মায়ানমারকে অবশ্যই গুলি বন্ধ করতে হবে

অর্পিতা হাজারিকা

মায়ানমার থেকে ৩ সেপ্টেম্বর কমপক্ষে দু’টি মর্টার শেল ছোড়া হয়েছে বাংলাদেশের ভিতরে। আন্তর্জাতিক আইনে এটা বেআইনি কাজ। এর আগে একই স্থানে ২৮ আগস্ট ভয়াবহ দু’টি গোলা নিক্ষেপ করে মায়ানমার। ঢাকায় নিযুক্ত মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশ সেই ঘটনার প্রতিবাদও করে। কিন্তু প্রতিবাদ করার ৫দিন পরেই আবারো গুলির ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশি তদন্ত অনুসারে, বান্দরবানের ঘুমধুম পাহাড়ি এলাকায় কমপক্ষে দু’টি যুদ্ধবিমান বাংলাদেশ সীমান্তের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে। এ সময় কমপক্ষে আট রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। অন্যদিকে দু’টি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে কমপক্ষে ৩০টি গোলা ছোড়া হয়েছে। উপরন্তু আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহীদের (আরাকান আর্মি) দমন করতে সীমান্ত এলাকায় মায়ানমারের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ফের রোহিঙ্গাদের আতঙ্কিত করে তুলবে। এতে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একদিকে বাংলাদেশের ভিতরে এরই মধ্যে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কৌশলে নিষ্ক্রিয় করে রাখার অভিযোগ আছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অধিবাসীরা নতুন কোনো অনুপ্রবেশ হলে তা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েক দিন ধরে রাখাইন রাজ্যে লড়াই চলমান। এই এলাকাটি বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তবর্তী। বান্দরবানের ঘুমধুম এবং তমব্রু সীমান্তের অধিবাসীরা আতঙ্কিত। কোনো কোনো শরণার্থী এরই মধ্যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

রাখাইনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যখন মায়ানমারের সেনাবাহিনী লড়াই করছে, তখনই সেনাবাহিনী কায়া, কাইন এবং চীন রাজ্যে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে বড় সামরিক অপারেশন চালাচ্ছে। এ যুদ্ধে মায়ানমারের সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করছে।

মায়ানমারের সামরিক জান্তা ২০২৩ সালের আগস্টে জাতীয় নির্বাচন করতে চায়। তার আগে তারা রাখাইন এবং অন্য রাজ্যগুলোতে তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের কাছে রাখাইন রাজ্যটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই রাজ্যটির সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশ এবং ভারতের সঙ্গে। এখানে যুদ্ধ হলেই শরণার্থীরা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে চলে আসে। এ কারণে সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা রাখাইনের এই যুদ্ধ নিয়ে ভীত-শঙ্কিত।

কয়েক বছর ধরে তমব্রু সীমান্তে নাইক্ষ্যংছড়িতে বসবাস করছেন সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা। ওই এলাকায় চালানো হচ্ছে সহিংসতা। এই সহিংসতার কারণে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশে ছুটে আসতে পারেন। অভিযোগ আছে, মায়ানমারে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার জন্য একটি ষড়যন্ত্র সাজানো হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টেও এভাবে মায়ানমারের সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার উড়িয়েছিল। মর্টার শেল এবং বুলেট ছোড়া হয়েছিল বাংলাদেশে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, মায়ানমারের কৌশলই এটা, যাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন।

গত ২৮ আগস্ট যে দু’টি শেল ছোড়া হয়েছে তা তমব্রু সীমান্তের আধা কিলোমিটার ভিতরে পড়েছে। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পক্ষান্তরে ৩ সেপ্টেম্বর ঘুমধুম সীমান্তে তমব্রুতে দু’টি শেল নিক্ষেপ করা হয়। তা বাংলাদেশি ভূখ-ের প্রায় ১২০ মিটার ভিতরে বিস্ফোরিত হয়।

আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি মায়ানমারের স্পষ্ট অসম্মান দেখানোতে আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করছি। ২৮ আগস্ট প্রথম দফায় আইন লঙ্ঘন করার জন্য তাদের কাছে অভিযোগ দেয়া সত্ত্বেও দু’বার সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ভয়াবহ শেল নিক্ষেপ করেছে।

সাধারণত, যদি দুই দেশের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকে তাহলে তাদের মধ্যবর্তী সীমান্তের কাছে কোনো অপারেশন চালানোর আগে সতর্কতা দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশকে এমন কোনো তথ্য জানানো হয়নি। আরাকানদের বিরুদ্ধে এমন অপারেশন চালানোর বিষয় বাংলাদেশকে অবহিত না করা আন্তর্জাতিক আদর্শের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি মায়ানমারের অপরাধ এটাই প্রথম নয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যককে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেয়ার পরে এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের আকাশসীমা বারবার লঙ্ঘন করেছে তারা।

