প্লাস্টিক রিসাইক্লিং, নারী উদ্যোক্তা মাগুরার তাসলিমার

নিজ বাড়িতে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা গড়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন মাগুরা সদরের বড়খরি গ্রামের তাসলিমা সুলতানা নামে এ নারী উদ্যোক্তা। এতে ওই এলাকার অন্তত ৫০ জন অসহায় নারীসহ কর্মসংস্থান হয়েছে ২০০ পরিবারের। অন্যদিকে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি নারীর অর্থনৈতিক কাজে বাড়ছে অংশগ্রহণ। সরকারের সহায়তা পেলে স্থানীয়ভাবে তৈরি যন্ত্রের পরিবর্তে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপন করে বৃহৎ পরিম-লে ব্যবসা প্রসারের আশা করেন এই উদ্যোক্তা।

সরেজমিন মাগুরা-যশোর সড়কের বড়খড়ি গ্রামে ফোর স্টার প্লাস্টিক রিসাইক্লিং নামে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন স্থান থেকে প্লাস্টিকের ফেলে দেয়া পুরাতন বোতল, চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন তৈজষপত্র বর্জ্য হিসেবে কিনে এনে এখানে তা নানা রঙে পৃথক করে বাছাই করা হচ্ছে। এরপর নির্দিষ্ট মেশিনে প্লাস্টিকগুলোকে প্রথমে কেটে টুকরো করা হচ্ছে। পরে সেগুলোকে একটি পাত্রে দিয়ে মেশিনের মাধ্যমে সাবানগুড়ো দিয়ে ধুয়ে চৌবাচ্চায় ফেলা হচ্ছে। পরে কাটা প্লাস্টিক অন্য একটি ইলেকট্রিক ড্রায়ারের মাধ্যমে শুকিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হচ্ছে। পরে সেগুলো ঠা-া হলে বস্তায় ভরে রাখা হচ্ছে রপ্তানির উদ্দেশে।

প্রতিষ্ঠানের মালিক তাসলিমা সুলতানা জানান, এসব প্লাস্টিক বিভিন্নভাবে পানি ও মাটিকে দুষিত করে। প্রথম দিকে এগুলোকে সংগ্রহ করে ট্রাকে ভরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিতাম। সেখান থেকে তারা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করত। ২০১৯ সালে প্রথম প্রক্রিয়াজাত করা প্লাস্টিক ভারত, চীন ও ভিয়েতনামে পাঠানো শুরু করি। এরপর কোভিডের কারণে কিছুদিন অনিয়মিত থাকলেও বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখন আবার পুন্যোদ্যমে কাজ শুরু করেছি।

উদ্যোক্তা তাসলিমা জানান, বছরে এখান থেকে তিনি প্রক্রিয়াজাত করছেন অন্তত ৪০০ টন প্লাস্টিক চিপস। যার বাজারমূল্য অন্তত ৪ কোটি টাকা। দেশে ও বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ খাতে উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। তবে এ কারখানাটি সনাতন পদ্ধতিতে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করার পরিবর্তে যদি স্বয়ংক্রিয় ও কম্পিউটর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রপাতি স্থাপন করা যেত তাহলে তিনি আরও ব্যাপক পরিসরে এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে পারতেন। তিনি বলেন, পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা প্লাস্টিকের চাহিদা দেশে বিদেশে ব্যাপক। সরকারি সহায়তা বা ব্যাংকের সহায়তা পেলে স্বয়ংক্রিয় মেশিন স্থাপন করে এখান থেকে কমপক্ষে ৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারবেন তিনি। এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও ব্যাপক সম্ভবনার কথা জানান তিনি।

প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার মো. সাবুর আলী জানান, প্লাস্টিকের এসব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আবার আমাদের দেশে মানুষ বেশি হওয়ায় সব জায়গাতেই প্রচুর বর্জ্য পাওয়া যায়। এর ফলে একদিকে যেমন আমাদরে পরিবেশের উপকার হচ্ছে অন্যদিকে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। সরকারের প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে আমরা ফেলে দেয়া প্লাস্টিক দিয়েই অনেক মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারবো। সেইসঙ্গে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আনতে সক্ষম হবো।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি এটিএম আনিসুর রহমান বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের মাটি, পানি ও পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে। সব ধরনের প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে আমাদের পরিবেশ কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব। উপরন্তু এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি আমাদের আরও বেশি আশাবাদী করে।

কারখানাটি পরিদর্শন করে একজন নারীর এমন সাহসী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এ ধরনের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোগকে লাভজনক হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক সহায়তার আশ^াস দিয়েছেন বিসিক মাগুরা উপকেন্দ্রের জেলা ব্যবস্থাপক ফরিদা ইয়াসমিন।

সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৮ ভাদ্র ১৪২৯ ১৫ সফর ১৪৪৪

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং, নারী উদ্যোক্তা মাগুরার তাসলিমার

