যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইন টাওয়ারে হামলার ২১ বছর পূরণ হয়েছে গতকাল। এ হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৩ হাজারের বেশি মানুষ। এটি ছিল শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ একটি হামলা। কিন্তু দুই যুগ পার হয়ে গেলেও এখনো হামলার সাথে জড়িতদের বিচার করতে ব্যার্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকরাও বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ অন্যতম ব্যর্থতাই হলো তার বিচার করতে না পারা।
এ হামলার অন্যতম আসামি খালিদ শেখসহ আরও চারজন অভিযুক্ত এখনও গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দি। অসংখ্যবার পিছিয়েছে তাদের বিচার কার্যক্রম। সর্বশেষ গত মাসে অনুষ্ঠিতব্য শুনানিও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন হামলায় নিহতদের স্বজনরা। এখনও তারা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এই বিচারে চারজন বিচারক পাল্টানো হয়েছে। গত বছরই কর্নেল শেন কোহেন ছিলেন প্রধান বিচারক। আর এখন বিমানবাহিনীর কর্নেল ম্যাথিউ ম্যাককেইল।
২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ওই হামলায় নিজের ২৫ বছর বয়সি মেয়েকে হারিয়েছিলেন গর্ডন হাবেরম্যান নামে এক মার্কিনি। বিচারকার্যের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে তিনি হতাশ। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কি হবে।’ উইসকনসিনে নিজের বাড়ি থেকে চার বার গুয়ানতানামো বে গেছেন তিনি শুধু ন্যায়বিচার দেখার জন্য। কিন্তু বারবারই হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে যুক্তরাষ্ট্রে এক দিন এটা নিয়ে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার স্বাক্ষী হতে চাই।’
বিচারে শেখ মোহাম্মদ দোষী স্যব্যস্ত হলে তার মৃত্যুদ- হতে পারে। তবে শেখ মোহাম্মদের আইনজীবী জেমস কনওয়েল বলেন, ‘বিচার পূর্ববর্তী আপসে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে দুই পক্ষ। এতে করে বিচারে তাদের সাজা কম হতে পারে। তারপরও অনেক দিনের শাস্তি হবে নিশ্চিত।’ নিউইয়র্কের সাবেক অ্যাটর্নি ডেভিড কেলি সে সময় বিচার বিভাগের তদন্ত কমিটির উপপ্রধান ছিলেন। তিনি এই দীর্ঘসূত্রতাকে হতাহতদের স্বজনদের জন্য দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তার দাবি এটা আমাদের আইনি সংবিধান অনুযায়ী চরম ব্যর্থতা। আমাদের ইতিহাসের জন্য দুঃখজনক।
২০০৯ মালে ওবামা প্রশাসন শেখ মোহাম্মদের বিচারকে নিউইয়র্ক আদালতে আনতে চায়। ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালতে তার বিচার হওয়ার কথা ছিল। ওবামা বলেছিলেন, ‘ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই।’ কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে সেই মামলা আর নিউইয়র্কে আসেনি এবং সামরিক আদালতেই তার বিচার চলছে বলে জানিয়ে আলজাজিরা।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করা আইনজীবী কেলি বলেন, ‘দুই দশক আগে শুরু হওয়া সামরিক বিচারে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ কবরেই ঘোষণা এলো যে সামরিক আদালতে তাদের বিচার হবে। এমনটা যে হতে পারে কেউ তা ভাবতেই পারেনি।’ সে সময়ে অ্যাটর্নি জেনারেল জন অ্যাশক্রফটও এই বিচারের পক্ষে ছিলেন না। কেলি বলছেন, ‘এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। বিচারকার্যও তাই এখন অনেক কঠিন। অনেক আলামত দুর্বল হয়ে পড়েছে, স্বাক্ষীদের পুরোপুরি হয়তো সব কথা মনেও নেই।