উপরন্তু তারা রাখাইন রাজ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে যাচ্ছে, যাতে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানকারী ১২ লাখ রোহিঙ্গার কেউই নিজের দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী না হন। মায়ানমার সরকারের এমন কর্মকা- রোহিঙ্গাদের নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। মায়ানমারের প্রায় তিনগুণ জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ। এখানে বসবাস করেন প্রায় ১৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। দৃশ্যত সেনাবাহিনী পরিচালিত মায়ানমার এভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশকেই টার্গেট করছে। এখানে উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে অন্য দেশগুলোর কাছে মায়ানমারের রয়েছে দুর্নাম। তাদের এই কর্মকা-ের কারণ এটা হতে পারে যে, রাজনীতি এবং কৌশলগত দিক দিয়ে বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। এর আন্তর্জাতিক সুনাম আছে। এখনও মায়ানমারকে অনুধাবন করতে হবে যে, বাংলাদেশও সামরিকভাবে সক্ষম। যদি মায়ানমার আক্রমণাত্মক কৌশল অব্যাহত রাখে, তাহলে সীমান্ত বরাবর বাংলাদেশও প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। এটা হলে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হতে পারে।

যদিও বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, তবে যেসব ঘটনা ঘটে গেছে তাতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং ভূখ-গত অখ-তা নিয়ে প্রশ্ন উঠার জন্য যথেষ্ট। মায়ানমার থেকে সাম্প্রতিক মর্টার শেল নিক্ষেপ, সীমান্ত অঞ্চলে বৈষম্যহীন আকাশপথে গুলি এবং আকাশসীমা লঙ্ঘন সহ গভীর উদ্বেগের কথা রোববার পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত এলাকার এসব সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কাইওয়া মোয়েকে তলব করা হয়েছিল। গভীর উদ্বেগ জানানোর জন্য এক সপ্তাহের সামান্য বেশি সময়ের মধ্যে এই দূতকে তিনবার তলব করে মন্ত্রণালয়। এ পরিস্থিতিতে মায়ানমারের আচরণের বিষয়ে কঠোর কূটনৈতিক আপত্তি জানানো উচিত বাংলাদেশের এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটতে পারেÑ সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাতে হবে।

লেখাটি ব্যাংকক পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে।

[লেখক : আসামের গুয়াহাটি ইউনিভার্সিটির গবেষক। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে শরণার্থী, রাজনৈতিক, অর্থনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে লেখালেখি করেন]

অনুবাদ: মেহজাবিন ভানু। অনুবাদক একজন উন্নয়নকর্মী।

রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৭ ভাদ্র ১৪২৯ ১৪ সফর ১৪৪৪

মায়ানমারকে অবশ্যই গুলি বন্ধ করতে হবে

অর্পিতা হাজারিকা

মায়ানমার থেকে ৩ সেপ্টেম্বর কমপক্ষে দু’টি মর্টার শেল ছোড়া হয়েছে বাংলাদেশের ভিতরে। আন্তর্জাতিক আইনে এটা বেআইনি কাজ। এর আগে একই স্থানে ২৮ আগস্ট ভয়াবহ দু’টি গোলা নিক্ষেপ করে মায়ানমার। ঢাকায় নিযুক্ত মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশ সেই ঘটনার প্রতিবাদও করে। কিন্তু প্রতিবাদ করার ৫দিন পরেই আবারো গুলির ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশি তদন্ত অনুসারে, বান্দরবানের ঘুমধুম পাহাড়ি এলাকায় কমপক্ষে দু’টি যুদ্ধবিমান বাংলাদেশ সীমান্তের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে। এ সময় কমপক্ষে আট রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। অন্যদিকে দু’টি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে কমপক্ষে ৩০টি গোলা ছোড়া হয়েছে। উপরন্তু আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহীদের (আরাকান আর্মি) দমন করতে সীমান্ত এলাকায় মায়ানমারের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ফের রোহিঙ্গাদের আতঙ্কিত করে তুলবে। এতে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একদিকে বাংলাদেশের ভিতরে এরই মধ্যে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কৌশলে নিষ্ক্রিয় করে রাখার অভিযোগ আছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অধিবাসীরা নতুন কোনো অনুপ্রবেশ হলে তা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েক দিন ধরে রাখাইন রাজ্যে লড়াই চলমান। এই এলাকাটি বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তবর্তী। বান্দরবানের ঘুমধুম এবং তমব্রু সীমান্তের অধিবাসীরা আতঙ্কিত। কোনো কোনো শরণার্থী এরই মধ্যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

রাখাইনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যখন মায়ানমারের সেনাবাহিনী লড়াই করছে, তখনই সেনাবাহিনী কায়া, কাইন এবং চীন রাজ্যে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে বড় সামরিক অপারেশন চালাচ্ছে। এ যুদ্ধে মায়ানমারের সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমানও ব্যবহার করছে।

