এনেছে। আপনাদের সবার সঙ্গে আমিও এই হারানোর অনুভূতি ভাগ করে নিচ্ছি।”

মায়ের শেষকৃত্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার প্রিয় মা কে অন্তিম শয্যায় শায়িত করতে আর সপ্তাহখানেক পরই আমরা জাতি হিসাবে, কমনওয়েলথ হিসাবে এবং সর্বোপরি বিশ্ব সম্প্রদায় হিসাবে একত্রিত হব।

চালর্স ভাষণ শেষ করেছেন মা-কে ধন্যবাদ জানিয়ে। তিনি বলেন, প্রিয় মা, আমার প্রয়াত বাবার কাছে আপনার শেষযাত্রা শুরুর এই সময়ে আমি শুধু এ কথাটিই বলতে চাইÑআপনাকে ধন্যবাদ।

৭৩ বছর বয়সে রাজ্যাভিষেক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে রাজা হওয়ার তকমাটা জুটল তার নামের পাশেই। চার্লসের আগে সবচেয়ে বেশি বয়সে রাজ সিংহাসনে বসেছিলেন রাজা চতুর্থ উইলিয়াম। ১৮৩০ সালে ৬৪ বছর বয়সে ব্রিটিশ সিংহাসনে বসেন।

চার্লস একজন স্পষ্টভাষী মানুষ। তিনি জিন পরিবর্তন করা ফসল থেকে শুরু করে হোমিওপ্যাথি ওষুধ বা স্থাপত্যের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে স্পষ্টভাষায় নিজের বক্তব্য প্রকাশ করেছেন, যা তার মায়ের ব্যক্তিত্ব থেকে তাকে আলাদা মানুষ হিসেবে চিনিয়েছে।

প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার ৭০ বছরের রাজত্বে কোন বিষয়ে ব্যক্তিগত আবেগ প্রকাশ করেছেন এমন ঘটনা বিরল। তার নীতি ছিল কাউকে আক্রমণ করে কথা না বলা বা অসন্তষ্ট না করা। কোনো বিষয় নিয়ে রানী বড়জোর নিজের মতামত দিতেন।

কিন্তু চার্লসকে প্রায়ই নিজের কাজের প্রতি আবেগ সামাল দিতে লড়াই করতে হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে তিনি বক্তৃতা দেয়ার সময় নিজের আশা এবং উৎকণ্ঠার কথা প্রকাশ করে ফেলেছেন। সেজন্য সমালোচনারও শিকার হতে হয়েছে। বলা হয়েছে, চার্লসের বক্তব্য হবু রাজার মতো নয়, বরং ক্যাম্পেইনারের মতো।

তবে চার্লস সবসময় মায়ের নেতৃত্বের ধরন অনুসরণ করার ইচ্ছাই জোরালোভাবে প্রকাশ করে এসেছেন এবং রাজসিংহাসনে বসার পর অনেক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বন্ধ করবেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।