তবে সময়ের সঙ্গে কিন্তু হতাহতের শিকার স্বজনদের ক্ষত শুকায়নি। তারা এখনও বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। এমনই একজন স্বজন এডি ব্র্যাকেন। তার বোন লুসি ফিসম্যান সেদিনের হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। এডি বলেন, ‘পুরো বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের প্রশ্ন এত সময় পেরিয়ে গেলেও আমরা কি করছি। যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব এখনই এটি সমাধান করার। বিচারের চাকা ঘুরতেই হবে। হয়তো তার ধীরগতির কিন্তু ঘুরতেই হবে।’
২০১২ সালে তিনিও গুয়ানতানামো বে’-তে গিয়েছিলেন। আবার শুনানি হলেও তিনি যাবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না সেখানে গেলে পুরনো ক্ষত আবার আমাকে কষ্ট দেবে কি না। কিন্তু আমি যেতে চাই। আমার বোনও আমার জন্য তাই করত। শেখ মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হলেও যুক্তরাষ্ট ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেন ও ২০২২ সালে আয়মান আল জাওয়াহিরিকে হত্যা করে তারা। গুয়ানতানামো বে মামলায় মার্কিন বিচার বিভাগের আইনি পরামর্শক কেভিন পাওয়ার্স বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেভাবে গুয়ানতানামো বে পরিচালনা করে আর সেনাবাহিনী যেভাবে অপরাধ আদালত চালায়, পুরো প্রক্রিয়াটিতেই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার ১৯ জন সন্ত্রাসী মোট চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে বিভিন্ন শহরে একযোগে আঘাত হানে। ধ্বংস হয়ে যায় মার্কিন অর্থনৈতিক আধিপত্যের প্রতীক নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার। নিহত হয় প্রায় তিন হাজার মানুষ। তৃতীয় একটি বিমান বিধ্বস্ত হয় ওয়াশিংটন ডিসির পেন্টাগন ভবনে। আরও একটি বিমান আছড়ে পড়ে পেনসিলভানিয়ার এক মাঠে।
সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৮ ভাদ্র ১৪২৯ ১৫ সফর ১৪৪৪
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইন টাওয়ারে হামলার ২১ বছর পূরণ হয়েছে গতকাল। এ হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৩ হাজারের বেশি মানুষ। এটি ছিল শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ একটি হামলা। কিন্তু দুই যুগ পার হয়ে গেলেও এখনো হামলার সাথে জড়িতদের বিচার করতে ব্যার্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকরাও বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ অন্যতম ব্যর্থতাই হলো তার বিচার করতে না পারা।
এ হামলার অন্যতম আসামি খালিদ শেখসহ আরও চারজন অভিযুক্ত এখনও গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দি। অসংখ্যবার পিছিয়েছে তাদের বিচার কার্যক্রম। সর্বশেষ গত মাসে অনুষ্ঠিতব্য শুনানিও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন হামলায় নিহতদের স্বজনরা। এখনও তারা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এই বিচারে চারজন বিচারক পাল্টানো হয়েছে। গত বছরই কর্নেল শেন কোহেন ছিলেন প্রধান বিচারক। আর এখন বিমানবাহিনীর কর্নেল ম্যাথিউ ম্যাককেইল।
২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ওই হামলায় নিজের ২৫ বছর বয়সি মেয়েকে হারিয়েছিলেন গর্ডন হাবেরম্যান নামে এক মার্কিনি। বিচারকার্যের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে তিনি হতাশ। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কি হবে।’ উইসকনসিনে নিজের বাড়ি থেকে চার বার গুয়ানতানামো বে গেছেন তিনি শুধু ন্যায়বিচার দেখার জন্য। কিন্তু বারবারই হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে যুক্তরাষ্ট্রে এক দিন এটা নিয়ে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার স্বাক্ষী হতে চাই।’