রূপক আইচ, মাগুরা

image

মাগুরা : নিজ বাড়ির আঙিনায় প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা, বিসিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন তাসলিমা সুলতানা -সংবাদ

নিজ বাড়িতে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা গড়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন মাগুরা সদরের বড়খরি গ্রামের তাসলিমা সুলতানা নামে এ নারী উদ্যোক্তা। এতে ওই এলাকার অন্তত ৫০ জন অসহায় নারীসহ কর্মসংস্থান হয়েছে ২০০ পরিবারের। অন্যদিকে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি নারীর অর্থনৈতিক কাজে বাড়ছে অংশগ্রহণ। সরকারের সহায়তা পেলে স্থানীয়ভাবে তৈরি যন্ত্রের পরিবর্তে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র স্থাপন করে বৃহৎ পরিম-লে ব্যবসা প্রসারের আশা করেন এই উদ্যোক্তা।

সরেজমিন মাগুরা-যশোর সড়কের বড়খড়ি গ্রামে ফোর স্টার প্লাস্টিক রিসাইক্লিং নামে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন স্থান থেকে প্লাস্টিকের ফেলে দেয়া পুরাতন বোতল, চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন তৈজষপত্র বর্জ্য হিসেবে কিনে এনে এখানে তা নানা রঙে পৃথক করে বাছাই করা হচ্ছে। এরপর নির্দিষ্ট মেশিনে প্লাস্টিকগুলোকে প্রথমে কেটে টুকরো করা হচ্ছে। পরে সেগুলোকে একটি পাত্রে দিয়ে মেশিনের মাধ্যমে সাবানগুড়ো দিয়ে ধুয়ে চৌবাচ্চায় ফেলা হচ্ছে। পরে কাটা প্লাস্টিক অন্য একটি ইলেকট্রিক ড্রায়ারের মাধ্যমে শুকিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হচ্ছে। পরে সেগুলো ঠা-া হলে বস্তায় ভরে রাখা হচ্ছে রপ্তানির উদ্দেশে।

প্রতিষ্ঠানের মালিক তাসলিমা সুলতানা জানান, এসব প্লাস্টিক বিভিন্নভাবে পানি ও মাটিকে দুষিত করে। প্রথম দিকে এগুলোকে সংগ্রহ করে ট্রাকে ভরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিতাম। সেখান থেকে তারা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করত। ২০১৯ সালে প্রথম প্রক্রিয়াজাত করা প্লাস্টিক ভারত, চীন ও ভিয়েতনামে পাঠানো শুরু করি। এরপর কোভিডের কারণে কিছুদিন অনিয়মিত থাকলেও বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখন আবার পুন্যোদ্যমে কাজ শুরু করেছি।

উদ্যোক্তা তাসলিমা জানান, বছরে এখান থেকে তিনি প্রক্রিয়াজাত করছেন অন্তত ৪০০ টন প্লাস্টিক চিপস। যার বাজারমূল্য অন্তত ৪ কোটি টাকা। দেশে ও বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ খাতে উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। তবে এ কারখানাটি সনাতন পদ্ধতিতে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করার পরিবর্তে যদি স্বয়ংক্রিয় ও কম্পিউটর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রপাতি স্থাপন করা যেত তাহলে তিনি আরও ব্যাপক পরিসরে এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে পারতেন। তিনি বলেন, পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করা প্লাস্টিকের চাহিদা দেশে বিদেশে ব্যাপক। সরকারি সহায়তা বা ব্যাংকের সহায়তা পেলে স্বয়ংক্রিয় মেশিন স্থাপন করে এখান থেকে কমপক্ষে ৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারবেন তিনি। এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও ব্যাপক সম্ভবনার কথা জানান তিনি।

প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার মো. সাবুর আলী জানান, প্লাস্টিকের এসব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আবার আমাদের দেশে মানুষ বেশি হওয়ায় সব জায়গাতেই প্রচুর বর্জ্য পাওয়া যায়। এর ফলে একদিকে যেমন আমাদরে পরিবেশের উপকার হচ্ছে অন্যদিকে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। সরকারের প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে আমরা ফেলে দেয়া প্লাস্টিক দিয়েই অনেক মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারবো। সেইসঙ্গে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আনতে সক্ষম হবো।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি এটিএম আনিসুর রহমান বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের মাটি, পানি ও পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে। সব ধরনের প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে আমাদের পরিবেশ কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব। উপরন্তু এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি আমাদের আরও বেশি আশাবাদী করে।

কারখানাটি পরিদর্শন করে একজন নারীর এমন সাহসী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এ ধরনের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোগকে লাভজনক হিসেবে গড়ে তুলতে সার্বিক সহায়তার আশ^াস দিয়েছেন বিসিক মাগুরা উপকেন্দ্রের জেলা ব্যবস্থাপক ফরিদা ইয়াসমিন।