নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী, তদন্তে ২ কমিটি

লালমনিরহাটে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ভেঙে পড়া, নামফলক মুছে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনা সম্পর্কিত একটি ছবি নিয়ে রোববার সংসদ ভবনে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা উঠলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

এদিকে রাজধানীর গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ‘গুলিস্তান কমপ্লেক্স’ ভবন নিয়ে নাগরিক টেলিভিশন ‘একপেশে’ সংবাদ পরিবেশন করেছে এমন অভিযোগ তুলে ওই টেলিভিশনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করে কমিটি।

নাগরিক টিভি গত আগস্টে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদের লাভের টাকা কে খায়?’ এবং ‘নিঃস্ব অনেক ব্যবসায়ী, একই দোকান দুইবার বিক্রির পাঁয়তারা’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রচার করে। রোববারের বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে নিম্নমানের ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যে নামফলক মুছে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁধাই করার পর কবর ভেঙে পড়ছে। আমরা বলেছি এটা চলবে না।

উন্নতমানের ম্যাটেরিয়াল ও নামফলকে অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। আমরা এসব কবর সরেজমিনে দেখে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। ঘটনার তদন্ত করতে বলেছি। আমি নিজেও কোথাও গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত করছি। কাজের মান যাচাই করি।’

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লালমনিরহাটের ঘটনার কারণ উদঘাটনে সংসদ সচিবালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ওই ঘটনা তদন্তের পাশাপাশি দেশের অন্য কোথাও একই প্রকল্পে এ ধরনের ঘটনা রয়েছে কি না সেটি তদন্ত করার সুপারিশ আসে বৈঠক থেকে।

নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, ‘গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভবন নিয়ে অতীতে অনেক অনিয়ম ছিল কিন্তু আমি কমিটির সভাপতি হওয়ার পর ঘটনা তদন্ত করে নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি। নাগরিক টিভি ওই ভবন নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। কিন্তু তারা প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়, কল্যাণ ট্রাস্ট বা সংসদীয় কমিটি কারও বক্তব্য নেয়নি।

বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে। আমি নিজেও ফোন দিয়ে আমাদের বক্তব্য শুনতে বলেছি। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এজন্য কমিটি বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছে এবং নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে।’

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবনে অবৈধভাবে দখল করা দোকান, চিলেকোঠা, সিঁড়ি এবং নবম তলায় দাহ্য পদার্থের দোকান দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালি করার জন্য সুপারিশ করা হয় বৈঠকে। এছাড়া, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সিরাজুল ইসলামের দুর্নীতি সংক্রান্ত সব তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার পেনশন ও অন্য সুবিধা বন্ধ রাখার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

শাজাহান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, এ বি তাজুল ইসলাম, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও মোছলেম উদ্দিন আহমদ অংশ নেন।

সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২৮ ভাদ্র ১৪২৯ ১৫ সফর ১৪৪৪

মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণ প্রকল্প

নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী, তদন্তে ২ কমিটি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

লালমনিরহাটে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ভেঙে পড়া, নামফলক মুছে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনা সম্পর্কিত একটি ছবি নিয়ে রোববার সংসদ ভবনে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা উঠলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

এদিকে রাজধানীর গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ‘গুলিস্তান কমপ্লেক্স’ ভবন নিয়ে নাগরিক টেলিভিশন ‘একপেশে’ সংবাদ পরিবেশন করেছে এমন অভিযোগ তুলে ওই টেলিভিশনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করে কমিটি।

নাগরিক টিভি গত আগস্টে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদের লাভের টাকা কে খায়?’ এবং ‘নিঃস্ব অনেক ব্যবসায়ী, একই দোকান দুইবার বিক্রির পাঁয়তারা’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রচার করে। রোববারের বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে নিম্নমানের ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যে নামফলক মুছে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁধাই করার পর কবর ভেঙে পড়ছে। আমরা বলেছি এটা চলবে না।

উন্নতমানের ম্যাটেরিয়াল ও নামফলকে অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। আমরা এসব কবর সরেজমিনে দেখে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। ঘটনার তদন্ত করতে বলেছি। আমি নিজেও কোথাও গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত করছি। কাজের মান যাচাই করি।’

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লালমনিরহাটের ঘটনার কারণ উদঘাটনে সংসদ সচিবালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ওই ঘটনা তদন্তের পাশাপাশি দেশের অন্য কোথাও একই প্রকল্পে এ ধরনের ঘটনা রয়েছে কি না সেটি তদন্ত করার সুপারিশ আসে বৈঠক থেকে।

নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, ‘গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভবন নিয়ে অতীতে অনেক অনিয়ম ছিল কিন্তু আমি কমিটির সভাপতি হওয়ার পর ঘটনা তদন্ত করে নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি। নাগরিক টিভি ওই ভবন নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। কিন্তু তারা প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়, কল্যাণ ট্রাস্ট বা সংসদীয় কমিটি কারও বক্তব্য নেয়নি।

বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে। আমি নিজেও ফোন দিয়ে আমাদের বক্তব্য শুনতে বলেছি। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এজন্য কমিটি বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছে এবং নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে।’

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবনে অবৈধভাবে দখল করা দোকান, চিলেকোঠা, সিঁড়ি এবং নবম তলায় দাহ্য পদার্থের দোকান দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালি করার জন্য সুপারিশ করা হয় বৈঠকে। এছাড়া, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সিরাজুল ইসলামের দুর্নীতি সংক্রান্ত সব তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার পেনশন ও অন্য সুবিধা বন্ধ রাখার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

শাজাহান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, এ বি তাজুল ইসলাম, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও মোছলেম উদ্দিন আহমদ অংশ নেন।