ভারতের ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন মুস্তাফিজুর রহমানের

গত এক যুগে ভারত থেকে তিন দফায় নেয়া ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সাফল্য পাচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি বিবিআইএন এবং বিমসটেক জোটভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানির বড় সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে নিজেদের কাজগুলো (হোমওয়ার্ক) গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে।’

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব (শুল্ক অব্যাহতি ও প্রকল্প সুবিধা) ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম রচিত ‘দ্য আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে কথা বলছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর পরে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। প্রতিবেশী হিসেবে সেখানে রপ্তানি বাড়ানোর যে সুযোগ বাংলাদেশের রয়েছে, তা কাজে লাগাতে নিজেদের প্রস্তুতি নিতে হবে আগে।’

ঢাকার সার্কিট হাউস রোডে তথ্য ভবন মিলনায়তনে এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ আলী আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেম এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানও বক্তব্য দেন।

অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০১০, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে ভারত আমাদের এলওসি (লাইন অব ক্রেডিট) দিলেও আমরা কেন তা বাস্তবায়ন করতে পারছি না। আমরা এখনও ২০১০ সালের এলওসির প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে পারিনি। অবশ্যই আমাদের কাউন্টার পার্ট আছে। কীভাবে তাদের সঙ্গে মীমাংসা করতে পারি তা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই বাস্তবায়ন এগিয়ে নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় এলওসির আওতায় আশুগঞ্জ নদী বন্দর তৈরি করে এরপর আগরতলা পর্যন্ত চার লেইন সড়ক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও সে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি। আমাদের নিজেদের হোম ওয়ার্ক আমরা করতে পারিনি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে ভারতের সঙ্গে বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে এবং যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।’

অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন অংশীদার ভারতের সঙ্গে এখন পর্যন্ত তিনটি লাইন অব ক্রেডিট চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এই তিন এলওসির অধীনে মোট ৭ দশমিক ৩৬২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। কিন্তু চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত অর্থছাড় হয়েছে মোট ১২২ দশমিক ২ কোটি ডলার।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘এখন অর্থনৈতিক জোটের নতুন ধারণা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক অর্থনীতি বিবেচনায় তিন, চার বা পাঁচটি দেশের মধ্যেও উপ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট হতে পারে। নতুন এই ধারণা থেকেই বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপালসহ চার দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক জোট হয়েছে।’

বিমসটেক এবং বিবিআইএন দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি করতে পারলে, বাণিজ্য বিনিয়োগ ও যোগাযোগ- এই ত্রিমাত্রিক সংশ্লেষ তৈরি করতে পারলে ভারত এবং জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর বড় সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ‘দ্য আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ বইটির দুই প্রতিপাদ্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বইটি মূলত মুক্ত বাণিজ্যের অঙ্গীকারের ওপর লেখা। বিশেষভাবে সাফটার বিভিন্ন রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে।

সেলিম রায়হান বলেন, ‘এ আঞ্চলের মোট অর্থনীতির প্রায় ৭০ শতাংশই ভারতের। পৃথিবীর অন্য কোনও অঞ্চলে এত একক আধিপত্য আর কোন দেশের নেই। তাই এ অঞ্চলে অনেক কিছুই দোদুল্যমান।’ এই ‘অসম অর্থনীতির’ সঙ্গে বাণিজ্য সমন্বয় করতে মানসম্পন্ন মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।

সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৮ ভাদ্র ১৪২৯ ১৫ সফর ১৪৪৪

ভারতের ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন মুস্তাফিজুর রহমানের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

গত এক যুগে ভারত থেকে তিন দফায় নেয়া ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সাফল্য পাচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি বিবিআইএন এবং বিমসটেক জোটভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানির বড় সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে নিজেদের কাজগুলো (হোমওয়ার্ক) গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে।’

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব (শুল্ক অব্যাহতি ও প্রকল্প সুবিধা) ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম রচিত ‘দ্য আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে কথা বলছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর পরে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। প্রতিবেশী হিসেবে সেখানে রপ্তানি বাড়ানোর যে সুযোগ বাংলাদেশের রয়েছে, তা কাজে লাগাতে নিজেদের প্রস্তুতি নিতে হবে আগে।’

ঢাকার সার্কিট হাউস রোডে তথ্য ভবন মিলনায়তনে এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ আলী আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেম এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানও বক্তব্য দেন।

অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০১০, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে ভারত আমাদের এলওসি (লাইন অব ক্রেডিট) দিলেও আমরা কেন তা বাস্তবায়ন করতে পারছি না। আমরা এখনও ২০১০ সালের এলওসির প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে পারিনি। অবশ্যই আমাদের কাউন্টার পার্ট আছে। কীভাবে তাদের সঙ্গে মীমাংসা করতে পারি তা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই বাস্তবায়ন এগিয়ে নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় এলওসির আওতায় আশুগঞ্জ নদী বন্দর তৈরি করে এরপর আগরতলা পর্যন্ত চার লেইন সড়ক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও সে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি। আমাদের নিজেদের হোম ওয়ার্ক আমরা করতে পারিনি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে ভারতের সঙ্গে বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে এবং যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।’

অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন অংশীদার ভারতের সঙ্গে এখন পর্যন্ত তিনটি লাইন অব ক্রেডিট চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এই তিন এলওসির অধীনে মোট ৭ দশমিক ৩৬২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। কিন্তু চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত অর্থছাড় হয়েছে মোট ১২২ দশমিক ২ কোটি ডলার।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘এখন অর্থনৈতিক জোটের নতুন ধারণা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক অর্থনীতি বিবেচনায় তিন, চার বা পাঁচটি দেশের মধ্যেও উপ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট হতে পারে। নতুন এই ধারণা থেকেই বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপালসহ চার দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক জোট হয়েছে।’

বিমসটেক এবং বিবিআইএন দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি করতে পারলে, বাণিজ্য বিনিয়োগ ও যোগাযোগ- এই ত্রিমাত্রিক সংশ্লেষ তৈরি করতে পারলে ভারত এবং জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর বড় সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ‘দ্য আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ বইটির দুই প্রতিপাদ্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বইটি মূলত মুক্ত বাণিজ্যের অঙ্গীকারের ওপর লেখা। বিশেষভাবে সাফটার বিভিন্ন রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে।

সেলিম রায়হান বলেন, ‘এ আঞ্চলের মোট অর্থনীতির প্রায় ৭০ শতাংশই ভারতের। পৃথিবীর অন্য কোনও অঞ্চলে এত একক আধিপত্য আর কোন দেশের নেই। তাই এ অঞ্চলে অনেক কিছুই দোদুল্যমান।’ এই ‘অসম অর্থনীতির’ সঙ্গে বাণিজ্য সমন্বয় করতে মানসম্পন্ন মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।