ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বিভিন্ন মার্কেটের নিয়ন্ত্রক (গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া, জাকের প্লাজা, সিটি প্লাজা ও নগর প্লাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি) মো. দেলোয়ার হোসেন দেলু ওরফে ‘ক্যাসিনো দেলু’র ১১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করে দুদক। অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দিলে দেলোয়ার হোসেন দেলু সম্পদ বিরবণী দাখিল করেন। পরে অনুসন্ধানে তার ১১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য-প্রমাণ মেলে। অবৈধ সম্পদের মধ্যে ফুলবাড়িয়া, সিটি প্লাজা ও নগর প্লাজায় ১৬টি দোকান থাকার প্রমাণ মিলে। এছাড়া দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করে সেই টাকায় মালয়েশিয়ায় আলীশান বাড়ি কিনেন দেলোয়ার হোসেন দেলু। এছাড়া প্রিতম-জামান টাওয়ারের ১৫ তলায় মেয়ের নামে ৮ হাজার ৪৪০ বর্গফুট বাণিজ্যিক স্পেস থাকারও প্রমাণ পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে অসব সম্পদ অর্জনের বৈধ কোন উৎস দেখাতে পারেননি দেলু।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি দেলোয়ার হোসেন গত ২৭ অক্টোবরে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তার নিজ নামে মোট ৬ কোটি ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭০ টাকার স্থাবর সম্পদের হিসাব দাখিল করেছেন। কিন্তু সম্পদ যাচাইয়ে তার নিজ নামে ও বেনামে মোট ৯ কোটি ৬৫ লাখ এক হাজার ২২৫ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ যাচাইয়ের সময় ৩ কোটি ৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৬৪ টাকার স্থাবর সম্পদ গোপন করেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।
অন্যদিকে নিজ নামে এক কোটি ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩৮৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দাখিল করেছেন দেলোয়ার হোসেন। অনুসন্ধানে তার নামে-বেনামে মোট ১০ কোটি ৮৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬১৪ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব পাওয়া যায়। আয়কর নথি পর্যালোচনা দেখা গেছে, তিনি তার আয়কর নথিতে গৃহসম্পত্তির আয়, লিমিটেড কোম্পানির বেতন, অন্যান্য উৎসের আয়ের পাশাপাশি লিমিটেড কোম্পানির ব্যবসার আয় তার ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু লিমিটেড কোম্পানির ব্যবসার আয় বা দায়-দেনা ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে প্রদর্শন করতে পারেন না। ব্যক্তি শুধুমাত্র লিমিটেড কোম্পানির সম্মানী গ্রহণ করতে পারেন, যা ব্যক্তির ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে প্রদর্শন করা যায়। অনুসন্ধানে দেলোয়ার হোসেনের নথি পর্যালোচনায় মাত্র ৫৫ লাখ ৩১ হাজার ৭০০ টাকার গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া গেছে।
সুতরাং অনুসন্ধানের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় ১০ কোটি ৮৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬১৪ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ও পারিবারিক ব্যয় হিসাবে ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার ৯৬৭ টাকা যোগ করলে মোট তার নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় ১১ কোটি ৫৮ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮১ টাকা। যেখান থেকে গ্রহণযোগ্য ৫৫ লাখ ৩১ হাজার ৭০০ টাকা আয় বাদ দিলে মোট ১১ কোটি ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যায়। এ কারণে দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ও ২৬(২) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালে দেলোয়ার হোসেন দেলুর হাত ধরে দেশে অনলাইন ক্যাসিনোর যাত্রা শুরু হয়। বিদেশ থেকে অনলাইন ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানি করে ব্যবসা শুরু করছিলেন রাজধানীর পল্টন এলাকার প্রিতম-জামান টাওয়ারের ১৩ ও ১৪ তলায়। ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য লোকও আনা হয় নেপাল থেকে। ২০১৯ সালের শুদ্ধি অভিযানের সময় তিনি মূলত আলোচনায় আসেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বিভিন্ন ক্লাব থেকে অবৈধ ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালানার অভিযোগে যুবলীগ ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক অনু, রুপম ভূঁইয়াসহ একাধিক রাজনৈতিক নেতা ও তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। এসব ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। তবে সে সময় ক্যাসিনোর মূল জনক দেলোয়ার হোসেন দেলু ছিলেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন মার্কেটে অবৈধভাবে তৈরি করা কয়েকশ’ দোকান উচ্ছেদ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপস। অভিযোগ উঠেছে এসব দোকান দেলোয়ার হোসেন দেলু অবৈধভাবে তৈরি করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। প্রতিটি দোকান ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। এভাবে দোকান বিক্রি করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন দেলু। ২০২১ সালে তিনটি মার্কেটের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর বিরুদ্ধে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভুক্তভোগী ১৫৮ জন ব্যবসায়ী।
সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৮ ভাদ্র ১৪২৯ ১৫ সফর ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বিভিন্ন মার্কেটের নিয়ন্ত্রক (গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া, জাকের প্লাজা, সিটি প্লাজা ও নগর প্লাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি) মো. দেলোয়ার হোসেন দেলু ওরফে ‘ক্যাসিনো দেলু’র ১১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করে দুদক। অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দিলে দেলোয়ার হোসেন দেলু সম্পদ বিরবণী দাখিল করেন। পরে অনুসন্ধানে তার ১১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য-প্রমাণ মেলে। অবৈধ সম্পদের মধ্যে ফুলবাড়িয়া, সিটি প্লাজা ও নগর প্লাজায় ১৬টি দোকান থাকার প্রমাণ মিলে। এছাড়া দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করে সেই টাকায় মালয়েশিয়ায় আলীশান বাড়ি কিনেন দেলোয়ার হোসেন দেলু। এছাড়া প্রিতম-জামান টাওয়ারের ১৫ তলায় মেয়ের নামে ৮ হাজার ৪৪০ বর্গফুট বাণিজ্যিক স্পেস থাকারও প্রমাণ পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে অসব সম্পদ অর্জনের বৈধ কোন উৎস দেখাতে পারেননি দেলু।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি দেলোয়ার হোসেন গত ২৭ অক্টোবরে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তার নিজ নামে মোট ৬ কোটি ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭০ টাকার স্থাবর সম্পদের হিসাব দাখিল করেছেন। কিন্তু সম্পদ যাচাইয়ে তার নিজ নামে ও বেনামে মোট ৯ কোটি ৬৫ লাখ এক হাজার ২২৫ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ যাচাইয়ের সময় ৩ কোটি ৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৬৪ টাকার স্থাবর সম্পদ গোপন করেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।
অন্যদিকে নিজ নামে এক কোটি ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩৮৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দাখিল করেছেন দেলোয়ার হোসেন। অনুসন্ধানে তার নামে-বেনামে মোট ১০ কোটি ৮৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬১৪ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব পাওয়া যায়। আয়কর নথি পর্যালোচনা দেখা গেছে, তিনি তার আয়কর নথিতে গৃহসম্পত্তির আয়, লিমিটেড কোম্পানির বেতন, অন্যান্য উৎসের আয়ের পাশাপাশি লিমিটেড কোম্পানির ব্যবসার আয় তার ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু লিমিটেড কোম্পানির ব্যবসার আয় বা দায়-দেনা ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে প্রদর্শন করতে পারেন না। ব্যক্তি শুধুমাত্র লিমিটেড কোম্পানির সম্মানী গ্রহণ করতে পারেন, যা ব্যক্তির ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে প্রদর্শন করা যায়। অনুসন্ধানে দেলোয়ার হোসেনের নথি পর্যালোচনায় মাত্র ৫৫ লাখ ৩১ হাজার ৭০০ টাকার গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া গেছে।
সুতরাং অনুসন্ধানের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় ১০ কোটি ৮৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬১৪ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ও পারিবারিক ব্যয় হিসাবে ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার ৯৬৭ টাকা যোগ করলে মোট তার নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় ১১ কোটি ৫৮ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮১ টাকা। যেখান থেকে গ্রহণযোগ্য ৫৫ লাখ ৩১ হাজার ৭০০ টাকা আয় বাদ দিলে মোট ১১ কোটি ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া যায়। এ কারণে দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ও ২৬(২) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালে দেলোয়ার হোসেন দেলুর হাত ধরে দেশে অনলাইন ক্যাসিনোর যাত্রা শুরু হয়। বিদেশ থেকে অনলাইন ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানি করে ব্যবসা শুরু করছিলেন রাজধানীর পল্টন এলাকার প্রিতম-জামান টাওয়ারের ১৩ ও ১৪ তলায়। ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য লোকও আনা হয় নেপাল থেকে। ২০১৯ সালের শুদ্ধি অভিযানের সময় তিনি মূলত আলোচনায় আসেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বিভিন্ন ক্লাব থেকে অবৈধ ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালানার অভিযোগে যুবলীগ ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক অনু, রুপম ভূঁইয়াসহ একাধিক রাজনৈতিক নেতা ও তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। এসব ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। তবে সে সময় ক্যাসিনোর মূল জনক দেলোয়ার হোসেন দেলু ছিলেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন মার্কেটে অবৈধভাবে তৈরি করা কয়েকশ’ দোকান উচ্ছেদ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপস। অভিযোগ উঠেছে এসব দোকান দেলোয়ার হোসেন দেলু অবৈধভাবে তৈরি করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। প্রতিটি দোকান ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। এভাবে দোকান বিক্রি করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন দেলু। ২০২১ সালে তিনটি মার্কেটের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর বিরুদ্ধে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভুক্তভোগী ১৫৮ জন ব্যবসায়ী।