বিচারে শেখ মোহাম্মদ দোষী স্যব্যস্ত হলে তার মৃত্যুদ- হতে পারে। তবে শেখ মোহাম্মদের আইনজীবী জেমস কনওয়েল বলেন, ‘বিচার পূর্ববর্তী আপসে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে দুই পক্ষ। এতে করে বিচারে তাদের সাজা কম হতে পারে। তারপরও অনেক দিনের শাস্তি হবে নিশ্চিত।’ নিউইয়র্কের সাবেক অ্যাটর্নি ডেভিড কেলি সে সময় বিচার বিভাগের তদন্ত কমিটির উপপ্রধান ছিলেন। তিনি এই দীর্ঘসূত্রতাকে হতাহতদের স্বজনদের জন্য দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তার দাবি এটা আমাদের আইনি সংবিধান অনুযায়ী চরম ব্যর্থতা। আমাদের ইতিহাসের জন্য দুঃখজনক।
২০০৯ মালে ওবামা প্রশাসন শেখ মোহাম্মদের বিচারকে নিউইয়র্ক আদালতে আনতে চায়। ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালতে তার বিচার হওয়ার কথা ছিল। ওবামা বলেছিলেন, ‘ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই।’ কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে সেই মামলা আর নিউইয়র্কে আসেনি এবং সামরিক আদালতেই তার বিচার চলছে বলে জানিয়ে আলজাজিরা।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করা আইনজীবী কেলি বলেন, ‘দুই দশক আগে শুরু হওয়া সামরিক বিচারে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ কবরেই ঘোষণা এলো যে সামরিক আদালতে তাদের বিচার হবে। এমনটা যে হতে পারে কেউ তা ভাবতেই পারেনি।’ সে সময়ে অ্যাটর্নি জেনারেল জন অ্যাশক্রফটও এই বিচারের পক্ষে ছিলেন না। কেলি বলছেন, ‘এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। বিচারকার্যও তাই এখন অনেক কঠিন। অনেক আলামত দুর্বল হয়ে পড়েছে, স্বাক্ষীদের পুরোপুরি হয়তো সব কথা মনেও নেই।
তবে সময়ের সঙ্গে কিন্তু হতাহতের শিকার স্বজনদের ক্ষত শুকায়নি। তারা এখনও বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। এমনই একজন স্বজন এডি ব্র্যাকেন। তার বোন লুসি ফিসম্যান সেদিনের হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। এডি বলেন, ‘পুরো বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের প্রশ্ন এত সময় পেরিয়ে গেলেও আমরা কি করছি। যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব এখনই এটি সমাধান করার। বিচারের চাকা ঘুরতেই হবে। হয়তো তার ধীরগতির কিন্তু ঘুরতেই হবে।’
২০১২ সালে তিনিও গুয়ানতানামো বে’-তে গিয়েছিলেন। আবার শুনানি হলেও তিনি যাবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না সেখানে গেলে পুরনো ক্ষত আবার আমাকে কষ্ট দেবে কি না। কিন্তু আমি যেতে চাই। আমার বোনও আমার জন্য তাই করত। শেখ মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হলেও যুক্তরাষ্ট ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেন ও ২০২২ সালে আয়মান আল জাওয়াহিরিকে হত্যা করে তারা। গুয়ানতানামো বে মামলায় মার্কিন বিচার বিভাগের আইনি পরামর্শক কেভিন পাওয়ার্স বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেভাবে গুয়ানতানামো বে পরিচালনা করে আর সেনাবাহিনী যেভাবে অপরাধ আদালত চালায়, পুরো প্রক্রিয়াটিতেই জটিলতা তৈরি হয়েছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার ১৯ জন সন্ত্রাসী মোট চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে বিভিন্ন শহরে একযোগে আঘাত হানে। ধ্বংস হয়ে যায় মার্কিন অর্থনৈতিক আধিপত্যের প্রতীক নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার। নিহত হয় প্রায় তিন হাজার মানুষ। তৃতীয় একটি বিমান বিধ্বস্ত হয় ওয়াশিংটন ডিসির পেন্টাগন ভবনে। আরও একটি বিমান আছড়ে পড়ে পেনসিলভানিয়ার এক মাঠে।