পাকিস্তানের বন্যার মতো জলবায়ু বিপর্যয় আগে দেখিনি : গুতেরেস

পাকিস্তানের চলমান বন্যাকে ভয়াবহ আখ্যায়িত করে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি ব্যাপক মাত্রার এই ‘জলবায়ু ধ্বংসলীলা কখনও দেখেননি। একইসঙ্গে এই ধরনের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির জন্য ধনী দেশগুলোকেও দায়ী করেছেন তিনি। পাকিস্তানে বন্যায় বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং অবকাঠামো ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাস্তব অবস্থা সচক্ষে দেখতে বন্যা-বিধ্বস্ত পাকিস্তান সফর করছেন গুতেরেস। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে চলমান এই বন্যায় প্রায় ১৪০০ জন মারা গেছেন এবং ১০ লাখেরও বেশি লোক বন্যায় গৃহহীন হয়েছেন। এছাড়া ভয়াবহ এই বন্যায় পাকিস্তানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। একইসঙ্গে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন এই দেশটিতে বন্যায় ব্যাপক ফসলহানিও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বন্যা পরিস্থিতি সচক্ষে দেখতে দেশটিতে সফরে যান জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। দেশটিতে সফরের দ্বিতীয় দিনে বন্দর নগরী করাচিতে গুতেরেস বলেন, ‘আমি বিশ্বের অনেক মানবিক বিপর্যয় দেখেছি, কিন্তু আমি কখনোই এই মাত্রায় জলবায়ু ধ্বংসলীলা দেখিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আজ যা দেখেছি তা বর্ণনা করার মতো কোনো শব্দ আমার কাছে নেই।’ চলমান বন্যায় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে এবং গত জুন মাসে শুরু হওয়া রেকর্ড বৃষ্টির কারণে বাড়িঘর, রাস্তা, সেতু, রেল নেটওয়ার্ক, গবাদি পশু এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

গুতেরেস বলেন, বন্যাবিধ্বস্ত পাকিস্তান পুনর্গঠনে কমপক্ষে এক হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তার সফরে পাকিস্তানে সহযোগিতা বাড়বে। সিন্ধু প্রদেশের সাক্কুর শহরে দায়িত্বরত সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, পাকিস্তানের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। জাতিসংঘ পাকিস্তানে যে সহায়তা দিয়েছে, তা সাগরে একবিন্দু পানির মতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গুতেরেস আরও বলেন, ‘আমাদের ক্ষমতা ও সম্পদ সীমিত। তবে আমরা পাকিস্তানের জনগণের পাশে আছি।’

গুতেরেস বলেছেন, তার সফর পাকিস্তানের জন্য সহায়তা জোগাবে বলে তিনি আশা করছেন। গত শুক্রবার দেশটিতে পৌঁছানোর পরপরই জাতিসংঘের প্রধান পাকিস্তানের জন্য ব্যাপক বৈশ্বিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল আগে থেকেই চলে আসা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০০ কোটি মার্কিন ডলার বলে অনুমান করেছেন।

তবে স্বাধীন বিশ্লেষকরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণকে ১৫০০ কোটি থেকে ২০০০ কোটি মার্কিন ডলারের মধ্যে রেখেছেন এবং তাদের আশঙ্কা, এটি আরও বাড়তে পারে।

পাকিস্তান সরকারের বন্যা ত্রাণ কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিপর্যয় মোকাবিলায় ৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে দেশটি। এছাড়া বিধ্বংসী এই বন্যায় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিন্ধ প্রদেশের মহেঞ্জো দারোরও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। সাড়ে চার হাজার বছরের পুরোনো বিখ্যাত এই প্রতœতাত্ত্বিক স্থানটি ইউনেস্কো স্বীকৃত একটি বিশ্ব ঐতিহ্য।

image

পাকিস্তানে চলমান বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে একটি আশ্রয় শিবিরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছেন জাতিসংঘের মহাসচিব -বিবিসি

আরও খবর
ঘটনায় জড়িতদের বিচার করতে ব্যর্থ যুক্তরাষ্ট্র
চার্লসকে রাজা ঘোষণা করল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডা
পাল্টা আক্রমণে পিছু হটছে রাশিয়া
চীনের জিনজিয়াংয়ে খাবার-ওষুধের সংকট

সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৮ ভাদ্র ১৪২৯ ১৫ সফর ১৪৪৪

পাকিস্তানের বন্যার মতো জলবায়ু বিপর্যয় আগে দেখিনি : গুতেরেস

image

পাকিস্তানে চলমান বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে একটি আশ্রয় শিবিরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছেন জাতিসংঘের মহাসচিব -বিবিসি

পাকিস্তানের চলমান বন্যাকে ভয়াবহ আখ্যায়িত করে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি ব্যাপক মাত্রার এই ‘জলবায়ু ধ্বংসলীলা কখনও দেখেননি। একইসঙ্গে এই ধরনের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির জন্য ধনী দেশগুলোকেও দায়ী করেছেন তিনি। পাকিস্তানে বন্যায় বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং অবকাঠামো ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাস্তব অবস্থা সচক্ষে দেখতে বন্যা-বিধ্বস্ত পাকিস্তান সফর করছেন গুতেরেস। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে চলমান এই বন্যায় প্রায় ১৪০০ জন মারা গেছেন এবং ১০ লাখেরও বেশি লোক বন্যায় গৃহহীন হয়েছেন। এছাড়া ভয়াবহ এই বন্যায় পাকিস্তানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। একইসঙ্গে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন এই দেশটিতে বন্যায় ব্যাপক ফসলহানিও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বন্যা পরিস্থিতি সচক্ষে দেখতে দেশটিতে সফরে যান জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। দেশটিতে সফরের দ্বিতীয় দিনে বন্দর নগরী করাচিতে গুতেরেস বলেন, ‘আমি বিশ্বের অনেক মানবিক বিপর্যয় দেখেছি, কিন্তু আমি কখনোই এই মাত্রায় জলবায়ু ধ্বংসলীলা দেখিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আজ যা দেখেছি তা বর্ণনা করার মতো কোনো শব্দ আমার কাছে নেই।’ চলমান বন্যায় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে এবং গত জুন মাসে শুরু হওয়া রেকর্ড বৃষ্টির কারণে বাড়িঘর, রাস্তা, সেতু, রেল নেটওয়ার্ক, গবাদি পশু এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

গুতেরেস বলেন, বন্যাবিধ্বস্ত পাকিস্তান পুনর্গঠনে কমপক্ষে এক হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তার সফরে পাকিস্তানে সহযোগিতা বাড়বে। সিন্ধু প্রদেশের সাক্কুর শহরে দায়িত্বরত সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, পাকিস্তানের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। জাতিসংঘ পাকিস্তানে যে সহায়তা দিয়েছে, তা সাগরে একবিন্দু পানির মতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গুতেরেস আরও বলেন, ‘আমাদের ক্ষমতা ও সম্পদ সীমিত। তবে আমরা পাকিস্তানের জনগণের পাশে আছি।’

গুতেরেস বলেছেন, তার সফর পাকিস্তানের জন্য সহায়তা জোগাবে বলে তিনি আশা করছেন। গত শুক্রবার দেশটিতে পৌঁছানোর পরপরই জাতিসংঘের প্রধান পাকিস্তানের জন্য ব্যাপক বৈশ্বিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল আগে থেকেই চলে আসা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০০ কোটি মার্কিন ডলার বলে অনুমান করেছেন।

তবে স্বাধীন বিশ্লেষকরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণকে ১৫০০ কোটি থেকে ২০০০ কোটি মার্কিন ডলারের মধ্যে রেখেছেন এবং তাদের আশঙ্কা, এটি আরও বাড়তে পারে।

পাকিস্তান সরকারের বন্যা ত্রাণ কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিপর্যয় মোকাবিলায় ৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে দেশটি। এছাড়া বিধ্বংসী এই বন্যায় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিন্ধ প্রদেশের মহেঞ্জো দারোরও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। সাড়ে চার হাজার বছরের পুরোনো বিখ্যাত এই প্রতœতাত্ত্বিক স্থানটি ইউনেস্কো স্বীকৃত একটি বিশ্ব ঐতিহ্য।