মায়ানমারের সামরিক জান্তা ২০২৩ সালের আগস্টে জাতীয় নির্বাচন করতে চায়। তার আগে তারা রাখাইন এবং অন্য রাজ্যগুলোতে তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের কাছে রাখাইন রাজ্যটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই রাজ্যটির সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশ এবং ভারতের সঙ্গে। এখানে যুদ্ধ হলেই শরণার্থীরা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে চলে আসে। এ কারণে সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা রাখাইনের এই যুদ্ধ নিয়ে ভীত-শঙ্কিত।

কয়েক বছর ধরে তমব্রু সীমান্তে নাইক্ষ্যংছড়িতে বসবাস করছেন সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা। ওই এলাকায় চালানো হচ্ছে সহিংসতা। এই সহিংসতার কারণে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশে ছুটে আসতে পারেন। অভিযোগ আছে, মায়ানমারে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার জন্য একটি ষড়যন্ত্র সাজানো হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টেও এভাবে মায়ানমারের সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার উড়িয়েছিল। মর্টার শেল এবং বুলেট ছোড়া হয়েছিল বাংলাদেশে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, মায়ানমারের কৌশলই এটা, যাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন।

গত ২৮ আগস্ট যে দু’টি শেল ছোড়া হয়েছে তা তমব্রু সীমান্তের আধা কিলোমিটার ভিতরে পড়েছে। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পক্ষান্তরে ৩ সেপ্টেম্বর ঘুমধুম সীমান্তে তমব্রুতে দু’টি শেল নিক্ষেপ করা হয়। তা বাংলাদেশি ভূখ-ের প্রায় ১২০ মিটার ভিতরে বিস্ফোরিত হয়।

আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি মায়ানমারের স্পষ্ট অসম্মান দেখানোতে আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করছি। ২৮ আগস্ট প্রথম দফায় আইন লঙ্ঘন করার জন্য তাদের কাছে অভিযোগ দেয়া সত্ত্বেও দু’বার সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ভয়াবহ শেল নিক্ষেপ করেছে।

সাধারণত, যদি দুই দেশের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকে তাহলে তাদের মধ্যবর্তী সীমান্তের কাছে কোনো অপারেশন চালানোর আগে সতর্কতা দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশকে এমন কোনো তথ্য জানানো হয়নি। আরাকানদের বিরুদ্ধে এমন অপারেশন চালানোর বিষয় বাংলাদেশকে অবহিত না করা আন্তর্জাতিক আদর্শের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি মায়ানমারের অপরাধ এটাই প্রথম নয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যককে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেয়ার পরে এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের আকাশসীমা বারবার লঙ্ঘন করেছে তারা।

উপরন্তু তারা রাখাইন রাজ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে যাচ্ছে, যাতে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানকারী ১২ লাখ রোহিঙ্গার কেউই নিজের দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী না হন। মায়ানমার সরকারের এমন কর্মকা- রোহিঙ্গাদের নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। মায়ানমারের প্রায় তিনগুণ জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ। এখানে বসবাস করেন প্রায় ১৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। দৃশ্যত সেনাবাহিনী পরিচালিত মায়ানমার এভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশকেই টার্গেট করছে। এখানে উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে অন্য দেশগুলোর কাছে মায়ানমারের রয়েছে দুর্নাম। তাদের এই কর্মকা-ের কারণ এটা হতে পারে যে, রাজনীতি এবং কৌশলগত দিক দিয়ে বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। এর আন্তর্জাতিক সুনাম আছে। এখনও মায়ানমারকে অনুধাবন করতে হবে যে, বাংলাদেশও সামরিকভাবে সক্ষম। যদি মায়ানমার আক্রমণাত্মক কৌশল অব্যাহত রাখে, তাহলে সীমান্ত বরাবর বাংলাদেশও প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। এটা হলে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হতে পারে।

যদিও বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, তবে যেসব ঘটনা ঘটে গেছে তাতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং ভূখ-গত অখ-তা নিয়ে প্রশ্ন উঠার জন্য যথেষ্ট। মায়ানমার থেকে সাম্প্রতিক মর্টার শেল নিক্ষেপ, সীমান্ত অঞ্চলে বৈষম্যহীন আকাশপথে গুলি এবং আকাশসীমা লঙ্ঘন সহ গভীর উদ্বেগের কথা রোববার পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত এলাকার এসব সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কাইওয়া মোয়েকে তলব করা হয়েছিল। গভীর উদ্বেগ জানানোর জন্য এক সপ্তাহের সামান্য বেশি সময়ের মধ্যে এই দূতকে তিনবার তলব করে মন্ত্রণালয়। এ পরিস্থিতিতে মায়ানমারের আচরণের বিষয়ে কঠোর কূটনৈতিক আপত্তি জানানো উচিত বাংলাদেশের এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটতে পারেÑ সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাতে হবে।

লেখাটি ব্যাংকক পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে।

[লেখক : আসামের গুয়াহাটি ইউনিভার্সিটির গবেষক। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে শরণার্থী, রাজনৈতিক, অর্থনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে লেখালেখি করেন]

অনুবাদ: মেহজাবিন ভানু। অনুবাদক একজন উন্নয়নকর্মী।